০
১৩৫২ বার পঠিত
বাম বংশোদ্ভুত কিছু গাছবলদ আছেন। যারা দৃশ্যত অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের বিপক্ষে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের কোনো বিপদ দেখা দিলেই অনর্থক ছুতোনাতায় নিজেদের মধ্যে কেওজ লাগিয়ে দেন। কেওজ মানে হলো বিবাদ। যারা অ্যাস্টব্লিশবেন্টের বিপক্ষে তাদের মধ্যে কৌশলে একটা ঝগড়া লাগিয়ে দেয়াই এই গাছবলদদের কাজ। মূলত দাঁড়ায় এই গাছবলদেরা অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের পারপার্স সার্ভ করেন।
বলবেন তো, গাছবলদ বলছেন কেন, এরা তো বেশ বুদ্ধিমান, না হলে কেওজ লাগায় কীভাবে। এক অর্থে কথাটা ঠিক, কিন্তু মুশকিল হলো গাছবলদরা বুদ্ধিমান হয় না, ধূর্ত হয়। ধূর্ত শব্দটি লাগে চোর-ছ্যাচড়ের আগে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে চুরিচামারি মেনে নেয়া যায়। কিন্তু যখন ন্যূনতম উপার্জনের একটা রাস্তা থাকে তখন যারা চুরির ধান্ধায় নামে তারা ধূর্ত। কারণ বুদ্ধিমান হলে তারা কাজ করে খেতো।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যায় এসব গাছবলদের ক্ষেত্রে। এরা হলো সেই এরশাদকালীন নকলের স্বর্ণযুগের নকলবাজদের মতন। বুদ্ধি থাকলে পড়েই পরীক্ষা দিত। কিন্তু মগজ তথা বুদ্ধি না থাকাতে ধূর্ততা মানে নকলের সহায়তা নিতে নিয়েছে। পড়ে পাশ করলেও পাশ, নকল করে করলেও তাই। এই গাছবলদরা তাই। তারা ধূর্ততার সাথে নিজেদের মধ্যে বিবাদটা লাগিয়ে দেয়। ছুতানাতা পেলেই হলো।
আবার বলবেন তো, তাহলে বুদ্ধিমানরা বিবাদে জড়ায় কেন? এটা কিন্তু ভালো প্রশ্ন, তাহলে জড়ায় কেন। আপনি যদি একজন বুদ্ধিজীবীকে বলেন, আরেকজন বুদ্ধিজীবীকে সাইজ করতে। তাহলে তিনি যা করবেন তা হলো, প্রতিপক্ষ বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলো দেখবেন, শুনবেন, পড়বেন। তারপর প্রতিটি কাজের পাল্টা লজিক দাঁড় করাবেন এবং তাকে লজিকে তথা বুদ্ধিতে হারাতে চেষ্টা করবেন। আর এই কাজটা যদি আপনি গ্রামের একটা ধূর্ত টাউটকে দেন, সে প্রথমেই একটা মহিলা ভাড়া করবে, যে মহিলা বলবে ওই বুদ্ধিজীবী তার ‘ইয়ে’ করেছে। ‘ইয়ে’টা বোঝেন তো, হ্যাঁ সেই ‘ইয়ে’র কথাই বলবে।
তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ধূর্তপন্থাটা ব্যবহার করে। যাকে সাহেবি বচনে হানিট্র্যাপ বলে। এই হানিট্র্যাপের অনেক ঘটনাই সাম্প্রতিককালে আমাদের চোখের সামনে। এসব কাজে নায়িকা থেকে মডেল সবই ব্যবহার করা হয়। এমনকি বুদ্ধিজীবী এবং নানা কর্মকাণ্ডে সেলিব্রেটি রমণীরাও এরসাথে যুক্ত হতে পারেন। যারা অবাধ মেলামেশার বক্তব্য দিয়ে এবং প্রমাণ স্বরূপ সামাজিকমাধ্যমে সেই মেলামেশার ছবি দিয়ে তাদের বিষয়টিকে জাস্টিফায়েড করেন। তারপর শিকারে নামেন। আলোকফাঁদ। আর পুরুষ মানুষ তো পতঙ্গ। তারা পুড়ে মরতে যান এবং যাকে পোড়ানোর প্রয়োজন তাকে পোড়ানোও হয়। শুধু পোড়ানো নয় রীতিমত বারবিকিউ করা হয়। বারবিকিউ বোঝেন তো, প্রকাশ্যে পোড়ানো যাকে বলে, হৈ-হুল্লোড় সহযোগে।
ঠিক এরকম নয়, টাকা পয়সা হাতানোর উদ্দেশ্যে এমন বারবিকিউ প্রচেষ্টার একটা ঘটনা জেনেছিলাম। উঠতি বুদ্ধিজীবী হাফডান সেলিব্রেটি এক রমণী একজনকে চেষ্টা করলেন ফাঁদে ফেলতে। বললেন, ছবি সামাজিকমাধ্যমে দিয়ে দেবেন। যার বিরুদ্ধে এই চেষ্টা তিনিও গ্রাম থেকে ওঠে আসা সাবেক টাউট এবং সাবেক রাজনীতিকও। তবে সব ছেড়ে তিনি ‘মুক্তিচিন্তক’ সেজেছেন। তার চিন্তায় যে কোন জরায়ুতে তার প্রবেশাধিকার আছে, যদি জরায়ুর মালিকের আপত্তি না থাকে। জরায়ুর অধিকার বিষয়ে একেবারে ঝাক্কাস সমর্থক এবং সাথে প্রচারক। তাকে যখন ওই রমণী বললো, তখন তিনি উল্টো কিছু অডিও ও ভিডিও ক্লিপ শোনালেন এবং দেখালেন সেই রমণীকে। বললেন, বাড়াবাড়ি করলে তিনি এগুলো ছেড়ে দেবেন। শেষে কী হলো? কী আবার সমানে সমানে যা হয়, সন্ধি আর কী। এইখানে পুরুষটি বুদ্ধিমান না হয়ে ধূর্ত হয়েছিলেন বলেই বেঁচে গেছেন। বুদ্ধিজীবী হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।
বামবংশোদ্ভুত কিছু গাছবলদের কথা বলছিলাম। এদের সাথে যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেয়ার জন্য রয়েছেন কিছু ধর্মান্ধ গাছবলদ। অ্যাস্টাব্লিশমেন্টকে বাঁচাতে সেই বাম গাছবলদরা যখন অ্যাস্টাব্লিশমেন্ট বিরোধীদের মধ্যে কেওজ লাগিয়ে দেন, তখন সেই কেওজকে মুক্ত করার অযোগ্য করে তোলে ওই ধর্মান্ধ গাছবলদরা। যার ফলে অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের রেজিম দীর্ঘস্থায়ী হয়।
গাছবলদ কেন বলছি তার আরেকটু সম্পূরক জবাব দিই। বাম বংশোদ্ভুত এই গাছবলদরা মানুষের কথা বলেন, অথচ খোদ নিজের স্বজনদের ভালোমন্দের খোঁজ রাখেন না। তারা দেখেন না তাদের গ্রামে থাকা বাপ-চাচা’রা অ্যাস্টাব্লিশমেন্টের বিপরীতে কতটা অসহায়। তার প্রতিবেশী কতটা নিরুপায়। নিজের বাড়ি, পাশের বাড়ি, প্রতিবেশী এদের খোঁজ রাখতে যারা ব্যর্থ, দেশের মানুষের ভালোমন্দের দেখভালের স্বঘোঘিত দায়িত্ব এবং সে অনুযায়ী তাদের বয়ান রীতিমত হাস্যকর। প্রবাদ আছে ‘নিজের ভালো পাগলেও বোঝে’ এরা এতটাই বলদ যে পাগলের সমান বুদ্ধিও তাদের নেই। থাকলে চারিপাশে দেখতে পেতো। তাদের ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ অবস্থা। এ কারণেই আদর করে ওনাদের ‘গাছবলদ’ বলি। আর এই গাছবলদের থামানোটা এই মুহূর্তে ভীষণ রকম জরুরি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন