কয়েকটাদিন অনেক স্নায়ুচাপে ভুগেছেন আওমি সাহেবে মেম্বররা। তাদের অনুগত কওমিরা পাশের গ্রামের স্যাফরন সর্দারের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। আওমি নিষেধ অমান্য করে তারা সহিংস প্রতিবাদ করেছে; গুজ্জু খুনের ফুলেল সম্বর্ধনার। অসুরের আগমনে কওমিরা সহিংস হয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে সুরের জাদুঘর। বালসালুরা বিক্ষোভরত ১৭ লালসালুকে হত্যা করার পর; লালসালুবাবু ১৭০০ উটের দামে কওমিদের রক্তমূল্য চুকানোর দাবি জানিয়েছে। এই কওমি বিদ্রোহ দমনে ফেসবুকে বিনিদ্র রজনী কেটেছে বালসালুর খঞ্জনিবাদকদের। এতো বড় সাহস; স্যাফরন বাবার এতো বড় অপমান হইলো এই রঙ্গপুরে! এরা সব পরাজিত পাকি। সুতরাং দুনিয়ার বাঙ্গি এক হও শ্লোগান তুলে ব্যস্ত সময় কাটায় বাঙ্গিলিক্স বুয়া, বাঙ্গি জার্নালের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকেরা।
মার্কিন মেরিনেরা আবোটাবাদের রঙ্গশালা থেকে যেভাবে ওসামা বিন লাদেনকে গ্রেফতার ও হত্যা করেছিলো; ঠিক সেই চিত্রনাট্যে খেলা হবে জিরো জিরো সেভেন; হেলমেট সেনা পাঠায় সোনারগাঁ রঙ্গশালায়। সেইখানে এক বালসালু লাল চড়ুই লালসালুর বাহুলগ্ন। এর আগেই লাল চড়ুই খেলা হবে জিরো জিরো সেভেনকে ফোন করে বলে, আইন্নেরা আসেন; আমি কিন্তু বেশি কিছু করতে পারবো না; আমার শরম লাগে।
লালচড়ুই-এর শরম টুটে যাওয়ার আগেই দরজায় লাথি পড়ে। বালসালু মেরিনেরা উপস্থিত। গ্রেফতার হয়ে যায় লালসালু। বাঙ্গিলিক্সবুয়া কল ফাঁস করে, বাঙ্গি জার্নালের মজিদের মায়ের বৈঠকে লালসালু কতো দুঃশ্চরিত্র; তা নিয়ে আলোচনা করে সচ্চরিত্র বালসালুরা; যারা পাপিয়ার আসরের লোলচর্ম খদ্দের। মজিদের মা প্রশ্ন তোলে, সহি বা হালাল কাবিন নামা কোথায়। ফেসবুকময় বাঙ্গি শেয়ালেরা চেঁচায়, কাবিননামা কুথায়; মাদার অফ হিম্যানিটির দেশে, ম্যারেজ অফ হিউম্যানিটি হারাম; এইডা জানো না লালসালু চান্দু! ভীত তরুণ-তরুণীরা টি-শার্টে কাবিননামা ছেপে নিয়ে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করে।
গ্রেফতারকৃত লালসালুকে ‘ডিম’ বা ‘আন্ডা’ দেবার দাবী তোলে সেকুলার ও অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা আওমি আঞ্জুমানে মফিদুল জোট। বিচারক তখন রিমান্ডে না দিয়ে লালসালুকে ডিমান্ডে দেন।
নেটফ্লিক্সে ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ দেখতে দেখতে আওমি পুলিশ এসপি শারুণ খবর পায় লালসালুকে তদন্ত করতে হবে তাকে। ছবিটা শেষ করে ডিমান্ডে গিয়ে, কথা বলার ফাঁকে লালসালু পানি খেতে চাইলে; তা পানের পর; গ্লাসটা টুক করে তুলে নেয়। এবোটাবাদে নিহত ওসামা বিন লাদেনের ডিএনএ-র সঙ্গে মিলিয়ে বাঙ্গি লালসালুর ডিএনএ মিলে গেলে; শারুণ বলে, ইউরেকা ইউরেকা; এইটা বাঙ্গি না পাকি; থুক্কু আরব। লাদেনের পোলা এই হালা; ওয়ার অন টেরর পুত্র। মামু নাম লইছে উটবাড়িয়ায় আশ্রয় পাইতে। এর আসল নাম খাসামা বিন লাদেন।
টাইমমেশিনে করে চার্জশিট চলে যায় ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলায়; জমাত-বিম্পি-পাকিস্তান তিনটা কী ওয়ার্ডে পিলু শারুণ মনের মাধুরী মিশিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনা রচনা করে। এইবার তার প্রমোশান আর ঠেকায় কে?
ফেসবুকের চেতনার চলন্ত দোকানগুলো প্রাণ ফিরে পায়। উটবাড়িয়ার ১৭ টি মৃতদেহ, ঘাসখালীর ৭টি শ্রমিকের লাশ নিয়ে বড্ড বিব্রত দিন কাটছিলো। আবার জমাত-বিম্পি-পাকিস্তান কী ওয়ার্ডগুলো হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডে এসে যাওয়ায়; পন্ডিতেরা তাদের জীর্ণ পৃষ্ঠাগুলো খুলে অসাম্প্রদায়িকতার মন্ত্র পাঠ। অসাম্প্রদায়িকতা ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে খঞ্জনি বাজিয়ে গান ধরে আওমি পারবেন ভাইয়া ও আপ্পিরা। আধুনিকতার এক একজন আইকন যেন। শিক্ষা-সংস্কৃতি-মানবতাবোধ; ড্রইং রুমের বুকশেলফের মতোই শুধুই সত্য সুন্দর-মঙ্গলে ঠাসা তাদের।
আওমি মাদ্রাসার হেলমেট-হাতুড়ি-শটগানের রাজনীতি চালু রেখে নিষিদ্ধ করা হয় কওমি মাদ্রাসার ঘোড়া-চাপাতি-আগুনের রাজনীতি। ব্যাস ল্যাটা চুকে গেলো। এখন ক্ষমতার ঘুঘুরা ফাঁকা মাঠে শাহেদ-সাবরিনা-সম্রাট-শামীম-পাপিয়ার মতো চরে খাগে যা। লালসালু বাবু স্যাফরন দাদুর সফরকালে আওমি শোকরানা মেহেফিলের লক্ষমণরেখা অতিক্রম করার দায় নিয়ে লালসালু কমিটি ভেঙ্গে দেয়। ফেসবুকে আওমি ফুটসোলজারদের তখন ঈদ। সহমত বড় ভাইদের কাছে আবদার করে, করোনা হইছে তো কী হইছে; সোশ্যাল ডিসট্যান্সে বইসা আম খাইতে চায় আওমিরা; ভাইয়া ব্যবস্থা করেন; উঁহু না বললে শুনছি না আর।
ওদিকে শেখের জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চের ৩৪ জন যাত্রীকে বেহেশতে রপ্তানীর আনন্দে ধ্যানমগ্ন সিংহ পারিবারিক জন্মদিনের কেক কাটে শিশুদের নিয়ে; বার্থ ডে পার্টির জুম লিংকে কথা বলে তার সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তা প্রশংসা করেন, গ্রেনেড নেই, আগুন নাই, সহিংসতা নেই; কী অহিংস-অসাম্প্রদায়িক আর দেশপ্রেমমূলক মানবসেবা; আজরাইলও এতোটা বেদনাহীন মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারে না।
আওমি আম্রপল্লীতে আবার আনন্দের ঘনঘটা। স্যাফরন দাদু বিদায়ের পর এই প্রথম আওমিরা রঙ্গভবনে বসে পাকা আমের মধুর রসে রঙ্গিন করে মুখ।