১৪৪০ বার পঠিত
বাংলার আপামর নারী আবহমান কাল থেকে আদুল গায়েই শাড়ী পরে এসেছে। বাঙালি মেয়েরা বাড়ির ভিতরেই ছিলেন, তাই তার স্তন প্রদর্শিত নয় আর এটাই পশ্চিমা নারীর সঙ্গে পার্থক্য। আজো বহু নারী তার স্তন ঢাকবার মতো যথেষ্ট কাপড় পায় না বলেই হোক বা গ্রামীণ জীবনের অভ্যাস বশেই হোক। তবু বাংলার কিছু আবাল যেন নারীর বুকে কেবল মাঈ খুঁজেই ফেরে। হোক সে কোনো ছ্যাচড়া লোক কি সেলেব্রেটি। আচরণে তাদের ছ্যাবলামোই কেবল প্রকাশিত হয়। কোন নারীর মাঈ কি গোত্রের সেটি কি ঝোলামাঈ না খাড়া মাঈ তার মাপজোখ করতেই ব্যস্ত থাকে।
কার স্তন কতটা পীনোন্নত তা জানতে কত শ্রম! হায়! ফেইসবুক ইনবক্স কে গোপন ভেবে কনো নামী লেখক নারীর বক্ষ উন্মুক্ত দেখতে চান তো কেউ চান স্পর্শ। যেন তারে তার মা স্তন্যপান করায় নাই, যেন তার জন্মদাত্রী মায়ের নারীসুলভ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাই। সেইসব পুরুষের চোখে নারী মাত্রেই পণ্য। আবার কোনো লেখক তার লেখার মান নয় লাইক কম পাবার কারণ খোঁজেন তার স্তন না থাকায়। বস্তুত এরাই ধর্ষকামী মানসিকতা ধারণ করেন। সুযোগের অভাবে ধর্ষণ করতে পারে নাই, সুযোগ পেলে সেটা কাজে লাগাতে দ্বীধা করবে না কোনোভাবেই। এতো এতো বছর ধরে আমাদের গ্রামীণ নারী, আদিবাসী নারী, খেঁটে খাওয়া প্রান্তিক নারীর সম্ভ্রম তো তাদের পোশাকে কারণে নষ্ট হয় নাই।আজ কেনো আদিবাসী নারী ধর্ষিতা হচ্ছে! এতোদিনের লালিত অভ্যাস বশে গ্রামের নারীটি তার সন্তানকে বাড়ির আঙিনায় স্তন্যপান করান, কই তাতে তো কারো লালসা জাগ্রত হয় নাই এযাবৎকালে। এখন কেনো নারীর পোশাক নিয়ে এতো আলাপ!! সদ্যোজাত কন্যা সন্তান হোক চাই ছয়মাসের বাচ্চা, স্বাস্হ্যবতী ঝকঝকে তরুণী বা গরীব ঘরের ম্লান বছরবিউনি বউটা। প্রান্ত কি বিগতযৌবনা পৌঢ়া, অথবা সত্তুরের বৃদ্ধা কে যে কখন কোথায় আর কিভাবে পুরুষের লালসার শিকার হবে তা কেউ জানে না।
ঢালাও ভাবে সব পুরুষ অবশ্যই ধর্ষক নন, কিন্তু নারীর চোখে পুরুষ মাত্রেই ভয়ের কারণ তারা শিকারী আর নারীমাত্রেই এদের শিকার স্রেফ সুযোগের অপেক্ষা। পুরুষের গায়ে লাগার মতোই কথা, ছয় মাসের বাচ্চাকে ধর্ষণ করে নিজের লালসা মিটায় যে পুরুষ সেও কোনো নারীর সন্তান কারো স্বামী কিংবা কারো বাবা। কিন্তু তাবলে তার ধর্ষক পরিচয় মুছে যায় না। আর যারা ধর্ষণের পক্ষে সাফাই গায় এই বলে যে, রাতে কেনো বাইরে গেছে, মেয়ের পরিবার বা স্বভাব ভালো না কিংবা মেয়েরা উগ্র সাজপোশাক করে বলে ছেলেরা উত্তেজিত হয় তাদের জন্য স্রেফ করুণা।
আর যারা ইসলামী ফতোয়া দেয়, নারী আওরাত তাই ঢেকে রাখার বস্তু তাদেরও বলি আপনাদের আইনে সারা দুনিয়া তো চলবে না। সারা দুনিয়া একা ইসলামপন্থী আর ইসলামী আইনে চলে না। যদি কোনো মুসলমান তর্ক করতে আসেন তো শুনেন, আপনাকে দৃষ্টি সংযত রাখতেই বলা হয়েছে। আর বেগানা নারীর প্রতি প্রথমবারের পরে তাকানোও নাজায়েজ। তারও পরে যদি কারো প্রতি কামনা জাগে তো নিজের স্ত্রীর কাছেই যাবে।
কি মুসলমান ভাই বেরাদর নিয়ম তো এটাই নাকি? ক্রমাগত ঘটতে থাকা ধর্ষণ আর একশ্রেণির মানুষের উল্টে মেয়েদের দোষারোপ বা দায়ী করা, মেয়ে হিসেবে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবু দেশটা যখন বাংলাদেশ তখন ভিক্টিম ব্লেমিং চলবেই প্রতিটা ধর্ষণের পরে এতো জানা কথাই।একদল লোক ধর্ষকের পক্ষে গলা ফাটাবে, নির্যাতিতার চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করবে। ধর্ষকের নয় বরং ধর্ষিতার ছবি ও পরিচয় প্রকাশে তৎপর হবে মিডিয়া এমন কি প্রশাসনও ব্যাতিক্রম নয়।
আমার কথা পরিষ্কার, একটা সময়ে সারা বিশ্বেই হারেম বা নারীমহল পাহারা দেবার জন্য খোঁজাপ্রহরীর চল ছিল। কারণ আমাদের প্রাচীন জনগোষ্ঠীর গোষ্ঠীপতি পুরুষেরা জানতেন পুরুষ কিছুতেই বিশ্বাসের পাত্র নয়। তার স্বভাব অনেকটা হুলোবিড়ালের মতোই! কাজেই খোঁজা প্রহরী দরকার আর সারা বাংলায় বাড়ি পাহারা দিতে উঠানখাসী লাগে। চেনেন তো? ভাদ্রমাসের কুকুর কখন কি যে কান্ড ঘটাবে তাই তারে বাড়ির প্রহরী করার আগে খোঁজা করা হয়। আর বাজারে খাসীর গোশতের সরবরাহ সচল রাখতে পাঠাকে খাসী করার চলও নেহাত কম দিনের না। ধর্ষকের পক্ষে মানবাধিকারের বুলি না কপচে বরং তাকে খোঁজা করবার পক্ষে আওয়াজ তুলুন। তার লিঙ্গ নামক ধর্ষণের অস্ত্রটি থাকবে, তবে অকেজো। আর শাস্তিটা প্রকাশ্যেই হোক, মনে মনে যারা ফন্দি আঁটে তারা জব্দ হবে। আমার এই লেখাটি যাদের পছন্দ হবে না তারা মনে মনে নিন্দার ঝড় তুলুন। লেখার সঙ্গের কমেন্ট বক্সে গালি দিযে নিজের ধর্ষক চেহারা দেখালে আখেরে নিজেরই ক্ষতি। আর যাহোক নিজের ভিতরের পশুকে বাইরে এনে দেখাতে নিশ্চয় কেউ চাইবে না।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন