সতর্কতাঃ নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কাম সম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেণীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।
হস্তমৈথুন (Masturbation)
কী? আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। এমন নাপাক কথা কোন ইমানদার বান্দা মুখেও আনতে পারে না। হস্তমৈথুনের নাম শুনলে ইসলামপন্থীরা ঠিক এভাবেই রিঅ্যাক্ট করে উঠবেন। তবে আপনি তো আর ইসলামপন্থী নন, আমাদের মতোই দোষেগুণে গড়া সাধারণ মানুষ। সত্যি করে বলুন তো, আপনার অতীত জীবনে আপনি কি কখনও এই ‘শয়তানি’ কাজটি করেন নি? কিংবা এখনও মাঝে মধ্যে করেন না? যদি আপনার উত্তর না বাচক হয়, তবে আপনি মানব প্রজাতির সেই বিরল দুই/এক পারসেন্ট ভাগ্যবান লোকদের অন্যতম যারা জীবনেও হস্তমৈথুন করে নি। বাদবাকী আটানব্বুই/নিরানব্বুই শতাংশ মানবসন্তান তাদের স্বীয় হস্তযুগলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং ব্যাভিচার করেছে। আল্লাহপাক সেই সব নাফরমান বান্দাদের জন্যে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
প্রকৃতিতে আমরা দেখতে পাই, প্রজননক্ষম প্রতিটি প্রাণী মাস্টারবেশনের মাধ্যমে যৌন আবেগের উপশম ঘটিয়ে থাকে। এ এমন এক সহজ, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রাণীকুলের প্রতিটি প্রজাতি যৌনতৃপ্তি লাভ করতে পারে। এ এক অতি সাধারণ যৌন আচরণ, বিধাতা যেদিন থেকে প্রাণীজগত সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই এই তাগিদ প্রাণীদেহে এনকোড করে দিয়েছেন এবং প্রাণীগণ বিশ্বস্তভাবে প্রকৃতির এই নিয়মটি প্রতিপালন করে আসছে। আপনার বিশ্বাস না হলে যে কোন চিকিৎসাবিদ কিংবা সেক্স থেরাপিস্টের কাছে জেনে নিতে পারেন। তারা সাক্ষ্য দেবে যে এটি নেহায়েতই নির্দোষ একটি জৈব আচরণ, যা কখনও কখনও মানবদেহের উপকারেও আসতে পারে। মানুষ যখন অত্যধিক মানসিক পীড়নের মধ্যে অতিবাহিত করে এবং আবেগ প্রশমনের আর কোন সহজ পদ্ধতি তার সামনে খোলা থাকে না, এই সহজলভ্য নির্দোষ পদ্ধতির মাধ্যম সে দেহমনের প্রশান্তি লাভ করতে পারে। পাশ্চাত্য সমাজে আতি নিরীহ এই যৌন পদ্ধতিটি সাধারণের কাছে DIY সেক্স (Do It Yourself) নামে পরিচিত। আজকাল অনেক চিকিৎসালয়ে স্পার্ম-ব্যাংক থাকে; হস্তমৈথুনের মাধ্যমেই সেখানে রোগীর শরীর থেকে স্পার্ম কালেকশন করা হয়ে থাকে। অথচ শরিয়ার বিধান অনুযায়ী নিরীহ এই সেক্সটি একবারে হারাম।
আপনি যদি কখনও গোপনে গোপনে এই ভয়ঙ্কর কাজে নিয়োজিত থাকেন, মনে রাখবেন যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সিক্রেট পুলিসবাহিনী অর্থাৎ ফেরেশতাগণ আপনার প্রতিটি আচরণ রেকর্ড করে রাখছে। আপনি নিজের সাথে নিজে ব্যাভিচার করছেন, তার প্রতিটি ইভেন্ট ভিডিও করে রাখছে ফেরেশতারা। রোজ হাশরের দিন তা আপনার সামনে উপস্থাপিত করা হবে এবং এই জঘন্য কাজের জন্যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে আপনাকে। পরকালে আপনি যে শাস্তি পাবেন তা নিশ্চিত, কারণ ফেরেশতাদের ভিডিওচিত্রে আপনার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে। তবে শরিয়া-দারোগা ইহকালে কীভাবে আপনাকে শাস্তি দিবে সেই বিষয়ে আমি কিঞ্চিৎ ধন্দে আছি। লোকে অপকর্মটি করে থাকে অত্যন্ত গোপনে। শরিয়ার দৃষ্টিশক্তি যদি শকুনের মতো প্রবলও হয়, তথাপী প্রতিটি লোকের টয়লেট কিংবা বাথরুমে তার মরাল পুলিসবাহিনী পাঠানো কোনমতেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ভূপৃষ্ঠে হস্তমৈথুনজনিত পাপের শাস্তি কার্যকর করার মতো শক্তি শরিয়ার আছে বলে মনে হয় না। তাই বলে আপনার নিশ্চিন্ত হওয়ার কোন কারণ নাই, DIY সেক্স পালনরত সেক্স-ম্যানিয়াকদের জন্যে পরকালে অপেক্ষা করে আছেন সংক্ষুব্ধ স্বয়ং আল্লাহ। কঠিন শাস্তি দিবেন তিনি। সেই শাস্তির ধরন কী হবে তা কী আপনি জানতে চান? ইসলামের দিকপালরা কঠিন গবেষণা করে আবিস্কার করেছেন যে এই জঘন্য ব্যাভিচারের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ পুনরুত্থানের দিন প্রতিটি মৈথুনকারীর হাত গর্ভবতী হয়ে কবর থেকে বেরুবে! মাশায়াল্লাহ! কী অসীম কুদরত তার!!
আপনার সংকীর্ণ জ্ঞানে আপনি এতদিন জেনে এসেছেন যে শুধুমাত্র স্ত্রী-প্রজাতিই গর্ভধারণ করতে পারে। পুরুষ মানুষ, বিশেষ করে তার হাত গর্ভবতী হয়, এই থিওরী আপনার কাছে অভিনব বলে মনে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সর্বশক্তিমান, তার পক্ষে সবই সম্ভব। কেন, তিনি কি পুরুষ মানুষের ছোঁয়া ছাড়া কুমারীকে মা বানান নি (বিবি মরিয়ম)? তিনি কি মেনোপজে যাওয়া অশীতিপর বৃদ্ধাকে গর্ভবতী করেননি (জাকারিয়া নবীর স্ত্রী)? হাত কেন, তিনি ইচ্ছে করলে আপনার গায়ের লোমের মধ্যেও গর্ভসঞ্চার ঘটিয়ে দিতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে এই থিওরি আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি। কিন্তু একটি হিসেব আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। পুরুষ মৈথুনকারীদের হাত গর্ভবতী হলো ঠিক আছে। কিন্তু মৈথুনকারী যদি স্ত্রীলোক হয়? তার বেলায় কী হবে? তলপেটের মতো তার হাতটিও কী ফুলে উঠবে? ছ্যা ছ্যা, সে বড় বিশ্রী ব্যপার হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন, এ কোন ধরনের অপঅশ্লীল প্রশ্ন? স্ত্রীলোক আবার মৈথুনকারী হয় কীভাবে? স্ত্রীলোক কী কখনও হস্তমৈথুন করতে পারে? হস্তমৈথুনের জন্যে সন্মুখভাগে যে দণ্ডটি প্রয়োজনীয়, স্ত্রীদেহে তো তা নাই? আপনার সন্দেহের জবাবে জেনে নিন যে স্ত্রীলোকেরাও হস্তমৈথুন করে, যদিও তার প্রক্রিয়া পুরুষের চেয়ে ভিন্নতর।
শেরি হাইট নাম্নী এক বিখ্যাত যৌনগবেষক মহিলাদের মাস্টারবেশনের ওপর এক নিবিড় জরীপ পরিচালনা করেন। এই জরিপ থেকে যে তথ্য বেরিয়ে আসে তাতে দেখা যায় যে জরিপকৃত মহিলাদের মধ্যে ৮২% ভাগ স্বীকার করেছে যে তারা কোন না কোন সময়ে মাস্টারবেশন করেছে কিংবা এখনও করে। ৮২ শতাংশের এই ফিগারের সাথে আরও আট/দশ শতাংশ যোগ করা বোধ হয় অন্যায় হবে না, কারণ নিশ্চিতভাবেই কিছু মেয়ে আছে যারা এই বিব্রতকর প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয় নি কিংবা মিথ্যা জবাব দিয়েছে। তা’হলে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের মধ্যেও শতকরা নব্বুই জন মাস্টারবেশন করে যৌনতৃপ্তি ঘটায়। (পৃ-৫৯, শেরি হাইট, দ্য হাইট রিপোর্ট: আ ন্যাশনওয়াইড ষ্টাডি অব ফিমেল সেক্সুয়ালিটি, ১৯৭৭, প্রকাশক-সুমিট বুকস, নিউ ইয়র্ক)। (উল্লেখ্য, গবেষক শেরি হাইট নিজেও একজন মহিলা)।
মেয়েরা কীভাবে মাস্টারবেশন করে থাকে তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে শেরি লিখেছেন
“মেয়েদের সেক্সুয়ালিটি বুঝার জন্যে তারা কীভাবে মাস্টারবেশনের মাধ্যমে চরম পুলক (অরগাজম) লাভ করে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু কাজটি ঘটে থাকে অত্যন্ত গোপনে এবং কীভাবে কাজটি করতে হবে তা কেউ তাকে শিখিয়ে দেয় নি, সুতরাং মাস্টারবেশনকে একটি নিখাদ জৈব আচরণ হিসেবে বিবেচনা করাই সঙ্গত। প্রাণীকুল যে কয়টি সহজাত আচরণ (instinctive behavior)প্রদর্শন করে থাকে, মাস্টারবেশন নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম”।
তিনি আরও লিখেছেন
“মাস্টারবেশনের মাধ্যমে মেয়েরা অতি সহজে যখন খুশী তখন চরম পুলক আহরণ করতে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কীভাবে নিজের দেহটিকে উপভোগ করতে হয় নারীরা তা জানে, কীভাবে করতে হবে তা জানার জন্যে কাউকে জিজ্ঞেস করারও দরকার নেই তাদের। নারীজাতির এই সেক্সুয়াল আচরণ নেহায়েতই প্রাকৃতিক, কোন প্রব্লেম নেই এতে। প্রব্লেম যদি কোথাও থেকে থাকে তা আছে সেক্সসম্পর্কিত সমাজের প্রচলিত সংজ্ঞায়, যে সংজ্ঞা সমাজই নির্ধারণ করেছে এবং নারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সুগুপ্ত সেক্সুয়ালিটিকে শেয়ার করে আমরা কীভাবে মাস্টারবেশন করি সেকথা প্রকাশ করলে ফিমেল-সেক্সুয়ালিটি সম্পর্কে সমাজের ধারণার একধাপ অগ্রগতি হবে; সেক্স এবং শারীরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে আমাদের জানা প্রথাগত ধারণার পরিবর্তন ঘটবে”।
(পৃ-৫৯-৬০)।
উপর্যুক্ত সমীক্ষা থেকে মাস্টারবেশনের ভালমন্দ সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা পাওয়া যায। শেরির উপরোক্ত গবেষণাপত্র অত্যন্ত সঠিক ও বিশ্বস্ত হিসেবে বিজ্ঞানমহলে সমাদৃত, মাস্টারবেশনের ওপর এত প্রামাণ্য গবেষণাপত্র আজ পর্যন্তও কেউ রচনা করতে পারেন নি, এমনকী মাস্টার অ্যান্ড জনসনও নন। পরীক্ষিত এইসব বৈজ্ঞানিক সত্য-উপাত্তকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়ে ইসলাম কীভাবে ঘোষণা করে যে মাস্টারবেশন একটি জঘন্য ক্রাইম, এর জন্যে মহাশাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে?
শেরির গবেষণা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অপরপক্ষে ইসলামী শাস্ত্র বিধান দিয়ে রেখেছে উওন সেক্সকারীরা ম্যানিয়াক, রোজ হাশরের দিন তারা গর্ভিনী দু’খান হাত নিয়ে কবর থেকে বেরুবে। মেয়েদের কী হবে, ডাবল প্রেগনান্সির ভার নিয়ে তারা কবর থেকে বেরুবে কীনা, সে সম্পর্কে ইসলামী শাস্ত্রবিদরা নীরব। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক মশহুর মুফতির ফতোয়া উপভোগ করুন পাঠক।
ইসলামিক কোয়েশ্চেন অ্যান্ড অ্যানসার অনলাইন, মুফতি ইব্রাহিম দেশাই
দারুল ইফতাহ, মাদ্রাসা ই’নামিয়াহ
কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা।
http://www.islam.tc/cgi-bin/askimam/ask.pl?q=165&act=view
হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন
‘যে ব্যক্তি স্বীয় হস্তের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় (অর্থাৎ মাস্টারবেশন করে), সে অভিশপ্ত’।
(তফসির মাজহারি, ভলিউম–১২, পৃ–৯৪)
সাইদ বিন জুবায়ের বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন ‘আল্লাহতায়ালা এক দল লোককে শাস্তি দিবেন, কারণ তারা নিজেদের যৌনাঙ্গের সাথে খেলা করত’।
আতা (রা:) বলেন – ‘কিছুসংখ্যক লোক এমন ভাবে পুনরুথিত হবে যেন তাদের হস্তদ্বয় গর্ভবতী, আমার মনে হয় তারা সেই সব লোক যারা হস্তমৈথুন করে’।
উপরোক্ত শাস্তির কথা বিবেচনা করে আমাদের মোমেন ও মোমেনা বান্দাদের কী উচিত নয় এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকা? যদিও আমি প্রায় নিশ্চিত যে শারিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও তাদের অধিকাংশ এই সহজ অনন্দদায়ক অভ্যাসটি আগের মতোই চালিয়ে যাবেন। জীবন সংগ্রামে নিরন্তর ডুবে থাকা একজন আদম সন্তানের কাছে আনন্দ আহরণের এমন সহজ পদ্ধতি আর কী আছে, যা বছরের প্রতিটি দিন ইচ্ছে হলেই আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দেয় এবং কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না? শরিয়া এই অভ্যাসকে ভয়ঙ্কর ও ঘৃণ্য বলে চিহ্নিত করেছে, আমার মনে হয় মোমেনদের ক্কালব হতে এই শয়তানি ওয়াছওয়াছা মুছে ফেলে শরিয়ার জয়ধ্বজা ওড়াতে হুজুরদের উচিত ‘কুইট স্মোকিং’ এর অনুরূপ একটি ক্যম্পেইন চালু করা। ‘কুইট মাস্টারবেশন’। তারপরেও আমি বলব, কুইট স্মোকিং ক্যাম্পেনের মতোই ‘কুইট মাস্টারবেশন’ আন্দোলনও নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে। কারণ জীবদেহে আদিম উত্তেজনাটি একবার জেগে উঠলে তা অবদমিত করে রাখা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। সাধে কী লোকে বলে- a standing prick and/or a wet vagina has no conscience- উথিত লিঙ্গ আর ভেজা যোনি বিবেকের ধার ধারে না।
মাপ করবেন পাঠক, এরূপ অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করার জন্যে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কী করব, প্রাণীর সহজাত ও প্রবলতম এই জৈবতাড়নার স্বরূপ সঠিকভাবে প্রকাশ করার এরচেয়ে ভাল কোন শব্দ আমি আর খুঁজে পেলাম না। এ এমন এক তাড়না, যার সামনে পৃথিবীর কোন যুক্তি কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারে না। এমন যে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, ঘরসংসার ত্যাগ করে জঙ্গলে পলায়ন করেছে, সেও এই কালভূজঙ্গের হাত থেকে নিস্কৃতি পায় না। কম দুঃখে কী আর লালন বলেছেন-
‘ঘর ছেড়ে সে বনেতে যায়, স্বপ্নদোষ কী হয় না তথায়?’
ধুমপান করলে ক্যান্সারের ভয় আছে এটি জেনেও যেমন লোকে ধুমপান করে, ঠিক তেমনিভাবে পরকালে আল্লাহ তাদের জন্যে ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন সেটা জেনেও লোকে মাস্টারবেট করবেই। খাদ্য সংগ্রহের জন্যে প্রাণী সবকিছুই করতে পারে। খাদ্যের পর প্রাণীর দ্বিতীয় প্রধান যে তাড়না তা সেক্স। সেক্সের তাড়না। শত ভয় দেখিয়েও মানুষকে এই জৈবিক প্রেরণা থেকে দূরে রাখা যাবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মাস্টারবেশন সম্পর্কে ইসলামি বিধি-নিষেধ পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মোল্লাদের শত চোখ রাঙানি সত্বেও যেসব মুসলমান এই ঘৃণ্য অভ্যাসটি এখনও পরিত্যাগ করতে পারেন নি, তাদের জন্যে গোটাকয়েক শরিয়া আইন নিম্নে পেশ করা হলো। ভালভাবে পড়ে দেখুন, আপনার সবকিছু মনে হয় একেবারে শেষ হয়ে যায় নি। নিয়মগুলি ফলো করলে কোন ফাঁক-ফোকর দিয়ে আপনি রেহাই পেয়েও যেতে পারেন; আপনার হস্তযুগল গর্ভবতী অবস্থায় সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হবে, সেই নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে আপনি বেঁচে যেতেও পারেন। চেষ্টা করতে দোষ কী!
মাষ্টারেবেশন:
গোসল ফরজ…(রেফারেন্স-৮, পৃ-৭৯)।
ই-১০.১- নাপাকি দুর করার জন্যে পুরুষের জন্যে গোসল ফরজ হয়, যখন..
১) তার শরীর হতে বীর্য নির্গত হয়;
২) অথবা তার লিঙ্গাগ্র যোনির ভেতর প্রবেশ করে;
এবং স্ত্রীলোকের জন্যে ফরজ হয়, যখন…
১) তার যোনি হতে সেক্সুয়াল ফ্লুইড নির্গত হয় (সেক্সুয়াল ফ্লুইডের সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হলো);
২) তার যোনির ভেতর লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করে;
৩) এবং তার ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যায়;
৪) সন্তানপ্রসবের পর ‘পোস্টন্যাটাল লকিয়া’ (বিশেষ ধরনের স্রাব) বন্ধ হয়, কিংবা (শুকনো প্রসবের ক্ষেত্রে) সন্তান ভূমিষ্ট হয়।
(এন: পুরুষের বীর্য বা স্পার্ম এবং মেয়েদের সেক্সুয়াল ফ্লুইডের প্রতিশব্দ হিসেবে আরবীতে ‘মানিইয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যৌনসঙ্গমকালে চরম পুলক লাভের সময় উভয়ের যৌনাঙ্গ হতে স্পার্ম বা সেক্সুয়াল ফ্লুইড যাই-ই নির্গত হোক, আরবী ভাষায় তার সাধারণ নাম মানিইয়া)।
উপবাস ভঙ্গ..(প্রাগুক্ত, পৃ–২৮৪–২৮৬):
ম.১.১৮(৯) যৌনসঙ্গম (ইচ্ছাকৃত সঙ্গমের ক্ষেত্রে যদি অর্গাজম নাও হয় তবুও), অথবা অযৌনস্থানের সাথে ঘর্ষণজনিত কারণে কিংবা মাস্টারবেশনজনিত কারণে অর্গাজম (এই ধরনের অর্গাজম অবৈধ উপায়ে হোক, যেমন নিজ হস্তে কৃত, কিংবা বৈধ উপায়ে হোক, যেমন কোন ব্যক্তির স্ত্রীর হস্তে কৃত, তাতে কিছু আসে যায় না, রোজা ভঙ্গ হবেই)।
১১.১৯(৩) অর্গাজম, তাহা স্পর্শজনিত কারণে হোক (যথা-চুম্বন, আলিঙ্গন, একে অপরের উরুর ওপর শুয়ে থাকা কিংবা অন্য কোন উপায়) অথবা মাস্টারবেশনের কারণে হোক;
সমগ্র কোরান অনুসন্ধান করেও আমি মাস্টারবেশন শব্দটি কোথাও খুঁজে পাইনি। সুতরাং মাস্টারবেশন পুরোপুরি হারাম, সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তবে কোন কোন মোল্লা নিম্নে বর্ণিত সুরা মুমেনুনের (২৩:৫-৭) নং আয়াতের উল্লেখ করে মাস্টারবেশনকে হারাম বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। তাদের এই ব্যখ্যা সঠিক কীনা তার ভার আমি মৈথুনকারীদের হাতে ছেড়ে দিলাম। তারাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, কাজটি তারা চালিয়ে যাবেন, না হারাম ভেবে এ থেকে বিরত থাকবেন?
০২৩.০০৫- যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।
০২৩.০০৬- নিজেদের পত্নীগণ এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
০২৩.০০৭- সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী।
কোরান ছেড়ে শরিয়া বিধি পর্যালোচনা করি এবার। শরিয়াবিশেষজ্ঞ ইসলামি জুরিস্টদের মতে DIY সেক্স পুরোপুরি হারাম।
অবৈধ…ডব্লিও৩৭.১ (রেফারেন্স–৮, পৃ–৯৩২)
ডব্লি−ও৩৭.১ (এন): নিজের হাতের সাথে মৈথুন করা অবৈধ। ইমাম শাফেয়িকে হস্তমৈথুনের প্রেক্ষিতে উপরে বর্ণিত আল্লাহপাকের বাণী (২৩:৫-৭) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- উপরোক্ত আয়াতগুলিতে যার যার সাথে সেক্স বৈধ করা হয়েছে, তার বাইরে যে কোন ধরনের সেক্স নিষিদ্ধ; এদের বাইরে আর কারও সাথে সেক্স বৈধ এই ধারণা শেষের আয়াতদ্বারা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
সমকামীতা/সডোমি:
মাস্টারবেশনের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা থাকলেও সমকামীতার ব্যাপারে কোরানের নির্দেশ সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। কোরানে সডোমিকে সমকামীতার (হোমোসেক্সুয়ালিটি) প্রতিশব্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যদিও সঠিক অর্থে সডোমি এবং সমকামীতা এক জিনিশ নয়। সে যাহোক, এই প্রবন্ধে আমরা সডোমি এবং সমকামীতাকে একই অর্থে ব্যবহার করবো।
বর্তমান বিশ্বে সমকামীতা একটি গুরুতর ইস্যু হিসেবে বিবেচিত। গে এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায় সমাজে নিজেদের ন্যয্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুনিয়াজোড়া আন্দোলন করে আসছে। (ইংরেজি ভাষায় পুরুষ সমকামীরা গে এবং মেয়ে সমকামীরা লেসবিয়ান নামে অভিহিত)। হোমোসেক্সুয়াল কমিউনিটিগুলি কর্তৃক পরিচালিত এই আন্দোলনের ফলে মানব প্রজাতির এই যৌন আচরণের প্রতি সমাজের ধারণা ক্রমে ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কোন কোন দেশে এই কমিউনিটিগুলি তাদের দাবী আদায়ে খুবই উচ্চকণ্ঠ। তাদের দাবী, তারাও সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক সম্প্রদায়ের মতোই, আর সব নাগরিকদের মতো তাদেরকেও সমান আইনি অধিকার দিতে হবে। তাদের অব্যাহত আন্দোলনের ফলে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের নানান দেশে সমকামীদেরকে অন্যান্য স্বাভাবিক নাগরিকদের মতোই সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আইন করা হয়েছে, ব্যক্তির যৌন ক্রিয়াকলাপ একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়, এর জন্যে ব্যক্তির ওপর রাষ্ট্র কোনপ্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। প্রতিবছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিডনিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ মেলার আয়োজন করা হয় (গ্র্যান্ড মার্দি ফেস্টিভাল) যেখানে গে এবং লেসবিয়ানদের সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয় যে গে এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায় মানব প্রজাতিরই বিশেষ এক গোষ্ঠি, ব্যক্তিগত যৌন আচরণের দায়ে কাউকে ঘৃণা কিংবা নির্যাতন করা উচিত নয়। আইনের দৃষ্টিতে তারা আর দশজন সাধারণ জনগণের সমতুল্য।
ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সমকামীদের জন্যে সমঅধিকারের দাবী নিতান্তই হাস্যকর একটি দাবী। সমকামী নারী-পুরুষ ইসলামের চোখে পশুর চেয়েও জঘন্য; যারা আল্লাহর দুনিয়ায় সমকামের মতো ক্রাইম অনুষ্ঠান করে থাকে তাদের জন্যে নির্ধারিত আছে সুকঠিন শাস্তি। এ কাজ প্রকৃতি বিরুদ্ধ, সুতরাং পরম করুনাময় আল্লাহরও বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মার্দি ফেস্টিভালে যারা সমকামের অধিকারের জন্যে চেঁচায়, দৈবাৎ যদি কোন ইসলামি প্যারাডাইজে ধরা খায় তারা, কঠিন মৃত্যুদণ্ড অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্যে। হ্যাঁ, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারিত নেই সমকামী পশুদের জন্যে।
সমকামীতার বিপক্ষে ইসলামের যে যুক্তি তা হলো, সমকামীতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ। শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণী একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবে, প্রকৃতির এরকমই বিধান। ইসলামিস্টদের এই যুক্তি কতটা বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তা যাচাই করা যাক এবার। প্রাণীর বিভিন্নমুখী যৌনাচরণ নিয়ে সম্প্রতি বহু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এইসব গবেষণা থেকে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাতে দেখা যায় যে পশু-জগতেও সমকামীতা বিরল ঘটনা নয়।
গবেষকরা আশ্চর্য হয়ে আবিস্কার করেছেন যে বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বেবুন ইত্যাদি প্রজাতির প্রাণীরাও মাঝে মাঝে সমলিঙ্গবিশিষ্ট সাথীটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনকী মাছ এবং পাখীদের মতো নিম্নস্তরের প্রাণীদের মধ্যেও সমকামীতার অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়। এইসব গবেষণা হতে জীববিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে, বহুল প্রচলিত না হলেও সমলিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণীকুলের মধ্যে যৌনাকর্ষণ প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোন বিষয় নয়। মনুষ্যেতর প্রাণীদের মধ্যেও যেহেতু অভ্যাসটি বিরাজমান, সুতরাং সমকামীতাকে একটি ব্যতিক্রমী জৈব আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, অপ্রাকৃতিক কিংবা অতিপ্রাকৃতিক আচরণ হিসেবে নয়।
মানুষ যেহেতু জীবজগতেরই একটি অংশ, সুতরাং মানুষের মাঝেও এইরূপ আচরণ পরিলক্ষিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যেও একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী সমলিঙ্গবিশিষ্ট সঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক প্রথাবিচ্যুত এই ক্ষুদ্র অংশটির প্রতি সমাজ কোন্ আচরণ করবে? সমাজ কী তাদেরকে অপরাধী, খুনী, ধর্ষণকারী হিসেবে বিবেচনা করে গুরুতর শাস্তি দেবে? সভ্য সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সমকামীতাকে সমর্থন করে না ঠিকই, তাই বলে তারা সমকামী নারী-পুরুষকে খুনী বা ধর্ষণকারীর সমান আসনে বসিয়ে তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড চাপিয়ে দেবে, তাও কেউ প্রত্যাশা করে না। সভ্য মানুষ বড় জোর বলবে, সমকামীরা তাদের নিজেদের মতো করে থাকুক। যতক্ষণ না তারা সমাজের সংখ্যাগুরু অংশটির অধিকারের ওপর ক্ষতিকর কোনকিছু করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া কেন?
তবে ইসলামের কথা আলাদা। হাজার হলেও সাক্ষাৎ বেহেশত্ থেকে নেমে আসা এই ধর্ম, ভূপৃষ্ঠ হতে সমস্ত পাপীতাপী কাফের-মোশরেকদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইসলামী মোল্লাতন্ত্র কায়েম করাই এই স্বর্গীয় ধর্মের একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং সমকামীতাকে ইসলাম জ্বিনা বা ব্যভিচারের মতোই জঘন্য অপরাধ হিসেবে ট্রিট করে। সমকামীদের জন্যে কঠোরতম শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। কোরান, হাদিস এবং শরিয়ায় সমকামীতার যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, নিম্নে তা পর্যালোচনা করা হলো।
কোরান অনুসারে সডোমী হচ্ছে হযরত লুতের (আঃ) সম্প্রদায় কতৃক আচরিত একটি প্রথা। লুত ছিলেন ইসলামের আদি পুরুষ হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) ভ্রাতুষ্পুত্র। লুতের সম্প্রদায়ের বাসস্থান কোথায় ছিল কোরানে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ নাই। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে যা বুঝা যায় তাতে মনে হয় যে প্রাচীন সডোম বা গুমুরাহ নগরীতে ছিল তাদের বাস (রেফারেন্স-৬, পৃ-১৪৯)। বাইবেল বর্ণিত প্রাচীন এই শহর দু’টি যৌনবিচ্যুতির জন্যে কুখ্যাত ছিল। কোরানের নিম্নবর্ণিত আয়াতদৃষ্টে জানা যায়, এই শহর দু’টির সমকামী অধিবাসীগণ আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আসমান হতে নিক্ষিপ্ত ব্রাইমস্টোনের (গন্ধক বা সালফারনির্মিত প্রস্তরখণ্ড) আঘাতে অক্কা পায় সডোমবাসীরা। নিহতদের মধ্যে লুতের স্ত্রীও ছিলেন। তিনি কোন্ অপরাধে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তার পরিষ্কার কোন বিবরণ অবশ্য কোরানে নেই। লুত-সম্প্রদায়ের ধ্বংস বিষয়ক বর্ণনা কোরানে বহু সুরায় আছে (৭:৮০-৮৪, ২১:৭৪-৭৫, ২৬:১৬০-১৬৫, ২৭:৫৪-৫৮, ২৯:২৮-৩৫), তবে আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার জন্যে আমি একটিমাত্র সুরার উল্লেখ করব এখানে (৭:৮০-৮৪)।
৭:৮০- আর আমি লুতকে নবুয়ত দান করে পাঠিয়েছিলাম, যখন সে তার কওমকে বলেছিল: তোমরা এমন অশ্লীল ও কুকর্ম করেছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ আর করে নি।
৭:৮১- তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা তোমাদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।
৭:৮২- কিন্তু তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন জওয়াবই ছিল না যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র লোক বলে প্রকাশ করছে।
৭:৮৩- পরিশেষে আমি লুতকে এবং তার পরিবারের লোকদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম তার স্ত্রী ছাড়া, তার স্ত্রী ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
৭:৮৪- অতঃপর আমি তাদের ওপর মুষলধারায় বারিপাত করেছিলাম, সুতরাং অপরাধী লোকদের পরিণাম কী হয়েছিল লক্ষ কর।
আব্দুর রহমান ড’ই বায়হাকির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে সডোমী এমন একটি কাজ যা আল্লাহর মনে প্রচণ্ড ক্রোধের উদ্রেক করে (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪১)।
আল্লাহর ক্রোধ – বায়হাকি
আল-তিবরানি এবং আল-বায়হাকির বর্ণনায় দেখা যায়, প্রফেট মহম্মদ (দঃ) বলেছেন-
“চার ধরনের লোক আছে যারা আল্লাহর তীব্র ক্রোধ মাথায় নিয়ে সকালে ঘুম হতে জাগে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মাথায় নিয়েই রাতে ঘুমাতে যায়”। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- “তারা কে, হে আল্লাহর রাসুল”? নবী বলেন- “সেই সমস্ত পুরুষ যারা মেয়ে সাজতে চেষ্টা করে এবং সেই সমস্ত মেয়ে যারা পুরুষ সাজতে চেষ্টা করে (পোষাক-পরিচ্ছেদ এবং আচার আচরণ দ্বারা) এবং সেই সমস্ত লোক যারা পশুর সাথে সেক্স করে এবং সেই সমস্ত পুরুষ যারা পুরুষের সাথে সেক্স করে”।
বিভিন্ন ইসলামি সোর্সের উল্লেখ করে উক্ত বইয়ে (রেফারেন্স-৯) সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে সমকামীতা কবিরা গুনাহ্ বা মহাপাপ। ২৪২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত কিছু অংশ এ-স্থলে উদ্ধৃত করা হলো।
“কোন ব্যক্তি যদি লালসাভরে কোন বালককে চুমো দেয়, মহান আল্লাহ তাকে এক হাজার বছর দোজখের আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেবেন।”
আরও বলা হয়েছে যে নবী বলেছেন-
“কোন ব্যক্তি যদি লালসাভরে কোন বালককে স্পর্শ করে, তার ওপর আল্লাহ, তার ফেরেশতাবর্গ ও সমস্ত মানবজাতির অভিশাপ বর্ষিত হয়”।
আব্দুর রহমান ড’ইয়ের উপরোক্ত মন্তব্য অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক বালককে চুম্বন করা কিংবা তার সাথে সেক্স করা সম্পর্কিত। সঠিকভাবে বলতে গেলে এ ধরনের সেক্সকে সমকামীতা না বলে শিশু নির্যাতন বলাই সঙ্গত যা নাকী সব ধরনের আইনেই দণ্ডনীয় অপরাধ বলে স্বীকৃত। সে যাহোক, আমরা যদি এ বিষয়ে কোরানের প্রতি দৃষ্টি ফেরাই দেখতে পাই যে সেখানে যে বর্ণনা রয়েছে তা হিপোক্রেসিতে পরিপূর্ণ। একদিকে তিনি সমকামীতার দোষে গোটা একটা গোত্রকে ধ্বংস করে ফেলছেন, আরেকদিকে তিনি তার পবিত্র গ্রন্থ মারফৎ আশ্বাস দিচ্ছেন যে প্রিয় বান্দাদের জন্যে তিনি যে বেহেশতের বাগানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা প্রচুর পরিমাণে মুক্তাসদৃশ্য তরুণ বালকে পরিপূর্ণ। পরকালে এইসব মুক্তাসদৃশ্য আসমানি বালকদের সেবা খাওয়ার লোভে কোন কোন সমকামী জিহাদি যদি শহীদ হওয়ার জন্যে উন্মাদ হয়ে উঠে তাহলে তাকে খুব বেশী দোষ দেয়া যায় কী?
কোরানিক বালকদের বর্ণনা সম্বলিত কিছু আয়াত নিম্নে সন্নিবেশিত করা হলো।
সুরা তুর (৫২):
০৫২.০২০- তারা বসবে শ্রেণীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে, আমি তাদের মিলন ঘটাবো আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে।
০৫২.০২১- এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তানসন্ততি তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করবো তাদের সন্তানসন্ততিদেরকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হন্সাস করবো না, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।
০৫২.০২২- আমি তাদেরকে দেব ফলমূল এবং মাংস যা তারা পছন্দ করে।
০৫২.০২৩- সেখানে তারা একে অন্যের নিকট হতে গ্রহণ করবে পানপাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপকর্মেও লিপ্ত হবে না।
০৫২.০২৪- সেখানে তাদের জন্যে নিয়োজিত থাকবে সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ্য কিশোরগণ।
০৫২.০২৫- তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে,
০৫২.০২৬- এবং বলবে: আমরা পূর্বে পরিবার পরিজনের মধ্যে শঙ্কিত অবস্থায় ছিলাম।
০৫২.০২৭- অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। সুরা- দাহর (৭৬)
০৭৬.০১৭- সেখানে তাদের পান করতে দেয়া হবে জানজাবিল মিশ্রিত পানীয়,
০৭৬.০১৮- জান্নাতের এমন এক প্রস্রবণের, যার নাম সালসাবিল।
০৭৬.০১৯- তাদেরকে পরিবেশন করবে চির কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত মুক্তা,
০৭৬.০২০- তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখতে পাবে ভোগবিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।
ভালভাবে সমগ্র কোরান সার্চ করলে আপনি এমন আরও অনেক ঐশ্বরিক ওয়াদা পেয়ে যেতে পারেন। আয়তলোচন হুর আর সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোর বেহেশতি বালকের টোপ ছাড়া কামার্ত বেদুঈনদেরকে ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে আসার আর কোন উপায় রাব্বুল আলামিনের হাতে অবশিষ্ট ছিল!
ইসলামপন্থীরা হয়তো এই বলে কৈফিয়ৎ দেবেন যে মুক্তাসদৃশ্য এইসব বালকরা বেহেশতের পরিচারক মাত্র; বেহেশতবাসীদের হাতে পানপাত্র যুগিয়ে দেয়াই তাদের কাজ, সেক্স করা নয়। তাদের এই যুক্তি নেহায়েতই খোড়া যুক্তি মুখ রক্ষা করার প্রয়াসমাত্র। বেহেশতবাসীর হাতে সুরাপাত্র সার্ভ করার জন্যে আল্লাহপাক প্রচুর পরিমাণে আয়তলোচনা ‘সাকি’র ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যারা এতই লোভনীয়া যে দৈবাৎ তাদের মুখবিবর হতে একবিন্দু থুথু পৃথিবীতে ছিটকে পড়লে সমস্ত ভূপৃষ্ঠ নাকি মেশক-আম্বরের গন্ধে আমোদিত হয়ে যাবে। এইসব হুরদের সাথে বেহেশতি পুরুষরা যখন সেক্স করবে, প্রতিবার সেক্স করার পর আল্লাহর কুদরতে হুরটি সাথে সাথে আবার কুমারি হয়ে যাবে! চিরকুমারি, চির অক্ষতযোনি। সোবাহানাল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। এখন প্রশ্ন, এতসব হুরের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোর বালকদের নিয়োজিত করার কী দরকার ছিল আল্লাহর? কেন মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরের পরিবর্তে হাবসী পরিচারক নিযুক্ত করলেন না তিনি? আরবদেশের তৎকালীন নিয়মানুযায়ী হাবসী ক্রীতদাসরাই প্রভুর হাতে পানপাত্রটি এগিয়ে দিত। সেদিকে না গিয়ে চিরকিশোর মুক্তার মতো জ্যোতিষ্মান বালকদেরকে নিয়োজিত করতে গেলেন আল্লাহ। কেন? প্রকৃত সত্য এই যে জিহাদিদের মাঝে একটি অংশ ছিল বিষমলৈঙ্গিক সেক্সে যাদের পরিতৃপ্তি হতো না। সমলৈঙ্গিক সেক্স, বিশেষ করে কিশোর বালকদের সাথে সেক্সের মধ্যেই চরম পরিতৃপ্তি খুঁজে পেতো তারা। নবী জানতেন যে শুধু শুকনো নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে না, এরূপ সেক্স হতে বিরত রাখতে হলে পরকালে সুন্দর কিশোরদের অফুরন্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে তাকে। আর সেজন্যেই আয়তলোচনা হুরদের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে পবিত্র শ্লোকে। পাশাপাশি বলা হয়েছে যে সমলৈঙ্গিক সেক্স বিধাতার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, এধরনের কাজ জিনা কিংবা ব্যভিচারের ন্যায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
ইসলামের দৃষ্টিতে সডোমি বা সমকামীতার সংজ্ঞা কী?
কতিপয় ইসলামী সোর্স অনুসন্ধান করার পর আমার মনে হয়েছে যে ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামীতার সংজ্ঞা হচ্ছে পায়ুপথে সঙ্গম, তা সে পুরুষের হোক কিংবা স্ত্রীলোকের হোক। সুতরাং যদি কোন পুরুষ কোন অপরিচিতা মেয়ের সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত এবং তার ওপর হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য। যদি সে নিজের স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, তাহলেও সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত; তবে এক্ষেত্রে তার ওপর হুদুদ শাস্তির পরিবর্তে তা’জির (স্বেচ্ছাধীন বা মর্জিমাফিক) শাস্তি প্রয়োগযোগ্য (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)। তবে এই শাস্তির ধরন কীরূপ হবে, শিরোচ্ছেদ, পাথর নিক্ষেপে হত্যা নাকী ইসলামিক দোররা, সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই।
আরেকটি প্রশ্ন এখন। যদি একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষকে লালসাভরে চুম্বন করে কিংবা আলিঙ্গন করে কিংবা এমন কোন শারীরিক কাজ করে যা পায়ুপথে সঙ্গম নয় (অর্থাৎ পায়ুপথে বীর্যপাত না ঘটিয়ে অন্যকোনভাবে বীর্যপাত ঘটায়), সেক্ষেত্রে তার বিধান কী? এই ধরনের সেক্সকে কী সডোমির পর্যায়ভুক্ত করা যায়? লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রেই বা ইসলামের বিধান কী? দুইজন লেসবিয়ান মহিলার মধ্যে অনুষ্ঠিত কার্যকলাপকেও কী সডোমির সমতুল্য বলে গণ্য করা যায়? দু’জন মেয়েলোকের পক্ষে পায়ুপথে সঙ্গম কোনভাবেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় লেসবিয়ানদেরকে ইসলাম কোন শাস্তি দেবে? বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি, কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাই নি। কেউ যদি এব্যাপারে ইসলামি সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেন, আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
আগেই বলা হয়েছে ইসলামের সংজ্ঞা অনুযায়ী পায়ুপথ দিয়ে লিঙ্গ প্রবিষ্ট করিয়ে বীর্যপাত ঘটানোর নাম সডোমি। এই কাজের শাস্তিপ্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামি পণ্ডিতগণ একমত হতে পারেন নি, বিভিন্নজন বিভিন্নরূপ শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে, কারণ এর সাথে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। কোন কোন আইনবিদের মতে ইসলামি আইনানুযায়ী এই অপরাধের জন্যে কোনপ্রকার নির্ধারিত শাস্তি (হুদুদ) নেই, বরং তা’জির বা গুরুত্ব বিবেচনা করে শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে যা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
আব্দুর রহমান ড’ইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী সডোমীর শাস্তি নিম্নরূপ।
উভয়কে হত্যা করা (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)
সমস্ত মুসলিম জুরিস্ট এবিষয়ে একমত যে সডোমি একটি যৌনাপরাধ, তবে এ কাজের শাস্তির ব্যাপারে সকলে একমত হতে পারেন নি। ইমাম আবু হানিফার মতে সডোমি ব্যভিচারের সমতুল্য নয়, সুতরাং সডোমির জন্যে কারও ওপর হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, এক্ষেত্রে অপরাধীদের ওপর তা’জিরের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ইমাম মালিকের মতে সডোমির জন্যে অপরাধীকে হুদুদ আইনানুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে হবে, অপরাধী বিবাহিত না অবিবাহিত তা বিচার করা চলবে না। যে হাদিসের সূত্র ধরে ইমাম মালিক এই ক্যাপিটাল শাস্তি প্রদানের পক্ষপাতি, সে হাদিসটি নিম্নরূপ:
আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন: “যদি তোমরা এমন কাউকে পাও যারা লুতের গোত্রের কাজ করেছে (সমকামীতা), তাদের ওপরেরজন এবং নীচেরজন উভয়কেই হত্যা করো”। আরেক বর্ণনায় তিনি বলেছেন যে: “যে করছে এবং যার সাথে করছে- উভয়কে হত্যা কর”।
আবু ইউসুফ, ইমাম শাফেয়ি এবং মহম্মদের মতানুযায়ী অপরাধী যদি বিবাহিত হয়, তার শাস্তি হবে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যু, তবে অবিবাহিত হলে তা’জির প্রয়োগযোগ্য।
নো ব্যাকসাইড – (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)।
স্ত্রীর সাথে অস্বাভাবিক উপায়ে (অর্থাৎ- পেছনের দিক হতে পায়ুপথে) সঙ্গম করা অপরাধ। অধিকাংশ জুরিস্ট মনে করেন যে এই অপরাধে হুদুদের পরিবর্তে তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, কারণ এক্ষেত্রে একপ্রকার সন্দেহ (সুবুহাত) বিরাজিত, এবং সন্দেহের অবকাশ থাকলে হুদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়।
উভয়কে হত্যা করা (রেফারেন্স-৮, পৃ-৬৬৫)
পি১৭.৩ – আল্লাহর নবী (দ:) বলেছেন:
(১) যে সডোমি করে এবং যে তা করতে দেয়, তাদের উভয়কে হত্যা কর।
(২) যে ব্যক্তি লুতের গোত্র যা করতো তা করে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।
(৩) মেয়েদের মধ্যে সংঘটিত সমকামীতা ব্যভিচারের সমতুল্য।
সমকামীদের জন্যে আরও কিছু দুঃসংবাদ (হেদাইয়া- রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)
যদি কোন ব্যক্তি আগন্তুক কোন মহিলার সঙ্গে পায়ুপথে সঙ্গম করে (অর্থাৎ সডোমিজনিত অপরাধ সংঘটন করে), হানিফার বিধানুযায়ী তার জন্যে কোন শাস্তি নির্ধারিত নাই; তবে তাকে তা’জিরের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে তা’জির বা সংশোধন প্রসঙ্গে জামা সাঘিরের নির্দেশ এই যে অপরাধীকে অন্তরীণাবস্থায় রাখতে হবে যে পর্যন্ত না সে অনুশোচনার উপলব্ধি ঘোষণা করে। দু’জন সাহাবি (disciple) বলেছেন যে যেহেতু এই কাজ বেশ্যাবৃত্তি (whoredom) সংঘটনের সমতৃল্য, সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজ করে তার ওপর বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগযোগ্য; এবং এ বিষয়ে শাফেয়ির একটি মতামত রয়েছে; এবং তার আরেক মতানুসারে অত্র কাজে জড়িত উভয় ব্যক্তিই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য, তা তারা যাই হোক না কেন – অর্থাৎ তারা বিবাহিত অবিবাহিত যাই হোক না কেন – কারণ নবী বলেছেন যে “সকর্মক (active) এবং অকর্মক (passive) উভয়কে হত্যা কর” (অথবা আরেক হাদিস অনুসারে-“কারক (agent) এবং কৃত (subject) উভয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর”। সাহাবিদ্বয়ের যুক্তি এই যে অত্র কাজটিতেও বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমস্ত গুণাগুণ বর্তমান, যা এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে,
