০
১০৪৬ বার পঠিত
কাকন রেজা :
মানসিক সুস্থতা আর অসুস্থতা নিয়ে কথা। এর সাথে মত ও অমত প্রকাশেরও ব্যাপার রয়েছে। আগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলাপটা সারি। একজন সাইকো ভাবে তার চিন্তাই সঠিক। একজন কমন মানুষ ভাবে তার উল্টোটা। এখন প্রশ্ন হলো একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ কী ভাবেন। মনরোগ বিশেষজ্ঞ নিশ্চয়ই সাইকোকে অসুস্থ বলবেন। এখন তর্কের খাতিরে কেউ বলতে পারেন, একজন সাইকোর মনোজগতকে আপনি অস্বীকার করবেন কীভাবে। তার জগতটাকে আপনি ভুল কী দিয়ে প্রমান করবেন। সে মানুষ খুনে আনন্দ পায়, সেই আনন্দ পাওয়াটা তার অধিকার। তর্ক কিন্তু চলে। তবে বিতর্ক চলে না। তর্কে লজিক থাকে না, জাস্ট আর্গুমেন্ট থাকে। আর বিতর্কে লজিক থাকে।
মত ও অমত প্রকাশের ব্যাপারটিও তাই। একজন যদি মত প্রকাশ করে বলেন, অমুক ব্যক্তিকে খুন করা উচিত। সেই উচিতটা আইনের ভাষায় অনুচিত। তর্কের খাতিরে বলাই যায়, আইনের অধিকার নেই তার ইচ্ছায় বাধ সাধার। কিন্তু সেটা তর্ক, আর্গুমেন্ট; লজিক্যাল বিতর্ক নয়। তাই মত ও অমত প্রকাশের ক্ষেত্রেও সুস্থতাটা প্রয়োজন। যেমন উগ্রপন্থীদের প্রকাশিত মত বা চিন্তা সভ্য-সমাজ অস্বীকার করে।
সভ্যতার সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে অনেকে সভ্যতাকেই অস্বীকার করেন। মানুষের আগুন আবিষ্কার হলো বিজ্ঞানের পদযাত্রা। আর পোশাক আবিষ্কার হলো সভ্যতার অভিযাত্রা। এখন অনেকে ন্যুড থাকতে ভালোবাসেন। বাসতেই পারেন। ওই যে সুস্থ আর অসুস্থতার সংজ্ঞা। পোশাকের বিন্যাস হতে পারে, যাকে ফ্যাশন বলা হয়। সে ফ্যাশনের সাথে প্যাশন জড়িত। মানুষেরা বৈচিত্র প্রিয়, ফ্যাশন সেই বিচিত্রতা। সাথে সুস্থতাও। পোশাক না পরাতে কোনো বৈচিত্র নেই। কারণ শরীরের ফর্মেশন চেঞ্জ করা সম্ভব নয়। সুতরাং ন্যুডানিজম সুস্থতার সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না, লজিক্যালি পড়া সম্ভব নয়।
অনেকে সমকামিতাকে অ্যানকারেজ করেন। করুন, আপত্তি নেই। কিন্তু যারা করেন না, তাদের মতটাকেও ফেলে দেয়ার কিছু নেই। কেউ সমকামিতার প্রসঙ্গ টানতে ধর্মকে টেনে আনেন। যদিও এমন টেনে আনাটা অগভীর চিন্তার জের। চিন্তার গভীরতাটা একটা ফ্যাক্টর। ধর্ম কালকে দুটি ভাগে ভাগ করে। ইহকাল ও পরকাল। আপনি ধর্মকে বিশ্বাস করেন না, অথচ পরকালকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, এটা চাতুরি। সমকামিতার প্রশ্নে ধর্মের উদাহরণ টানার ক্ষেত্রে তার আগের কথাটা জানতে হবে। ধর্ম বলে, পরকালে রোগ-ব্যাধি, মৃত্যু কিছুই থাকবে না। মানুষের যৌবন হবে অনন্তকালের। সুতরাং লজিক্যালি বললে, সেখানে সমকামিতার খারাপ দিকগুলোর প্রভাব পড়ার কথা না। সুতরাং ধর্মের উদাহরণ টানার বিষয়টি চিন্তার গভীরতা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করে। করা স্বাভাবিক। সমকামিতা ইহলৌকিক ব্যাপার। সুতরাং তাকে ইহকাল দিয়েই ব্যাখ্যা করা উচিত। ধর্ম নয় বিজ্ঞান দিয়েই তার ব্যাখ্যা করা লজিক্যাল।
অনেকে বলেন, পৃথিবীর প্রাণিকুলে সমকামিতা রয়েছে। নানা উদাহরণ ও ব্যাখ্যা দেন তারা। কিন্তু মুশকিল হলো প্রতিটা উদাহরণ ও ব্যাখ্যার পেছনের খবর খোঁজ করতে গেলে দেখা যায়, সেসব হলো ব্যতিক্রম। আর বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যতিক্রম কোনো উদাহরণ নয়। করোনার ভ্যাকসিন দিয়েই বলি। এক হাজার জনে একজনের রক্ত জমাট বাঁধাটা উদাহরণ নয়, ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমে ভ্যাকসিনটা বাতিল হয়ে যায় না। বুঝলে এতটুকুতেই যথেষ্ট। না বোঝার ফল হলো তর্ক, বিতর্ক নয়।
একজনকে দেখলাম সমকামিতা বিষয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্যের কাউন্টার দিচ্ছেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সমকামিতাকে অস্বাভাবিক বলেছেন। এই বক্তব্যের সম্পূর্ণ কন্ট্রাস্ট হচ্ছে সেই বক্তব্য। বক্তব্য দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যে মূর্খ এবং রুচিহীন তাও বলেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশ্নটা এখানেই। মতের বিপক্ষে গেলেই, তার রুচি, জ্ঞান বিষয়ে অবমাননাকর কথা বলাটা সেই প্রশ্নের মধ্যেই। কেউ একজনের মতকে না মানতে পারেন, কিন্তু তার মতকে অ্যাসাসিনেশন এর অধিকার তার নেই। এই অ্যাসাসিনেশন ব্যক্তিকে অ্যাসাসিনেট করার আইসিস দর্শন। কারণ মানুষের চিন্তাই প্রাণিকুল থেকে তাকে আলাদা করেছে। অ্যাসাসিনেশন কোনো সুস্থ দর্শন নয়। অলমোস্ট মানুষের দর্শন নয়। এটা হলো অ্যাসাসিন’স ক্রিড। গুপ্তঘাতকদের ধর্মবিশ্বাস, দর্শন। যখন সে দর্শন মানুষ আত্মস্ত করে, তখন মানুষই তাকে পশু বলে।
ফুটনোট : জানি এই লেখার বিপরীতে নানা তত্ত্বকথা’র আলাপ হবে এবং যা মূলত তর্কই।
ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা : Healtyplace.com
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন