ইসলাম যে একমাত্র সত্য ধর্ম এবং বৈজ্ঞানিক ধর্ম, এই বিষয়ে কোনও মুসলমানের মনের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নাই। সে মুসলমান একজন মুসলিম স্কলার হোন, ইমাম হোন, আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ক্যামিস্ট, পদার্থ বিজ্ঞানী থেকে ইতিহাসবিদ বা প্রত্নতত্ত্ববিদ যেই হোন। তারা সকলেই একমত যে ইসলামই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সত্য ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম। এটা প্রমাণিত। অবশ্য কোথায় যে সেটা প্রমাণিত? সেটা ধার্মিক মুসলমানরা ভেবে নেন- মুসলিম বিজ্ঞানীরা জানেন, আর মুসলিম বিজ্ঞানীরা ভেবে নেন- ধার্মিকরা সেটা জানেন। উভয়েই উভয়ের শিবিরের উপরে চোখ বুজে আস্থাশীল। সাধারণত- ইমাম, মোল্লারা ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, ম্যাথ, ইতিহাস, এইসব পড়েন না তেমন। আর যারা এইসব পড়েন, তারা সাধারণত- হাদিস, কোরান, সিরাতে রাসুলুল্লাহ পড়েন না। তাদের অত সময় নেই। তাদের ঈমান আছে এইটুকুই তারা যথেষ্ট বলে ধরে নেন। তবে আমার মনের মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু সহজ প্রশ্ন উঁকি দেয়। আমিও উত্তর খুঁজতে মুসলমানদের দুই শিবিরে দৌড় দেই। ইমাম, মোল্লারা বলেন- এর উত্তর আপনি পাবেন- মুসলিম বিজ্ঞানীদের কাছে, তাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। আর মুসলিম বিজ্ঞানীরা বলেন, উঁহু, এটা সহি ইসলাম নয়, আপনি সহি (কাল্পনিক) হুজুরের সাথে কথা বলেন।
এক্ষেত্রে কেউ কেউ বলতে পারেন যে, আমি কেন কোনও ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড, হাভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকের কাছে প্রশ্ন করি না? ভাই, ওনাদের কাছে কীভাবে যাবো? আর তাছাড়া ওনাদের কথাতো দূরে থাক, এই বাংলাদেশের কোনও বিজ্ঞানের শিক্ষকের কাছে কোনও প্রশ্ন করলেও তার উত্তর বুঝতে গেলে নিজের একটা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড লাগে। বিজ্ঞানের উপর বিশ্বাস রাখলেই বিজ্ঞানী হওয়া যাচ্ছে না, কঠিন সব বিষয় পড়তে হয়, বুঝতে হয়, প্রমাণ করতে হয়, ল্যাব লাগে, অংক লাগে, মহা ঝামেলা। ক্ষেত্র বিশেষে কোনও শিক্ষক বলেন, আমি আপনার প্রশ্নটি নিয়ে একটু পড়াশোনা করে তারপরে আপনাকে বলি?
এরচেয়ে অনেক সহজে সেইসব প্রশ্নের উত্তর আমি চায়ের দোকানে বসা কোনও রিকশাওয়ালা, সিএনজি ড্রাইভার, বাসার কাজের বুয়া, মাদ্রাসার একজন শিশু থেকে, ইমাম মোল্লাকে জিজ্ঞেস করলেই- তারা মুহূর্তে সবাই একই উত্তর দিয়ে দিতে পারেন। এদের উত্তরের সাথে জাকির নায়েকের লেকচারের তেমন কোনও ভিন্নতা থাকে না। ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বা ছাত্রের সংখ্যা অনেক কম। তার চেয়ে একশ বিশ কোটি মুসলমানের সংখ্যা বেশী। তাই আমি সাধারণত আমার যে কোনও প্রশ্ন মুসলমানদের কাছেই নিয়ে যাই। যেহেতু লেখার শুরুতেই বলেছি- ‘ইসলাম যে একমাত্র সত্য ধর্ম এবং বৈজ্ঞানিক ধর্ম, এই বিষয়ে কোনও মুসলমানের মনের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ নাই। সে মুসলমান একজন মুসলিম স্কলার হোন, ইমাম হোন, আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ক্যামিস্ট, পদার্থ বিজ্ঞানী থেকে ইতিহাসবিদ বা প্রত্নতত্ত্ববিদ যেই হোন। তারা সকলেই একমত যে ইসলামই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সত্য ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম।’
আমার প্রশ্নটি ছিলো নিজের কাছে। আমি ভাবছিলাম- মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে?
সঙ্গে সঙ্গে মাথায় ফিলিপস বাত্তি জ্বলে মতো সব ফকফকা হয়ে গেলো। আমি ছুটে গেলাম আত্মীয় মুরব্বির কাছে। জিজ্ঞেস করলাম, চাচা- মানুষের উৎপত্তি কোথা থেকে?
তিনি ন্যানো সেকেন্ডে উত্তর দিলেন- আদম থেকে। তার এক সেকেন্ড পরে বললেন- আদম-হাওয়া থেকে। আমি শান্তি পেলাম। যাক, ইসলাম আসলেই শান্তির ধর্ম।
তাকে মনের মধ্যে শান্তি নিয়েই বললাম- এটা আমিও জানতাম। আপনার থেকে শুনে নিয়ে আরো শিওর হলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আরেকটি সম্পূরক প্রশ্ন। তিনি বললেন, বলো?
আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানেন? এই যে মানুষের উৎপত্তি আদম-হাওয়া থেকে?
তিনি একটুও সময় না নিয়ে বললেন- হাদিস, কোরানে আছে।
আমি বললাম- কোথায় আছে? হাদিস কোরানের কোন জায়গায়?
তিনি বললেন- আমাদের বাড়ির পাশের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে যেতে। বিকেলে বাদ আসর ।
আমি আসরের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে উদাস মনে নানান কথা ভাবলাম।
রুখসানা আনোয়ারের একটা হিট গানও গুনগুন করে ফেললাম- ও পাগল মন, মন রে… মন কেন এত কথা বলে… (তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ, কিসের মধ্যে কী)
আসরের নামাযের পরে গেলাম হুজুরের কাছে। হুজুর লোকজন নিয়ে বসে ছিলেন, বয়ান করছিলেন। সবার মুখই ভীষণ গম্ভীর। আমি ভয়ে ভয়ে হুজুরের কাছে সালাম দিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হুজুর, একটা প্রশ্ন নিয়ে আসছি।
হুজুর সালামের উত্তর না দিয়েই বললেন- কী প্রশ্ন?
আমি বললাম- হুজুর, মানুষের উৎপত্তি যে আদম হাওয়ার কাছ থেকে এই বংশানুক্রমিক সূত্রটা কোথায় পাই?
হুজুর পালটা প্রশ্ন করলেন- কেন? কেন এর ক-এর উচ্চারণটা তার যেনো নাভি থেকে আসছে, অনেকটা ক্কাফ এর ক্কা’এর মতো ভারী।
আমি মিনমিন করে বললাম- ডারউইনের এভ্যুলুশন থিওরিটা তাহলে ভুল প্রমাণ করে দিতে পারতাম।
হুজুর গমগম করে বললেন- এইসব আগেই ভুল প্রমাণিত হয়ে আছে। তুমি জাকির নায়েকের লেকচার দেখো। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। আমি মনে মনে ভাবলাম (তাহলে তো তার নোবেল প্রাইজ কেউ ঠেকাতে পারবেন না।) মুখে বললাম- হুজুর সবই তো জানি। শুধু একটু ধর্ম গ্রন্থের রেফারেন্স পেলে আত্মাটা শান্তি পেতো।
হুজুর বললো- কোরআন শরীফেই আছে।
আমি বললাম, জ্বী হুজুর তাতো আছেই। কিন্তু বংশানুক্রমিক ভাবে নেই।
হুজুর গম্ভীর ভাবে বললেন- তুমি পড়ে দেখেছো?
আমি আরো চুপসে গিয়ে বললাম- হুজুর, পড়ার অভ্যাস আছে। আর কোরানে আছে বলেই- আমি একদম নিশ্চিত হয়ে এসেছি। আমার ইচ্ছে আদম (আঃ) এর বংশানুক্রমিক সময়টাকে জানতে পারলেই- এভ্যুলুশন থিউরিটা যে ভুল সেটা নিয়ে একটা ইসলামিক আর্টিক্যাল লিখতে পারতাম।
হুজুর বললেন- ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’তে পাবা।
আমি গদগদ হয়ে বললাম, শুকরিয়া হুজুর শুকরিয়া। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলাম, সিরাতে রাসুলুল্লাহ-এর রেফারেন্স সহিতো? হুজুর আর তার আশেপাশের লোকজন আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যে আমি তাড়াতাড়ি মসজিদ থেকে বের হয়ে উল্টা স্যান্ডেল পায়ে দিয়েই বাসায় চলে এলাম।
অগত্যা আমার নিজেকেই পড়তে বসতে হয়। পড়তে পড়তে প্রশ্ন আরো বাড়ে। সেইসব অনেক প্রশ্নের মধ্য থেকে আজ একটি প্রশ্ন নিয়ে এই লেখাটি লিখেছি। আমার মনে ক্ষীণ আশা, যদি কোনও মুসলমান ভাই, এই প্রশ্নের উত্তরে- ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, সূত্র দিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেন। জনে জনে জিজ্ঞেস না করে, একটি লেখা লিখে অনেকের কাছে নিজের প্রশ্ন পৌঁছানোটাই সহজ ও ভদ্র পন্থা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
আদমের বংশানুক্রমিক তালিকা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এতে করে মানব সভ্যতার টাইম লাইনকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে। প্রমাণ করে দেয়া যাবে যে, পৃথিবীর প্রতিটি জাতির ইতিহাস এবং অস্তিত্বের সমস্ত প্রমাণ ভুল। একমাত্র সত্য ইসলাম ধর্মের অথেনটিক রেফারেন্স। আদম থেকে মুহাম্মদ।
বিসমিল্লাহ্ বলে শুরু করলাম- কোরআন শরীফ থেকে। এখানে দেখলাম বিভিন্ন প্রায় দশটি সুরার প্রায় ৫০ টি আয়াতে আদমের নাম আছে। (কম বেশী সংখ্যা হলে বিজ্ঞপাঠক আমাকে শুধরে দেবেন।) যাইহোক, এখানে আদমের নাম কয়টি আয়াতে কতবার এসেছে বা একাধিকবার এসেছে কিনা সেটার চেয়ে অন্তত একবার আসাটাও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোরআন একবার আদমকে উল্লেখ করলো মানে, আদমকে স্বীকার করে নিলো। এখন আদম এখানে চূড়ান্ত সত্য। যেহেতু আদমের নাম কোরআনে এসেছে। অতএব, আদমকে বাদ দিয়ে এখন আর আমাদের ইসলাম পর্যন্ত আসার সুযোগ নেই। আমি পড়তে পড়তে আরো পঁচিশজন নবীর নাম পেলাম কোরআনে।
ক্রমিক | নবীর নাম | সুরা | আয়াত |
১. | হযরত আদম (আঃ) | সুরা বাকারা | ৩১ |
২. | হযরত ইদরিস (আঃ) | মারইয়াম | ৫৬ |
৩. | হযরত নূহ (আঃ) | নিসা | ১৬৩ |
৪. | হযরত হুদ (আঃ) | হুদ | ৫০ |
৫. | হযরত সালেহ (আঃ) | আরাফ | ৭৩ |
৬. | হযরত ইব্রাহিম (আঃ) | বাকারা | ১৩৬ |
৭. | হযরত লুত (আঃ) | হুদ | ৭০ |
৮. | হযরত ইসমাইল (আঃ) | বাকারা | ১৩৬ |
৯. | হযরত ইসহাক (আঃ) | বাকারা | ১৩৬ |
১০. | হযরত ইয়াকুব (আঃ) | বাকারা | ১৩৬ |
১১. | হযরত ইউসুফ (আঃ) | আন আম | ৮৪ |
১২. | হযরত শুয়াইব (আঃ) | আরাফ | ৯০ |
১৩. | হযরত আয়ুব (আঃ) | নিসা | ১৬৩ |
১৪. | হযরত যুলকিফল (আঃ) | আম্বিয়া | ৮৫ |
১৫. | হযরত মূসা (আঃ) | বাকারা | ৫১ |
১৬. | হযরত হারুন (আঃ) | বাকারা | ২৪৮ |
১৭. | হযরত দাউদ (আঃ) | বাকারা | ২৫১ |
১৮. | হযরত সুলাইমান (আঃ) | বাকারা | ১০২ |
১৯. | হযরত ইলিয়াস (আঃ) | আনআম | ৮৫ |
২০. | হযরত আল ইয়াসা (আঃ) | আনআম | ৮৬ |
২১. | হযরত ইউনুস (আঃ | নিসা | ১৬৩ |
২২. | হযরত জাকারিয়া (আঃ) | আনআম | ৮৫ |
২৩. | হযরত ইয়াহয়া (আঃ) | ইমরান | ৩৯ |
২৪. | হযরত ঈসা (আঃ) | বাকারা | ৮৭ |
২৫. | হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) | ইমরান | ১৪৪ |
কিন্তু আদম থেকে মোহাম্মদ পর্যন্ত পূর্ণ বংশতালিকা কোরআনে নেই।
হুজুরের কথা মতো- খুলে বসলাম ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’। হ্যাঁ, এখানে পেয়ে গেলাম। আদম থেকে মুহাম্মদ পর্যন্ত পূর্ণ বংশতালিকা।
বংশ তালিকাটির আগে একটু ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ গ্রন্থটি নিয়ে অল্প কিছু বলি।
কোরআনের পরেই সহি হাদিসের ও ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ গ্রন্থটির গুরুত্ব। একজন মুসলমানকে কোরআনের তাফসীর জানতে হলেও ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ পড়তে হয়। সহি হাদিসের নানান রেফারেন্স এই গ্রন্থের লেখকের থেকে নেয়া হয়। ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ হচ্ছে একমাত্র অথেনটিক মুহাম্মদের জীবনী। এবং সবচেয়ে প্রাচীন। হ্যাঁ, এর কিছু কিছু রেফারেন্স এর বিষয়ে লেখক- লিখেছেন ‘সত্য মিথ্যা আল্লাহ ভালো জানেন।’ অর্থাৎ, উক্ত তথ্যটি সম্পর্কে তিনি (লেখক) নিশ্চিত ছিলেন না। তবে এক্ষেত্রে (আদম থেকে মুহাম্মদের বংশ তালিকা) লেখক নিশ্চিত। কারণ, এই প্রসঙ্গে তিনি ‘সত্য মিথ্যা আল্লাহ ভালো জানেন।’ এই উক্তিটি ব্যবহার করেননি। আমার জানামতে, পৃথিবীতে এমন কোনও মুসলিম স্কলার নেই যিনি, আদম থেকে মুহাম্মদের এই বংশ তালিকাকে অস্বীকার করেছেন, এবং নতুন কোনও তালিকা দিয়েছেন। (যদি কোনও বিজ্ঞ পাঠকের কাছে, অন্য তালিকা থাকে সেটার রেফারেন্স বা তালিকা দেবার জন্য সানুনয় অনুরোধ করা হলো।)
ইবনে ইসহাক ছিলেন- ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ গ্রন্থটির আদি লেখক। *তিনি ৮৫ হিজরিতে, ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দ, মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং ১৫০-১৫৯ হিজরিতে, ৭৬১/৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে মৃত্যু বরণ করেন। (*তথ্য সূত্র: সিরাতে রাসুলুল্লাহ (স.) অনুবাদ: শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী। ও ইন্টারনেট।)
এখানে প্রসঙ্গত বলে রাখি, ইবনে ইসহাকের- ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ গ্রন্থটির অনেক অনেক বছর পরে হাদিস সংকলন শুরু হয়।
সিহাহ সিত্তা বা বিশুদ্ধ ছয়টি হাদিস সংকলকগনের নাম ও তাদের জীবনকাল একটু দেখেনিন।
১. সহীহ বোখারী শরীফ- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী ১৯৪-২৫৬ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
২ সহীহ মুসলিম শরীফ- আবুল হোসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আলকুশায়রী ২০৪-২৬১ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
৩. সহীহ নাসায়ী শরীফ- আব্দুর রহমান আহমদ বিন শোয়ায়েব আন নাসায়ী ২১৫-৩০৩ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
৪. সহীহ তিরমিযি শরীফ- আবু ঈসা মুহাম্মদ বিন ঈসা আততিরমিযি ২০২-২৭১ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
৫. সহীহ আবু দাউদ শরীফ- আবু দাউদ সোলায়মান বিন আশআস সিজেসতানী ২০৪-২৭৫ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
৬. সহীহ ইবনে মাজা শরীফ- আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইয়াযীদ ইবনে মাজা কাজবেনী ২০৩- ২৭৯ হিজরি (জন্ম-মৃত্যু)
অর্থাৎ, যে হাদিস আমরা পড়ি সেসব সংকলন হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুরও প্রায় আড়াইশ তিনশ বছর পরে।
কথার কথা, যদি আমার দাদা তিরিশ বছর বয়সে আমার বাবাকে জন্ম দেন, আমার বাবা যদি আমাকে জন্ম দেন তার তিরিশ বছর বয়সে, অর্থাৎ আমার দাদা তখন ষাট, আমি যদি আমার সন্তান জন্ম দেই তিরিশ বছর বয়সে তাহলে এই ক্রমানুসারে প্রায় তিনশ বছরে মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১২ জেনারেশন পরে এই হাদিস সংকলন হয়েছে। বিজ্ঞ পাঠকেরা একটু ভেবে দেখবেন কী হাদিস সংকলনের পূর্বের এই বিগত বছরগুলোতে হাদিস বর্ণনাকারীরা কে কোথায় ছিলেন? মুসলিম সাম্রাজ্যের মানুষ, যারা এই সংকলন দেখেননি, জানতেন না, তারা এই হাদিস ছাড়া কীভাবে কোরআনের তাফসীর পড়েছিলেন? হাদিস ছাড়া কীভাবে জীবন যাপন করতেন? কে কতটা সহি মুসলিম হলেন? ভালো কথা, হাদিস সংকলন ছাড়াই তখন কিন্তু ইসলামের স্বর্ণযুগ। উমাইয়ারা তো এই সংকলনই দেখেনি এবং আব্বাসিয় খলিফাদের প্রথম দিকের কেউ দেখেনি। আব্বাসিয়দের পরের সময়কাল এই সংকলন পেয়েছে। এখন হাদিস সংকলনের উক্ত সময়ের যে আব্বাসিয় শাসক, এই সংকলিত হাদিসের সত্যতার বৈধতা দিলেন, সেই ক্ষমতা তাদেরকে কে দিলো? হাদিসতো সংকলিত হয়েছিলো মৌখিক রেফারেন্স থেকে। এখানে কী কারো কোনও ভুল হয়নি? ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত? এখন কোনটা ভুল কোনটা ঠিক এটা কে ঠিক করে দেবেন? হাদিস তো আল্লাহর কাছ থেকে আসা ঐশী বাণী নয়। মানুষের বাণী। আর মুহাম্মদের জীবনী যদি মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হতো, তাহলে যারা তার সাথে ছিলেন তার মৃত্যু পর্যন্ত, সেই খলিফারা, একে অপরের সাথে যুদ্ধে, দ্বন্দ্বে নিহত কেন হলেন? তার মেয়ের সাথেও যুদ্ধ কেন করলেন? তারা কী মুহাম্মদের জীবনী অনুসরণ করেননি? সেই চার খলিফাতো মুহাম্মদের নিত্য সঙ্গী ছিলেন। মুহাম্মদের চার খলিফাই যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়া বিবাদ করে, তাহলে সেই মুহাম্মদের মৃত্যুর তিনশ বছর পরের মৌখিক হাদিসের সংকলন মানুষকে কতটুকু সহি গাইড করবে?
যাইহোক, আমি বলছিলাম ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’র লেখক আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বিন ইয়াসার কথা। তিনি– অর্থাৎ, ইবনে ইসহাক, মুহাম্মদের যে প্রাচীনতম জীবনীটি রচনা করেন সেই মূল গ্রন্থও সংরক্ষণ করা হয়নি। সেই সময়ে তার জীবনীগ্রন্থকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ইবনে ইসহাক তার গ্রন্থের রেফারেন্স হিসাবে মাগাজি পুস্তকও ব্যবহার করেছেন। মাগাজি ছিলো আরবি সাহিত্যের প্রচলিত ধর্মযুদ্ধ প্রসঙ্গে বীরত্বগাথা ইতিহাস।
সেগুলো ঠিক কবে রচিত তার সঠিক তারিখ পাওয়া যায় না। হিজরি প্রথম শতকে মাগাজি ও অন্যান্য বিবরণীতে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। তারা তাদের জ্ঞান সম্পর্কে নোট লিখে গেছেন উত্তরপুরুষদের হাতে। ইবনে ইসহাক তার গ্রন্থে এদের নোট বিবরণী ও অন্যান্য সূত্রের সাহায্য নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে-
১. খলিফা উসমানের ছেলে আবান হিজরি ২০-১০০ (জন্ম-মৃত্যু)
২. উরওয়া ইবনে আল-জুবায়ের ইবনে আল-আওয়াম হিজরি ২৩-৯৪ (জন্ম-মৃত্যু)
৩. শুরাহ ইবনে সাদ (জন্ম-মৃত্যু জানা যায়নি)
৪. ওয়াহাব ইবনে মুনাববিহ হিজরি ৩৪-১১০ (জন্ম-মৃত্যু)
৫. আসিম ইবনে উমর ইবনে কাতাদা আল-আনসারি মৃত্যু আনুমানিক ১২০ হিজরি
৬. মুহাম্মদ ইবনে মুসলিম হিজরি ৫১-১২৪ (জন্ম-মৃত্যু)
৭. আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাজম মৃত্যু ১৩০ বা ১৩৫ হিজরি
৮. আবুল আসওয়াদ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে নওফেল মৃত্যু ১৩১ বা ১৩৭ হিজরি
৯. মুসা ইবনে উকবা হিজরি ৫৫-১৪১ (জন্ম-মৃত্যু)
এখানে দেখা যাচ্ছে ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’র অথেনটিকেশন সময়কাল বা সোর্স হাদিসের চেয়ে একটু শক্ত ভাবে দেয়া। ইবনে ইসহাকের গ্রন্থের চারটি অনুলিপি করা হয়েছিলো। যার মধ্যে তার ছাত্র আল বাক্কাই দুটি অনুলিপি করেছিলেন। সেই অনুলিপির একটি সম্পাদনা করেছিলেন ইবনে হিশাম। তার জন্ম ইরাকের বাসরায়, সাত-আল-আরব (কু্যেত এবং ইরানের মাঝামাঝি)। পরবর্তীতে তিনি ইজিপ্টে চলে যান। তার জন্মসাল জানা যায়নি (যদি কেউ জানেন’তো অনুগ্রহ করে জানাবেন) তার মৃত্যু ২১৮ হিজরিতে। তিনিও আব্বাসিয় খলিফাদের সময়ের লোক। হাদিস সংকলনের একটু আগের। যদিও এই সিরাতের যে ভার্সনটা আমাদের হাতে আছে সেটাও সম্পাদিত, সংকলিত সেই মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১৫০ বছরের পরেই। এবং আব্বাসিয় আমলেই লিখিত। তবুও এটি যে হাদিস সংকলনের পূর্বে, এটা ইসলামিক সোর্স থেকেই আমরা দেখতে পারছি। তাই আমি এই ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’কেই একটু বেশী অথেনটিক হিসেবে বিবেচনা করছি।
এবার আসি সেই পূর্বের প্রসঙ্গে। আদম থেকে মোহাম্মদের বংশানুক্রমিক সূত্রে। দেখি ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ; কী বলে। ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’ থেকে দেখতে পাই-
১. আদম ২. শীষ ৩. য়্যানুশ ৪. কাইনান ৫. মাহলীল ৬. য়্যারিদ ৭. ইদরিস ৮. মাতু ৯. লামিক ১০. নূহ (আ.) ১১. সাম ১২. আরফাখ শায ১৩. শালখি ১৪. আইবার ১৫. ফালিখ ১৬. রাউ ১৭. সারুগ ১৮. নাহুর ১৯. তারিহ ২০. ইব্রাহিম ২১. ইসমাইল ২২. নাবিত ২৩. য়্যাশজাব ২৪. ইয়ারব ২৫. তাইরাহ ২৬. নাহুর ২৭. মুক্কাউম ২৮. আদ ২৯. আদ ৩০. মাআদ নিজার ৩১. মুজার ৩২. ইলয়াস ৩৩. মুদারিকা (আমের) ৩৪. খুযাইমা ৩৫. কিনানাহ ৩৬. নজর ৩৭. মালিক ৩৮. ফিরে কু (কুরাইশ) ৩৯. গালিব ৪০. লুয়াই ৪১. কাব ৪২. কাব ৪৩. মুররা ৪৪. কিলাব ৪৫. কুসাই ৪৬. আবদে মানাফ ৪৭. হাশিম ৪৮. আব্দুল মুত্তালিব ৪৯. আব্দুল্লাহ ৫০. মুহাম্মদ (সা.)। অর্থাৎ, ৫০ জেনারেশন। তাহলে দেখা যাচ্ছে- আদম হলেন মোহাম্মদের ৫০ তম পূর্ব-পুরুষ।
- ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ – মুহাম্মদ
- ৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ – `আব্দ আল্লাহ
- ৪৯৭ খ্রিস্টাব্দ – আব্দ আল-মুত্তালিব
- ৪৬৪ খ্রিস্টাব্দ – হাশিম
- ৪৩৯ খ্রিস্টাব্দ – আব্দ মানাফ
- ৪০৬ খ্রিস্টাব্দ – কাসাই
- ৩৭৩ খ্রিস্টাব্দ – কিলাব
- ৩৪০ খ্রিস্টাব্দ – মুররাহ
- ৩০৭ খ্রিস্টাব্দ – কা’য়াব
- ২৭৪ খ্রিস্টাব্দ – লু’আহ
- ২৪১ খ্রিস্টাব্দ – গালিব
- ২০৮ খ্রিস্টাব্দ – ফিহর
- ১৭৫ খ্রিস্টাব্দ – মালিক
- ১৪২খ্রিস্টাব্দ – আন-নাদর
- ১০৯ খ্রিস্টাব্দ– কিনানাহ
- ৭৬ খ্রিস্টাব্দ – খুজাইমাহ
- ৪৩ খ্রিস্টাব্দ – মুদরিকাহ
- ১০ খ্রিস্টাব্দ – ইলিয়াস
- ২৩ খ্রিস্টপূর্ব – মুদার
- ৫৬ খ্রিস্টপূর্ব – নিজার
- ৮৯ খ্রিস্টপূর্ব – মাদ
- ১২২ খ্রিস্টপূর্ব – আদনান
আমি উপরের খ্রিস্টসালের তথ্যটি পেয়েছি নিচের লিংক থেকে । অতএব কারো যদি প্রশ্ন থাকে এই লিংকের সাথে যোগাযোগ করে তথ্যসূত্র নিশ্চিত করে নেবেন।
যাইহোক, এই লিংকের তথ্য ভুল অথবা সঠিক হলেও আমার মনে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে তার উত্তর মেলে না।
আপাতত এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই যদি দেখি, তাহলে দেখা যাচ্ছে- মুহাম্মদের জন্মের পূর্বের ২১ জেনারেশন হচ্ছে ৬৯২ বছর পূর্বের সময়কাল। এখন এই ২১ দিয়ে যদি ৬৯২ বছরকে আমি ভাগ দেই তাহলে এই ২১ জেনারেশনের পিতার থেকে পুত্রের জন্মের একটি ধারাবাহিক গড় বয়সের ব্যবধান পাবো। আর সেটা আসছে ৩৩ বছরের কাছাকাছি। অর্থাৎ, পিতার জন্মের থেকে পুত্রের জন্মের ব্যবধান গড়ে ৩৩ বছরের মতো। এখন এই যুক্তিতে ৫০ জেনারেশনে পিতা থেকে পুত্র যদি প্রতি ৩৩ বছর পরপর গড়ে জন্মায় তাহলে কত বছর লাগবে টোটাল। এখানে একুশ জেনারেশনের যদি ৬৯২ বছর সময় লাগে, এবং এর পিতা থেকে পুত্রের জন্মের ব্যবধান বয়সের গড় যদি হয় ৩৩ তাহলে- ৫০ জেনারেশনের ক্ষেত্রে ৫০ গুণ ৩৩= ১,৬৫০ বছর লাগবে প্রায়। অর্থাৎ, আদম ছিলেন মোহাম্মদের ১,৬৫০ বছর আগের মানুষ। অর্থাৎ, মুহাম্মদের জন্ম যদি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হয় তাহলে খৃষ্টপূর্ব ১,০৮০ সালের কাছাকাছি সময়ে আদমের জন্ম। তাহলে এই আদমের জন্মের অনেক আগেই ইজিপ্টে ফারাওরা সম্রাট, পিরামিড অনেক হাজার বছরের পুরানো হয়ে গেছে, গ্রীসে বিজ্ঞান চর্চা হচ্ছে, ভারতে সংস্কৃত শিক্ষা ও লেখাপড়া হচ্ছে, সাহিত্য হচ্ছে গান হচ্ছে। চীনের ডায়েনেস্টি চীন শাসন করছে।
আর যদি ধরি, আদম থেকে মোহাম্মদ পর্যন্ত ৫০ জেনারেশনের প্রতি পিতা থেকে পুত্রের জন্মের গড় ব্যবধান ১০০ বছর হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি পিতা তার একশ বছর বয়সে তার প্রথম পুত্র জন্ম দেবেন, এবং তার পুত্রও তার প্রথম পুত্র জন্ম দেবেন একশ বছর বয়সে। তাহলে হিসাবটা কেমন দাঁড়ায়? ৫০ গুণ ১০০ =.৫০০০ বছর। অর্থাৎ, মোহাম্মদের জন্ম যদি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হয় তাহলে আদমের জন্ম – খ্রিস্টপূর্ব ৪,৪৩০ সালে। অর্থাৎ, আদমের জন্মের আগেই, মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, মেসোপটমিয়ান সভ্যতা তৈরি হয়ে গেছে।
আর যদি ধরি, আদম থেকে মোহাম্মদ পর্যন্ত ৫০ জেনারেশনের প্রতি পিতা থেকে পুত্রের জন্মের গড় ব্যবধান ১০০০ বছর হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি পিতা তার এক হাজার বছর বয়সে তার প্রথম পুত্র জন্ম দেবেন, এবং তার পুত্রও তার প্রথম পুত্র জন্ম দেবেন এক হাজার বছর বয়সে। তাহলে হিসাবটা কেমন দাঁড়ায়? ৫০ গুণ ১,০০০ = ৫০,০০০ বছর। অর্থাৎ, মোহাম্মদের জন্ম যদি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হয় তাহলে আদমের জন্ম – খ্রিস্টপূর্ব ৪৯,৪৩০ সালে। ইম্প্রেসিভ, বাট নট এনাফ। সো আদমের জন্ম যদি ৫০ হাজার বছর পূর্বেও হয় তাহলেও পৃথিবীতে মানুষ তার আগে থেকেই চিত্রকলা শুরু করে দিয়েছে। কিছু হেডিং এবং নিউজ দিলাম। বিজ্ঞ পাঠক ভেরিফাই করে নেবেন।
- People were keeping warm by a fire in a rock shelter at least 56,000 years ago, according to new analysis of what may be the oldest known human record in the Americas.
http://www.abc.net.au/science/articles/2003/11/17/990775.htm
- Advancements in carbon dating technology reveal that these cave paintings were first created around 65,000 years ago –longbefore modern humans arrived in that part of Europe.
- A processing workshop for this ochre was uncovered in 100,000 year-old areas of the cave in 2008, https://www.oldest.org/culture/cave-arts/
এতো গেলো গুহা চিত্রের কথা। এবার আসি মানুষের হাড় বা ফসিলের কথায়।
- The oldest known footprints, however, were found at Laetoli in Tanzania and come from the next geological time interval, the Pliocene. These are some 3.66 million years old and even more human-like than those of Trachilos. http://www.newsweek.com/trachilos-footprint-crete-human-evolution-million-658287
এখন আমি হুজুরের কথা চিন্তা করছি। ‘সিরাতে রাসুলুল্লায়’তো আদম মোহাম্মদের ৫০ জেনারেশন আগের। এখন ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ’তে উল্লেখিত তথ্যকে যদি গোঁজামিল দিয়ে বয়স মিলাতে চেষ্টা করি তাহলে হিসাবটা কী দাঁড়ায়? ৩ মিলিয়ন মানে হচ্ছে ৩০ লক্ষ বছর। এখন এই ৩০ লক্ষকে যদি ৫০ দিয়ে ভাগ দেই তাহলে প্রতি পিতা থেকে পুত্রের জন্মের ব্যবধান পাবো। আসেন দেখি কত হয়? ৬,০০০ বছর। অর্থাৎ, প্রতি পিতা তার ছয় হাজার বছর বয়সে তার প্রথম পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন। আর যদি প্রতি পিতা ৩৩ বছর বয়সে পুত্রের জন্ম দেন (এটাই লজিক্যাল লাগে) তাহলে হিসাব দাঁড়ায় ৩০ লক্ষ ভাগ ৩৩ = ৯০,৯০৯ জেনারেশন।
এখন আমাকে বিজ্ঞ পাঠক একটু বুঝিয়ে দেবেন কি আমি আদম থেকে মুহাম্মদের ৫০ জেনারেশনের হিসাবটা কোন যুক্তিতে গ্রহণ করবো? মানুষের উৎপত্তি যে আদম থেকে এটা কীভাবে মানবো? একটু বুঝিয়ে দিলে আমার প্রশ্নের উত্তরটা পেতাম।
দেখেন, আলেকজান্ডারের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে, মৃত্যু খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে। তার আয়ু ছিলো ৩৪ বছর। তিনি কিন্তু মুহাম্মদের ৯২৬ বছর আগের মানুষ।
এরিস্টটলের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ সালে, মৃত্যু খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ সালে। তার আয়ু ছিলো ৬২ বছর। তিনিও মোহাম্মদের ৯৫৪ বছর আগের মানুষ।
গৌতম বুদ্ধের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ সালে, আর মৃত্যু খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালে। তার আয়ু ছিলো ৮৩ বছর। তিনিও মোহাম্মদের ১০৫৩ বছর আগের। উপরের একটি লিংকে মোহাম্মদের ২১ জেনারেশনের একটা টাইম লাইন ছিলো না? সেই হিসাবে প্রায় কম বেশী ৩০ জেনারেশন আগের।
মোহাম্মদের জন্মের প্রায় ৫৬৬ বছর আগে জন্মে যিশুও কিন্তু মৃত্যু বরন করেছেন ৩৩/৩৪ বছর বয়সে।
চীনের কনফুসিয়াস জন্ম নেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ সালে। এবং মৃত্যু বরণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৯ সালে। তার আয়ু ছিলো ৭১/৭২ বছর। মুহাম্মদের জন্মের ১১২১ বছর আগে।
কেন এইসব মানুষের আয়ু বা সময় কাল বলছি? দেখুন বিজ্ঞ পাঠক। প্রাচীন কালে কারো বয়েসই অতিরঞ্জিত ছিলো না। আমি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের, বিখ্যাত মানুষের বয়েস বা আয়ুষ্কাল দেখিয়ে এটাই বলতে চেয়েছি, আদম থেকে মোহাম্মদের জেনারেশন যদি ৫০ জেনারেশন হয় তাহলে আদম এদেরই কম বেশী সমসাময়িক হবেন। আর তারপরেও যদি শুধু ধর্ম গ্রন্থ বলেছে বলেই আপনারা অযৌক্তিক ভাবে মোহাম্মদের পূর্বের মানুষের বয়েস বেশী বলেও কল্পনা করেন, তাহলে আমিতো হিসাব দিয়েছিই। ১ হাজার বছর করে প্রত্যেকের আয়ু ধরলেও ৫০ জেনারেশনের বহু, বহু আগে থেকে মানুষ গুহায় চিত্র আঁকছে। ৩০ লক্ষ বছরেরও আগের মানুষের মুখের মাথার হাড় পাওয়া যাচ্ছে। অতএব, ভেবে দেখুন ধর্ম আপনাদের কীভাবে বছরের পর বছর বোকা বানিয়ে রাখে। আদমের কথা মুসলমানরা সবাই জানে, সবাই মানে। কিন্তু আদমকে নিয়ে কেউ একটুও ভেবে দেখে নাই।
আদম স্বর্গ থেকে পড়েনি, আর হাওয়াও আদমের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি নয়। মানুষের বিবর্তনে পৃথিবীর শত শত কোটি বছর সময় লেগেছে। শত শত কোটি বছর। এই পৃথিবীতে যে পানি দেখছেন, এই পানি তৈরি হতেও মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে। এই বায়ুমণ্ডল, এই পাথর, মাটি, গাছ, অক্সিজেন, সমুদ্র, পাহাড়, বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের পৃথিবীর বিবর্তনে সৃষ্টি। কিছুই স্বর্গ থেকে নামেনি। ওভার নাইট সৃষ্টি হয়নি। আপনার বাসার বাথরুমের একটি পরিষ্কার বালতিতে জল নিন। সেই জল না নেড়েচেরে সাত দিন রেখে দিন। দেখবেন, সেখানে খুব ছোট ছোট পোকা কিলবিল করছে। এটাই হচ্ছে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রাণের উৎপত্তির প্রমাণ। ডায়নেসরের মতো প্রাণীও বিবর্তনের ধারায় এসেছে আবার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ওরা কিন্তু ১ কোটি ৬৫ লক্ষ বছর পৃথিবীতে ছিলো। আর মানুষ মাত্র ৪০ লক্ষ বছর হবে। এই বিবর্তনে গাছও আছে, সাগরের নিচের মাছও আছে। কে এলো আর কে গেলো এতে পৃথিবীর কিছুই আসে যায় না। পৃথিবীর নিজের বয়েস ৫০০ কোটি বছরের বেশী। সে এই লম্বা সময়ে অনেক কিছুই দেখেছে। দেড় দুই হাজার বছর আগে আরবের লোকেরা কী ভাবলো আর লিখলো যে মানুষ স্বর্গ থেকে মাটিতে পড়েছে, আর মেয়ে মানুষ হাওয়ার সৃষ্টি আদমের পাঁজরের হাড় থেকে, এইসব হাস্যকর কথায় পৃথিবীর কিছুই যায় আসে না। সূর্যের আলোর তাপ, তার নিজের অক্ষের এবং কেন্দ্রের প্রতি ঘূর্ণন তার একক নির্দিষ্ট শক্তিই পৃথিবীর কাছে বিবেচ্য বিষয়। এন্টিবায়োটিক ঔষধও কিন্তু নেক্সট জেনারেশন ভাইরাসের বিবর্তনকে জেনে বুঝে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নিরীক্ষণ করেই বানাতে হয়। শুধু মানুষ নয়- আজকের পৃথিবীতে সব কিছুই শত কোটি বছরের অতি ধীর এক বিবর্তনের ফল।
পৃথিবীর ইতিহাস পড়ুন। এখনতো ইন্টারনেট আছে। পৃথিবীর সৃষ্টি, বিবর্তনের উপর অনেক ডকুমেন্টরি আছে, ওসব দেখুন। মহা-বিশ্ব নিয়ে পড়ুন, দেখুন। আর কতকাল গন্দম ফল খেয়ে মানুষ পৃথিবীতে এসেছে এইসব বিশ্বাস করবেন। আচ্ছা করেন সমস্যা নেই। কিন্তু, মহা-বিশ্বের সৃষ্টি, পৃথিবীর সৃষ্টি, প্রাণের বিবর্তন এইসবও দেখুন, জানুন। তারপর না হয় যা ইচ্ছে আপনার বিশ্বাস করবেন। জেনে রাখেন, এই মহা-বিশ্বের বয়েস ১৩.৫ বিলিয়ন ইয়ার্স। এই মহা-বিশ্বে আমাদের গ্যালাক্সির মতো আর ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে। আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে। আমাদের গ্যালাক্সির মধ্যে আমরা যে সৌরজগতে থাকি, সেটাকে গ্যালাক্সির ম্যাপে দেখতে গেলে পিন পয়েন্ট করতে হয়। একটি পিন দিয়ে বোঝাতে হয় এখানে কোথাও আমাদের সৌরজগত। যেই সৌরজগতে, এত গ্রহ-উপগ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। যে সূর্যটা আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড়। আমাদের গ্যালাক্সিতে এমন সূর্যের মতো নক্ষত্র আছে বিলিয়ন বিলিয়ন। ৩৪ হাজার কোটি আলোকবর্ষ আমাদের এই স্পাইরাল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কোমরের মাপ। এক আলোকবর্ষ সমান কত জানেন? আলো এক সেকেন্ডে যায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার মাইল। সেটাকে ৬০ দিয়ে গুণ করলে আপনি পাবেন আলোর ১ মিনিট পথ অতিক্রম করার হিসেব। এবার এই সংখ্যাটাকে আবার ৬০ দিয়ে গুণ করেন। এখন পেলেন আলোর এক ঘণ্টা পথ অতিক্রম করার হিসেব। এখন এটাকে ২৪ দিয়ে গুণ করেন। এখন পেলেন আলোর একদিন পথ অতিক্রম করার হিসাব। এখন এটাকে ৩৬৫ দিয়ে গুণ করেন। এখন পেলেন আপনি আলোর এক বছরের পথ অতিক্রম করার হিসাব। আর এই এক বছরে আলো যতদূর গেলো, সেই দূরত্বটা হচ্ছে মহাকাশের দূরত্ব মাপার ক্ষুদ্রতম একক এক আলোকবর্ষ। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কোমরের মাপই ৩৪ হাজার কোটি আলোকবর্ষ। মানুষ যদি আলোর ক্ষুদ্রতম কণা ফোটনের গতিতেও এই দূরত্ব অতিক্রম করতে চায়, তাহলেও মানুষের সময় লাগবে ৩৪ হাজার কোটি বছর। সেখানে মহা-বিশ্বের বয়েস ১৩.৫ বিলিয়ন। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের বয়েস পেলেও মানুষ এটা পারবে না। সো, আমাদের গ্যালাক্সির পাশেই রয়েছে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, এমন গ্যালাক্সি মহাকাশে ছড়িয়ে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন। এই বিলিয়ন গ্যালাক্সির কাছে আমাদের এই ৩৪ হাজার কোটি আলোকবর্ষ সাইজের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কোনও দাম নাই। এই গ্যালাক্সিও বিন্দুর মতো। ঠিক যেভাবে আমাদের গ্যালাক্সিতে সৌরজগত একটি বিন্দু, আর এই সৌরজগতে পৃথিবী একটি বিন্দু, আর এই পৃথিবীর কাছে আমরা খালি চোখে দেখার চেয়েও বিন্দু। পৃথিবীর কোনও বস্তু কখনো আলোর গতিতে মুভ করতে পারে না। করতে গেলে সেই বস্তুর ভর হবে অসীম। সেই বস্তু নিজের গতিতে যে তাপ উৎপন্ন হবে তাতেই সে সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যাবে। একটি সহজ উদাহরণ দেই। ধরুন একটি একে৪৭ এর গুলি আপনি যদি আপনার হাতে ধরে আপনার বন্ধুর গায়ে স্লো মোশনে আদর করে স্পর্শ করেন, আপনার বন্ধু কি মরে যাবে? না, সেতো ব্যথাও পাবে না। কারণ, আপনি জোড়ে তাকে আঘাত করেননি। আপনার হাতে ধরা গুলিটি ধীরে ধীরে আপনার বন্ধুর গায়ে আলতো ছুঁইয়েছেন। এখন এই গুলিটিই যদি আপনি একে৪৭-এ লোড করে তার মাথায় স্যুট করেন। তাহলে কী হবে? হ্যাঁ, নিশ্চিত আপনার বন্ধুটি গুলি খেয়ে মারা যাবে, এবং ছিটকে পড়বে। কারণ এই রাইফেলের স্প্রিঙে তৈরি হওয়া গুলির যে থ্রাস্ট, যা আপনার বন্ধুকে ছিটকে ফেললো, সেটা তৈরি হলো গুলিটির গতির কারণে। যেটা আপনার বন্ধু সইতে পারলো না। রাইফেলের এই গতিও আলোর চেয়ে অনেক অনেক কম। তাতেই সেই ছোট্ট একটি বুলেটের কী অসম্ভব শক্তি! কিন্তু এই বুলেটেরও সাধ্য নেই সে আলোর গতিতে যায়। আর মানুষতো অসম্ভব। এই পৃথিবীতে আলোর চেয়ে দ্রুত গতির কিছুই নেই, কিছু হতেও পারে না। এইসব আলোর গতির হিসাব, বস্তুর ভর, এবং বিজ্ঞানের নানা সূত্র মেনেই বিজ্ঞানীরা মহাকাশে স্পেসশিপ পাঠাতে সফল হন। স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ করেন। এবং মানুষ এর উপকার পায়। এই মহাবিশ্বের মূলশক্তি একক ও নির্দিষ্ট। এই শক্তিই শত শত কোটি বছর ধরে গ্যালাক্সি গড়ছে আর ভেঙে দিয়ে আবার গ্যালাক্সি তৈরি করছে। নক্ষত্র তৈরি হচ্ছে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সুপারনোভা হচ্ছে, ব্ল্যাকহোল হচ্ছে। কোথাও সুন্দর কিছু হচ্ছে না। কেউ এই মহাকাশের বিপুলতার মধ্যে- গন্দম ফলের গাছ লাগিয়ে বসে নেই সিংহাসনে। স্বর্ণের মহল নেই, সত্তুরটা হুর পরী নেই আপনার জন্য। আঙুরের খেজুরের গাছ নেই, দুধের নহর, জলের নহর নেই। কেউ বিছা, সাপ, আগুনের দোজখ সাজিয়ে বসে নেই। মহাকাশ এক কল্পনাতীত মহাজাগতিক ভয়াবহ সৃষ্টি ও ধ্বংসের নিরন্তর খেলা। এর কাছে এই পৃথিবীর আলাদা কোনও অস্তিত্ব নেই। পৃথিবীর আয়ু এই মহাবিশ্বের কাছে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের মতো। আপনার বালতির পানিতে তৈরি হওয়া সাত দিনের ছোট পোকার চেয়েও ছোট, অর্থহীন মূল্যহীন। পৃথিবীর বয়সের কাছে তেমনি মানুষের, হোমোসেপিয়েন্সের ইতিহাসও ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের চেয়েও ক্ষুদ্র। সেখানে আদম? আপনিই বলুন…
বোনাস:
নভেম্বর ৯, ২০২২; ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
লেবু যখন অতিরিক্ত কচলানো হয় ,তখন তিতা হয়ে যায় !ইসলামকে এতবেশী ব্যবচ্ছেদ করা হচ্ছে যে এখন এটা মানুষ না ধর্ম কিংবা শান্তি না অশান্তি নির্নয় করা যাচ্ছেনা !অথবা সত্য না অসত্য বোঝা মুশকিল !