০
১০৪২ বার পঠিত
দেশের বর্তমানে এক ধরণের ট্রেন্ড চালু হয়েছে, কেউ অপরাধ করলে তার অতীত এবং তার পরিবারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্টতা খোঁজা। যেমন একজন এমপি যিনি কুয়েতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মানবপাচারের দায়ে। কুয়েত সরকার দাবি করছে, বাংলাদেশি এই এমপি মানবপাচার চক্রের মূল হোতা। এহেন দুষ্কর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত এই এমপির জন্য লজ্জিত না হয়ে একটা পক্ষ খুঁজতে লাগলেন তার পরম্পরা। খুঁজে বের করা হলো কুয়েত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেই এমপির ভাই। অতএব হয়ে গেলো। নেমে পড়লেন তারা মাঠে। অপরাধ বিকেন্দ্রীকরণের মচ্ছব শুরু হলো। লিখিয়েরাও বসে রইলেন না। এমনি একজনের লিখা দেখলাম, তাতে পরোক্ষে প্রমান করার চেষ্টা করা হলো, সে বিএনপি নেতাই তাকে কুয়েত নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেটাই তার অপরাধ সংঘটনের মূল কারণ। এই যে পাপ বা অপরাধের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তা লঘু করে দেয়ার প্রবণতা এটা বড় ভয়াবহ। আর সেই ভয়াবহতার পরিণাম ভুগছে আজ বাংলাদেশ।
কারো অপরাধের দায় কেউ নেয় না। এমনকি কারো অপরাধ প্রবণতা সম্পর্কে আগাম জানাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অথচ বাংলাদেশে যখনই কোনো অপরাধ ঘটছে তখনই সেই অপরাধীর সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হচ্ছে বিরোধীপক্ষের সাথে। যেমন ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হলো বিএনপির সাথে। শাসক দলের চলতি নেতা হওয়া সত্বেও তারা হয়ে গেলেন সাবেক বিএনপি। এটাকেও এক ধরণের দায়মুক্তির চেষ্টা বলা যেতে পারে।
কিন্তু এই দায়মুক্তির পরম্পরা যদি চলতে থাকে তবে তো বিপদ সবার জন্যই। ডাকসাইটে মুসলিম লীগের নেতাও আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নেতা হয়েছেন। সাবেক বামপন্থীরাও রয়েছেন আওয়ামী লীগ বিএনপিতে। এমনকি জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও আছেন দুই দলে। খুলে বলতে গেলে ইতিহাস বড় হয়ে যাবে এবং সেই ইতিহাসের ভার সবাই বইতেও পারবে না। সুতরাং থাক, সংক্ষেপেই বলি, দায়মুক্তির এই পরম্পরা রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ এবং আত্মঘাতী সবপক্ষের জন্যই।
সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে গেলে ভয়াবহ কম্বিনেশন পাওয়া যাবে। শান্তিকমিটির নেতার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধাপরাধীর আপনজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। এমন সব কম্বিনেশনে কি সেই শান্তিকমিটির নেতার ছেলের মুক্তিযুদ্ধের অবদান বাদ হয়ে যাবে! মুছে যাবে নিজ আত্মীয়ের যুদ্ধাপরাধের কারণে সেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কৃতিত্ব! না, যাবে না। যার যার পাপ-পুণ্য তারই। কেউ কারো পাপ-পুণ্যের ভাগিদার নয়। সুতরাং এমন সংশ্লিষ্টতা যারা খোঁজেন তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। তাদের এই অসৎ চিন্তাই দেশে প্রতিষ্ঠিত লুটেরা গোষ্ঠীকে জল-হাওয়া জুগিয়েছে। কিংবা জল-হাওয়া জোগানের জন্যই তাদের অসৎ চিন্তার উৎপত্তি হয়েছে।
রাজনৈতিক আনুগত্য কোনো দোষের কিছু নয়। যে আনুগত্য আদর্শের প্রতি। কিন্তু ব্যক্তি আনুগত্য ভয়াবহ। রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষে লেখাও কোনো দোষের কিছু নয়। বরং এটা মানুষকে সেই রাজনীতি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। মানুষ ভালো-মন্দের ফারাকটা বুঝতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির পক্ষে বন্দনা বা স্তব অনেক সময় হিতে-বিপরীত হয়। যিনি লিখেন তিনি নিজে ‘দালাল’ অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে যান এবং রচিত বন্দনা তিরস্কৃত হয়। ব্যক্তির আলোচনা দোষের কিছু নয়, তবে বন্দনা দোষের। স্তাবকতা নিন্দার। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আলোচনা ও সমালোচনার উপকরণ রয়েছে। খাদ বাদ দিয়ে অলঙ্কার বানানো অসম্ভবের চিন্তা।
অথচ আমাদের দেশের এক শ্রেণির ‘সুশীল’ চেষ্টা করেন খাদ বাদ দিয়ে অলঙ্কার বানানোর। যার ফলে তাদের আর অলঙ্কার গড়া হয়ে উঠে না। যা হয় তা হলো ‘তর্কের অলঙ্কার’। যা নিয়ে শুধু তর্কই বাড়ে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন