০
১৪৮৬ বার পঠিত
আফগানিস্তানে নতুন এক রত্নভাণ্ডারের খোঁজ মিলেছে! অতীত চলচ্চিত্র আর অন্যান্য ডকুমেন্টরি ফিল্ম পুনরুদ্ধার।
ধন্যবাদ জানাই হাবীবুল্লাহ আলী’কে তাঁর জীবন পণ করে এই অমূল্য রত্নভাণ্ডারকে আগলে রাখার জন্য। আজ তাঁর কারণে ওই বিবিধ রত্নভাণ্ডার আজ আবারও আলোর মুখ দেখবে ডিজিটালাইজডভাবে।
Afghanistan rediscovers old films, rescued from the Taliban (AFP)
ইউটিউব লিংকের উপরে ক্লিক করে আলাদা ট্যাবে ওপেন করে ভিডিওটি দেখুন
ঠিক কী ঘটেছিল?
নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি পাকিস্তানের আশ্রিত , সৌদির পোষ্য তালিবান এর দল দখল নেয় আফগানিস্তানের। প্রথমেই এই প্রাণীগুলো আফগান সরকারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ফিল্ম সংস্থায় হানা দেয়। উদ্দেশ্য, যত প্রামাণ্য কিছু চলচ্চিত্র আছে তা ধ্বংস করে ফেলা।
তালিবান এর জঙ্গী প্রাণীরা এসে প্রায় ২ ট্রাক ভর্তি মুভি আর ভিডিও পুড়িয়েছিল, কিন্তু হাবিবুল্লাহর বুদ্ধির কাছে তা হার মেনেছে। স্বাভাবিক, ছাগল আর মানুষ কী এক আইকিউ লেভেলের হয় ?
হাবীবুল্লাহ আলী নিজের জীবন বাজি রেখে ওই রিলগুলো সরিয়ে ফেলেন। আজ তিনি আনন্দের সাথে গর্বের সাথে বলতে পারছেন , এগুলো না রাখতে পারলে তার বর্তমান আর আগামী প্রজন্ম প্রকৃত আফগানিস্তানের ছবি সমন্ধে জানতেই পারতো না।
হাবীবুল্লাহকে তালিবান তথ্য আর সম্প্রচার দফতরের মন্ত্রী বলেছিল, একটা ফিল্ম যদি এই বাড়িতে পাই তা হলে তোমায় খুন করবো। নিষ্কম্প চোখে তিনি বলেছিলেন,
“আপনি চাইলেই করতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার কাছে একটাও ফিল্ম নাই”
তালিবান প্রাণীগুলো তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এর সময়ের রাজত্ব করার মধ্যে বেশ কিছু ভিডিও রিল জ্বালাতে পারলেও হাবিবুল্লাহর লুকিয়ে রাখা ৭ হাজার রিল এর কোন খবর পায় নি। উনি সেগুলো কাবুলের নানান জায়গায় বিভিন্ন বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
আজ দুই দশক পরে এই রিলগুলো ডিজিটালাইজড হচ্ছে, ওয়েবে আর সাধারণ মানুষের দেখার জন্য। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী আফগান সিনেমার বেশিরভাগ ভালোবাসার যা আমরা জানি না। না, যুদ্ধের না। তাঁর মতে এই ভিডিওগুলো এলে মানুষ বুঝবে, আফগানরা শান্তি চাইছিল বা চায়।
ষাটোর্ধ আলী জানান তিনি কীভাবে এগুলো বাঁচাতে পেরেছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, তিনি ওগুলো ক্যানে ভরে, পিপের মধ্যে রেখেছিলেন আর উপরে ইচ্ছা করে লিখে রেখেছিলেন ভারতীয় আর হলিউড মুভির নাম। এরপরেও তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন না তাই রাখার জায়গার বাইরে থেকে ইটের দেওয়াল তুলে রেখেছিলেন আবার অনেকগুলো ফলস সিলিং বানিয়ে ওটার উপরে রেখেছিলেন।
কী ধরনের বিশাল সংগ্রহ?