“এ এমন এক লালসাপূর্ণ কর্ম যা সংঘটিত হয় ঈন্দ্রিয়তৃপ্তিকারী একটি বস্তুর ওপর, এমন অবস্থায় যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত, কর্মের উদ্দেশ্য হয় বীর্য নিক্ষেপকরণ”।
অপরপক্ষে হানিফার যুক্তি এই যে কর্মটিকে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, কারণ নবীর সাহাবিদের মধ্যে এ প্রসঙ্গে মতদ্বৈধতা বিদ্যমান ছিল, কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে এ ধরনের অপরাধীকে পুড়িয়ে মারা উচিত, কেউ আবার বলেছেন যে তাকে কোন উচুস্থানে যেমন কোন গৃহের ছাদ হতে ঝুলিয়ে রেখে পাথর নিক্ষেপ করা উচিত এবং এই ধরনের আরও মতামত; অধিকন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এই কর্মটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের গুণাগুণ নাই, কারণ এতে বেশ্যাবৃত্তির ন্যায় সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা নাই যে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের বিভ্রমের সৃষ্টি হতে পারে; …অধিকন্তু, এই প্রজাতির যৌনসম্পর্ক বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের তুলনায় অত্যন্ত কম, কারণ এই ধরনের কাজের আকাঙ্খা শুধুমাত্র সকর্মক সঙ্গীটির মনেই উদ্রেক হয়, অকর্মক সঙ্গীর মনে হয় না, পক্ষান্তরে বেশ্যাবৃত্তির ক্ষেত্রে উক্ত আকাঙ্খা উভয়ত। শাফেয়ি উল্লেখিত হাদিসটি সম্ভবত এমন ক্ষেত্রকে নির্দেশ করে যেখানে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিপ্রদান জরুরি; অথবা যেখানে উক্ত কর্ম সম্পাদনকারীরা কাজটি বৈধ এবং সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পায়।
উপরের আলোচনা হতে এটি স্পষ্ট যে সডোমি বা সমকামীতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ইসলামি সমাজে। সমলিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন মানুষ (তা সে হোক দু’জন নারী অথবা দু’জন পুরুষ) যদি স্বেচ্ছায় একটি পরিবার তৈরি করে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামি আইনের বিভ্রান্তি ও মতভেদের সুযোগ নিয়ে তাদের ওপর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নেমে আসতে পারে। হোমোসেক্সুয়ালিটি বিষয়ে ইসলামি আইন মোটেও মানবিক এবং যুগোপযোগী নয়। গে এবং লেসবিয়ানদেরকে পছন্দ না করার অধিকার সবার রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে দু’জন লেসবিয়ান নারীর কিংবা দু’জন গে পুরুষেরও অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দমত জীবনটা বেছে নেয়ার। তাদের জীবন একান্তভাবেই তাদের নিজস্ব, জীবনটা তারা কীভাবে কাটাবে সেটা বেছে নেয়ার অধিকারও তাদের জন্মগত। তাদের জীবনধারা যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজের অপর অংশের প্রতি ক্ষতিকর না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারকে পদদলিত করা কিংবা কিছু আজগুবি ধর্মীয় অনুশাসনের নামে তাদেরকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। আধুনিক সভ্য সমাজ সে অধিকার কাউকে দেয় নি।
বেস্টিয়ালিটি বা পশুমেহন
পশুমেহন শব্দটির সাথে আপনাদের পরিচয় আছে কী? আপনারা স্ত্রীপুরুষে সেক্সের কথা শুনেছেন, পুরুষে পুরুষে সেক্সের কথা শুনেছেন, মেয়েতে মেয়েতে সেক্সের কথা শুনেছেন, এমনকী নিজের সাথে নিজের সেক্সের কথাও শুনেছেন। তাই কী যথেষ্ট ছিল না পাঠক? ঈশ্বরের সৃষ্ট এই সুন্দর পৃথিবীতে বিচিত্র প্রাণীকুলের বিচিত্রতর যৌন আচরণের বিষয় পড়ে আপনি যদি এখনও তেতো-বিরক্ত না হয়ে থাকেন তবে সিরিজের সর্বশেষ এই টপিকসটির নাম শুনে (পশুমেহন) আপনি যে আঁতকে উঠবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেকে হয়তো ভাবতেই পারবেন না যে মানুষ কীভাবে একটি পশুর সাথে সেক্স করতে পারে? তাদের কাছে এ ধরনের কাজ খুন কিংবা আত্মহত্যার সমতুল্য বলে প্রতীয়মান হতে পারে। একজন মানুষ কীভাবে অপরকে খুন করে কিংবা নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়, সাধারণ মানুষের কাছে তাও এক আশ্চর্যের বিষয়। তদসত্ত্বেও সমাজে খুনী আছে, আছে আত্মহননকারী। ঠিক সেইভাবে সাধারণ বুদ্ধির অগম্য হলেও মনুষ্যসমাজে বিরল কিছু লোক থাকে যাদের মধ্যে পশুমেহনের মতো বিরল যৌনবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। সডোমি বা নেক্রোফিলিয়ার মতোই অস্বাভাবিক যৌন-আচরণ এটি। এটি একটি রোগবিশেষ, অন্যান্য রোগীদের যেভাবে ঔষধের সাহায্যে নিরাময় করা হয়, পশুমেহনে অভ্যস্ত লোকদিগকেও সংশোধনযোগ্য চিকিৎসার সাহায্যে নিরাময় করা সম্ভব, শাস্তি প্রয়োগ করে নয়। তবে ইসলামের কথা আলাদা। আর সব যৌনবিচ্যুতির মতো পশুমেহনকারীদের জন্যেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা আছে ইসলামে, কোনপ্রকার সংশোধনকারী পদ্ধতির কথা নাই। আমরা এখন দেখবো পশুমেহনকে ইসলাম কীভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং এই জঘন্য কাজের কাজীকে কীভাবে হ্যান্ডল করে।
পশুমেহন সম্পর্কে ইসলামি আইনকানুন ভালভাবে স্টাডি করতে গেলে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে তা হলো শাস্তির প্রকারভেদ নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মতদ্বৈধতা। পশুমেহনের দায়ে কেউ মৃত্যুদণ্ডও পেতে পারে, আবার কেউ কোনপ্রকার দণ্ডভোগ না করে দিব্বি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে! এই ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে যে কেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ জানলেন না যে তার সৃষ্ট বান্দাদের সবাই শুধু নিজ প্রজাতির সদস্যের সাথে প্রেমে পড়বে তা নয়, তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী দু’চারজন বান্দা থাকবে যারা ভিন্ন প্রজাতির সদস্যের সাথেও প্রেমে পড়তে পারে? নারীপুরুষের মনে প্রেমানুভূতি সৃষ্টি করার সময় তার আরেকটু সচেতন থাকা উচিত ছিল; তার সৃষ্ট জীবদের মনে স্ট্যান্ডার্ড ভালবাসার বাইরেও যে কোনপ্রকার বিচ্যুতির জন্ম হতে পারে সে বিষয়ে তিনি একেবারেই চোখ বুঁজে ছিলেন। তার এই চোখ বুঁজে থাকার সুযোগে মোল্লাদের পোয়া বারো এখন, বিষয়টাকে মিট করতে তারা ইচ্ছেমতো ফতোয়া নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি, কারণ এর সাথে অপরাধীর জীবনমরণের প্রশ্ন জড়িত। অনুগ্রহ করে হেদাইয়া বর্ণিত নিম্নের অংশটুকু পাঠ করুন। চিন্তা করে দেখুন, খোদা নাখাস্তা যদি আপনি কখনও ইসলামি আইনের হাতে ধরা খেয়ে যেতেন, তাহলে আপনার পরিণতি কী হতো। আরও লক্ষ করুন, যদিও পশুটি কোন দোষ করে নি, শাস্তির হাত হতে তার নিস্তার নাই। তাকে হত্যা করতেই হবে। ওয়াইল্ড লাইফের প্রতি ইসলামি আইনের কী অপূর্ব দয়া!
পশুমেহনের শাস্তি
পশুর সাথে সেক্স করার অপরাধে নির্ধারিত শাস্তির বিষয়ে বিস্তর বিভ্রান্তি ও মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ইসলামে। শাস্তির পরিমাণ খুব লঘু শাস্তি হতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা পর্যন্ত হতে পারে। বিখ্যাত শারিয়া বিশেষজ্ঞ আব্দুর রহমান ড’ই লিখেছেন যে ইমাম মালিক, আবু হানিফা এবং জহিরের মতানুযায়ী পশুমেহনের শাস্তিস্বরূপ হদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়, তা’জির অনুযায়ী এই অপরাধের শাস্তি দিতে হবে। পশুটিকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে, তবে সেটির মাংস খাওয়া হালাল। (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)
তবে হাম্বল এবং শাফেয়ির মতে এক্ষেত্রে হদুদ আইন প্রয়োগ করে অপরাধীকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে হবে। পশুটিকেও বধ করতে হবে এবং পশুটির মাংস খাওয়া হালাল নয়।
হেদাইয়া অনুসারে পশুমেহনের শাস্তি (রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)
যদি কোন ব্যক্তি পশুমেহন করে, তার ওপর হদুদ প্রয়োগযোগ্য নয় কিংবা শাস্তি প্রদানযোগ্য নয়, কারণ এই কাজ বেশ্যাবৃত্তির সমতুল্য নয়, যেহেতু বেশ্যাবৃত্তি একটি জঘন্য অপরাধ যা সম্পূর্ণভাবে লালসা হতে উদ্ভূত এবং যা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হতে উৎপন্ন হয়; কিন্তু এই সংজ্ঞা পশুসঙ্গমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এই কাজ সুস্থ রুচির মানুষের কাছে চরম ঘৃণার্হ (যে কারণে পশুদের যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখা কিংবা গোপন করে রাখা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় না); এবং মানুষের মনে পশুর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছা জাগার কোন কারণ থাকতে পারে না, তবে প্রবলতম দুষিত ক্ষুধা এবং প্রবৃত্তির চরম বিকৃতি ব্যতিত; …সুতরাং এক্ষেত্রে তাই হদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, তবে ব্যক্তিটির ওপর সংশোধনযোগ্য তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, যার কারণগুলি পূর্বেই বিবৃত করা হয়েছে। আরও রেকর্ড করা হয়েছে যে পশুটিকে হত্যা করে ফেলতে হবে এবং পুড়িয়ে ফেলতে হবে; যদি পশুটি খাওয়ার যোগ্য কোন প্রজাতিভুক্ত না হয়, তবে পশুটি যদি খাওয়ার যোগ্য কোন প্রজাতিভুক্ত হয়, তবে তা খাওয়া বৈধ এবং পুড়িয়ে ফেলা যাবে না (আবু হানিফার মতানুযায়ী)। আবু ইউসুফ বলেন যে, উভয় ক্ষেত্রেই পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, অপরাধী যদি পশুটির মালিক না হয় তবে অপরাধীকে পশুর মালিককে মূল্য পরিশোধ করতে হবে; তবে পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলা অতীব আবশ্যিক, কারণ পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলার সপক্ষে এত বড় কারণ আর হতে পারে না যে পশুটি জীবিত থাকলে এই জঘন্য পাপকাজের স্মৃতি মুছে ফেলা যেতো না এবং অপরাধীর অঙ্গে এই অভিশাপ চিরস্থায়ী হয়ে থাকতো।
সারসংক্ষেপ এবং উপসংহার
নরনারীর যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদিতে ইসলামের আপাতধার্মিক ভাবমূর্তির পেছনে যে আসল চেহারা লুকিয়ে আছে, তার স্বরূপ উন্মোচন করা কোন সহজ কাজ ছিল না। ইসলাম এই ধারণা দিতে চেষ্টা করে যে সেক্স এবং সেক্সসংক্রান্ত বিষয়াদিতে চরম সিদ্ধান্তটি দেয়ার একমাত্র মালিক সেই, সে হচ্ছে পৃথিবীর তাবৎ নরনারীর একমাত্র মরাল পুলিশ তথা নৈতিক গার্জিয়ান। একেবারেই মিথ্যা একটি ধারণা। যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর নৈতিকতা এবং ধর্মপরায়ণতার একটি কৃত্রিম মুখোশ জোর করে চাপিয়ে রাখা হয়েছে ইসলামে, সেই কালো হিজাবটি খুলে ফেললে ইসলামের যে চেহারা ভেসে উঠে তা ইসলাম সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণার সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ। নরনারীর যৌনাচার সম্পর্কে ইসলামি ধারণার সারসংক্ষেপ করলে তা নিম্নরূপ দাড়ায়-
১) ইসলামের দৃষ্টিতে সেক্সের প্রকৃত সংজ্ঞা হলো স্ত্রীজাতির সেক্স-অর্গানটিকে নিজের দখলে নিয়ে আসা, বিয়ের ক্ষেত্রে মোহরানা প্রদান করে কিংবা শত্রু/অমুসলিম নারীদেরকে যুদ্ধবন্দিনী করে।
২) ইসলামি ভার্সন মোতাবেক সেক্সের অর্থ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে পুরুষ প্রজাতিটির যৌনতৃপ্তি, যা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় স্ত্রীযোনির অভ্যন্তরে বীর্য নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে।
৩) কামকেলিতে পুরুষটি হচ্ছে একমাত্র অভিনেতা, স্ত্রী সেই অভিনয় লীলার একটি অবশ্যকীয় উপকরণমাত্র।
৪) ইসলামি সেক্সে স্ত্রীজাতির ভূমিকা নাই বললেই চলে। স্ত্রীর স্পর্শকাতরতা, তার পছন্দ-অপছন্দ, তার চরম পুলক ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। একজন মুসলমান রমণীর পক্ষে তার যৌন আকাঙ্খার কথা মুখ ফুটে ব্যক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। এ বিষয়ে সে সামান্যতম প্রকাশমুখী হলে বেশ্যার তকমা জুটতে পারে তার কপালে।
৫) ইসলামি আইনশাস্ত্র এমনভাবে রচিত যার মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারী কর্তৃক মুসলমান পুরুষটিকে সেক্সুয়াল প্লেজার যোগান দেয়া, এখানে প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবীয় বিবেচনা একেবারেই অনুপস্থিত। এই সমাজে সেক্স একান্তভাবেই পুরুষের কামনাসঞ্জাত একটি বিষয়, এর নিবৃত্তির জন্যে দরকার হলে সে স্ত্রীপ্রজাতিটির ওপর বলপ্রয়োগেরও ক্ষমতা রাখে।
৬) হোমোসেক্সুয়াল এবং অন্যান্য যৌনবিচ্যুতির শিকারগণ ইসলামের চোখে খুনীর চেয়েও জঘন্য, তাদের জন্যে কোনপ্রকার ক্ষমার সুযোগ নেই ইসলামে।
৭) ইসলাম মুসলমান পুরুষদেরকে মেয়েদের সাথে যথেচ্ছ সেক্স করার খোলা লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে, যদি মেয়েটি অমুসলিম হয় কিংবা মুসলমান পুরুষটি কোন কাফেরদের দেশে বসবাস করে।
সেক্স সম্পর্কে ইসলামের কনসেপ্ট সম্পূর্ণভাবে না হলেও যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। মধ্যযুগের আরব বেদুঈন সমাজের সাথে সঙ্গতি রেখে এই কালচার গড়ে উঠেছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুরুষটির চরম তৃপ্তিলাভ। এরূপ সেকেলে ধারণা নিয়ে নারীপুরুষের মধ্যে পারস্পরিক তৃপ্তিদায়ক সেক্সুয়াল সম্পর্ক গড়ে তোলা একেবারেই অসম্ভব। এরূপ সম্পর্কের কানাগলি বেয়ে যে জিনিশটি হাতে আসে তা দিয়ে বড়জোর নিজের ইন্দ্রিয়ক্ষুধাটি মেটানো যেতে পারে, এর বেশী কিছু নয়।
– সমাপ্ত –
রেফারেন্সসমূহঃ
১) দ্য হলি কোরান; অনুবাদ – আঃ ইউসুফ আলী, পিক্থল, শাকির।
২) সহি বুখারি; অনুবাদ – ডঃ মোহম্মদ মহসিন খান।
৩) সহি মুসলিম; অনুবাদ – আব্দুর রহমান সিদ্দিকী।
৪) সুনান আবু দাউদ; অনুবাদ – প্রফেসর আহম্মদ হাসান।
৫) মালিক’স মুয়াত্তা; অনুবাদ – আ’শা আব্দুর রহমান এবং ইয়াকুব জনসন।
৬) ডিকসনারি অব ইসলাম-১৯৯৪, গ্রন্থকার- টি.পি.হাফস।
৭) ইমাম গাজ্জালির ইয়াহ্ আল উলুমেদ্দিন (আব্দেল সালাম হারুন কতৃক সংক্ষেপিত-১৯৯৭); ডঃ আহম্মদ এ. জিদান কতৃক সংশোধিত এবং অনুদিত।
৮) রিলাইয়ান্স অব দ্য ট্র্যাভেলার (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ)-১৯৯৯, গ্রন্থকার- আহম্মদ ইবনে নাগিব আল মিস্রি, সংকলক- নুহ হা মিম কেলার।
৯) শারিয়া দ্য ইসলামিক ল’-১৯৯৮, গ্রন্থকার-আব্দুর রহমান ই. ডই।
১০) ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুল্লাহ, অনুবাদ- এ. গুইলম, ১৫তম সংস্করণ।
১১) দ্য হেদাইয়া কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক ল’স-(পুণর্মুদ্রন-১৯৯৪); অনুবাদ- চার্লস হ্যামিল্টন।
আগের পর্বগুলো:
ইসলামে কাম ও কামকেলি (১ম পর্ব)
ইসলামে কাম ও কামকেলি (২য় পর্ব)
ইসলামে কাম ও কামকেলি (৩য় পর্ব)
ইসলামে কাম ও কামকেলি (৪র্থ পর্ব)
ইসলামে কাম ও কামকেলি (৫ম পর্ব)