৬
১৩৩২ বার পঠিত
আদমই কি পৃথিবীর প্রথম মানুষ? মহাভারতের কাহিনীর মতই এক চমকপ্রদ কল্পনাপ্রসূত চরিত্র এই আদম। একই কাহিনী দিয়ে শুরু করা আব্রাহামিক ধর্মগুলোর কোন সত্যতা নেই। দুনিয়ার তাবৎ ধর্মই আনবিক মিথ্যা দিয়ে শুরু। এটি একটি বিস্ময়ের ব্যাপার – সারা দুনিয়ার এক বৃহৎ অংশ প্রচন্ড মিথ্যাকে বিশ্বাস করে বুদ হয়ে আছে। এরা সবাই মানসিক প্রতিবন্দী। মানুষের মত এত আজব জীব আর দ্বিতীয়টি নেই। একবিংশ শতাব্দীর টেকনোলজিক্যাল বিশ্বে সবচেয়ে বড় বিস্ময় হল – মিথ্যাকেই আকড়ে ধরে থাকা বিশ্বাসী মানবকুল।
আব্রাহামিক রিলিজিয়ন গুলোতে স্পষ্ট বর্নিত আছে – গড, আল্লাহ, বা Yahweh এই পৃথিবীটা ছয় দিনে বানালেন। তারপর মাটি দিয়ে বিশ পচিশ বছরের এক মুর্তি বানালেন। কানে ফু দিলেন। মানব সৃষ্টি হল। নাম হল আদম। একটি স্ত্রীলোক বানালেন। নাম – ইভ বা হাওয়া। তারপর একটা লুকোচুরি খেলার ব্যবস্থা হল। অতঃপর দুজনকে পৃথিবীতে ছেড়ে দেওয়া হল। যীশু খ্রীস্টের জন্মের কত বছর আগের এই কাহিনীটি?
Third Millennium Press Limited, 1997 প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদটি দেখুন। ISBN 0-7607-0970-X. মাত্র এক পাতার বই। পাতাটি ভাঁজ করা। টানলে প্রায় বিশ পচিশ ফুট লম্বা হয়। আদম থেকে শুরু করে বিল ক্লিন্টন পর্য্যন্ত পৃথিবীর তাবৎ খবর আছে এই এক পাতার বইয়ে।
আদম আর হাওয়ার আকর্ষনীয় আঁকা ছবি দিয়ে শুরু। তখন কাপড়-চোপড় ছিল না। তাই এই দশা। দেখতে আমাদের মতই ছিলেন এরা। গাছপালা দৃষ্টে মনে হয় উচ্চতাও ছিল আমাদের মতই। আদি গল্পকার এদের মানুষ করেই বানিয়েছিলেন। কিন্তু আয়ূষ্কাল দিয়েছিলেন খুবই বেশী।
তখন সততই পুত্র সন্তান জন্ম হত। বংশ বিস্তার কী ভাবে হত এই প্রশ্ন কেউ করত না। এখনও করে না। যীশুর জন্মের ১৯০০-১৮০০ বছর পূর্বের সময়কালে আব্রাহাম বেঁচেছিলেন ১৭৫, ইসমাইল ১৩৭, আইজাক ১৮০। নূহ বেঁচেছিলেন ৯৫০ বছর যীশুর জন্মের মাত্র ২৫০০ বছর আগে। মুসা মারা গেলেন যীশুর জন্মের ১৪২১ বছর আগে ১২০ বিশ বছর আগে। কালে কালে কাহিনীগুলোতে আয়ূষ্কাল স্বাভাবিক হতে থাকে।
নীচের তালিকাটি দেখুন। আজ থেকে যত বছর আগে সক্রেটিস জন্মেছিলেন, আদম সক্রেটিসের তুলনায় মোটামুটি তত বছর আগে পয়দা হয়েছিলেন। কিন্তু বেঁচেছিলেন ৯৩০ বছর। সক্রেটিস বাঁচলেন স্বাভাবিক মাত্রায় মাত্র ৭০ বছর। নূহ নবী খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৯৮ সালে মারা গেলেন। সক্রেটিসের মৃত্যুর মাত্র ১৫৯৯ বছর আগে। নূহ বাঁচলেন ৯৫০ বছর আর সক্রেটিস আমাদের মতই মাত্র ৭০ বছর। কী সব কাহিনী!
গল্পের কাঠামো মন্দ ছিল না। কিন্তু একেবারে রসহীন। সেকালের গল্পগুলোতে রোমান্টিকতা ছিল না। আজ কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে আদমই পৃথিবীর প্রথম মানব। যে ঈশ্বরটিকে আদমের স্রষ্টা বিশ্বাস করা হয়, তিনিই নাকি এই পৃথিবীটা বানিয়েছেন।
প্রফেসর আব্দুস সালাম electroweak unification of the electromagnetic and weak forces এর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল প্রাইজ পেলেন। ভাবা যায় না, তিনিও বিশ্বাস করতেন আদমই পৃথিবীর প্রথম মানব। যদিও তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত, পদার্থ বিজ্ঞানী হিসেবে নীচের সংবাদটি নিশ্চয় তিনি অবিশ্বাস করতে পারতেন না।
By David Keys, Archaeology Correspondent and James Burleigh
Sunday 06 March 2005
Scientists in Ethiopia have found the world’s oldest early human skeleton. Dating back 3.8-4 million years, it still has its ribs, vertebrae and pelvis, according to reports from Addis Ababa.
তিনি ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত দেখতে পেতেন না। স্টিফেন হকিং বলেছেন বিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের দরকার নেই। তাঁর জন্ম ভারতে হলে তিনি শিব লিঙ্গে* দুধ ঢালতে ঢালতেই এ কথাটি বলতেন। ধর্ম এমন একটি আবেশকারী বিষয় যে প্রফেসর সালামের মত মানুষও জানতেন না যে তিনি পরস্পর বিরোধী সত্ত্বায় বিশ্বাসী একজন বিকৃত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। তাঁর কাছে মাত্র ছয় হাজার বছরের আগের আদমের গল্পটি যেমন সত্য, তেমনি ৩.৮ থেকে ৪ মিলিয়ন আগে মানুষের অস্তিত্বও সত্য। পরস্পর বিরোধিতার এটি একটি বিরাট উদাহরণ।
মাত্র ৬০১৬ বছর আগে পৃথিবীতে সর্ব প্রথম মানুষের আবির্ভাব হয়। এই দাবীটি মিথ্যা। যে কথিত ঈশ্বর আদম সৃষ্টি করলেন তিনি মিথ্যা। সেই মিথ্যা ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে যে ধর্ম সমূহের উদ্ভব হয়েছে তাও মিথ্যা। এই মিথ্যা ধর্মকে বিশ্বাস করে লতানো গাছের মত ঝুলে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন মানসিক প্রতিবন্দী বিভ্রান্তরা।
যারা এইসব অলীক ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে ধর্মগুলো সৃষ্টি করেছে তারা মানুষকে বড়ই ঠকিয়েছে। প্রতিবন্দী মানুষগুলো ঠকছে। এরা ৩.৮ থেকে ৪ মিলিয়ন বছরে আগে এই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বকেও বিশ্বাস করছে। আবার আদমকেও প্রথম মানব হিসেবে বিশ্বাস করছে। ধর্মীয় মোহাচ্ছন্নতা থেকে যে বিশ্বাস মানুষের মগজে স্থায়ী বাসা বেঁধে আছে, তা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
*পূনশ্চঃ শিবলিঙ্গের বিবর্তন ঘটেছে। হিউস্টন দূর্গাবাড়ী মন্দিরের শিবলিংগটি ধুতি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ওরা আমাকে এখনও মার দেয়নি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ১৮, ২০১২; ৮:২৮ অপরাহ্ন
দেখতে আমাদের মতই ছিলেন এরা। গাছপালা দৃষ্টে মনে হয় উচ্চতাও ছিল আমাদের মতই। আদি গল্পকার এদের মানুষ করেই বানিয়েছিলেন।
হাদীসে লেখা আছে আল্লাহ্পাক আদমকে ৬০ ফুট লম্বা তৈরী করেছিলেন। এরপর থেকে আদমের বংশধরদের উচ্চতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
ভাবা যায় না, তিনিও বিশ্বাস করতেন আদমই পৃথিবীর প্রথম মানব।
কোন এক প্রবন্ধে পড়েছিলাম, ভারতের উচ্চমার্গের পারমানবিক গবেষণায় যে সব বৈজ্ঞানিক আছেন–উনাদের বেশীরভাগই কট্টর হিন্দু।
শুধু আবুল কালাম আজাদ নাস্তিক ছিলেন। তবে আবুল কালাম আজাদও বোধকরি সাহস করে প্রকাশ্যে তাঁর নাস্তিকতা ঘোষণা করেন নি। এরকম করলে ইসলামি জিহাদিরা হয়ত তাঁকে কতল করে ফেলতে পারে।
আর বাঙলাদেশের প্রায় সব বিজ্ঞানীই মনেপ্রাণে ইসলাম মেনে চলেন এবং ইসলামের মাঝেই খুঁজে পান সব বৈজ্ঞানিক তত্ব। বাঙালি বিজ্ঞানী শমশের আলী ত কোরানেই পেয়েছেন ডি এন এর সংবাদ।
আগস্ট ১৯, ২০১২; ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
ঠিক। দেখি তো। বিশেষতঃ দক্ষিন ভারতীয়রা। কপালে ্রক্ত-চন্দন ছাড়া এদের চলেনা। বাংগালীরা একটু কম বাহ্যিক ভাবে। কিন্তু বিশ্বাসবোধ একটুও কম নয়।
আগস্ট ১৯, ২০১২; ৪:০০ অপরাহ্ন
আপনি ঠিক লিখেছেন। দক্ষিণ ভারতীয়দের সাথে আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। বেশীর ভাগই ধর্মান্ধ। এমনকি ট্রেনে ভ্রমণকারী অনেক দক্ষিণ ভারতীয়দের দেখি কপালে লালচন্দন, আর হাতে ধর্ম্পুস্তক। মুখে বিড়বিড় জপনাম। অনেক যাত্রীই বিরক্তি প্রকাশ করে; তবে কে শোনে কার কথা।
এই হিন্দু ধর্মান্ধদের সাথে ইসলামি জিহাদিদের একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে—জিহাদিরা কাফেরদেরকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করে—এমনকি তাদেরকে কতল করতে চায়। আর ধর্মান্ধ হিদুরা চায় ফুলের মালা দিয়ে অবিশ্বাসীদের গ্রহণ করে। রেল স্টেশনে দেখি, সুন্দরী হরে কৃশ্ন রমনীকুল রঙ্গীন সাড়ি পরিধান করে, গলায় এবং হাতে ফুলের মালা জড়িয়ে, হারমোনিয়াম, খোল, করতাল বাজিয়ে ভিক্ষা করছে। গুটি কয়েক ধুতি পরিহিত পুরুষ মাথার টিকি নেড়ে নেড়ে সায় দিচ্ছে।
এই দৃশ্য মন্দ নয়, যদিও মুষ্টিমেয় যাত্রী এদের পাত্তা দেয়।
আগস্ট ১৯, ২০১২; ৬:০৯ অপরাহ্ন
এই সম্প্রদায়টি এক নতুন ভগবানের সৃষ্টি। ভগবানের নাম প্রভুপাদ।
আমেরিকা ধর্ম প্রচারের ফারটাইল গ্রাউন্ড। এই দলে ভারতীয়দের চেয়ে সাদারাই বেশী।
বাংলাদেশী অশিক্ষিত হিন্দুরা এই খবর জানে। ওরা মনে করে আমেরিকার সবাই ইস্কনের ভক্ত।
হালে ইস্কন বাংলাদেশেও ঢুকেছে। আমার ভাতিজাই ছিল এ দলে। ২০০৮ সালে দেশে
গিয়ে দেখি ভাতিজার এই হাল। গদগদ হয়ে এসেছে আমার কাছে। ভেবেছে আমি খুব
খুশী হব। আমার চোখের ভাষা ও বুঝেছিল। তার পর থেকেই ও মানুষ হিসেবে ফিরে এসেছে।
আগস্ট ১৯, ২০১২; ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন
আসলে নিজের ধর্মগ্রন্থ খুলে কেউ পড়ে না। ৯৯.৯% লোকের বেলায় এটা সত্য।
আগস্ট ১৯, ২০১২; ৯:৫২ পূর্বাহ্ন
নূহ নবী খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৯৮ সালে মারা গেলেন। সক্রেটিসের মৃত্যুর মাত্র ১৫৯৯ বছর আগে। নূহ বাঁচলেন ৯৫০ বছর আর সক্রেটিস আমাদের মতই মাত্র ৭০ বছর। কী সব কাহিনী!
এই কথাটি মূল লেখায় সংযোজিত হল।