০
২৩২৫ বার পঠিত
যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে, আনন্দোল্লাস করেন তারা আসলেই মানুষ কীনা এতে আমার সংশয় রয়েছে। বিচার বহির্ভূত হোক কিংবা আওতার মধ্যেই হোক, যে কোনোধরনের হত্যাকাণ্ডই ঘৃণিত ও নিন্দনীয়। আপনারা যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করছেন প্রকারান্তরে আপনারা নিজেরাই নিজেদের ভয়ঙ্কর জন্তু জানোয়ারের সামনে দাঁড় করালেন।
হত্যাকাণ্ড সেটা হত্যাকাণ্ডই। বিচারিক হোক কিংবা অবিচারিক যাই হোক না কেন। বাংলাদেশে যা হচ্ছে, বিচারিক হত্যাকাণ্ড কিংবা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সবকিছুকেই রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড হিসেবে বলা যায়। যে জাতি মৃত্যুদণ্ড কিংবা খুনকে জাস্টিফাই করার মানসিকতা লালন করে, সেই জাতির কাছে কখনোই মানবিকতা আশা করা সম্ভব না। অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে ক্রসফায়ার বা রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় মানুষের মনে কোনো দাগ কাটছে না। ‘ডেথ পেনাল্টির পক্ষে’ এরকম মানসিকতা থাকলে সে দেশে খুন গুমের ঘটনা মানুষের মনে কোনো দাগ কাটার কথা নয়। দুয়েকটা খুন ধর্ষণের ঘটনায় সোস্যাল সাইট উত্তাল হলেও, এ ধরনের সংঘটিত ঘটনার এক শতাংশ মাত্র। এই এক শতাংশ ঘটনারও আমরা সঠিক বিচার পাইনা।
বরগুনায় সরকারদলীয় যে ছিঁচকে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি নয়ন বন্ড নামের যে লোকটা প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনেই তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করলো, এইরকম সামান্য ছিঁচকে একজন সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার ক্ষমতা বাংলাদেশ পুলিস বাহিনীর নাই। নেই বলেই দেশের সরকার প্রধান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে ঘোষণা দিয়ে, নির্দেশনা দিতে হয় পুলিসকে; যে নয়নকে ‘ধরো’। দেশে এরকম ঘঘটনা তো রোজ ঘটছে, প্রধানমন্ত্রী কি রোজ এরকম আদেশ করবেন? এর আগে খোদ ক্যান্টনমেন্টেই ধর্ষণ ও খুন হয়েছেন তনু নামের মেয়েটা। প্রধানমন্ত্রী কি একবারও এই মেয়েটির খুনিদের ধরার জন্য, বিচারের জন্য একটা উচ্চারণ করেছেন? বরগুনার নয়ন বণ্ডের মতো সন্ত্রাসী খুনিদের বিচার করবার মতো সামর্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নেই। আর নেই বলেই ‘পুলিসের সাথে বন্দুকযুদ্ধ’ নাটক মঞ্চায়ন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা করে প্রকারান্তরে এইধরনের খুনিদের রক্ষা করা হলো। শুধু খুনিদের নয়, এই খুনিদের পেছনের শক্তিদাতা, মদতদাতাদেরও সুরক্ষা দেয়া হলো। রাষ্ট্র খুনি হয় তখনই, যখন ক্ষমতাসীনরা জনগণকে ভয় পায়।
‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’, কিংবা ‘পুলিসের সাথে বন্দুকযুদ্ধ’ নাটকের নামে সকলপ্রকার রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা যতোদিন না সোচ্চার ও প্রতিবাদমুখর হবো, ততোদিন পর্যন্ত আমাদের মুক্তি মিলবে না। যারা আজ পুলিসের হাতে নয়ন বন্ডের মৃত্যুর ঘটনায় স্বস্থিবোধ করছেন, আনন্দিত হচ্ছেন; জেনে রাখুন এই স্বস্থি, এই আনন্দের পেছনে অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর বিপদ। আপনি ক্রমশ অক্টোপাসের থাবায় আটকা পড়ছেন। অক্টোপাসের থাবায় আটকা পড়ে থাকবেন, নাকি এই থাবা থেকে মুক্ত হতে চান? এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়, আপনি কী করবেন!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন