নরেন্দ্র মোদি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে মোমবাতি ফাইট চালায়, ভারতে করোনার চিকিৎসায় গোমূত্র ব্যবহৃত হইতেছে, -এইসব নিয়া বাঙালি ফেসবুকারদের কত গবেষণা! অথচ, সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুত্ববাদী মোদির সরকার ১৮ লাখ কোটি রূপীর যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেইখানে ব্যবসায়ীদের জন্যে কিছু নাই বলে অল ইণ্ডিয়া শিল্প সংস্থা বিশাল প্রতিবাদ জানিয়েছে। তো সেই ১৮ লাখ কোটি রূপি কি পার্পাসে খরচ হবে? দেশের সমস্ত ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী- প্রত্যেকের জন্যে ৬০ লাখ রূপী করে বীমা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে করোনায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে গেলে তার চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে, মারা গেলে পরিবার না খেয়ে মরবে না- এই নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে। আর কি কি করা হচ্ছে?
– ৮০ কোটি নিম্নবিত্ত মানুষকে আগামি তিন মাস ৫ কেজি করে আটা বা চাল এবং এক কেজি করে ডাল দেয়া হবে।
– এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই দেশের ৮ কোটি ৭০ লাখ গরীব চাষীকে ২০০০ রূপি দেয়া হবে
– মহাত্ম্যা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নামে ওদের একটা কর্মসূচি আছে যার মাধ্যমে ৫ কোটি গরীব পরিবার দৈনিক ১৮২ রূপী ভাতা পেত, সেগুলোর মাধ্যমে যে কাজ তাদের করতে হতো- এই তিনমাসে তা করা হোক বা না হোক, দৈনিক ২০২ রূপী তারা পাবে (এতে মাসে ২০০০ রূপী আয় হবে)
– ২০ কোটি গরীব নারীর জান ধন নামে একাউন্ট আছে, প্রত্যেক একাউন্টে প্রতি মাসে ৫০০ রূপী করে দেয়া হবে সামনের তিন মাস
– ৩ কোটি বৃদ্ধ, বিধবা নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রত্যেককে এককালীন ১০০০ রূপী দেয়া হবে
– ৬৩ লাখ স্ব-নির্ভর ব্যক্তি (বাংলাদেশেও এরকম বিজ্ঞাপন দেখা যেত- হাস মুরগী পালন করে, বা ছাগল পালন করে বা ছোটখাট ব্যবসা করে ভিখারি অবস্থা থেকে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে- এরকম) বিনা সুদে ১০লাখ থেকে ২০ লাখ রূপী ঋণ পাবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কমেডিয়ান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যারে উঠতে বসতে গালি না দিলে বাঙালির প্রগতিশীল হওয়া কঠিন হইয়া যায়, সেই কট্টর রক্ষণশীল ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ২ ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্যাকেজ করেছে, সেটায় সবার আগে হাসপাতালগুলোকে ১৩০ বিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে। তারপরেই আছেঃ
– স্টেট এণ্ড লোকাল সরকারগুলোকে করোনা মোকাবেলার জন্যে দেয়া হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
– ২৫০ বিলিয়ন ডলার গরীব তথা লো ইনকাম মানুষের একাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে। যার বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের নীচে সে পাবে ১২০০ ডলার, যে পরিবারের আয় বার্ষিক দেড়লাখ ডলারের নীচে তারা পাবে ২৪০০ ডলার, সেই সাথে প্রতি সন্তানের জন্যে ৫০০ ডলার।
– ২৫০ বিলিয়ন ডলার দেয়া হচ্ছে বেকার ইন্সুরেন্স বেনেফিট অব্যাহত রাখার জন্যে
– ৩৫০ বিলিয়ন ডলার লোন হিসেবে দেয়া হবে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের
– ৫০০ বিলিয়ন ডলার লোন হিসেবে দেয়া হবে ভঙ্গুর ও দেউলিয়া হতে যাওয়া কোম্পানিগুলোকে
পাকিস্তান, মানে ৭১ এর পাক হানাদার, যাদের গালি না দিলে যেকোন সময় রাজাকার খেতাব জুটে যেতে পারে, আজকের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ফাইটের অনুপ্রেরণা পাইতে পাকিস্তান নামক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা স্মরণ করানোটা আজকের প্রগতিশীল রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার, সেই পাকিস্তান যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখানে কি আছে? সবার আগে ডাক্তারদের যাবতীয় সুরক্ষার জন্যে ৫ হাজার কোটি রূপি বরাদ্দ রেখেছে। পাকিস্তানে এই আউটব্রেকের শুরুতেই ডাক্তারদের গার্ড অব অনারও দেয়া হয়েছে। ডাক্তার, নার্স সহ সমস্ত চিকিৎসাকর্মীদের দেশের ফার্স্ট সিটিজেন হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের সুরক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব নেয়া সরকারের ফার্স্ট প্রায়োরিটি বলা হয়েছে (আসলে কতখানি পারছে, করছে সমালোচনা থাকতে পারে, আছে- অন্তত স্বীকৃতিটা তারা দিচ্ছে)! আর কি কি করছে তারা?
– গোটা দেশের শ্রমিকদের জন্যে ২০ হাজার কোটি রূপি, সমস্ত কর্মহীন শ্রমিকের বেতন সরকার দিয়ে দিবে (কোন ঋণ না), এবং কেউ কোন শ্রমিককে ছাটাই করতে পারবে না
– রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর জন্যে ১০ হাজার কোটি টাকা রেখেছে, এটাও কোন ঋণ না, বা থোক বরাদ্দও না। এই শিল্প রপ্তানির ক্ষেত্রে সাথে সাথেই ট্যাক্স রিটার্ণ পাবে। আর, রাষ্টের কাছে যে লোন আছে তাদের, সেগুলোর সুদ প্রদান স্থগিত থাকবে
– ছোট ও মাঝারি শিল্প আর কৃষির জন্যে রেখেছে ১০ হাজার কোটি রূপি! তাদের যাবতীয় ঋণগুলোর সুদ স্থগিত থাকবে। খুব অল্প সুদে ঋণ নিতে পারবে। কৃষকদের জন্যে যাবতীয় কৃষিপণ্য খুবই কমদামে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে
– গরীব স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্যে ১৫ হাজার কোটি রূপি। এসব পরিবারে আগামি চারমাস ৩০০০ রূপি করে প্রতি মাসে দেয়া হবে
– ৫ হাজার কোটি রূপি রেখেছে সবসময়ের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ বজায় থাকে। ২৮ হাজার কোটি রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকদের কাছ থেকে যেকোন সময়ে গম সহ খাদ্যশস্য কিনে রাখতে পারে
– এছাড়াও ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিনের দাম ১৫ রূপি কমানো হয়েছে। যাতে সরকারকে গুনতে হবে সাড়ে ৭ হাজার কোটি রূপি। ইলেকট্রিসিটি ও গ্যাস বিলও কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে!
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নেয়া পদক্ষেপগুলো বিস্তারিত আর বলছি না। ভারতে অলরেডি লাখের উপরে টেস্ট করে ফেলেছে, পাকিস্তানও ৪০-৫০ হাজার টেস্ট করেছে। ইরানে, ভারতে ইনডোর স্টেডিয়ামে বেড পেতে স্বতন্ত্র হাসপাতাল বানানো হয়েছে। সবাই কয়টা আইসিইউ আছে, কয়টা ভেন্টিলেটর আছে সেইটার ঘোষণা না দিয়া, আরো ভেন্টিলেটর কোথায় পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি কোম্পানিগুলো গাড়ি উৎপাদন বাদ দিয়ে ভেন্টিলেটর উৎপাদন করছে, ফোর্ড ঘোষণা দিয়েছে ১০০ দিনে ৫০ হাজার ভেন্টিলেটর উৎপাদন করবে। ১০০ দিন অনেক দেরি দেখে, ট্রাম্প চীন থেকে জরুরী ভিত্তিতে ১০০০ ভেন্টিলেটর নিয়ে এসেছে। কেউ বড় গলায় ঘোষণা দেয় নাই- আমাদের ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে (যার মধ্যে একজেলায় থাকা ১৬টাই নষ্ট বলে খবর এসেছে)! উন্নত বিশ্বের কথা বাদ দেই, যুধ বিধ্বস্ত লিবিয়া, যেখানে এখনো গোলাগুলি চলে- সেখানেও সরকার একটা মেডিক্যাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করেছে, সেখানে ২৪ ঘন্টা পিপিই এর গাউন, থ্রি লেয়ার সার্জিকাল মাস্ক, হেড-কাভার, শু কাভার তৈরি হচ্ছে! ২৪ ঘন্টায় শিফটে কাজ করছে, কোন শ্রমিকই ওভার টাইম, নাইট আওয়ার ডিউটি – এসব নিচ্ছে না!
আর, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিচ্ছে- ডাক্তারদের পিপিই দরকার নাই। তার পা চাটা পোষ্য সেলিব্রিটিরা ডাক্তারদের গালি দিয়া কইতেছে, উন্নত বিশ্বে নাকি সবাই পিপিই ছাড়াই মাথায় পলিথিন গার্বেজ ব্যাগ লাগাইয়াই ঝাপাইয়া পড়ছে! আমাদের ডাক্তাররা নাকি সব্বাই পালাইয়া ঘরের কোণে বসে আছে! অথচ, দেশে যে ১৬৪ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে তার মধ্যে ৯ জন মানে ৫.৪৮%-ই হচ্ছে এই পালিয়ে থাকা ডাক্তার! দুনিয়ার দেশে দেশে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো অধিগ্রহণ করে মানুষরে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে, আর এইখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কেন রোগী ফিরাইয়া দিচ্ছে, সেইজন্যে এইসব পোষ্যরা সেই ডাক্তারদেরই গালাইতেছে! ইউকে’র সাড়ে ৭ লাখ স্বেচ্ছাসেবীদের গল্প শুনায়, অথচ কয় না ইউরোপে কাউরে পরিবারে বৃদ্ধ বাপ মা/ শ্বশুর শাশুড়ির সাথে বাস করতে হয় না! ডাক্তারদের পরিবারের কথাটা মাথায় রাখতে পারছে বলেই, করোনার ডিউটি করা ডাক্তারদের ভারতে তাজ হোটেলের মত হোটেলে রাখতেছে, এই সব উদাহরণ এনাদের চউক্ষে ঢুকে না! ডাক্তারদের মত মানুষ যদি দেশে বেশি থাকতো, তাইলে নাকি দেশ স্বাধীন হইতো না, কৃষকরা নাকি কাছা মেরে যুদ্ধ না করে বলতো, “বুট দাও, ল্যাঙট দাও”! এই চেতনাবাজ দালালরা মুক্তিযুদ্ধরেও টাইনা আনে, কিন্তু কোন মুক্তিযোদ্ধা রাইফেল, গোলা বারুদ বাদে, ট্রেনিং বাদে সম্মুখ সমরে নামছিলো, সেইটা কিন্তু কইলো না! দালালদের খুব কষ্ট, ডাক্তাররা কেন ফেসবুকের জানালা দিয়া প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে! ভীতু কাপুরুষের মত মুখে কুলুপ এটে থাকুক সবাই এইটা এদের প্রত্যাশা!
এইসব বিবেচনা করে, একটা ব্যাপার মনে হইছে! এখন থেকে হাসিনারে গালি না দিয়া যারা মোদি, ট্রাম্প, পাকিস্তানরে নিয়া গালাগালি করবে, ট্রল করবে- তাদেরকে হাসিনার পায়ের সাথে পার্মানেন্টলি বাইন্ধা রাখা দরকার, যাতে তারা কন্টিনিউয়াসলি সেইখানে চুম্মা খাইতে পারে। আর, যেইসব দালাল পলিথিন ব্যাগ মাথায় দিয়াই ডাক্তারদের ঝাপাইয়া পরতে আহবান জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা দেখলে বীরপুঙ্গবের মতন খাড়াইয়া যায় এবং যেইসব দালালরা এইসব গার্বেজ লেখাপত্র লাইক শেয়ার মারে- তাদের সবগুলারে হাসিনার পাছার সাথে কইষা বাইন্ধা রাখা দরকার; যাতে ইমিডিয়েট যত ময়লা আবর্জনা দুগন্ধ বাইর হয়, সব সাথে সাথে জিহবা দিয়া চাইটা সাফ করবার পারে …
কিছু নিউজ পড়ে নেয়া যাক:
১) যুগান্তর: বিমানবন্দরে আটকে আছে টেস্টিং কিট পিপিই
(আওয়ামী সরকারের চাপে যুগান্তর এই নিউজটা সরিয়ে ফেলেছে)
২) প্রিয়ডটকম: বিমানবন্দরে আটকে আছে টেস্টিং কিট ও পিপিই
৩) পূর্বপশ্চিম: বিমানবন্দরে আটকে আছে টেস্টিং কিট ও পিপিই