০
৬৫১ বার পঠিত
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠী আজকাল পর্যবেক্ষণ করছেন; অনুভূতিতে ঘন ঘন আঘাতের কারণে অত্র এলাকায় হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
কিছু অনুভূতি চলকের হৃদরোগী দেখেন তিনি।
প্রথমে এক রোগী কাঁপতে কাঁপতে প্রবেশ করে। ড শেঠী রোগীকে জিজ্ঞেস করেন, এতো কাঁপছেন কেন! কীসের ভয় আপনার।
অডিও পডকাস্ট শুনতে চাইলে এখান থেকে শুনতে পারেন:
https://www.facebook.com/nobojug.org/videos/473788660121594/
রোগী বলে, চারিদিকে ধর্মের শত্রু। নাস্তিকরা যা-তা বলছে বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। ফেসবুক পড়তে গিয়ে এদের একেকটা স্টেটাসাঘাতে আমার হৃদপিণ্ড ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।
ড শেঠী বোঝান, আপনার ধর্ম আপনার কাছে থাকবেই। কেউ সমালোচনা করলে তাতে আপনার কী এসে যায়! আপনি এ নিয়ে ভাবা বন্ধ করুন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতেই; প্রবেশ করে রাজনৈতিক অনুভূতির রোগী। সে ডাক্তারকে জানায়, আমার রাজনৈতিক দল আর এর শীর্ষ নেতাকে নিয়ে উপহাস শুনতে শুনতে আজ আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
ডাক্তার বোঝান, রাজনৈতিক দল, নেতার সমালোচনা তো হবেই। তা থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ শুনুন। অযৌক্তিক সমালোচনাকে ইগনোর করুন।
এরপরের রোগী নিজেও একজন ডাক্তার। ড শেঠী অবাক হন। ডাক্তার সাহেব কী অনুভূতিতে আক্রান্ত!
রোগী উত্তর দেয়, ডাক্তার-অনুভূতি। আজকাল ডাক্তারের সমালোচনা চারিদিকে। আমি তো আর পারি না।
ড শেঠী বলেন, কাজ করলে সমালোচনা হবেই। ভালো কাজের সুনামও হয়। জীবন তো পুষ্প শয্যা নয়। সুনাম ও সমালোচনা দুই’ই হবে। অযথা চিন্তা করে হৃদরোগ বাধিয়েছেন।
এরপর প্রবেশ করে ক্রিকেট ও ক্রিকেটার-অনুভূতির রোগী। ড শেঠীর বিস্ময়ের ঘোর কাটে না যেন। খেলা আর খেলোয়াড় নিয়ে এতো সিরিয়াস এই লোক। রোগীকে বোঝান, শ্রেফ খেলা আর খেলোয়াড় নিয়ে অনুভূতি লালন করে হৃদরোগ বাধানো কী ঠিক হলো! জীবনে কত কাজ পড়ে আছে। যান কাজ করুন; অনেক খেলা হয়েছে।
এরপর প্রবেশ করে দুই রোগী এক সঙ্গে। একজন রবীন্দ্র অনুভূতিতে আক্রান্ত; অন্যজন নজরুল অনুভূতিতে। কথা-বার্তা বলে যা বোঝেন; শুধু সাহিত্য থেকে এই অনুভূতির বাড়াবাড়ি নয়; এরা দুই কবিকে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নিজের করে পেতে চেষ্টা করছে। ড শেঠী উভয় হৃদরোগীকে বোঝান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় নেতা নন। দুজনেই কবি; সুতরাং তাদের কাব্য নিয়ে ভাবুন। তাহলে দেখবেন অনুভূতিতে আঘাত লাগবে না। আর কাব্য নিয়ে প্রশংসা ও সমালোচনা; সাহিত্যেরই একটি অপরিহার্য শাখা। কাজেই তা মাথায় রেখেই শিল্প-সাহিত্য চর্চা করুন।
এরপর আসে বিসিএস অনুভূতির রোগী। তার অভিযোগ, বিসিএস নিয়ে স্যাটায়ারের আঘাতেই তার হৃদরোগ হয়েছে।
ড শেঠী বলেন, সিভিল সার্ভিস মানে জনগণের সেবা। সেই সেবার মান ভালো হলে প্রশংসা পাবেন; মন্দ হলে তির্যক মন্তব্য জুটবে; এতো জানা কথা।
বিসিএস অনুভূতির রোগী বিদায় হলে ড শেঠী তার সহযোগীকে জিজ্ঞেস করেন, আর কত রকমের অনুভূতি আছে।
–হাজার অনুভূতির রোগী আছে। কী যে করি!
প্রবেশ করে এক প্রবাসী অনুভূতির রোগী। সে অশ্রু সজল চোখে বলে, অনাবাসে খেটে মরি; আর আমাদের নিয়ে স্বদেশে বসে হাসাহাসি।
ড শেঠী বলেন, কাঁদাকাটির চেয়ে হাসাহাসি হৃদয়ের জন্য ভালো। অযথা গুরুত্বহীন ব্যাপারকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এসময় প্রবেশ করে এক স্বদেশী অনুভূতির রোগী। তার অভিযোগ, বিদেশে আরাম কেদারায় বসে অনেকে স্বদেশের উন্নয়ন নিয়ে হাসাহাসি করে।
ড শেঠী বোঝেন, এই রোগী স্বদেশের কাল্পনিক মালিকানা অনুভূতিতে আক্রান্ত। রোগীকে বোঝান, আপনিও এদেশের যতটুকু মালিক, প্রবাসীও এদেশের ততটুকুই মালিক। কাজেই কাল্পনিক অধিক মালিকানা দাবী করে আজ হৃদরোগী হয়েছেন। এসব বাদ দিন। যান কাজ করুন।
এরপর আসে এক প্রগতিশীল অনুভূতির রোগী। তার হাতে মোটা মোটা বই। শুধু জারগন ব্যবহার করে কথাকে জটিল করে তোলে।
ড শেঠী পরামর্শ রাখেন, যা বলবেন একটু সহজ করে বলবেন। এতে শ্রোতা বেশি পাবেন। শ্রোতা না পেয়ে পেয়েই আজ প্রগতিশীলতার বুদবুদে বসবাস করছেন; আর চারপাশে থই থই করছে পেছন দিকে হাঁটার প্রবণতা।
রোগী বলে, এতোদিন ধর্মীয় অনুভূতিতে ঘন ঘন আঘাত লাগা লোকেদের নিয়ে অনেক হেসেছি; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমার আদর্শিক নেতার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এক মঞ্চনাটক দেখার পর অনেক কেঁদেছি।
ড শেঠী বোঝান,শিল্প-সাহিত্যে ইতিহাসের নেতাদের নায়ক-খলনায়ক এরকম নানাভাবে ইন্টারপ্রেট করার স্বাধীনতা তো রয়েছে। শিল্পী ও শিল্পের স্বাধীনতা বিষয়টা একজন প্রগতিশীলের বোঝার কথা। উদার না হলে কী প্রগতিশীল হওয়া যায়! তা ব্যবস্থাপত্রে আপনার হৃদরোগের কারণ হিসেবে কোন অনুভূতির কথা উল্লেখ করবো!
রোগী কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়, স্তালিন-অনুভূতি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন