আকাশ মালিক এর হিন্দু ধর্মের ইতিবৃত্ত নিয়ে কিছু প্রশ্ন

7 মতামত পাওয়া গেছে

আকাশ মালিকের লেখার ভাল একটা খণ্ডায়ন হয়েছে। আকাশ ভাইয়ের জবাব আশা করছি।

    জবাব আশা করে একটা প্রশ্ন আমিও করেছিলাম একেবারে প্রথম পর্বেই। বেদ আমার পড়া নেই, মূল রামায়ণ বা মহাভারতও পড়া হয়নি। তবে রামমোহন এবং বিদ্যাসাগর ভুল ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন আকাশ মালিককে করেছিলাম।

    প্রথম পর্বে করা সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও আসেনি। যদিও তার পরে লেখক আরো পর্ব লিখেছেন, মোট কুড়িটি লিখে সিরিজ শেষও করে ফেলেছেন। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর আজও পেলাম না।

    এই লেখা অন্য কেউ লিখলে মনে করতাম কোনো মোল্লার সাইট থেকে কপিপেস্ট করা হয়েছে। প্রথম পর্বের মন্তব্যে যা বলেছিলাম সেটা এখানেও বলছি। আকাশ মালিক হিন্দুধর্মের যুক্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য আদৌ লিখছেন না। হিন্দুশাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনারও প্রয়োজন মনে করছেন না। ইসলাম আর মহম্মদকে এতদিন গালাগালি করে এবার কেবল ব্যালান্স করার জন্য হিন্দুধর্মকে ধরেছেন।

    সেই প্রথম পর্ব থেকে আমিও জবাবের আশায় আছি। আপনাকে দলে পেয়ে খুব ভাল লাগল।

 কোন পর্ব্বে লিখেছিলেন, মনে নেই। উনি আর্য্য আগমন তত্ত্বকে মেনে নিয়েই, সমালোচনায় মুখর হলেন। যার অস্তিত্বই নেই, তাকে সামনে দাড় করিয়ে সমালোচনা করা কতটা যুক্তি সঙ্গত , আমার জানা নেই। আর একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যে কোন গবেষণামূলক লেখায়; হাল আমলের তত্ত্ব/তথ্যগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে, আলোচনা করলে ভাল হয়। বলতে চাচ্ছি, শ্রীকলিম খান এবং রবি চক্রবর্তী দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখিয়ে দিচ্ছেন, রামায়ণ, মহাভারত, বেদ – অর্থাৎ ঐ সময়ের লেখাগুলো ছিল ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায়। যেকারণে প্রতীকী ভাষায় অর্থগুলো বড় গোলমেলে মনে হয়। আমি নিজেও ভগবান-এর অর্থ নিয়ে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ধন-সম্পদের মালিককেও ভগবান বলা হয়, আবার জগতের মালিকও ভগবান। ভগিনীগণও সে সাক্ষ্যই বহন করছে। শিবকে কেন ভগবান বলা হয় না, কলিম খানের এ প্রশ্নের উত্তর এখনো কারও কাছ থেকে পাইনি। 
বিষ্ণুকে দেবতা বানিয়ে গালাগাল করে আমরা যে সুখ পাই, সেই সুখের মুখে আগুন দিয়ে দিয়েছিলেন, কার্ল মার্ক্স, বলেছিলেন, বিষ্ণ, দ্যা ক্যাপিটালিস্ট। বর্ণপ্রথা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু বহু আগেই ঘটে যাওয়া শ্রম বিভাজনের ইতিহাস আমাদের জানা নেই।

    ক্রিয়াভিত্তিক অনুবাদের ব্যাপারে অনলাইনে সামান্য কিছু পড়েছি। সেটুকু জ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করার সাহস হয়না। বস্তুত এটাও কোনো গবেষণামূলক লেখা লিখছিনা। আকাশ মালিক তাঁর লেখায় রেফারেন্স হিসাবে বেদ, রামায়ণ, মহাভারত থেকে যা উল্লেখ করেছেন সেইগুলির মূল এবং স্বীকৃত অনুবা্দ পড়ে মনে হয়েছে সেগুলি আকাশ মালিকের দাবীকে সমর্থন করেনা। তিনি যে অর্থ ধরে আলোচনা করেছেন সেই অর্থেও সমর্থন করেনা। তাই এই প্রশ্নগুলি পেশ করেছি, আপনারা সমাধান দেবেন এই আশায়।

    ক্রিয়াভিত্তিক ভাষায় শাস্ত্র আলোচনার গুরুদায়িত্ব এখনই নিতে সক্ষম নই। এ নিয়ে বরং আপনারা লিখুন, আমি সেখান থেকে কিছু শেখার আশায় থাকলাম। দয়া করে আলোচনায় সক্রিয় থাকুন, আমার মত জিজ্ঞাসু পাঠকদের নিরাশ করবেন না।

আমিও জবাব দেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। দুই নাস্তিকের কাজিয়া দেখতে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগবে। বিশেষ করে দুজনের একজন যখন আধুনিক কালের বিদ্যাসাগর হতে চলেছেন।

