দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের মধ্যে আফ্রিকানদের নিয়ে সমস্যা আছে। বাঙালি নিজেকে কালো ভাবতে চায় না, কালোদেরকেও শুধু কালো বা আফ্রিকান নয়, কাউল্লা, কাইল্লা, পাতিলের তলা ইত্যাকার অসংস্কৃত ভাষায় সম্বোধন করে। ভি এস নাইপল যেমন বলে গেছেন,
“ব্ল্যাক জীন্স আর রিসেসিভ” – ভি এস নাইপল
সময়ের প্রভাবে কালো জীন তাদের বিশেষত্ব হারিয়ে ফেলে, শাদার পরশে ধীরে ধীরে শাদা হয়ে যাবার একটা প্রবণতা তার ভেতরে কাজ করে, একপুরুষে না হলে কয়েক পুরুষে হবে। বাংলাদেশে ছেলেদের গায়ের রঙ নিয়ে এত সচেতনতা দেখা যায় না। বিয়ের পাত্রী দেখার সময় গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন হয় দেখেছি, বাজারে রং ফর্সা করার ক্রীমের চাহিদা থেকেও সেটা সহজে বুঝা যায়।
চামড়া শাদা কি অন্য বর্ণ এটা ইওরোপীয় ধারণা, কালো মুসলমানদের মধ্যে চামড়ার বর্ণ প্রাধান্য পায়নি, বাদামী রংয়ের ভারতে শ্রমভিত্তিক চারবর্ণ ছিল। ভারতীয় বর্ণ ছিল শ্রম বিভাজনে, গায়ের রংটাই বর্ণ বা জাতিগত চিহ্নের মর্যাদা পায়নি। আমরা হলাম কালোর দেশ, আদিম অস্ট্রালয়েড, নিগ্রোবটু’র রক্তের উত্তরাধিকারী, নৃতাত্ত্বিকবিশ্লেষণে ‘জাতি হিসেবে আমরা যতটুকু আর্য প্রভাবিত,কালোর পরিমাণও তার চেয়ে কিছুটা কম নয়।’
কালো আমাদের আদরণীয়, এতদঞ্চলে কানু ছাড়া গীত নাই, কালার পীরিতে রাধা এখানে থরোথরো। কালী আমাদের মা,শ্যামা আমাদের ঘরের মেয়ে। আরব ‘স্যান্ড নিগার’দের মুসলমান ধর্ম আমাদের ধর্ম। বরং খ্রীস্টান ধর্মের পক্বকেশ শ্বেতশুভ্র বৃদ্ধকে কালো মনস্তত্ত্বের ফাদার ফিগার হিসেবে ভাবাটাও কালোর জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সভ্যতার আগ্রাসনী ভূমিকায় আফ্রিকান কালোরা মার খেয়ে আজ প্রান্তিক,সভ্যতার দাস। ব্যবীলনের প্রেতাত্মা আজো তাদের তাড়া করে ফেরে। আজকের ‘আউট অফ আফ্রিকা’ তত্ত্বানুযায়ী কালো আফ্রিকান মানুষ থেকেই বাকি সব মানুষের উতপত্তি। আফ্রিকা থেকে উত্তরমুখী মানুষের প্রবাহ দু’ভাগে বিভক্ত হয়। প্রায় ১০ লক্ষ বছর পূর্বে আরব উপকূল ধরে অগ্রসরমান পূর্বগামী স্রোত থেকে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব, আর উত্তরমুখী স্রোত শেষ হয় ইওরোপে। নাতিশীতোষ্ণ, তাপানুকূল আবহাওয়ায় পূর্বাঞ্চলের জীবন ছিল সহজ,প্রাচুর্য্যময়, আরামপ্রদ, বনে-বাদাড়ে প্রাকৃতিক ফলমূল আর বন্যপশু দিয়ে চলত জীবিকা, এদের খাবারে শ্বেতসারের ভূমিকা ছিল প্রধান।’বাঙালির বাহুবল’ নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রঃ
“আধুনিক বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকদিগের মতে, সকলই বাহ্য প্রকৃতির ফল। বাঙ্গালির দুর্ব্বলতাও বাহ্য প্রকৃতির ফল। ভূমি, জলবায়ু এবং দেশাচারের ফলে বাঙ্গালিরা দুর্ব্বল, ইহাই প্রচলিত মত।”
অপরদিকে ইওরোপের চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মানুষকে করেছে পরিশ্রমী, প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবের সাথে সংগ্রাম তাদের দিয়েছে প্রকৃতিকে জয় করবার ব্যবহারিক প্রচেষ্টা। সূর্যালোকের অপ্রাপ্তি, অল্পসময়ে বেশি আলো শোষণের অভিযোজন জনগণকে করেছে শ্বেতবর্ণ। দীর্ঘ শীতে বন্যপ্রাণী শিকার ছিল তাদের খাদ্যের অন্যতম উতস, শিকারী জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাসে অনবরত আমিষের জোগান থাকায় বংশানুক্রমে তাদের অস্থিমজ্জাকে করেছে সুগঠিত ও শক্তিশালী। ফলশ্রুতিতে ইওরোপীয়ানরা কর্মমূখী, বহির্বিশ্ব সম্বন্ধে সচেতন। দশ হাজার বছর আগে কৃষিসমাজে যখন উদ্ধৃতি দেখা দিল তখন প্রাচ্যে যারা কর্মক্লীষ্ট জীবন-যাপনের ব্যবস্থা থেকে অলস হবার সুযোগ পেল তারা অন্তমুখী হয়ে শুন্য, কর্মশূন্য, নিষ্কাম কর্মের দর্শন নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়ল। আর ইওরোপে যখন শ্রমের উদ্ধৃত হল তখন তারা প্রকৃতিকে নিয়ে ব্যস্ত হল, প্রাকৃতিক দর্শন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চর্চায় তারা প্রকৃতির উপর আধিপত্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করতে চাইল। কৃষি থেকে খাদ্য,পশুপালন থেকে ঘোড়া দিয়েছে গতি এবং বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ধাতববিদ্যার মাধ্যমে লোহার ব্যবহারে তারা জগতটাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পশুপালনের কারণে তারা রোগ-জীবানু প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়, যা তাদেরকে অন্যজাতি দমনে সহায়তা করে।(১)
“বাদামী লোকেরা আধ্যাত্মিক, ইওরোপীয়ানরা বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন, ব্যবহারিক জীবনে আগ্রহী।”
ভারতীয়দের সম্বন্ধে প্রাচ্যবিশারদদের এমনি ধারণা প্রচলিত ছিল। ভারতীয় মানে অতিন্দ্রীয়বাদ,জগত সম্বন্ধে অনীহা, যাদুবিদ্যা, ভোজবাজিতে ভরপুর, হাতী, জঙ্গল, জানোয়ার, সাধু, সন্ন্যাসী, সিদ্ধি, রহস্যময় আলাদা জগত। ‘ফুলের মূল্য’ গল্পে প্রভাতকূমার মুখোপাধ্যায় দেখিয়েছেন কিভাবে লন্ডনে ভারতীয়দের অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করা হয়। প্রাচ্যবিদদের উতসাহে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি এ দৃষ্টিভঙ্গি পাশ্চাত্যের বদ্দমূল ধারণায় পরিণত হয়, সার্কাসের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে সিনেমার মাধ্যমে সেটা আপামর জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভবপর হয়। ভারতবর্ষ নিয়ে তৈরি প্রথম সিনেমার নাম ‘হিন্দু ফকির’ (১৯০২), এরপরে ক্রমান্বয়ে ‘ওরিয়েন্টাল মিস্টিক’ (১৯০৯), ‘সোল অফ বুদ্ধা’ (১৯১৮), ‘দ্য গ্রীণ গডেস’ (১৯২৩), ‘মিস্টিক ইন্ডিয়া’ (১৯৪৪)।
ঔপনিবেশিক আমলের সাহিত্যেও ভারতকে রহস্যময় হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস চলতে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ যখন শিকাগোতে ধর্ম সম্মেলনে আসেন তখন তাকে বলা হয় রাজা, শুরু হয় গেরুয়া বসনে নতুন সার্কাসের যুগ। যে স্রোতধারা এখনো সেলফ রিয়ালাইজেশান, ভেদান্ত, ইসকন, ইয়োগায় বহমান। আমেরিকার হিপিদের উপর এদের অনেক প্রভাব। স্বামীজি তার ভ্রমণে ভারতের গরীব-দুঃখী ভূখা-নাঙ্গা মানুষের কথা, সামাজিক অসাম্যের কথা তুলে ধরেছেন। আরো অনেকে এ নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু মার্কেটিং হয়েছে অলৌকিকত্বের, ইক্সোটিক প্রদর্শনীর। পরবর্তীতে যারা এসেছেন বেশিরভাগই এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি, বরং ক্যাপিটালিজমের জয়গান গেয়েছেন। (২)
অস্বীকার করার জো নেই,ঔপনিবেশ উত্তরযুগে আমাদের অন্তমুখীন সংস্কৃতি-দর্শন, বিজ্ঞানের কার্টেসীয়ান দর্শনের কাছে মার খেয়েছে। সাধুসন্তদের ধারণা বস্তুবাদে আর ভাববাদে বিনিময় সম্ভব, আমরা পাশ্চাত্যের জগতমূখী, কর্মানুরাগটুকু নিব। কর্মে মুক্তির দর্শন কঠিন কিন্তু সেটাও তো ভারতীয়দের জানা। আর ওদেরকে আমরা ভারতীয় যোগ,দর্শন, ব্যকরণের শিক্ষা-দীক্ষা দিব। বস্তুজগতের ঘোরপাকে হারিয়ে যাওয়া কৃষ্ণের জীবকে পূনরুদ্ধার করে স্বরুপ-সন্ধানের পথ বাতলাব। ১৯২৫ সালের দিকে পরমহংস যোগানন্দ যখন আমেরিকা গমণের উদ্যোগ নেন, তখন তার গুরু স্বামী শ্রী যুক্তেশ্বর গিরি তাঁকে বলেন,
“যদিও পাশ্চাত্য বুদ্ধিবৃত্তিতে অনেকদূর এগিয়েছে, কিন্তু তারা বস্তুবাদে ডুবে আছে, বস্তুবাদী উন্নয়নে ভারতের অনেক কিছু শেখার আছে, তেমনি আমরাও তাদের যোগদর্শনের উপর ভিত্তি করে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের গোড়াপত্তন করতে পারি।” (৩)
এখানেই মূল সমস্যা, এসব ‘গডহেড’রা অসংখ্য মূঢ়, মূক, গরীবদের বাদ দিয়ে ভোগে ক্লান্ত পাশ্চাত্য সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত অংশের ক্ষত নিরাময়ে সচেষ্ট। শ্রেণিসংগ্রাম না করে, সমাজবিচ্ছিন্ন এসব দাওয়াই সমাজে প্রচলিত অন্যায়, অবিচারকে জাস্টিফাই করে এবং তার বিরুদ্ধে জারীকৃত লড়াইকে অস্বীকার করে। জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তির মুক্তি কোন ফায়দা বয়ে আনবে? সমস্যার মূল চিহ্নিত না করে ‘য পলায়তি স জীবতি’ গোছের এ এক পলায়নবাদী দর্শন, সমস্যা ছেড়ে যে পালিয়েছে সে বেঁচে গেছে। সত্যিই ‘গড ওয়ার্ক্স ইন এ মিস্টিরিয়াস ওয়ে’।
যা প্রয়োজন সেটা হল, আত্মসম্মানবোধ, নিজেদের অবস্থান এবং পরিচিতি সম্বন্ধে সচেতনতা। কারণ রহস্যময়, সাধু, সন্ন্যাসী বলে ভারতীয় এলিটদের সম্মান করলেও, যেটা দরকার ছিল সেই অভিবাসন এবং সামাজীকিকরণের মাধ্যমে ভারতীয়দের ইওরোপীয়ান সংস্কৃতিতে একীভূত করা হয়নি। শুধুমাত্র ইওরোপিয়ান হলেই নিউ ওয়ার্ল্ডে নাগরিকত্ব নেয়া সম্ভব ছিল। ভিভেক বাল্ড তার বেঙ্গালি হারলেম বইয়ে দেখিয়েছেন ১৮ শতক থেকে যারা আমেরিকা, কানাডায় এসেছে তারা শ্রমজীবি, পরিশ্রমী, কর্মমূখী হলেও তাদের কালো আর স্প্যানিশদের মাঝে অবৈধ হিসেবেই থাকতে হয়েছে। ১৯১৩ সালের এলিয়েন ল্যান্ড ল এর মাধ্যমে তাদের ক্ষুদ্রচাষী হতে বাধা দেয়া হয়।১৯২৩ সালের ইউ এস বনাম ভগত সিং থাইন্ড মামলার রায়ে নাগরিকত্ব গ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়, ভারতীয়দের গণ্য করা হয় ‘আনডিজায়ারেবল এলিয়েন’। পরবর্তী বিশ বছর ভারতীয়দের অভিবাসন বন্ধ, জমি অধিগ্রহণ, ভোটাধিকার কিছুই থাকে না। ১৯৪৫ সালে ইমিগ্রেশান এন্ড ন্যাচারাইলাজেশান কমিটির সামনে চৌধুরী এবং সিং এর নাগরিকত্বের শুনানি শেষে ১৯৪৬ সালে রেসিডেন্ট ভারতীয়দের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। (8)
১৯৬৫ সালে প্রথম অভিবাসন এবং জাতীয়তা আইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী ব্যাপক হারে ইমিগ্রান্ট হয়। পরবর্তীতে দক্ষ-শিক্ষিত অভিবাসনের পরিমাণ কমে যায় কিন্তু অদক্ষ শ্রমিক এবং পারিবারিক পূনর্মিলনীর সুযোগ নিয়ে মানুষ আসতে থাকে। এদের মধ্যে যারা অবস্থাসম্পন্ন বা চাকুরিজীবি মধ্যবিত্ত হয়েছে তারা সেগ্রেগেটেড সমাজের বাকি খেটে খাওয়া শ্রমজীবি অংশকে অস্বীকার করতে চায়। ইওরোপীয়ানদের মধ্যেও তারা অপাংক্তেয়, সামাজিক,রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ডে মূল সমাজের সাথে যুক্ত নয়। কারণ অভিবাসনের মূলনীতি হল,
“We want your labor, we don’t want your lives”
কর্মক্ষেত্রে ভারতীয়, বাঙালিরা চরম পুঁজিবাদী, অপরদিকে বাসায়, কম্যুনিটিতে এরা একটা উপমহাদেশীয় আবহে থাকে। মেয়েদের দায়িত্ব হল বাসায় উপমহাদেশীয় পরিবেশ বজায় রাখা, এমনকি সবকিছু সামলে বাড়তি পুঁজির জোগান দিয়ে পরিবারের ভিত্তি মজবুত করতে সেও বাজার অর্থনীতির সামিল হয়।
সামাজিক, রাজনৈতিক এ বিচ্ছিন্নতার কারণে কালোদের জন্য তৈরি ‘ইনার সিটি’, ‘ঘেটো’র মত নিজেদের ‘মিনি বাংলাদেশ’, ‘লিটল বাংলাদেশ’ এ ফেলে আসা ব্যাকহোমের রাজনীতি-সংস্কৃতি নিয়েই এদের আড্ডা,আশ্রয়। সাথে আত্মশ্লাঘা যে আমাদের কালোদের থেকে আলাদা করে দেখা হয়, আমরা প্রিভিলেজড মাইনরিটি, ‘মডেল মাইনরিটি’। ভরসা একটাই,’কালো জিন রিসেসিভ’, অর্থাৎ ভবিষ্যতে আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে কয়েক পুরুষের শ্বেতসঙ্গে একসময় শাদা হয়ে যাওয়াটাই কালো জিনের পরিণতি।
অথচ নিউ ওয়ার্ল্ডে কালোদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক প্রাচীন। ১৭০০ সাল থেকে ব্রিটিশ জাহাজের খালাসী হয়ে যারা এদেশীয় বন্দর থেকে পালিয়ে গিয়ে ইতিহাসের গহবরে চলে গেছেন, কালো এবং ল্যাটিনোরাই ছিল তাদের আশ্রয়। সালেম-ম্যাসাচুসেটস, নিউ অর্লিয়ন্স, হার্লেমে তারা একসাথে ব্যবসা করেছে, আজকের মত তখনও রেস্তোরাঁর পেছনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। নিউ ইয়র্ক শহরে এবং হার্লেমে বাঙালিরা ড্রাইভার, ফায়ারম্যান,কুলি,অপারেটর, লন্ড্রি, কসাইখানা সব জায়গাতেই কাজ করেছে। ১৯১০ সালে নিউ অর্লিয়ন্স শহরের জরিপ থেকে ভারতীয় ফেরিওয়ালাদের দেখা যায় কালো বা ল্যাটিনো মেয়েদের বিয়ে করে এরা তাদের সমাজের অংশ হয়ে ছোটখাট কাজ, ফেরিওয়ালা হিসেবে ভারতীয়/প্রাচ্যদেশীয় জিনিস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এদের বেশিরভাগই ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের বাঙ্গালি মুসলমান। (৪)
কালোদের মধ্য থেকে উঠে আসা বিখ্যাত বুদ্ধিজীবি ডব্লিউ ই বি দুবোয়া ১৯২৯ সালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থন প্রকাশ করে লাহোরের পিপল ম্যাগাজিনে লেখা পাঠিয়েছেন।
“ভারতবাসীরা আমেরিকান নিগ্রোদের মত এমন জিনিস চাচ্ছে যেটা মোটেই বিপ্লবী নয়, বরং সভ্য ইওরোপীয়ানরা সেটা দীর্ঘদিন ধরে উপভোগ করে আসছে।”
দুবোয়া আরও বলেন,
“অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি ভারতীয় এবং আমেরিকান নিগ্রোদের পৃথক করে রেখেছে। ভারতীয়রা স্বভাবতই নিজেদের নিগ্রো বলে পরিচয় দিতে চায় না। আর কালোরা ভাবে ভারতীয়রা নিজেদের জাতিগত পরিচয় এবং গায়ের রং নিয়ে লজ্জিত, ফলে তাদের দেখা-সাক্ষাত হয় না। ঠাকুরের সাথে সাক্ষাত আমার এ ধারণা পরিবর্তনে সাহায্য করেছে, আজকে নিগ্রো এবং ভারতীয়রা এটা বুঝতে পারছে যে জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ তাদের সম্মিলিত লড়াই।”
তাই মনে মনে যাই ভাবি না কেন আমরা কালো আছি, কালো থাকব। কালোরা আমাদের ভাই, তারা আমাদের আপন মনে করে। শুধুমাত্র সাম্রাজ্যবাদের সুবিধাপ্রাপ্ত শ্বেতছায়াময় (হোয়াইট শ্যাডো) জীবন পেয়ে ‘মডেল মাইনরিটি’র ভূমিকা পালন করে আমরা যেন আফ্রিকান/কালোদের অস্তিত্বের ইতিহাস এবং সংগ্রামকে খাটো না করি। তাদের সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম, তাদের মুক্তিতেই কালো-শাদাসহ আমাদের সবার মুক্তি। বাঙালি কবির ভাষায় যেন আমরাও বলি-
জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী
……………
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভেতরে সবারই সমান রাঙ্গা ।
সাহায্যঃ
১।গানস জার্মস এন্ড স্টীল,দ্য ফেইটস অফ হিউম্যান সোসাইটি – জ্যারেড ডায়মন্ড, ডব্লিও ডব্লিও নরটন এন্ড কোম্পানি, ১৯৯৭।
২।দ্য কর্মা অফ ব্রাউন ফোক- বিজয় প্রসাদ, ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা প্রেস,২০০০।
৩।অটোবায়োগ্রাফি অফ আ ইয়োগী- যোগানন্দ পরমহংস,সেলফ রিয়ালাইজেশান ফেলোশীপ, ১৯৪৬।
৪। বেঙ্গালি হারলেম অ্যান্ড দ্য লস্ট হিস্ট্রিজ অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকা- ভিভেক বাল্ড, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৩।