(সতর্কতাঃ নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কাম সম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেণীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। পূর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
শিশু বিবাহঃ অপরিণত বয়স্কার সাথে সেক্স
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই শিশু-বিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশু-বিবাহ আজকাল মানবতার প্রতি অভিশাপ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে প্রাচীন হিন্দু সমাজে এ ধরণের বিয়ের বহুল প্রচলন ছিল। প্রাচীন পুথিপত্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এমনকি পাঁচ ছয় বছরের মেয়েকেও পিতামাতা তখন অম্লানচিত্তে বিয়ে দিয়ে ফেলত। এই শিশুরা বড় হয়ে এমন স্বামীর ঘর করতেও বাধ্য হতো, যে ঘর-সংসারকে তারা রীতিমত ঘৃণা করত। এই প্রথাকে নিকৃষ্টতম শিশু নির্যাতন ছাড়া আর কোন্ নামে অভিহিত করা যায়? কিছু সংখ্যক মানবতাবাদী কর্মীর দুর্বার আন্দোলনে হিন্দু ধর্মের আমূল সংস্কার সাধিত হয়, শিশুবিবাহ বর্তমানে হিন্দু সমাজে অতীত বিষয় মাত্র। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে অবস্থাটা কী? ইসলামপন্থীরা জোর গলায় দাবী করে থাকেন যে তাদের ধর্মটি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে প্রগতিশীল ধর্ম। সুতরাং মানুষ সঙ্গতভাবেই আশা করবে যে এমন একটি প্রগ্রতিশীল ধর্মে শিশুবিবাহের মতো নোংরা প্রথা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়। এই প্রত্যাশা অবশ্য প্রচণ্ড এক ধাপ্পাবাজি, আসল সত্য হলো বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কোন সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই। মায়ের বুকে দুগ্ধ পানরত সদ্যোজাত একটি শিশুকেও ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়ে দেয়া যায় এবং সে বিয়ে হান্ড্রেড পারসেন্ট ইসলাম সম্মত!
ইসলামি শিশু-বিবাহের নিষ্ঠুরতম দিকটি হলো– যদি বাপ-মায়ের সম্মতিক্রমে এই বিয়ের চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা কোনভাবেই রদ করা যায় না। অর্থাৎ বড় হওয়ার পর দম্পতিকে অবশ্যই বিয়েটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।
শিশুবিবাহ সংক্রান্ত শারিয়া আইন নিম্নরূপঃ
হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৩৬):
শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর অবশ্য প্রতিপাল্যঃ
যদি শিশুদের পিতা কিংবা পিতামহ বিয়ের চুক্তি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল করার কোন অধিকার তাদের (দম্পতির) নেই; যেহেতু এই বিষয়ে পিতৃপিতামহদের সিদ্ধান্ত কোন অসদুদ্দেশ্য হতে উদ্ভূত হতে পারে না কারণ সন্তানসন্ততিদের প্রতি তাদের স্নেহ সংশয়াতীত; ফলতঃ এই বিবাহ উভয়পক্ষের জন্যে অবশ্য প্রতিপাল্য, ঠিক সেইভাবে যেন তারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর নিজেরা স্বেচ্ছায় এই সম্পর্কে প্রবেশ করেছে।
শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর বাতিল করা/বহাল রাখার স্বাধীনতা দম্পতির ইচ্ছাধীনঃ
যদি পিতৃপিতামহ ব্যতিরেকে অন্য কোন অভিভাবক চুক্তি করে থাকে, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর উভয়ের অধিকার রয়েছে চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার।
ইসলামের নবী মহম্মদ (দঃ) নিজেই ছয় (অথবা সাত) বছরের একটি শিশুকে বিয়ে করেছিলেন। মহম্মদের (দঃ) এই শিশু কনেটিকে নিয়ে ইদানীং বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে, এসম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উপজীব্য নয়। পাঠক-পাঠিকাগণকে আমি অন্য কোথাও হতে সেসব লেখা পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি। আমি এখানে দু’একটি হাদিস উদ্ধৃত করব, যেখান থেকে দেখা যাবে যে মহম্মদ (দঃ) যখন তার বালিকা বধুটিকে ঘরে তুলে নেন এবং বিয়ে কনজুমেট করেন, বধুটি তখনও পুতুলখেলা ছাড়ে নি (কনজুমেট শব্দের অর্থ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিয়েকে পূর্ণাঙ্গ করণ বা আইনসিদ্ধ করণ)।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৩১১:
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন তাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ছিল সাত বছর, এবং বউ হয়ে তিনি যখন তার (রাসুলের) ঘরে যান তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, এবং তার পুতুলগুলি তার সাথে ছিল; এবং যখন তিনি (রাসুল) ইন্তেকাল করেন তখন তার বয়স ছিল আঠার বছর।
সহি বুখারিঃ ভলিউম-৫, বুক নং-৫৮, হাদিস নং-২৩৬:
হিশামের পিতা হতে বর্ণিতঃ
নবী মদীনা চলে যাওয়ার তিন বছর পুর্বে খাদিজা ইন্তেকাল করেন। সেখানে বছর দুই কাটানোর পর তিনি আয়েশাকে বিয়ে করেন, আয়েশা তখন ছয় বছরের বালিকা মাত্র, এবং আয়েশার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়েকে পূর্ণাঙ্গ করেন।
নবী তার বালিকা বধুটির সাথে কীভাবে ক্রীড়াকৌতুক এবং সেক্স করতেন, তার কয়েকটি নমুনা।
সহি বুখারিঃ ভলিউম-১, বুক নং-৬, হাদিস নং-২৯৮:
আয়েশা হতে বর্ণিতঃ
জুনুব অবস্থায় আমি ও নবী একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম (যৌনসঙ্গমের পরবর্তী নাপাক অবস্থার আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে জুনুব)। ঋতুকালে তিনি আমাকে ইজার (কোমর হতে নীচ পর্যন্ত পরিধেয় বস্ত্রের নাম ইজার) পরিধান করার জন্যে বলতেন এবং আমার সাথে রঙ্গরস করতেন। ইতিক্কাফ করার সময় তিনি তার মস্তক আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং আমি তা ধুইয়ে দিতাম, এমনকি যখন আমার পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) চলত তখনও।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬২৯:
আয়েশা হতে বর্ণিতঃ
আমি এবং রাসুল (দঃ) একই পাত্রে গোসল করতাম এবং একজনের পর আরেকজন হাত দিয়ে পানি নিতাম, যৌনসঙ্গমের পর।
পঞ্চাশোর্ধ কোন প্রৌঢ় যদি নয়-দশ বছরের বালিকাকে বিয়ে করে, তবে তার সাথে কীভাবে রতিক্রিয়া করতে হবে তার অনুপম আদর্শ বিধৃত আছে উপরের হাদিসগুলিতে।
ছয় বছরের শিশুকে বিয়ে করা এবং নয় বছর বয়সের সময় তার সাথে যৌনসঙ্গমে প্রবৃত্ত হওয়ার ঘটনা হজম করতে যদি কারও অসুবিধা হয়, তবে তার জন্যে আরও একটি চমক আছে।
ইবনে ইসহাক রচিত সিরাতে রাসুলুল্লাহ গ্রন্থটি রাসুলের জীবন চরিত হিসেবে মুসলিম জগতে বহুল পঠিত এবং অত্যন্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। মুসলমান লেখকগণ প্রায়শই এই বই হতে বিভিন্ন বিষয়ে রেফারেন্স কোট করে থাকেন। এই গ্রন্থে রাসুল সম্পর্কে একটি মজাদার তথ্য আছে। ইবনে ইসহাক লিখেছেন, রাসুল নাকি সবেমাত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে এমন এক শিশুকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। আসুন পাঠক, ইবনে ইসহাকের বর্ণনা থেকে আমরা ঘটনাটি জেনে নিই।
(সুহাইলি, মম.৭৯: ইউনুছের রেওয়ায়েত ও.ও কতৃক রেকর্ডকৃতঃ নবী তাকে (উম্ আল-ফজলকে) দেখেন যখন সে তার সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। তিনি বলেন – ‘যদি সে বড় হয় এবং আমি তখনও বেঁচে থাকি, আমি তাকে বিয়ে করব’। কিন্তু সে বড় হওয়ার আগেই নবী ইন্তেকাল করেন এবং সুফিয়ান বিন আল-আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ আল-মাখজুমির সাথে তার বিয়ে হয় এবং সুফিয়ানের ঔরসে তার রিজক ও লুবাবা নাম্নী দু’টি সন্তান জন্মে (রোফারেন্স-১০, পৃ-৩১১)।
আমরা আরও দেখতে পাই, হযরত ওমর (রাঃ) উম্মে কুলসুম নামের চার বছরের এক শিশুকে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুম হচ্ছে আবু বকরের (রা) মেয়ে এবং আয়েশার বৈমাত্রেয় বোন।
ইসলামের সর্বোচ্চ ব্যক্তি মহানবী এবং তার প্রিয় সাহাবিগণ পরবর্তীদের জন্যে এমন মহৎ আদর্শই রেখে গেছেন। রাসুল এবং তার সাহাবিগণ কতৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শের ইসলামি নাম সুন্না। এই সুন্না বা আদর্শ অপরিবর্তনীয়, প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে কেয়ামত পর্যন্ত এই আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে, একবিন্দু নড়চড় করা চলবে না। পনের শত বছর ধরে এই অপরিবর্তনীয় আদর্শ অনুসরণ করতে যেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এখনও পেশাবের পর লিঙ্গাগ্র ধারণ করে চল্লিশ কদম হাটতে এবং জোরে জোরে কোথ দিতে দেখা যায়, ঢিলা কুলূখের অত্যাচারে অনেক মসজিদের কমোড জাম হয়ে নারকীয় দুর্গন্ধের সৃষ্টি করেছে দেখা যায়। অনেক সম্পন্ন মুছুল্লির বাড়ীতে ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করতে দেখা যায়, কারণ নবীর সুন্নত। নবী ডাইনিং টেবিলে খেতেন না, মাটিতে বসে খেতেন। তা বেশ, একনিষ্ঠ অনুসারি হিসেবে নবীর প্রতিটি কাজের অনুসরণ তারা করতেই পারেন। কিন্তু আমার খটকা লাগে যে শিশু বিবাহের সুন্নাটি তারা এড়িয়ে যান কেন! ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করে কিংবা ঢিলা কুলুখ হাতে নৃত্য করে নবীর সুন্নত পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতির ডাকে বাইরে না ছুটে শোভন টয়লেটের দিকে ছুটে যান! ভিলার বাইরে খোলা ড্রেনের উপর খাটা পায়খানা বানিয়ে নেন না কেন? দেড় হাজার বছর পুর্বে নবীজি (এবং তার বিবিরাও) খোলা মরুভুমিতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতেন। আশা করি কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান আমার মনের ধন্দ দূর করতে এগিয়ে আসবেন।
রিযাঃ পালক মা/দুধ মা
আপনি কি কখনও এমন অবস্থার কথা চিন্তা করেছেন যে একজন বয়স্ক পুরুষ একই সাথে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু (২ বছর কিংবা তার চেয়েও কম) এবং একজন মহিলাকে বিয়ে করল যার বুকে দুধ আছে? এমন যদি হয় যে স্বামীর ঘরে নবপরিণীতা শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর মতো কেউ নেই (ধরা যাক শিশুটি এতিম)। ঘরে অবশ্য একটি দুধেল বউ আছে, কিন্তু সে কি শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে? বর্তমান সময়ে হলে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না, বাজারে হরেক রকম টিনজাত দুধ পাওয়া যায়। তবে বোতলের দুধ খাওয়ানো কোন ইসলামি সলিউশন নয়। দেখা যাক, ইসলাম সমস্যাটিকে কীভাবে হ্যান্ডল করেছে।
হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৭১):
উদাহরণঃ একজন লোক যার দুইটি বউ আছে এবং এক বউ আরেক বউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।
যদি কেউ একইসাথে একজন শিশুকে এবং একজন বয়ঃপ্রাপ্তাকে বিয়ে করে এবং বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী শিশুস্ত্রীটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়, তবে উভয় স্ত্রীই লোকটির জন্যে অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ লোকটির সাথে যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যদি চালু থাকে, এর অর্থ হবে দুধ মা এবং দুধ-মেয়ে উভয়ের সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা যা অবৈধ, ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন বায়লজিকাল মা ও তার বায়লজিকাল কন্যার সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা অবৈধ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে; যদি লোকটি বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে কেনাপ্রকার যৌনসম্পর্ক স্থাপন না করে থাকে তবে সে (বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী) দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে না, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণটি তার কাছ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, বিবাহ পূর্ণাঙ্গকরণের আগে—-কিন্তু শিশুটি অর্ধেক দেনমোহর পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণটি উদ্ভূত হয়েছে তার জন্যে শিশুটি দায়বদ্ধ নয়।
এতক্ষন পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম তা একজন বয়স্ক লোক কধক একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিয়ে করা সংক্রান্ত। কিন্তু দৃশ্যপট যদি উল্টো হয়, অর্থাৎ একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর যদি একজন বয়ঃপ্রাপ্তা নারীর (নয় বছর বা তদূর্ধ্ব) সাথে বিয়ে হয়? (পাঠককে এপ্রসঙ্গে আমি জনপ্রিয় লোক-কাহিনী রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যার ঘটনাটি স্মরণ করতে অনুরোধ করি)। শারিয়া আইন অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক উদার, এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া তেমন কোন বিধিনিষেধ আরোপ করে নি। এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া একটিমাত্র শর্তই আরোপ করেছে, এই আজব শর্তটির ইসলামিক নাম ‘রিযা’ বা ‘রিদা’।
ডিক্সনারি অব ইসলাম হতে রিযার সংজ্ঞা (রেফারেন্স-৬, পৃ-৫৪৬):
রিযাঃ একটি আইনসংক্রান্ত শব্দ। এর অর্থ – নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোন নারীর বুক হতে স্তন্য পান করা।
রিযার আইনি সংজ্ঞাঃ হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১) অনুসারে রিযার আইনি সংজ্ঞা নিম্নরূপ।
রিযাঃ ধাত্রী/দুধ মা (প্রাগুক্ত, পৃ-৬৭)—-আইনের দৃষ্টিকোন থেকে রিযা বলতে বুঝায় একটি শিশু কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় ব্যপিয়া একজন নারীর বুক হতে স্তন্যপান করা, স্তন্যপান করার মেয়াদকে ‘পিরিয়ড অব ফস্টারেজ’ বা ধাত্রীত্বের মেয়াদ বলা হয়ে থাকে।
ধাত্রী-মায়ের কাছে শিশুর স্তন্যপান করানোর ইসলামী নিয়ম এই। এই নিয়মেই একটি নবজাতককে অপর কোন দুধেল নারীর কাছে প্রতিপালন করতে দেয়া হয়। সম্পন্ন আরবদের মধ্যে এই প্রথা আগে চালু ছিল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আজ পর্যন্তও চালু আছে। মহম্মদের (দঃ) চাচা আবু লাহাবের ক্রীতদাসী তায়েবা নাম্নী এক মহিলা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শিশু মহম্মদকে স্তন্যপান করায়, অতঃপর দুধ মা হালিমার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
ধাত্রী-মাতৃত্বের ক্ষেত্রে পালনীয় বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি হাদিসঃ
জন্মসূত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রে তা হারাম। — ৩০.৩.১৫
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.৩.১৫:
ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমি, মালিকের কাছ থেকে ইয়াহিয়া, আব্দুল্লাহ ইবনে দিনারের কাছ থেকে মালিক, সুলাইমান ইবনে ইয়াছারের কাছ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার, উরউয়া ইবনে জুবাইরের কাছ থেকে সুলাইমান এবং উম্মুল মোমেনীন আয়েশার কাছ থেকে উরুয়া বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন – “জন্মসূত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রেও তা হারাম”।
এই নিয়মানুযায়ী শিশুটি তার ধাত্রী মায়ের জন্যে হারাম। অর্থাৎ, শিশুটি বড় হলেও বিনাবাধায় তার ধাত্রীমায়ের কাছে যেতে পারবে, যেন ধাত্রী মা এবং জন্মদাত্রী মা সমতুল্য। এই নিয়ম আপাতদৃষ্টিতে মহৎ বলে মনে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে কি? আরেকটু নিবিড়ভাবে স্টাডি করে দেখা যাক।
ইসলাম ধর্মানুযায়ী একটি মেয়ের যে কোন বয়েসে বিয়ে হতে পারে, এমনকি সদ্যজাত শিশুকেও বাপমা বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। নয় বছর বা এর চেয়ে বেশী বয়েসের যে কেউ ধাত্রী মা হতে পারে। এখন একটি কেস্ স্টাডি করা যাক। ছয় মাস বয়েসী একটি ছেলে শিশু, তার দুধ মা নয় বছর বয়েসী এক কিশোরী। মেয়েটি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াল। শিশুটি আঠারয় পা দিল। ইসলামী আইন অনুযায়ী আঠার বছর বয়েসে একটি পুরুষ শিশু সাবালকত্ব অর্জন করে। তখন দুধ মা’র বয়স সাতাশ বা এর সামান্য উপরে, বলতে গেলে সে তখন যৌবনের মধ্যগগনে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান ধারণ ইত্যাদির প্রকৃষ্টতম সময় তার। ইসলামের আইন অনুযায়ী এই দুধ মায়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা দেয়া যুবকটির বিয়ে সম্পূর্ণরূপে হারাম, এমনকি এই মায়ের গর্ভজাত যে কোন মেয়ের সাথে (দুধ বোন) তার বিয়েও সম্পূর্ণরূপে হারাম।
রিলায়েন্স অব দ্য ট্রাভেলার নামক প্রামাণ্য শারিয়া গ্রন্থ থেকে এসম্পর্কিত কয়েকটি আইন পেশ করা হলো (রেফারেন্স-৮, পৃ-৫৭৫-৫৭৬।
এন ১২.০- দুগ্ধ পানের কারণে অবিবাহযোগ্য আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠা (রিযা)।
এন ১২.১-কোন মেয়ে যদি কোন পুরুষ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়, সে বাচ্চাটির মা হয়ে যায়, (তবে সব ক্ষেত্রে নয়) শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যথা- স্ত্রীলোকটির সাথে তার বিবাহ-সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যায়, সে স্ত্রীলোকটির পানে তাকাতে পারবে বা তার সাথে নিরিবিলিতে সাক্ষাত করতে পারবে, এবং তাকে স্পর্শ করলে তার অজু ভঙ্গ হবে না; যদিঃ
(এ) উক্ত দুধ নয় বছর বা তদোর্ধµ বয়েসী বালিকার স্তন্য হতে নিঃসৃত হয়ে থাকে, তা সে নিঃসরণ যৌনক্রিয়ার ফলেই হোক কিংবা অন্যকোন কারণেই হোক;
(বি) এবং দুগ্ধপানরত শিশুটির বয়স দুই বছর বা এর চেয়ে কম হয়;
(সি) এরূপ দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে পাঁচবার হয় (স্তন্যদান বা ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের সংখ্যা পাঁচ বারের কম হলে উক্ত বিধিনিষেধ কার্যকরী নয়, পৃথক পৃথকভাবে স্তন্যদান করার অর্থ সর্বসাধারণের কাছে যা পৃথক হিসেবে স্বীকৃত)
এন ১২.২-এরূপ অবস্থায়ঃ
(১) এরূপ স্তন্যদায়িনী নার্সের পক্ষে উক্ত শিশু কিংবা তার অধস্তন সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) কারও সাথে বিবাহ বন্ধন স্থাপন করা ‘এক্সক্লুসিভলি’ নিষিদ্ধ (এখানে এক্সক্লুসিভলি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র শিশুটি কিংবা তার অধস্তন কেউ, ঊর্ধ্বতন কেউ নয়, অর্থাৎ শিশুটির পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি কেউ নয়)।
(২) সে (স্ত্রীলোকটি) শিশুটির মা হয়ে যায়, এবং শিশুটির জন্যে বিবাহ করা হারাম হয়ে যায় তাকে এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) ঊর্ধ্বতনদেরকে, এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অধস্তনদেরকে (কারণ অধস্তনরা যেন তার নিজের ভাইবোন হয়ে গেছে)।
রিযা সম্পর্কে বেশ কিছু মজাদার হাদিস রয়েছে, যার কিছু নমুনা নিম্নে পেশ করা হলো।
বিবি আয়েশার বোন উম্মে কুলসুম সেলিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে মাত্র তিনবার বুকের দুধ খাওয়ায়; যার দরুন আয়েশার সাথে দেখা করা ইবনে আব্দুল্লাহর জন্যে হারাম ছিল। যদি কুলসুম দশবার খাওয়াত, সেক্ষেত্রে আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করা তার জন্যে হালাল হয়ে যেতো।
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.৭:
….সেলিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর তাকে (ইয়াহিয়াকে) বলেন যে উম্মে কুলসুম বিন্ত আবুবকর আস-সিদ্দিক যখন তাকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন তখন উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তার বোনকে বলেছিলেন – “তাকে দশবার দুধ খাওয়াও, যেন সে আমার সাথে দেখা করার অধিকারী হয়”। সেলিম বলেন – “উম্মে কুলসুম আমাকে তিন বার দুধ খাওয়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুতরাং—-আমি আর আয়েশার সাক্ষাৎ পাই নি, কারণ উম্মে কুলসুম দশ বার শেষ করতে পারেন নি”।
অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের সাথে সাক্ষাতযোগ্য হওয়ার উপযুক্ততাঃ তার কাছ থেকে দশ কিস্তি দুগ্ধপান
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.৮:
……উম্মুল মোমেনীন হাফসা আসিম বিন আব্দুল্লাহ বিন সা’দকে তার (হাফসার) বোন ফাতিমা বিন্ত উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাকে দশবার বুকের দুধ খাওয়ান; তা’হলে সে (আসিম) তার কাছে যেতে পাারবে এবং দেখা করতে পারবে। তিনি (ফাতিমা) তা করেছিলেন, সুতরাং সে (আসিম) তার (হাফসার) সাথে দেখা করতে যেতো।
(লক্ষ্য করুন, দশবার দুধ খাওয়ানোর রীতি পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তীতে পাঁচ বারে নেমে আসে)
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.৩.১৭:
……….আয়েশা বলেন – “কোরানে যা নাজেল হয়েছিল তা এই ‘দশবার বুকের দুধ খাওয়ালে সে হারাম হয়ে যায়’, অতঃপর তা ‘পাঁচবার’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন মারা যান, তখন কোরাণে এখন যেভাবে আছে সেভাবেই ইহা তেলাওয়াত হয়ে আসছিল”।
একথা বলা নিস্প্রয়োজন যে ইসলামি সমাজে রিযা পদ্ধতি শিশুদের জন্যে দুগ্ধ-সরবরাহ সমস্যার এক অনুপম উপায়। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিয়ের মার্কেটের অবস্থাটা কী দাড়াবে? যদি মায়েরা কিছু সময়ের জন্যেও তার শিশুটিকে ধাত্রী মায়ের হাতে তুলে দেয়, বিয়ের মার্কেট থেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। রিযার কারণে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল বরটিও তার জন্যে একটি কনে যোগাড় করতে হিমশিম খাবেন, এতে কোন সন্দেহ আছে কি?
উপরের মন্তব্য অবশ্য ইসলামি ফস্টারেজ পদ্ধতির চরম দিককে লক্ষ্য করেই। আধুনিক বিশ্ব এখন আদৌ রিযা পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল নয়। যেসব মায়েরা শিশুকে স্বাভাবিক মাতৃদুগ্ধ দিতে অপারগ, বাজারে তাদের জন্যে রয়েছে হরেক রকমের ফর্মুলা মিল্ক। তবে রিযার বিকল্প হিসেবে শিশুকে বোতলজাত দুধ পান করানোর ব্যপারে কোন শারিয়া আইন আছে কিনা, অনেক খুঁজেও আমি তা বের করতে পারি নি। ভেবে দেখুন, সপ্তম শতাব্দীতে মানুষ ফর্মুলা মিল্কের নামও জানত না, বটল-ফিডিংয়ের ধারণাও ছিল না কারও। সুতরাং মরুচারি বেদুঈনরা মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে রিযা পদ্ধতি অনুসরণ করতো। এভাবেই তারা দুগ্ধ সরবরাহের অপ্রতুলতার মোকাবেলা করেছে।
এবার একটি প্রশ্ন । এতক্ষন আমরা ফস্টারেজ পদ্ধতিতে ধাত্রী মায়ের দুধ খাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এখন প্রশ্ন দুগ্ধবতী কোন মেয়ে সাবালক পুরুষকে দুধ খাওয়াতে পারে কি? তৌবা তৌবা। এ কী উদ্ভট প্রশ্ন! ইসলাম এমন জিনিস কখনও অনুমোদন করতে পারে না। ইসলামিস্টরা নিশ্চয়ই বলবেন, শয়তানের প্ররোচনাতেই কেবল এরূপ ধারণা কারও মনে উদয় হতে পারে। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষ কতৃক নারীদুগ্ধ পানের বৈধতা সংক্রান্ত কোন উল্লেখ আমরা শারিয়া আইনে দেখতে পাই না ঠিক, তবে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলি পড়লে সত্যি সত্যিই হোঁচট খেতে হয়। আসুন, সেরকম কয়েকটি হাদিস নেড়েচেড়ে দেখে নেয়া যাক এখন।
একজন স্ত্রীলোক তরুণ বয়স্ক কোন পুরুষকে তার বুকের দুধ খেতে দিলে তরুণটি তার জন্যে হারাম হয়ে যায়।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৪২৬:
ইবনে আবু মুলায়েকা বর্ণনা করেছেন যে আল কাশেম বিন মহম্মদ বিন আবু বকর তার কাছে বলেছেন যে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে সাহলা বিন্ত সুহাইল বিন আমর আল্লাহর রাসুলের (দঃ) কাছে আসল এবং বলল – রাসুলুল্লাহ। সেলিম (আবু হোজাইফার মুক্তকৃত দাস) আমাদের গৃহে আমাদের সাথে থাকে, এবং একজন পুরুষ যা অর্জন করে তা সে অর্জন করে ফেলেছে (অর্থাৎ সাবালকত্ব), এবং সেই জ্ঞান অর্জন করেছে যে জ্ঞান একজন পুরুষ অর্জন করে (অর্থাৎ যৌনবিষয়ক জ্ঞান)। তদুত্তরে তিনি বললেন – তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও, এতে সে তোমার জন্যে মেহরিম হয়ে যাবে। সে (ইবনে মুলায়েকা) বলেন – আমি ভয় বশতঃ এই হাদিসটি বছর খানেকের জন্যে কারও কাছে বলি নি। অতঃপর একদিন কাশেমের সাথে আমার দেখা হলে আমি তাকে বললাম – আপনি আমাকে যে হাদিসটি বলেছিলেন আমি তা কারও কাছে বলি নি। তিনি বললেন – কোন্ হাদিস? আমি হাদিসটির কথা উল্লেখ করলে তিনি বললেন – আমার কথা বলে তুমি হাদিসটি বর্ণনা করতে পার যে আয়েশার (রাঃ) কাছ থেকে আমি উহা শুনেছিলাম।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৪, হাদিস নং-৩৪২৮:
জয়নাব বিন্ত আবু সালামা হতে বর্ণিতঃ আমি রাসুলুল্লাহর (দঃ) স্ত্রী উম্ সালামাকে আয়েশার কাছে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম, আমি এমন তরুণ পুরুষের সামনে যেতে চাই না যে ফস্টারেজ পিরিয়ড পার করেছে (বুকের দুধ খাওয়ার মেয়াদ পার করেছে)। তখন আয়েশা বললেন – ‘কেন? সাহলা বিন্ত সুহাইল রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে এসে বলেছিল – ইয়া রাসুলুল্লাহ। আল্লাহর কসম, সেলিম (আমাদের ঘরে) ঢুকে বিধায় আবু হুযাইফার মুখে আমি চরম বিরক্তি দেখেছি। প্রতি উত্তরে আল্লাহর রাসুল (দঃ) বললেন – তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও। সে বলল – তার মুখে যে দাড়ি। কিন্তু তিনি (আবারও) বললেন – তাকে বুকের দুধ খাওয়াও, তা’হলেই আবু হুযাইফার মুখে যা আছে দূর হয়ে যাবে (অর্থাৎ বিরক্তি চলে যাবে)। (পরবর্তীতে) সে (সাহলা) বলেছিল – (আমি সেরূপ করেছিলাম) এবং আল্লাহর কসম করে বলছি, এর পরে আর আমি আবু হুযাইফার মুখে (বিরক্তির) চিহ্ন দেখতে পাই নি।
(হুবহু একই ঘটনা নিয়ে আরও দু’টি হাদিস সুনান আবু দাউদঃ ভলিউম-২, হাদিস নং-২০৫৬, পৃ-৫৪৯ এবং মুয়াত্তাঃ সেকশন-৩০, হাদিস নং-১২, পৃ-২৪৫-২৪৬। কলেবর বড় হওয়ায় হাদিসগুলি উল্লেখ করা গেল না)।
এ এক আজব নিয়ম! বক্ষ নারী দেহের সর্বশ্রেষ্ঠ কামকেন্দ্র, পুরুষ তো দূরের কথা যুবতী নারীর উত্তাল বুক দেখে অচেতন গাছপালাও নাকি ভির্মি খায়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা কাব্যে পড়েছি, রূপসী চিত্রাঙ্গদা বিজন বনে ফুলগাছের নীচে শুয়ে আছে। পাহাড়ের মতো উচু কিন্তু নবনীর মতো কোমল বস্তু দু’টির মোহনীশক্তি এতই বেশী যে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলগুলিও তা দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়ল এবং চিত্রাঙ্গদার বুকে পড়ে আত্মহত্যা করল। “স্তনতটমূলে ফুলগুলি বিছাইল আপনার মরণ শয়ন”। অথচ ইসলামের সমাধান কতোই না সরল। বুক খুলে অনাত্মীয় পুরুষকে এক চুমুক ‘ডুডু’ খাইয়ে দাও, বাস্ সে মেহরিম হয়ে গেল। এতে করে হিজাব পড়ার ঝামেলাও অংশত কমে যাবে বলে মনে হয়। কোরাণ-হাদিস যেহেতু আল্লাহপাকের অপরিবর্তনীয় বিধান যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত পালন করে যেতে হবে, সুতরাং সহি হাদিসবর্ণিত এই সুন্দর নিয়মটি আমাদের ইসলামপন্থী ভাইয়েরা তাদের স্ত্রী-কন্যকে পালন করতে উদ্বুদ্ধ করবেন আশা করি।
ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধবন্দিনী একজন মুসলমান পুরুষের জন্যে পুরোপুরি বৈধ, এদের সাথে যৌনসঙ্গম করায় ইসলামী আইনে কোন বাধা নেই। তবে একজন মুসলিম মেয়ের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী? ছেলেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একজন মুসলমান মেয়ে কি পারে তার ক্রীতদাসের সাথে সেক্স করতে? না, মেয়েদেরকে এরূপ যৌন-উৎসবে গা ভাসানোর অনুমতি দেয়া হয় নি। সুতরাং সে যখন দেখবে তার স্বামী ক্রীতদাসী কিংবা কোন মালে গনীমত মেয়ের সাথে অবাধে সেক্স করছে, তার মনে ঈর্ষা জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। স্বামীকে এই অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখতে সে কী করতে পারে? সে কি স্বামীকে থামাতে রিযার নিয়ম প্রয়োগ করতে পারে? সে যদি তরুণী ক্রীতদাসীটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ায়, তাহলেই তো ক্রীতদাসীটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে। হঁ্যা পাঠক, ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল একবার। একজন ঈর্ষাপরায়ণ স্ত্রী তার তরুণী ক্রীতদাসীকে বুকের দূধ খাইয়ে দিয়েছিল এই আশায় যে তার কামার্ত স্বামীটি আর তার কাছে যেতে পারবে না। কিন্তু হায়, মেয়েটির ফন্দি কাজে লাগে নাই, উল্টো ইসলামী শাস্তির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল তাকে। খলীফা উমর মেয়েটিকে প্রহার করার আদেশ দিয়ে মুসলমান পুরুষের জন্যে ক্রীতদাসী ভোগের অপ্রতিহত অধিকার সংরক্ষণ করেছিলেন।
ঘটনাটি আপনার কাছে জন্যে হৃদয়বিদারক বলে মনে হচ্ছে, তাই না? ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ মুয়াত্তা থেকে জেনে নিন। চার মাজহাব সুন্ন্নী মুসলমানদের চারটি স্তম্ভ, এর অন্যতম প্রধান রূপকার হযরত ইমাম মালিক (রঃ) মুয়াত্তা প্রন্থের প্রণেতা। মুয়াত্তা মালেকি মাজহাবের প্রধান আইন বই।
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৩:
আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার বলেন – “লোকদেরকে যেখানে বিচার করা হয় সেখানে একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের সাথে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক তার কাছে আসল এবং বয়স্ক লোকদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলল-‘একবার এক লোক উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে এসে বলল-‘আমার একটি ক্রীতদাসী আছে, তার সাথে আমি নিয়মিত যৌনসঙ্গম করি। আমার স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে। এরপর যখন আমি মেয়েটির কাছে গেলাম, আমার স্ত্রী আমাকে বের হয়ে যেতে বলল, কারণ সে নাকি তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে’। উমর লোকটিকে স্ত্রীকে প্রহার করার আদেশ দিলেন এবং (আগের মতোই) সে তার দাসীমেয়েটির কাছে যেতে পারবে বললেন। কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা কেবল ছোটদের বেলায়।”
রিযার ধারণা স্বামীস্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ করলে কী হবে? স্বামীর পাকস্থলীতে যদি স্ত্রীর দুধ ঢুকে যায় তখন?
ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! কোন সুস্থমস্তিষ্কের মুসলমান এরূপ কথা চিন্তাও করতে পারে না। পাঠক, আসুন না একবার চেষ্টা করে দেখি ইসলামের পবিত্র কেতাবগুলিতে এসম্পর্কে কোন বিধান খুজে পাওয়া যায় কিনা।
যদি আপনি আপনার স্ত্রীর বুকের দুধ খান, সেজন্যে স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না। দুই বছর বা তার চেয়ে কম বয়েসে বুকের দুধ খেলে তবেই কেবল তাদের মধ্যে (দুগ্ধদাত্রী এবং শিশুটি) আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।(৩০.২.১৪)
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৪:
আবু মুসা আল আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল – “আমি আমার স্ত্রীর স্তন্য হতে কিছু দুধ খেয়ে ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলীতে চলে গেছে”। আবু মুসা বললেন – “আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে”। (তখন) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন – “তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ”। আবু মুসা বললেন – “তা’হলে তোমার মত কী”? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন – “দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু’বছরে”। (অর্থাৎ দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়)। আবু মুসা বললেন – “এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষণ আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোন কিছুর ব্যপারে জিজ্ঞেস করো না”।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ কে ছিলেন? যে দশজন সাহাবি রাসুলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্বেই যাদেরকে বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল (আশারা মোবাশ্বেরা সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ তাদের অন্যতম। ইবনে মাসুদ উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, মহম্মদের (দঃ) ঠিক পরেই ছিল তাদের স্থান। এরকম উচ্চমর্যাদাশীল সাহাবির মুখে এ কি কথা, স্ত্রীর দুধ খাওয়ার পরও দাম্পত্যসম্পর্ক টিকে থাকে! আশ্চর্য!
এই রকমই আরেকটি হাদিস দেখুন নীচে।
দুধেল নারীর সাথে সঙ্গম করা হালাল (৮.৩৩৯১)।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৩৯১:
জুদাইমা বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলকে (দঃ) বলতে শুনেছেনঃ আমি দুধেল স্ত্রীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম যে রোমান এবং পারসিকরা তা করে থাকে এবং শিশুটির তাতে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম মালিক বলেছেনঃ এই হাদিসের খালাফ বর্ণিত যে ভার্সনটি আছে তাতে যে নামটি আছে তা হচ্ছে জুদামাত আল-আসাদিয়া। তবে ইয়াহিয়া বর্ণিত ভার্সনে যে নামটি আছে সেটিই সঠিক, অর্থাৎ নামটি হবে জুদাইমা আল-আসাদিয়া)।
বয়ঃপ্রাপ্ত স্বামী কর্তৃক দুধেল স্ত্রীর স্তন্য চোষণ করা কিংবা দুধ পান করা কেন অসিদ্ধ নয়, নিম্নে উদ্ধৃত ইমাম মালিকের পংক্তিগুলি হতে তার জবাব মেলে।
যখন কোন বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর দুধ পান করে, সেটা স্বাভাবিক খাদ্য মাত্র, ধাত্রীদুগ্ধ (ফস্টার মিল্ক) নয়!
এ এক আজব আইন! দু’বছরের কম বয়েসী কেউ (শিশু স্বামীও হতে পারে) এক ফোটামাত্র খেলেও তা হলো ফস্টার মিল্ক, দু বছর পার হলেই সেই একই দুধ হয়ে যায় স্বাভাবিক খাদ্য। কী বিচিত্র এই নিয়ম সেলুকেস!
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.১১:
মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া বলেন যে ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ বলেছেন যে তিনি সাইদ আল মুসাবকে বলতে শুনেছেন – “শিশুটি যখন দোলনায় থাকে, তখনই কেবল দুধপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রযোজ্য। অন্য সময়ে এ থেকে (বুকের দুগ্ধপান থেকে) কোন রক্তের সম্পর্ক জন্মায় না”।
মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া আমাকে বলেন (ইবনে শিহাবের সূত্রে) যে তিনি বলেছিলেন –
“বুকের দুধ পান, তা সে যত অল্প কিংবা যত বেশীই হোক না কেন, (সম্পর্ককে) হারাম করে ফেলে। দুগ্ধপানের মধ্য দিয়ে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুরুষকে মাহরিম করে”।
ইয়াহিয়া বলেন যে তিনি মালিককে বলতে শুনেছেন –
“দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুগ্ধপান, তা সে যত অল্প বা বেশী হোক না কেন, হারাম (সম্পর্কের) সৃষ্টি করে। দুই বছর বয়েসের পরে যদি তা করা হয়, তা সে কম-বেশী যাই হোক না কেন, সেজন্যে কোন কিছু হারাম হয়ে যায় না। এ নেহায়েতই খাদ্যের মতো”।
এবং সর্বশেষে মুক্তাসদৃশ্য নিম্নোক্ত হাদিসটি।
সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-৩৪, হাদিস নং-৪২১০:
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ হতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (দঃ) দশটি জিনিস অপছন্দ করতেনঃ হলুদ রং করা, শাদা চুল কলপ করা, পোষাকের প্রান্তভাগ মাটি ছুয়ে যাওয়া, স্বর্ণের তৈরী আংটি পড়া, সাজ-সজ্জা করে গায়ের মেহরাম পুরুষের সামনে যাওয়া (বাপ, ছেলে, ভাই ইত্যাদি চৌদ্দপ্রকার সম্পর্ক আছে যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম, এরূপ সম্পর্কের ইসলামি নাম মেহরাম; এর বাইরে যাবতীয় সম্পর্ক গায়ের মাহরাম, যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ), পাশা খেলা, যাদু বা ইন্দ্রজাল করা, তাবিজ/কবজ ব্যবহার করা, বীর্যপাতের ঠিক আগ মুহুর্তে যোনির ভেতর হতে লিঙ্গ বের করে আনা – তা সে নিজের স্ত্রী হোক বা অন্য মেয়েলোক হোক (অর্থাৎ উপপত্নী বা যৌনদাসী) এবং এমন মেয়েলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করা যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তবে তিনি এগুলিকে হারাম বলে ঘোষণা করেন নি।