আপনার এই লেখাটা পড়ার পর মনে হল মহাভারত একবার খুলে দেখা উচিত। বেছে বেছে শেষ দিকটাই খুললাম কারণ স্বর্গলাভের ব্যাপারটা শেষ দিকেই থাকে। কৃষ্ণের যদুবংশ ধ্বংস হবার সময় কী হয়েছিল একটু দেখুন।

 

বসুদেবের মৃত্যু–দেবকী প্রভৃতির সহমরণ

মহাত্মা ধনঞ্জয় এই কথা কহিলে, তাঁহারা সকলেই সত্বরে সুসজ্জিত হইতে লাগিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন শোকে একান্ত অভিভূত হইয়া কৃষ্ণের গৃহে সেই রজনী অতিবাহিত করিলেন। পরদিন প্রাতঃকালে প্রবলপ্রতাপ মহাত্মা বসুদেব যোগাবলম্বন পূর্ব্বক কলেবর পরিত্যাগ করিয়া উৎকৃষ্ট গতিলাভ করিলেন। তখন তাঁহার অন্তঃপুরমধ্যে ঘোরতর ক্রন্দনশব্দ সমুত্থিত হইয়া সমুদায় পুরী প্রতিধ্বনিত করিতে লাগিল। কামিনীগণ মাল্য ও আভরণ পরিত্যাগ পূর্ব্বক আলোলয়িতকেশে বক্ষঃস্থলে করাঘাত করিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। তখন মহাত্মা অর্জ্জুন সেই বসুদেবের মৃতদেহ বহুমূল্য নরযানে আরোপিত করিয়া অন্তঃপুর হইতে বহির্গত হইলেন। দ্বারকাবাসিগণ দুঃখশোকে একান্ত অভিভূত হইয়া, তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিল। ভৃত্যগণ শ্বেতচ্ছত্র ও যাজকগণ প্রদীপ্ত পাবক লইয়া সেই শিবিকাযানের অগ্রে অগ্রে গমন করিতে আরম্ভ করিলেন। দেবকী, ভদ্রা, রোহিণী ও মদিরা নামে বসুদেবের পত্নীচতুষ্টয় তাঁহার সহমৃতা হইবার মানসে দিব্য অলঙ্কারে বিভূষিত ও অসংখ্য কামিনীগণে পরিবেষ্টিত হইয়া তাঁহার অনুগামিনী হইলেন। ঐ সময় জীবদ্দশায় যে স্থান বসুদেবের মনোরম ছিল, বান্ধবগণ সেই স্থানে তাঁহাকে উপনীত করিয়া তাঁহার প্রেতকৃত্য সম্পাদন করিতে আরম্ভ করিলেন। তখন তাঁহার দেবকীপ্রভৃতি পত্নীচতুষ্টয় তাঁহাকে প্রজ্বলিত চিতাতে আরোপিত দেখিয়া তদপুরি সমারূঢ় হইলেন।

 

বসুদেব ও রামকৃষ্ণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া

মহাত্মা অর্জ্জুন চন্দনাদি বিবিধ সুগন্ধ কাষ্ঠ দ্বারা পত্নীসমবেত বসুদেবের দাহকার্য্য সম্পাদন করিতে লাগিলেন। ঐ সময় সেই প্রজ্বলিত চিতানলের শব্দ, সামবেত্তাদিগের বেদাধ্যয়ন ও অন্যান্য মানবগণের রোদনধ্বনিপ্রভাবে পরিবর্দ্ধিত হইয়া সেই স্থান প্রতিধ্বনিত করিতে লাগিল। অনন্তর তিনি বজ্রপ্রভৃতি যদুবংশীয় কুমারগণ ওকামিনীগণের সহিত সমবেত হইয়া বসুদেবের উদকক্রিয়া সম্পাদন করিলেন।
এইরূপে বসুদেবের ঔর্দ্ধ্বদেহিক কার্য্য সম্পাদন হইলে, পরমধার্ম্মিক ধনঞ্জয় যে স্থলে বৃষ্ণিবংশীয়েরা বিনষ্ট হইয়াছিলেন, সেই স্থানে সমুপস্থিত হইলেন। তখন সেই ব্রহ্মশাপগ্রস্ত মুসলনিহত বৃষ্ণিগণকে নিপতিত সন্দর্শন করিয়া তাঁহার দুঃখের আর পরিসীমা রহিল না। তখন তিনি জ্যেষ্ঠতানুসারে তাহাদিগের সকলের উদকক্রিয়া সম্পাদন করিয়া অন্বেষণ দ্বারা বলদেব ও বাসুদেবের শরীরদ্বয় আহরণ পূর্ব্বক চিতানলে ভস্মসাৎ করিলেন।

এই অবধি আকাশ মালিক রেফারেন্স দিয়েছেন কিন্তু তার পরের অংশ, যা কিনা পাতা ওল্টালেই পাওয়া যায়, বেমালুম চেপে গেছেন।

যাদবনারীগণসহ অর্জ্জুনের হস্তিনাযাত্রা

মহাত্মা অর্জ্জুন এইরূপে শাস্ত্রানুসারে বৃষ্ণিবংশীয়দিগের প্রেতকার্য্য সম্পাদন করিয়া সপ্তম দিবসে রথারোহণে ইন্দ্রপ্রস্থাভিমুখে যাত্রা করিলেন। তখন বৃষ্ণিবংশীয় কামিনীগণ শোকার্ত্ত হইয়া রোদন করিতে করিতে অশ্ব, গো, গর্দ্দভ ও উষ্ট্রসমাযুক্ত রথে আরোহণ পূর্ব্বক তাঁহার অনুগমনে প্রবৃত্ত হইলেন। ভৃত্য অশ্বারোহী ও রথীগণ এবং পুরবাসী ও জনপদবাসী লোকসমুদায় অর্জ্জুনের আজ্ঞানুসারে বৃদ্ধ, বালক ও কামিনীগণকে পরিবেষ্টন করিয়া গমন করিতে লাগিল। গজারোহিগণ পর্ব্বতাকার গজসমুদায়ে আরোহণ পূর্ব্বক ধাবমান হইল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এবং বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশীয় বালকগণ, বাসুদেবের ষোড়শ সহস্র পত্নী ও পৌত্ত্র বজ্রকে অগ্রসর করিয়া গমন করিতে লাগিলেন। ঐ সময় ভোজ, বৃষ্ণি ও অন্ধকবংশের যে কত অনাথা কামিনী পার্থের সহিত গমন করিয়াছিলেন, তাহার আর সংখ্যা নাই। এইরূপে মহারথ অর্জ্জুন সেই যদুবংশীয় অসংখ্য লোক সমভিব্যাহারে দ্বারকা নগর হইতে বহির্গত হইলেন।

বজ্রের হস্তে ইন্দ্রপ্রস্থের রাজ্যভার-অর্পণ (মুষল পর্ব)

অনন্তর তিনি (অর্জুন) সেই হৃতাবশিষ্ট কামিনীগণ ও রত্নরাশি সমভিব্যাহারে কুরুক্ষেত্রে সমুপস্থিত হইয়া হার্দ্দিক্যতনয় ও ভোজকুলকামিনীগণকে মার্ত্তিকাবর্ত নগরে, অবশিষ্ট বালক, বৃদ্ধ ও বনিতাগণকে ইন্দ্রপ্রস্থে এবং সাত্যকিপুত্ত্রকে সরস্বতীনগরীতে সন্নিবেশিত করিলেন। ইন্দ্রপ্রস্থের রাজ্যভার কৃষ্ণের পৌত্ত্র বজ্রের প্রতি সমর্পিত হইল। ঐ সময় অক্রূরের পত্নীগণ প্রব্রজ্যাগ্রহণে উদ্যত হইলে, বজ্র বারংবার তাঁহাদিগকে নিষেধ করিতে লাগিলেন; কিন্তু কিছুতেই তাঁহারা প্রতিনিবৃত্ত হইলেন না। রুক্মিণী, গান্ধারী, শৈব্যা, হৈমবতী ও দেবী জাম্ববতী ইঁহারা সকলে হুতাশনে প্রবেশ পূর্ব্বক প্রাণত্যাগ করিলেন। কৃষ্ণের অন্যান্য পত্নীগণ তপস্যা করিবার মানসে অরণ্যে প্রবিষ্ট হইয়া ফলমূল ভোজন পূর্ব্বক হিমালয় অতিক্রম করিয়া কলাপগ্রামে উপস্থিত হইলেন। অনন্তর মহাত্মা ধনঞ্জয় দ্বারকাবাসী লোকদিগকে যথোপযুক্ত স্থানবিভাগ প্রদান করিয়া বজ্রের হস্তে সমর্পণ করিলেন।

************************************

রোহিণী যে রাজা বসুদেবের পত্নী এবং বলরামের মা, এ তথ্য সকলেই জানে। অথচ আকাশ মালিক দুম করে তাকে কৃষ্ণের বিবি বানিয়ে ফেলেছেন। তার চেয়েও বড় কথা, এই সমালোচনার লেখক পর্যন্ত এত বড় একটা ভুল দেখতে পেলেন না। আকাশ মালিক নামটা মানুষকে কতখানি প্রভাবিত করে তার এক বিরাট উদাহরণ। কিন্তু এই জাতীয় মোহ যুক্তিবাদীদের মানায় না। এই লেখা পড়ে যদি মালিকের অন্ধ ভক্তরা একটু চোখ মেলে তাঁর রেফারেন্স গুলি ক্রস-চেক করতে শিখত তাহলেই খুশি হতাম। আমি মনে করি তাঁর ইসলাম বিষয়ক লেখার রেফারেন্সও একইভাবে ক্রস-চেক করা দরকার আছে।

    অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার দেওয়া তথ্য পোস্টে যোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমার লেখাটি পড়ে আপনি মহাভারত পড়তে শুরু করেছেন জেনে খুবই ভাল লাগল। আপনাদের সহযোগিতায় এভাবেই ভুলত্রুটি সংশোধন করে চলতে পারলেই আমার পরিশ্রম সার্থক মনে করব।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।