০
১৭৯৪ বার পঠিত
পাকিস্তানকে কোনভাবেই সহ্য করা যায় না! (ছবি: বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের সৌজন্যে)
পাকিস্তানকে কোনভাবেই সহ্য করা যায় না! (ছবি: ইন্টারনেট থেকে)
উচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন;
“সবকিছু সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা সহ্য করা যায় না। করব না”।
কিন্তু তিনি যদি তার পিতা শেখ মুজিব কর্তৃক ১৯৭৪ সালে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারকে প্রদত্ত নিচের এই স্বাক্ষাতৎকারটি সম্বন্ধে জেনে থাকেন;
“আমি সে সব কিছু ভুলে যেতে চাই। আমি চাই আমার জনগণও সে সব কিছু ভুলে যাক। আমাদেরকে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে”।
একটু থেমে তিনি আবার যুক্ত করেন;
“আপনি জানেন যে জনগণের স্মরণশক্তি দুর্বল”।
সূত্র: কুলদীপ নায়ার, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সফর শেষে শেখ মুজিব; দ্য অভজার্ভার, ঢাকা, ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪
[ভিডিও ডকুমেন্টরি: এগুলো যখন ঘটেছিল, তখনও পূর্ববঙ্গের মানুষের ওপর পাকিস্তানী শাসকদের বর্বরতার দাগ মুছে যায়নি। বাতাসে তখনও ছিল অগণিত মানুষের লাশ পঁচা গন্ধ। এদেশের মানুষ তাদের ওপর সংঘটিত পাকিস্তানী শাসকদের বর্বরতার বিচারের জন্য শেখ মুজিবের কাছে দাবী জানাচ্ছিলেন।]
কুলদীপ নায়ার তাঁর রিপোর্টে আরও লিখেছিলেন-
ভারত ও পাকিস্তানের মতপার্থক্য মীমাংসায় এবং প্রতিবেশী হিসেবে বসবাসে সহায়তা করতে চান শেখ মুজিব।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব আজ ঢাকায় একটি একান্ত সাক্ষাতৎকারে বলেছেন যে, তিনি ভারত পাকিস্তানের মাঝে পার্থক্য নিরসনে তাঁর ‘নিজস্ব বিনীত পদ্ধতিতে‘ ‘তার অংশ‘ পালনে ইচ্ছুক। ‘উপমহাদেশে আমাদের তিনটি দেশকে ভালো প্রতিবেশীর মত থাকতে হবে এবং শান্তির মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে‘ – এই বক্তব্যের বাইরে আর বিস্তারিত কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন।
আমাকে এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকার প্রদানকারী শেখ সাহেব আজ পাকিস্তানের প্রতি, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর প্রতি বেশ উদার ছিলেন। ১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর পর্যবেক্ষণের সাথে এর ছিল খুব তীক্ষ্ণ বৈপরীত্য যখন তিনি তাঁর দেশের জনগণের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিণ্ডিকে বর্বরতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন।
শেখ সাহেব এবারে বললেন,
“আমি ভুট্টোর আন্তরিকতায় মুগ্ধ”। “আমার প্রতি প্রদত্ত পাকিস্তানের জনগণের স্নেহ এবং ভালোবাসায় আমি অভিভুত। বিমান বন্দর থেকে ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন স্থল পর্যন্ত হাজার হাজার জনতা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার নাম মুজিব উচ্চারণ করে তারা ধ্বনি দিচ্ছিলেন। যখন পরিচিত কোর্তা পায়জামা পরা আমাকে তাদের মধ্যে দেখলো তখন ছেলেমেয়েরা উচ্চকণ্ঠ হর্ষধ্বনি দিল”।
পাকিস্তান বাংলাদেশে যে গণহত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং যে উদাহরণ তিনি এর আগেরবার দিয়েছিলেন তা স্মরণ করাবার জন্য আমি যখন তাঁর কথায় বাধা দিলাম, তখন তিনি বললেন; “আমি সে সব কিছু ভুলে যেতে চাই। আমি চাই আমার জনগণও সে সব কিছু ভুলে যাক। আমাদেরকে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আপনি জানেন যে জনগণের স্মরণশক্তি দুর্বল”।
আবার ভুট্টোর প্রসঙ্গে ফিরে যেয়ে তিনি বলেন;
“আমি তাঁকে সাহায্য করতে চাই। তিনি একজন পুরনো বন্ধু”।
কাশ্মীর প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে চান কীনা জানতে চাইলে শেখ সাহেব বলেন;
“না”, এবং তারপর যুক্ত করেন; “এমন প্রশ্ন করা আপনার উচিত হয়নি”।
গতবার তিনি আমাকে যা বলেছিলেন এবারকার বক্তব্য ছিল তা থেকে একেবারেই ভিন্ন। তারপর তিনি বলেছিলেন তিনি শেখ আব্দুল্লাহর সাথে দেখা করবেন আর তাঁকে বলবেন যে তিনি যেন “আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন”।
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক কত তাড়াতাড়ি স্থাপিত হতে পারে জানতে চাইলে শেখ মুজিব বলেন; “খুবই তাড়াতাড়ি” (ভু্ট্টো নাকী লাহোরে থাকাকালে শেখ সাহেবকে বলেছিলেন যে অফিসারদের একটি দল দূতাবাসের জন্য উপযুক্ত একটি ভবন খোঁজার জন্য ঢাকায় যাবার জন্য প্রস্তুত আছে। মনে করা হয় যে, শেখ সাহেব নাকী বলেছিলেন এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।)
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ১৯৫ জন বন্দীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শেখ মুজিব বলেন যে, তাদের ব্যাপারে দিল্লী চুক্তি অনুযায়ী ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, তাঁর সরকার এরই মধ্যে সময় এবং স্থান ঠিক করার জন্য দিল্লীর সাথে যোগাযোগ রাখছে, যা তার কথা অনুযায়ী, প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায় অনুষ্ঠিত হবে, “এবং তারপর আমরা বৈঠকে বসবো”।
পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে আসলো সেই প্রশ্ন শেখ সাহেব এড়িয়ে যান। সেটা কী ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের চাপের কারণে ঘটেছিল সেটা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন; “ভুট্টো সাহেব সম্মেলনের আগেই স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন”।
আবারো তিনি লাহোরে যে বিপুল সংবর্ধনা পেয়েছিলেন সেই স্মৃতিতে ডুবে যান। তিনি বলেন মিয়ানওয়ালি জেলে যে পুলিশ অফিসার তাঁর জীবন রক্ষা করেছিলেন তিনি তাকে চিনতে পেরেছিলেন এবং তিনি “সকল নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে” তাঁকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান।
যখন বলা হলো যে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তখন তিনি বলেন; “কিছু কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও বিদেশী শক্তি” দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ করার কাজে নিয়োজিত আছে। তিনি বলেন; “আমরা ভালো প্রতিবেশী এবং সেই ভাবেই বসবাস করতে চাই –সার্বভৌম ও বন্ধুসুলভভাবে”। – ভারত আমাদের বিষয়ে নাক গলায়নি; আর আমরাও নাক গলাই নি ভারতের ব্যাপারে”।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ে সংসদ নিয়ে কথা বলার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন,
“সবকিছু সহ্য করা যায়, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা সহ্য করা যায় না। করব না। আমি জনগণের কাছে এর বিচারের ভার দিলাম। জনগণই এর বিচার করবে।”
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন