বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সাথে একজন তরুণীর বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক ছিল। তরুণীটির ভরণপোষণ করতেন তিনি। তিনি তাকে প্রথমে বনানী এবং এরপরে গুলশানের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন। ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের ওই ফ্ল্যাট থেকে তরুণীটির লাশ উদ্ধার করা হয়।
এরপর নিহত তরুণীর বোন গুলশান থানায় বসুন্ধরার এমডি আনভীরের আত্মহত্যা প্ররোচনায় প্যানাল কোডের ৩০৬ ধারায় একটি মামলা করেন ঘটনার দিন রাত ১ টা ৩৭ মিনিটে।
পরেরদিন অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল ঢাকার আদালত বসুন্ধরার এমডি আনভীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।
Travel ban for Bashundhara Group MD sued over abetting suicide
তবে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেরদিন অর্থাৎ ঘটনার দিন ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিটে একটা কার্গো বিমানে করে আনভীর দেশ ত্যাগ করেন।
দেশের শীর্ষ প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো নিউজটি ছয় নম্বর পেজে সিঙ্গেল কলামে একটি রিপোর্ট করেছে। দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন অনুযায়ী, এমন ক্ষেত্রে কোনভাবে ভিক্টিমের নাম ও ছবি ছাপানো যাবে না। প্রথম আলো নিহত নারীর নাম, পরিচয় ঠিকানা ছবি সহ ছেপেছে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের নাম ও বসুন্ধরা গ্রুপের নাম ছাপেনি। এটি একটি বেআইনি কাজ। এই বেআইনি কাজের জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। যেহেতু সরকার প্রথম আলোকে ধরতে চায়, এটি অত্যান্ত একটি লিগ্যাল পয়েন্ট। এ পয়েন্টে প্রথম আলোকে ধরলে সম্পাদক মতিউর রহমানের ডিফেন্স নেয়ার জায়গা থাকবে না।
প্রথম আলোর কথা বাদ রেখে বাকি মিডিয়ার কথা বললেও তারাও এমনটি করেছে। ফলে প্রত্যেকর বিরুদ্ধে এই প্রশ্নে মামলা হওয়া উচিত। কিন্তু আমার ধারণা সরকার সেটি করবে না।
প্রশ্ন হলো, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা? সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। আদৌ বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান এই হত্যা বা আত্মহত্যার প্ররোচনকারী নাকি ভেতরে থেকে অন্য কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছি সেটাই এখন আমরা দেখার চেষ্টা করব।
গুলশান থানার উপ পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বসুন্ধরার মালিক আকবর সোবহান এর ছেলে সায়েম সোবহানের প্ররোচনায় মুনিয়া নামের এক মেয়ের আত্মহত্যার অভিযোগে দায়ের করা চার্জশীট নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার ভিডিও দেখুন নিচের লিংকে:
https://www.facebook.com/NagorikTV/posts/2867259253530375
বসুন্ধরা একটা মাফিয়া পরিবারের আত্ম কাহিনী:
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমদ আকবার সোবহানকে অনেকে পরিশীলিত ও বুদ্ধিমান মানুষ মনে করেন। সাদামাটা থাকতে যিনি পছন্দ করেন। এসব সাদামাটা চরিত্রের নিচে ভয়ংকর এক অজানা গল্প রয়েছে।
ঢাকায় যারা ৮০ দশকে ঢাকার অর্থনীতি ও রাজনীতি জানেন তারা ঘটনাটি জানবেন।
ছোটকাল থেকেই আহমেদ আকবার সোবহানের ব্যবসায়ী হবার খুব শখ ছিল। তিনি প্রথম জীবনে পুরানো ঢাকায় ছিট কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেখানে বেশকিছু টাকা জমান। এসময় তিনি একটা হারিকেন কারখানা কিনে নেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। সেসময় মানে আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশে ব্যাপক আকারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া শুরু করে সরকার। ফলে তার হারিকেন ব্যবসায় হাতে হেরিকেন ধরে যায়। কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন আহমেদ আকবার সোবহান।
এরকম পরিস্থিতিতে তিনি তখন পুরান ঢাকায় ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। সম্ভবত এসব নিয়ে তখন কতোয়ালি থানায় বেশকিছু মামলাও হয়।
এই ট্রাক থেকে মাস্তানি করতে গিয়ে তার মাথায় আসে বসুন্ধরা প্রকল্পের। জাপান সরকারের সহায়তায় সরকারের টিভি বানানোর একটা প্রজেক্ট ছিল বসুন্ধরা এলাকায়। তখন ওই প্রজেক্টের পরেই বিল আর পানি। প্রজেক্টটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিআইএর অধীনে ছিল। প্রজেক্টটা বন্ধ হয়ে যায়। সব সরকারি প্রকল্প যেমন চুরি বাটপারি করে তার চৌদ্দটা বাজানো হয় নিপ্পন টিভি বানানোর প্রজেক্টটারও অকাল মৃত্যু ঘটে। বসুন্ধরার মালিক এ প্রজেক্টের জায়গা দখল করেন। তার মাস্তান স্যাঙ্গাতরা রাতারাতি সেখানে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প লিখে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
এরপর থেকেই ওই সাইনবোর্ডের পেছনের জমিতে বালু ফেলতে থাকে বসুন্ধরা। বসুন্ধরার অফিস নেয়া হয় ঢাকা কলেজের বিপরীতে এরামের একটা বার আছে তার পাশে একটি টিনের ছাপড়া ঘরে। ওটাই বসুন্ধরার প্রথম অফিস।
বসুন্ধরা বালি ভরাট করতে থাকে। তখন ফসলের জমির দাম ওখানে সামান্য। বিঘা জমির দাম কয়েক হাজার টাকা। প্রথমে তারা কিছু জমি কেনে, এরপর জমিতে বালি ফেলতে থাকে।
এমনকী তারা পানির মধ্যেও মাটি ফেলতে থাকে। তখন ঢাকার ওই অঞ্চলে দায়িত্বে ছিলেন একজন তরুণ ম্যাজিস্টেট। নাম সাজ্জাদ কবির। তিনি প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের মেজ ভাই। পরে সরকারের অতিরিক্ত সচিব হয়ে অবসরে যান বছর পাঁচেক আগে।
তো, সাজ্জাদ কবির একদিন বলছিলেন,
“আমি খবর পেলাম এক লোক পানির মধ্যে বালি ফেলে তাও আবার রাতের অন্ধকারে। আমি একদিন রাতে গিয়ে ধরলাম। বললাম এই পানির মধ্যে বালি কেন ফেলেন। আহমেদ আকবার সোবহান নামে একটা লোক তাকে সবাই সোবহান ভাই সোবহান ভাই বলছিলেন। তিনি বললেন, এখন পানি দেখছেন। বালি ফেলতে ফেলতে একদিন আর পানি থাকবে না। এই পানি ডাঙ্গা হয়ে যাবে। আমি তখন তাকে পাগল বলেছিলাম। আজ এতদিন পরে এসে দেখছি, লোকটা পাগল না। রিতিমত শেয়ানা। সেদিন আসলে আমিই পাগল ছিলাম”।
এভাবে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প শুরু হয়। তখন আহমেদ আকবার সোবহানের বড় দুই ছেলে স্কুলে যায়। অনেক সময় টিউটরের বেতন দিতে পারতেন না বলেও শোনা যায়। যাই হোক, বসুন্ধরা গ্রুপের উপরে উঠা শুরু হয় মূলত ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর। তরতর করে বিল ধরতে থাকেন আর তা অকল্পনীয় বেশি দামে বিক্রি করতে থাকেন।
যারা এর প্রতিবাদ করেছে তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করেছে সোবহান। আশেপাশে যত থানা আছে সেটা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আর এদিকে নারায়ণগঞ্জ আরেকদিকে ভাটারা, বাড্ডা ও গুলশান থানায় মামলার পাহাড় জমতে থাকে। পুলিশের সাথে সিস্টেম করে অনাগ্রহী জমির মালিকদের বিরুদ্ধে হাইওয়ে ডাকাতির মামলা দেয়া শুরু হয়। প্রত্যেক মামলায় কিছু ‘অজ্ঞাতনামা’ থাকে। এসব অজ্ঞাতনামার মধ্যে জমির মালিকদের নাম ঢুকে যায়। এরকম শতশত মামলার ভিক্টিমদের পক্ষে লড়াই করেছেন ড. সুলতানা কামাল। তিনি জমির মালিকদের পক্ষে জান বাজিয়ে লড়াই দিয়েছেন।
এভাবেই বসুন্ধরা একটার পর একটা প্রজেক্ট বাড়তে থাকে। কেরানিগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রজেক্ট করে। সেখানে সরকারি জমি, জলাশয় সব খেয়ে ফেলে বসুন্ধরা। তারপর মিরপুর বেড়িবাধের পশ্চিমদিকে বসুন্ধরা একটা প্রজেক্ট করছে। এখনো ঘোষণা দেয়নি। এটি বিস্তৃত হবে সাভার পর্যন্ত।
বসুন্ধরা এক প্রজেক্টে তারা বেশ কয়েকটি নদী পুরোপুরি খেয়ে ফেলেছে। একটা নদীর উপর কালভার্ট করে তার উপর দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছে। বসুন্ধরার ভেতর বালু নদীটি পুরোপুরি খেয়ে ফেলেছে তারা।
বর্ষার সময় বসুন্ধরার ভেতর গেলে দেখবেন কোন কোন সময় বুক সমান পানি। কারণ এটি ঢাকার নিন্মভূমি। এখান দিয়ে বিলে পানি ঢুকত। এখন বিল নেই, পানি সে কারণে অনেক সময় জমে থাকে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান যাকে বিয়ে করেছেন সেই মানিকগঞ্জের একই পরিবারে বিয়ে করেছেন মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন। ইনি আরেক ভয়ংকর জিনিস!
ভায়রা ভাই মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিনের মেয়ের সাথে নিজের ছোট ছেলে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের বিয়ে দিয়েছেন। এসব সম্পর্কগুলো এজন্যই বলা হচ্ছে, প্রত্যেকটির কারণ আছে।
কারণ গোটা ফ্যামিলিকে নিয়ে সিনেমা বানালে হিন্দি সিনেমার গল্পকেও হার বানাবে।
এরপর সিমেন্ট, জ্বালানি, টিস্যু, পেপার মিল, খাদ্যপণ্য কি বানায়নি বসুন্ধরা গ্রুপ। এসবের পাশাপাশি তারা রেডিও, টিভি (দুটো টিভি স্টেশন), অনলাইন, ইংরেজি পত্রিকা, বাংলা দুটি পত্রিকা কি নেই তাদের গ্রুপে।
প্রথম আলোর সাথে দ্বন্দ্ব:
প্রথম আলোর মরহুম লতিফুর রহমান সাহেবের স্ত্রীর পারিবারিক দিক থেকে আসামের উলফা গেরিলা অনুপ চেটিয়ার সম্পর্ক ছিল। প্রথম আলোর মালিক যখন সব ব্যবসায় ধরা খেয়ে পথে বসার অবস্থা, তখন উলফা গ্রুপ ট্রান্সকম গ্রুপে বিনিয়োগ করে। উলফা বাংলাদেশে শেল্টার চাচ্ছিল। তাদের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল ছিল। তারা ফিলিফস ও পেপসির এজেন্ট লবিং করে এনে দেয়। উলফা শত শত কোটি টাকা ট্রান্সকমে বিনিয়োগ করে।
সম্ভবত বিএনপির ৯১ সালে জয়ের পর বছর তিনেকের মধ্যে ট্রান্সকমের সাথে সংকট তৈরি হয় ১৯৯৫ সালের দিকে।
তবে ট্রান্সকম গ্রুপ যখন ফুলে ফেপে উঠছে তখনই উলফার পরামর্শে তারা একটি ইংরেজি দৈনিক আনে। নাম ‘দ্য ডেইলিস্টার’। এটির সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজা সৈয়দ আহমেদ আলী। স্বাধীনতা পুরষ্কার পাওয়া এই সম্পাদক ছিলেন লিজেন্ড সাংবাদিক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম স্বাধীনতার পর কোনো করপোরেট কোম্পানি খুব প্ল্যানমাফিক একটা পত্রিকা করলেন যার উদ্দেশ্য হবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রপাগান্ডা করা।
যা হোক, উলফাদের সাথে সম্ভবত টাকা বিনিয়োগ, মুনাফার ভাগ নিয়ে তুমুল গন্ডগোল বেধে যায়। যেহেতু উলফারা কোনো ভ্যালিড ডকুমেন্টের ভিত্তিতে টাকা বিনিয়োগ করেনি, সে কারণে টাকা ফেরত চাওয়ারও সুযোগ নেই।
এর বর্হিপ্রকাশ দেখা যায় উলফা প্রধান অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে আটক হন। অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে ব্যবসা করতেন এটি দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা এমনকী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জানতেন। কিন্তু তাকে সবসময় সেভ প্যাসেজ দিয়েছে। এমনকী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও তাকে তখন ধরেনি। কারণ আওয়ামী লীগও চাইতো না তখন পর্যন্ত অনুপ ধরা পড়ুক। কিন্তু ট্রান্সকম গ্রুপ ইতোমধ্যে ভারতের সাউথ ব্লক বা আমলা পাড়ার সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকেরা অনুপ চেটিয়ার সব হালহকিত জানতেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর কাছে তারা অনুপের সব ডিটেইল দিয়ে দেন। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের চাপে বাধ্য হন অনুপ চেটিয়াকে ধরতে।
এ ঘটনায় উলফা ভয়াবহ ক্ষেপে যায় ট্রান্সকম গ্রুপের উপর। প্রতিশোধ হিসেবে লতিফুর রহমানের বাড়ির কাজের লোককে ভাড়া করে লতিফুর রহমানের কিশোরী মেয়ে শাজনীনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে-এমন অভিযোগ ঢাকার বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায়।
১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে শাজনীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করে তার বাড়ির গৃহকর্মি। এরপর ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর বের করে তারা ‘প্রথম আলো’।
প্রথম আলোর সম্পাদক এর আগে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ছিলেন। সাদাকালো ৮ পৃষ্ঠার এই পত্রিকাটি তখন ভয়াবহ জনপ্রিয় ছিল। সেখানে মারদাঙ্গা সব রিপোর্টিং হতো। হুট করে লতিফুর রহমানের মত একজন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসায়ী মানে সব প্রডাক্ট যুক্তরাষ্ট্রের ও বিদেশের। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের মূলত বলা হয় কমিশন এজেন্ট। সারাজীবন কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) করে আসা একজন লোক সাম্রাজ্যবাদী পণ্য বেচা ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন সম্পাদক হয়ে গেলেন বিষয়টি এতো সহজ না। কারণ মতিউর রহমানের জীবনে একটা কালো অধ্যায় আছে।
তখন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। এরশাদের কাহিল অবস্থা। এরশাদ ছিল ভারতের পুতুল সরকার। সিপিবি ছিল আওয়ামী লীগের জোটে। আন্দোলনের সব খবর গোপনে ফ্যাক্স বা টেলেক্স করে ভারতীয় হাই কমিশনে পাঠাতো। একদিন হাতে নাতে ধরা পড়েন মতিউর রহমান। এরপরই সম্ভবত তিনি বহিষ্কার হন সিপিবি থেকে। ফলে আগে থেকে ভারতের র-এর সাথে মতিউর রহমানের কানেকশন ভালোই ছিল। ট্রান্সকম গ্রুপও ভারতীয় লাইনে যোগ দিয়েছে। সে কারণে মতিউর রহমানই ছিল তাদের সেরা চয়েজ।
খেয়াল করুন লতিফুর রহমান সাহেব মারা যাবার পর মতিউর রহমানের ভিডিও সাক্ষাতকার দেখুন, তার লেখা পড়ুন। তিনি নিজের আব্বাজানের চেয়েও লতিফুর রহমানকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। এভাবেই ট্রান্সকম গ্রুপ উলফা গেরিলা থেকে সরে ভারতের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
২০০৬ সালের ৪ জুলাই রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে খুন হন বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশসন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক সাব্বির। এ খুনের ঘটনায় মামলা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সাফিয়াত সোবহান সানবীরকে প্রধান আসামি করে। সানবীর দেশত্যাগ করেন।
খুনের ঘটনা হলো, সেদিন গুলশানের ওই বাড়িতে জমকালো পার্টি হচ্ছিল। পার্টিতে অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন টেলিকমিউনিকেশন জগতের রাণী রোবাবউদ্দৌলা। তো, তার সাথে সানবীরের একটা সম্পর্ক আছে এমনটাই সবাই জানতেন। কিন্তু বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশসন্স নেটওয়ার্ক লিমিটেডের পরিচালক সাব্বির মাতাল থাকায় তিনি সম্ভবত রোবাবউদ্দৌলার গায়ে হাত দিয়েছিলেন। এ অপরাধে সাব্বিরকে উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সানবীরের নির্দেশে। এ ঘটনায় মামলা করে সাব্বিরের বোন জামাইকে সানবীরকে প্রধান আসামি করে।
সানবীর দেশ থেকে পালায়, এমডি পদ হারায়। এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য খালেদা জিয়া তারেক রহমানের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছিল।
তো, রাষ্ট্রপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষী হাজির করতে ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ বসুন্ধরা টেলিকমের পরিচালক হুমায়ুন কবীর সাব্বির হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আওয়ামী লীগের আদালত ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। তবে এবার কত শত কোটি টাকায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আর সাক্ষীদের হাজির করেনি তা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলহ্বাজ খান আসাদুজ্জামান কামালকে যদি ওয়ান ইলেভানের মত কোনো সরকার রিমান্ডে নিয়ে গিরে গাট্টি ভাইঙ্গা দেয় তাহলে জানা যাবে। তখন জানা যাবে সেই টাকার ভাগ কারা কারা পেয়েছিল।
উলফার টাকা এবার বসুন্ধরাতে:
ট্রান্সকম গ্রুপ থেকে ইনভেস্টমেন্ট ফেরৎ না পেয়ে উলফা বসুন্ধরা গ্রুপে টাকা বিনিয়োগ করে। ভারতের মিডিয়াগুলোর মতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের ওপর।
এর ফলে বসুন্ধরা গ্রুপের উপর চড়ে বসে প্রথম আলো। এর আগ পর্যন্ত খেয়াল করে দেখবেন বসুন্ধরার বিজ্ঞাপনে ঠাসা ছিল প্রথম আলো। এ অবস্থায় ওয়ান ইলেভানের সময় প্রথম আলোর হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। বসুন্ধরা গ্রুপের উপর স্ট্রিম রোলার পিশতে থাকে প্রথম আলো। বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করে আহমেদ আকবার সোবহান মানে বসুন্ধরার চেয়ারম্যান। গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। এ সময় আর্মি বহু প্লট নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে।
তো, পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বসুন্ধরা মিডিয়াতে নামে। এর আগেও তারা যায়যায়দিনে টাকা বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু তারেক রহমানের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে যায়যায়দিন থেকে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করলে পত্রিকাটি হুট করে ধসে পড়ে। এরপর একদম নিজেদের মালিকানায় কালের কণ্ঠের যাত্রা শুরু হয়।
এরপরে দেখবেন কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলোর লড়াই। দুটি পত্রিকা দুজনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ কুৎসা প্রচার শুরু করে।
এ সময় ট্রান্সকম গ্রুপ ভারতীয় লবিং দিয়ে আসাম ট্রিবিউন থেকে একটা খবর বের করে। ওই খবরটি ছিল, বসুন্ধরা গ্রুপে উলফার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ।
এতে বসুন্ধরা গ্রুপের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারা ভীত হয়ে পড়ে। তাদের হাতে ছিল নঈম নিজাম যিনি ‘র’ এর খাস লোক এবং বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিনের বিশেষজন। নঈম নিজাম দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তখন কংগ্রেস ক্ষমতায়। প্রণব মুখার্জির ছেলে এমপি ছেলের নাম অভিজিৎ মুখার্জি। এই অভিজিৎ মুখার্জি বাংলাদেশে সকল লবিং করত টাকা নিয়ে। অভিজিৎ এর পরামর্শে ভারতের স্বামী বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনে বসুন্ধরা গ্রুপ ১০০ কোটি টাকা দান করে।
এভাবে বসুন্ধরা গ্রুপ ভারতের র এর হাতের পুতুল হয়ে যায়। তারা ভারতের সকল ইন্টারেস্ট দেখা শুরু করে। আর এখনতো বিজেপির পক্ষেও প্রচার করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
বসুন্ধরার এমডি আনভীর, রাগি ও বদমেজাজী:
বসুন্ধরার এমডি হন আনভীর। অত্যান্ত বদমেজাজী হিসেবে পরিচিত। তার জীবন-যাপন অত্যান্ত ব্যয়বহুল। তিনি ঘরের মধ্যে যে স্লিপার পরেন তার দাম ১ লাখ টাকার উপরে। তিনি ফ্রান্স থেকে ভেউলা ব্রান্ডের পানি আমদানি করে সেটা পান করেন। তিনি কখনো দেশীয় পানি পান করেননা। তিনি যেসব ঘড়ি পরেন সেগুলো শুধু তার জন্যই বানানো। আপনি চাইলেও আরেক পিস ওই কোম্পানি দিতে পারবে না। তিনি যে রোলস রয়েস বা দামি গাড়ি ব্যবহার করেন সেটা শুধু তার জন্যই বানানো।
ঘোরাফেরা করেন ভাড়া করা জেট প্লেনে। একবার তিনি প্রয়াত এমপি আসলামের স্ত্রী যে বিমানে আসছিলেন সেই বিমানেই এসেছিলেন। কথা কাটাকাটি হয় তার সাথে এমপি আসলামের স্ত্রীর সাথে। এরপর তার পত্রিকা আসলামের চৌদ্দগুষ্ঠি ধুয়ে দিয়েছে। যদিও এমপি আসলাম ভাল লোক না। কিন্তু শুধু প্লেনে কথাকাটাকাটি নিয়ে তার বিরুদ্ধে মিডিয়া লেলিয়ে দেয়া এটা শুধু বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পক্ষেই সম্ভব।
অত্যান্ত বদমেজাজী আনভীর যার তার মুখে চড় বসিয়ে দেন। এমনকী কালের কণ্ঠের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামালকে তিনি খাপ্পড় দিয়েছিলেন এমন কথাও শোনা যায়।
এই আনভীর পারিবারিক ব্যবসা থেকে অন্তত ১৭০০ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়েছেন। এই টাকা দুই লোক তাকে আমেরিকাতে সরিয়ে দিয়েছেন। একজন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম অন্যজন রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ। দেখবেন, তোফায়েল আহমেদ কাশি দিলেও বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়াগুলো ঝাপিয়ে পড়েছে।
এর ভেট হিসেবে তোফায়েল আহমেদ কি পেয়েছেন এখনো জানা যায়নি তবে নঈম নিজামের জীবন খুলে গেছে। নঈম নিজামকে নিউইয়র্কে বাড়ি কিনে দিয়েছেন বসুন্ধরার এমডি আনভীর। ঢাকা ক্লাবের মেম্বারশিপ কিনে দিয়েছে নঈম নিজামকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে।
এই নঈম নিজামই আবার জাতিকে জ্ঞান দেয়। কী আর করা! ক্ষমতাহীন বাঙালি নিরেট শয়তানদের কাছ থেকে জ্ঞান নিতে থাকুক।
বসুন্ধরার এমডি আনভীর পারিবারিক ব্যবসা থেকে টাকা সরানোর কারণে পরিবারের মধ্যে ভয়াবহ অশান্তি শুরু হয়। শুধু তাই নয়, অন্য ভাইরা প্রশ্ন তোলা শুরু করেন গোটা মিডিয়া কেন সে একাই চালাবে? এসব নিয়ে সব থেকে ছোট ভাই বসুন্ধরার ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের সাথে আনভীরের একদিন হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়।
ফলে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি পদে আহমেদ আকবার সোবহানের এক ছেলে বাদে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। বসুন্ধরা গ্রুপের এক সময়ের এমডি সাফিয়াত সোবহান সানবীর সাব্বির হত্যা মামলার পরে দেশ ছাড়ার পর দেশে আসলেও এমডি পদ আর পায়নি। সম্ভবত সেটা তার বাবা না মরলে আর পাবেও না।
দেশে থাকা বাকি দুই ভাই হলেন সা’দাদ সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান। এনবিআরের হিসেব অনুযায়ী দেশের পাঁচজন শীর্ষ নগদ টাকার মালিকের মধ্যে এরা দুজন।
আর এক ছেলে শোনা যায় আহমেদ আকবারের রয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুর থাকেন। সে এসব খুন খারাবি আর হাজার হাজার কোটি টাকার নেশার ঠিক বিপরীত। তিনি বাউল ফকিরের জীবন নিছেন। তিনি এসবের মধ্যে নেই।
দেশে থাকা দুই ছেলেই মূলত সা’দাদ সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এমডি হতে চান। এর মধ্যে সাফওয়ান সোবহানের শশুর হলেন শীর্ষ ঋণ খেলাপি ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ নামে একটি পত্রিকার মালিক মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন। উপরে বলেছি তিনি আবার আহমেদ আকবার সোহবানের ভায়রা ভাই।
তাঁর বাসাও বসুন্ধরা গ্রুপের ভেতর। বহুদিন ধরে এই মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন নামের ঋণখেলাপি ধড়িবাজ লোকটা তার জামাইকে দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ দখলের ধান্ধা করছেন। তার জামাই বুসন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান মোটের উপর একটা বোকাসোকা লোক। এমডি পদ ও বিদেশে টাকা পাচার এবং মিডিয়া দখল নিয়ে তিনিই সবচেয়ে বেশী সোচ্চার ছিলেন। তার সাথে বর্তমান এমডি আনভীরের হাতাহাতিও হয়েছে। সম্ভবত ঘুষাঘুষিতে তাঁর মুখ ফুলে যায়।
পরিবারের সবাই জানতেন:
যে তরুণীটিকে বনানী ও গুলশানে বাসা ভাড়া করে রেখেছিল বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীর, কিছুদিনের মধ্যে এটি আহমেদ আকবার সোবহানের পরিবারের সবাই জেনে যায়। বিষয়টি নিয়ে বহুবার শাসিয়েছে মেয়েটিকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবার সোবহান ও তার স্ত্রী। এমনকী আনভীরের স্ত্রীও মেয়েটিকে শাসিয়েছে। শোনা যায়, আনভীরের মা মেয়েটিকে জানে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনা পরিবারের সবাই জানত।
হত্যা নাকি আত্মহত্যা:
হত্যা নাকি আত্মহত্যা এটা বলা এখনি কঠিন। তবে কিছু প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। সেটি হলো, মেয়েটি যদি আত্মহত্যা করবে তাহলে যে কারণে করছে সেটি লিখে রাখবে। লেখার চেয়ে ফেসবুকে একটা একটা ভিডিও বা পোস্ট দিয়ে বিস্তারিত দিয়ে যাবে। যাতে তার হুমকিদাতা সত্যি ফেঁসে যায়। কিন্তু সেরকম কিছু দেখা যায় না।
যে টেলিফোন আলাপটি লিক হয়েছে সেটি ২৬ এপ্রিলে নাকি তার আগে, আগে হলে কত আগে তা এখনো জানা যায়নি। টেলিফোন লিক থেকে এটা স্পষ্টত যে আনভীর ওই বাসায় নগদ কোটি কোটি টাকা রাখত। সেই টাকা থেকে হয়তো কিছু টাকা খোয়া গিয়েছিল যে কারণে তিনি মেয়েটিকে সেই টাকা পেতে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। নিজে যাকে পছন্দ করে বাসায় রেখেছেন তাকেও বেশ্যাও বলছেন। টাকার পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ টাকা।
অডিওর লিংক শুনুন নিচের লিংকে:
https://www.facebook.com/NagorikTV/posts/2867038866885747
প্রসঙ্গ হলো ৫০ লাখ টাকা যদি ১ হাজার টাকার বান্ডিল হয় তাহলে ৫০টি, ৫০ টাকার বান্ডিল হলে ১০০টি। এই বিপুল পরিমান টাকা কোনো মেয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবে না। এতো টাকা কোনো ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্টে যিনি ব্যবসা করেন তা কখনোই ব্যাংক রাখতে দেবে না। এটা বেআইনি। ফলে টাকা যদি মেয়েটি নিয়েই থাকে সেটা তার কাছের কারোর কাছে রেখেছে, সেটি তার পরিবারের কেউ হতে পারে বা বন্ধু কেউ হতে পারে। যদি মেয়েটি টাকাটি সরিয়ে থাকে। ফলে এই ঘটনায় তার পরিবার সন্দেহের বাইরে না। অনেক তথ্য তাদের কাছে আছে।
কিন্তু ঘটনা হলো পুলিশ বলছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বেলা ১টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে। যদি তাই-ই হয় তাহলে বসুন্ধরার এমডি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এটা নিশ্চিত জেনেই দেশ ছেড়েছে। কারণ তিনি ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিটে একটা কার্গো বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন।
এর অর্থ হলো তার সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু বসুন্ধরার এমডি আনভীর গোয়াড় গোবিন্দ সব ঠিক আছে, কিন্তু তিনি এতো বোকা না যে মেয়েটি আত্মহত্যা ও হত্যা করার মত পরিস্থিতি জেনেও তিনি চুপ থাকবেন। কারণ মেয়েটি মারা গেলে মেয়েটির পরিবার সব দোষ তার ঘাড়ে চাপাবে এটি আনভীর জানেন। কারণ মেয়েটির পরিবার জানে মেয়েটির সাথে আনভীরের রিলেশনের কথা। সবকিছু পরিবার জানে।
সে কারণে প্রাইম সাসপেক্টে থাকা আনভীর ছাড়াও এই মৃত্যুতে কারকার লাভ সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
লাভ হলো বাকি দুই ভাই সা’দাত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহানের। কারণ এর আগে নারীঘটিত ঘটনায় বসুন্ধরার এমডি খুন করার অভিযোগ দেশ ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি জমান। নতুন এমডি নিয়োগ করা হয়। ফলে দেশবাসী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিদের ও ছেলেদের নারী ঘটিত কেলেঙ্কারির ব্যাপারে অবগত। যদি মেয়েটিকে কৌশলে আত্মহত্যা করানো যায় বা খুন করা যায় তাহলে তার সব দোষ গিয়ে পড়বে বর্তমান এমডি আনভীরের উপর। ফলে এই খুন বা আত্মহত্যার প্রাইম সাসপেক্ট কিন্তু বাকি দুই ভাই থেকেই যাচ্ছে।
আর বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট ভাই যিনি মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিনের জামাই সাফওয়ান সোবহান হলেন সবচেয়ে প্রাইম সাসপেক্ট। কারণ হলো তিনি বিদেশে টাকা পাচার, এমডি পদ, মিডিয়া দখল নিয়ে নানান সময় আনভীরের সাথে গণ্ডগোল করেছেন। যা বিষয়টি হাতাহাতি মারামারি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তবে আমি মনে করি, এটি আত্মহত্যা না, হত্যা। কৌশলে আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। এটি পরিবার করেছে। পরিবার যদি এ ঘটনায় যুক্ত থাকে, (কারণ তত সময় ক্ষমতাবান এমডি দেশ থেকে ভেগেছেন) তাহলে বিস্মিততো হবোই না, বরং সেটাই যৌক্তিক হবার কথা। কারণ যে বোন জেনেবুঝে এরকম একজন সুগার ড্যাডির হাতে বাচ্চা একটা মেয়েকে তুলে দিতে পারে সে এমডির অন্য ভাইদের সাথে মিলে খুনের পরিকল্পনায় যদি নাও থাকে তাহলে অন্য ভাইদের পরামর্শে খুনকে আত্মহত্যা বলে মামলা করারই কথা।
এই বোনের উচিত ছিল মামলার এজাহারে এটিকে খুন হিসেবে অভিহিত করা। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। তিনি ধরেই নিয়েছেন তার কোন আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিটি ফোনকল চেক করতে হবে। এই বাড়ির দুই’শ গজের মধ্যে সব সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে। কারণ ওই বাড়ির মালিক ফুটেজ কারসাজি করতেই পারে। বসুন্ধরা গ্রুপের ছেলেদের টাকা ও কানেকশন সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা নেই।
যেহেতু ফ্যামিলির মধ্যে এই অশান্তির কথা অন্য দুই ভাই জানত, তাদের কেউ একজন অত্যান্ত নিখুত প্ল্যান করে মেয়েটি হত্যা করার জন্য লোক লাগানো তাদের কাছে পানি খাওয়ার মত ঘটনা।
কারণ দেশ থেকে বসুন্ধরার এমডি পালানোর পর এই দুই ভাইয়ের সামনে সাম্রাজ্য দখল করার এখন ভয়াবহ সুযোগ। যে সুযোগের জন্য তারা মূলত অপেক্ষা করছিলেন কবে তার বাবা আহমেদ আকবর সোবহান মারা যাবে, তারপর ভাগ বাটোয়ারা করে নেবেন।
ফলে প্রাইম সাসপেক্ট হিসেবে দুই ভাইকে প্রধান নজরে রাখতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব কি আদৌ আমাদের সরকার করবে? করবে কিনা এখনি জানি না। করলে ভালো হতো। কারণ সরকারের মধ্যে সরকার, রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র হলো বসুন্ধরা। সরকার যেহেতু সুযোগ পেয়েছে একটু কষে দিলে বা রগড়ে দিলে খেলা ফাইনাল।
অন্যান্য আরও ছবি:
মেয়েটিকে মৃত অবস্থায় যেদিন উদ্ধার করা হয় সেদিনও আনভীর তার নিজস্ব রোলস রয়েস গাড়িতে করে মুনিয়ার বাসায় গিয়েছিলো। সিসিটিভিতে আনভীরের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তাছাড়া মুনিয়ার সাথে সর্বশেষ সাক্ষাতের পর নিজের গাড়িতে উঠে আনভীর একটি সেলফি তুলেছিল।
এপ্রিল ২৯, ২০২১; ৪:১৫ পূর্বাহ্ন
তোকে নোবেল দেব, ভাই। সালাম। দুর্দান্ত লেখা, অনেক কথা বলার সাথে অনেক না বলা বিষয় সূত্র উন্মোচন করা হয়েছে। Doc of the alive history.
এপ্রিল ২৯, ২০২১; ৮:০২ পূর্বাহ্ন
After fulfilling fundamental requirements, extra income does not bring happiness rather many evils including sex perversion
এপ্রিল ২৯, ২০২১; ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
আমার ও স্পষ্ট ধারনা যে মেয়েটিকে তার বোন ও আনিভির এর ছেলেরাই কৌশলে খুন করেছে, বা খুন করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু সরকার যদি আগের মত ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে এদের ছেড়ে দেয় তবে বড় ভুল করবে।
মে ২২, ২০২১; ৯:৩৩ অপরাহ্ন
মাফিয়াদের ওপর যেসব মুভি দেখেছি,বাংলাদেশের মতো দরিদ্রতম দেশের এই সব দূর্বৃত্তদের কাহিনী প্রায় একই রকম ভংকর। এরাই, এই ভয়ংকর বিকৃতরাই এদেশের পরিচালক। কে কার বিচার করবে এখন? ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ এই ব্যাকগ্রাউন্ড লেখার জন্যে। নিশ্চয়ই,এরকম রিপোর্ট আরও পড়তে চাই।