এককথায়, অসাধারণ অন্তত যা জানতে পারছি, ১৬ মিলিমিটার এর ভিডিও ধারণ আছে প্রায় ৩২ হাজার ঘণ্টার! ৮ হাজার ঘণ্টার ৩৫ মিলিমিটার এর ভিডিও আছে। এখন এর সূচি মানে ইনডেক্সিং হচ্ছে। তাছাড়াও সাধারণ জনগণের কাছ থেকেও তারা পাচ্ছেন এই ধরনের আরো অনেক জিনিশ, যা মানুষ লুকিয়ে রেখেছিল তালিবান প্রাণীগুলোর কাছ থেকে বাঁচানোর জন্য। তাঁর মতে, এর জন্য অর্থাৎ এই রিলগুলোকে পরিষ্কার করে ডিজিটালাইজড করার কাজ শেষ করতে তাদের বেশ কিছুদিন লাগবে, তবে কাজ চলেছে।
কাজটি সত্যিই অতীব সময়সাপেক্ষ। প্রথমে প্রজেক্টরে ওই ছবিগুলো চালাতে হয়, এর থেকে ফ্রেম ধরে এর সময় আর বিষয় নির্ধারণ আর সংরক্ষণ। এই বিভাগের বর্তমান এক কর্মচারী ফয়েজ লুৎফি বলেন, সিনেমার বেলায় তাদের অন্ততঃ ৪ দিন লাগছে আর খবরের ক্লিপিং হলে ১ দিন।
এই প্রকল্প শুরু হয়েছে এবছর, পরিচালক ইব্রাহিম আরেফি বলেন, তাঁর আশা এই প্রকল্প শেষ হবে আগামী দু’বছরের মধ্যে।
ফিরে দেখা আফগান সিনেমার আর প্রতিবেদন গুলোর কিছু বিবরণ
আমরা অনেকেই জানি না, আফগানিস্তানে সিনেমা তৈরি হতো ওই দেশের মানুষের জন্য। মূলত ১৯৭০ এর সময় এর যাত্রা শুরু। ফার্সি আর পুস্ত ভাষায় এই সিনেমাগুলো তৈরি হতো। এছাড়া প্রতিবেদন মানে ডকুমেন্টরি পাওয়া গেছে যার সময় ১৯২০ থেকে ৭০ এর দশক মানে ওই সেভিয়েত আক্রমণের আগ পর্যন্ত।
Afghanistan: Preserving film archives under Taliban rule (Al Jazeera)
মাত্র ১ জন সহকর্মীর সাহায্যে হাবীবুল্লাহ একাই এই কাজ করেন, তবে সংরক্ষণ করেন দু’জনে মিলে। তিনি ঠিক করেন কোনগুলো তিনি বাঁচাতে পারবেন। আর তিনি ওই কাজে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছেন। সংরক্ষণের কাজে আফগান সংস্কৃতি আর দেশের কাজগুলোকে আলাদা করেছিলেন ওই স্বল্প সময়ে। তিনি এই সংরক্ষণের মধ্যে ১৯৬৯ এর একটি করুণ হাস্যরসের সিনেমাও সংরক্ষণ করেছেন, কারণ ওই সময়ের খালেক আলীল এর পরিচালনায় সিনেমাটি তুলে ধরেছিল নায়িকার স্কার্ট পরার ছবি।
কিছু নমুনা যা এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দেখিয়েছে
মার্কিন দূতাবাসে এই নমুনা দেখানো হয় বেশকিছু, যাতে হাসি তামাশায় মগ্ন আফগানদের সুখী ছবি উঠে এসেছে কিছু প্রতিবেদনে। সাধারণ মানুষের বনভোজন এর ছবি। মহিলাদের খোলামেলা চলাচল, হাসি মস্করা, স্কার্ট পরা তরুণীর সহজে চলাচলের দৃশ্যও আছে। এইগুলো দেখার পর একজন সাধারণ আফগান আরিফ নিজেকে দূর্ভাগা বলেন, কারণ তিনি ওই সোনারদিনগুলো দেখতে পান নি তাই। তিনি বলেন, অন্য দেশগুলো যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারা কেবল পিছিয়ে পড়েছেন।
আফগান সরকারি সম্প্রচার দফতর এর প্রচারের কাজ হাতে নিচ্ছে, অন্যদিকে একটি বেসরকারি সংস্থা এগুলো ইন্টারনেটে তুলে ধরার কাজে এগিয়ে আসছেন। তালিবানদের নখ দাঁত এখনো বেশ সক্রিয়, প্রায় ৪০ ভাগ জায়গায় ওই প্রাণীগুলো আজো তাদের শক্তির পরিচয় দিচ্ছে। এতদ্বসত্বেও আফগান সরকার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই ভিডিওগুলো গ্রামে গ্রামে প্রত্যন্ত জায়গায় দেখানোর ব্যবস্থা করার।
ইব্রাহিম আরিফী বলেছেন, তিনি তার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো ঘুরবেন এই ছবিগুলো দেখানোর জন্য। তাঁর ভাষায়, এর ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার আছে না হলে কীভাবে নতুন প্রজন্ম জানবে তারা কী হারিয়েছে!
আমি কুর্নিশ করি এই অসম সাহসী মানুষটিকে। অতিমানুষের কাজ করছেন তিনি। তার সাফল্য আসুক আর তিনি যেন কোনো রকম আক্রমণের শিকার না হোন এ কামনা করি।
এই পোস্টের সাথে ওই ফিল্ম ডিজিটালাইজড করার কাজের ছবি আর ওই অদম্য সাহসী যোদ্ধা ইব্রাহিম এর ছবিও দিলাম। আসুন, আমরা অন্তত ইতিহাস থেকে ‘দেখে‘ শিক্ষা নিই। না হলে, ঠেকে শেখার সময় পাওয়া হয়তো যাবে না।
ভালো কথা, এই ছবিটা একটু খেয়াল করবেন। আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে নেয়া স্ক্রিনশট। ভিডিওতেও দেখতে পাবেন। বাসটি কোন দেশের তৈরি আর কোন কোম্পানির ওটা খেয়াল করবেন। অনেক সহি মুমিন ভারতের ষড়যন্ত্র দেখে থাকে তাই ভাবলাম এই কাজ তখন হলো কীভাবে ওটা একটু জিজ্ঞাসা করি। কেউ বলবেন কী?
বোনাস- আফগানিস্তানে তালিবান বাহিনীদের সাথে মিত্রবাহিনীর লড়াইয়ের ভিডিও:
১) Afghanistan War – US Forces in Heavy Fighting Clashes and Intense Combat Firefights with Taliban
https://www.youtube.com/watch?v=BPOXwUgss3I
২) US Marines Real Combat in Afghanistan – Furious Firefights and Heavy Clashes with Taliban
https://www.youtube.com/watch?v=ClcbLlJpA7Y&t=68s
৩) US Army Helmet Cam Of Humvee Machine Gunners Taking Out SVBIEDs During Simulated Combat Training
৪) Al Qaeda Ambush – Battle of Takur Ghar (Situation Critical – Nat Geo)
https://www.youtube.com/watch?v=tnJjmFvD0FM
তথ্যসূত্র:
১) The Guardian: ‘If I find one reel, I must kill you’
২) The Indian Express: Afghanistan’s lost movies, hidden from the Taliban, go digital
৩) Firstpost: Afghanistan’s lost movies, hidden from the Taliban, go digital
৪) The Express Tribune: Afghanistan’s lost movies, hidden from the Taliban, go digital
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন