আমাদের মুমিন বন্ধুরা ইসলামের সমালোচনাকে ইসলামোফোবিয়া বলে লেবেল দিতে পছন্দ করেন। তাঁদের মতে কোনোকিছুর সমালোচনা করা মানে সেটাকে ভয় পাওয়া। যদিও শিল্পসমালোচকরা শিল্পকে, সাহিত্যসমালোচকরা সাহিত্যকে ভয় করেন না। কিন্তু এসব ব্যাপার মুসলমানদের পক্ষে বোঝা শক্ত। তাঁরা শিল্পসাহিত্যের ধারেকাছেও নেই, সেসব তাঁদের কাছে হারাম। আরাম শুধু সেই জিনিশে, যা দুনিয়াতে লুটপাট আর জান্নাতে আনলিমিটেড যৌনাচার আর মদের বোতল নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার করেছে।
মুসলমানদের পক্ষ থেকে বরাবরই ইসলাম এবং মুসলমানের সমালোচনা কেন করা যাবে না তার অনেকগুলি কারণ দেখানো হয়। সেগুলি নিয়ে আরেক দফা আলোচনা করলে মন্দ হয় না।
১) আমি আপনারই ভাই–বোন–বন্ধু হতে পারি:
অতএব এই কারণে যদি আপনার সমালোচনা করার অধিকার ত্যাগ করতে হয় তাহলে ব্যাপারটা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। খেয়াল রাখতে হবে, দুনিয়ার প্রত্যেক অপরাধীও কারো না কারো ভাই, বোন অথবা বন্ধু। এই কারণে খারাপকে খারাপ বলা যাবে না, এটা হাস্যকর যুক্তি। এরচেয়ে সোজাসুজি বললেই হয়- আমি মুসলিম তাই আমার দোষ ধরা চলবে না। ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরানে অবশ্য সোজাসুজি সেই কথাই বলা আছে, এক সহিহ মুসলিম অন্য মুসলিমের দোষ গোপন করবে।
২) আমরা মানুষ:
আসলেই ব্যাপারটা তাই, ইসলামের চোখে কেবল মুসলমানরাই মানুষ, বাকীরা নিকৃষ্ট জীব। বিধর্মীদের জায়গা মানুষ তো দূরের কথা, গরুছাগলের চেয়েও নিচে। পোকামাকড়ের চেয়েও নিচুতে। অতএব মুসলমান অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য নয়।
৩) মুসলিমদের নিরাপত্তার অধিকার আছে:
অবশ্যই তা আছে! কিন্তু যারা মুসলিম নয় তাদেরও সেই অধিকার আছে। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান তো সেটা স্বীকার করে না। কোরান অনুসারে কেবল সেইসব বিধর্মীর নিরাপত্তার অধিকার আছে যারা জিজিয়া কর দেবে। যারা এই নিরাপত্তাকর দেয় না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশ আছে। কোরানের এই নির্দেশ মেনেই সারা পৃথিবীজুড়ে তারা বিধর্মী হত্যা করেই চলেছে। অথচ তাদের নিরাপত্তা নাকী সামান্য সমালোচনাতেই বিপন্ন হয়ে পড়ে। পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম কিন্তু সমালোচনায় এতো বিপন্ন হয়ে পড়ছেনা।
৪) মানবজাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি করা ঠিক নয়:
১৪০০ বছর ধরেই ইসলাম শিয়া-সুন্নি দুইভাগে বিভাজিত। এদের মধ্যে রক্তাক্তযুদ্ধ এখনও চালু আছে। তাই মানবজাতির মধ্যে বিভেদসৃষ্টির সমালোচনা করতে গেলেও ইসলামের সমালোচনা সবার আগে এসে পড়বে। অমুসলিমদের বিরুদ্ধে কোরানে যে লাগাতার যুদ্ধের নির্দেশ রয়েছে সেটা আগের পোস্টেও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫) আমি মুসলিম এবং আপনারই মতো মানুষ:
একদিক দিয়ে দেখলে মুসলমানরা মানুষই, অন্তত চোখে দেখে সেরকমই মনে হয়। কিন্তু সেজন্য তাদের দোষ ধরা চলবেনা কেন? বরং যেখানে ব্যক্তিমানুষ থেকে সমগ্র মানবজাতির সবকিছুর সমালোচনা করা হয়, সেখানে ইসলাম এবং মুসলিমদেরও সমালোচনা চালু থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি চলবে না। সমগ্র মানবজাতির সমালোচনা করা চলবে, কিন্তু ইসলাম বা মুসলিমদের সমালোচনা করা চলবে না।
৬) উগ্রপন্থীরা আমাদের লোক নয়:
‘আমাদের’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? গোঁড়া মুসলিম বোঝালে অবশ্যই উগ্রপন্থীরা আপনাদেরই লোক। আর যদি ‘আমাদের’ বলতে মডারেট মুসলিম বা সেকুলার মুসলিম বোঝানো হয় তাহলে সেটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু উগ্রপন্থীদের কাজ সহিহ ইসলামের বিরুদ্ধে নাকী পক্ষে সেটা তো আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমেই প্রমাণিত হবার কথা। তাহলে ইসলামের আলোচনায় এতো আপত্তি কেন? উল্টোটাই প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে কী?
৭) কাজটা মোটেও ভাল নয়:
অবশ্যই আমরা সবসময় চাইবো ‘ভালো কাজ’ করতে। কিন্তু ভালো কাজ এখানে কোনটা? ইসলামের বর্বর কাজকর্মকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেওয়া? মুসলমানরা অবশ্য সেটাই মনে করে এবং নিজেরা তা পালনও করে। কিন্তু আমাদের কাছে ভিন্নমত প্রকাশ করা ছাড়া উপায় নেই।
৮) মা হিজাব পরলে দুশ্চিন্তা থাকে না:
দুশ্চিন্তা এমনিতেও থাকার কারণ নেই, যদিনা আপনি মিশরের বাসিন্দা হয়ে থাকেন। যদিও হিজাব সেখানে ৯৮% মহিলারই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অন্যদিকে ইউরোপের মহিলারা হিজাব না পরলেও তাঁদের পরিবার দুশ্চিন্তা করে না।
৯) মিডিয়ায় যা দেখানো হয়, তা কী সহিহ ইসলাম?
সত্যিই তা নয়। অপরাধ এবং সন্ত্রাসের পিছনে সহিহ ইসলামের ভূমিকাকে মিডিয়া অনেক কমিয়েই দেখায়। কিন্তু যদি উল্টোটাই সত্যি হয়, যদি মিডিয়াতে দেখানো ইসলাম আদৌ সহিহ ইসলাম না হয়; তবে সেটার সমালোচনায় সহিহ ইসলাম কেন বিপন্ন হয়ে পড়ে?
১০) পূর্বসিদ্ধান্ত সঠিক নয়:
মেনে নিতেই হবে। পূর্বসিদ্ধান্ত মানে যথেষ্ট তথ্য ছাড়াই সিদ্ধান্ত অথবা যথেষ্ট বিচার না করেই সিদ্ধান্ত। এখানে সবচেয়ে বড় স্ববিরোধিতা হলো যে, বিধর্মীরা নাহয় ইসলাম সম্পর্কে না জেনে বা অল্পজেনে মন্তব্য করে। কিন্তু জন্মগতভাবেই যারা মুসলিম এবং প্রতিদিন কোরান-হাদিস পাঠ করে তাদের বেলায় এমনটা তো হবার কথা নয়। তাদের মধ্যে যারা ইসলামি স্কলার, ইসলামি দেশে স্বাধীনভাবে বক্তব্য দেবার অধিকারী, তাদের মতামত যদি দেখা যায়, তাহলে ইসলাম একটা মধ্যযুগীয় অচল ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই নয় এবং সেই অচল ব্যবস্থাকে জবরদস্তিমূলক চাপিয়ে দেয়াটাও ইসলামের অবিচ্ছেদ্দ অংশ।
১১) উপযুক্ত শিক্ষার জন্য বিভিন্নতা থাকা খুবই প্রয়োজন:
তাই কী? ইসলামের মূল উদ্দেশ্যই যেখানে সারা দুনিয়ায় এক ধর্ম, এক আল্লাহ এবং এক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা, সেখানে এইসব কথা তো ভণ্ডামি বলেই মনে হয়।
১২) একতা আমাদের শক্তিশালী করবে:
যাদের ধর্মীয় নির্দেশ রয়েছে বিধর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করতে, লাগাতার জিহাদ করতে, তাদের শক্তিশালী করাটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়, উচিতও নয়।
১৩) ইসলামি সন্ত্রাসীদের কাজকর্মে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়:
তাই সন্ত্রাসীদের বিরোধীতা করা যাবে, অথচ তারা যে উৎস থেকে প্রেরণা পায় তার বিরুদ্ধে কোনকিছু বলা যাবে না। হাস্যকর এবং অযৌক্তিক যুক্তি।
১৪)গতানুগতিক চিন্তা বিপজ্জনক:
শতভাগ সত্য কথা। যেমন ইউরোপে অনেকেই মনে করেন মুসলিমরাও অন্যদের মতোই স্বাভাবিক মানুষ, তাদের আলাদা করে রাখা উচিত নয়; তাদের জন্য আলাদা আইনও থাকা উচিত নয়। কিন্তু যারা ১৪০০ বছর ধরে বিধর্মীদের ঢালাওভাবে নিকৃষ্টজীব বলে শিক্ষা পেয়ে আসছে তাদের ভাবনাকে গতানুগতিক বলে সমালোচনা করলেই তা হয়ে যায় অপরাধ।
১৫) ধর্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণে অন্যরা এভাবে সমালোচিত হয় না:
অবশ্যই, যদি না আপনার ধর্ম অন্যদের হত্যা করবার নির্দেশ দেয়। আপনি আগেই ধরে নিয়েছেন সব ধর্ম সমান। কিন্তু সেটা আদৌ সত্যি নয়। সব ধর্মই সমান, এটা ইসলাম ধর্ম নিজেও স্বীকার করে না।
১৬) আমরা সবাই মানুষ, একে অন্যকে সম্মান দেওয়া উচিত:
মানবজাতি চিরকালই একে অন্যের মতামতকে চ্যালেঞ্জ করে এসেছে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়েই কিছু মতামত সত্য প্রমাণিত হয়েছে এবং বাকিরা পরিত্যক্ত হয়েছে।
১৭) মুসলিম দেশে জন্মে অনেকেই এখন ইংল্যান্ড–আমেরিকায় বাস করছে। এখন কেন মুসলিমদের সেখানে স্বাগত জানানো হয় না?
এখানে ভুলে গেলে চলবেনা যে ইংল্যান্ডে মুসলমান যথেষ্টই রয়েছে এবং তাদের শরিয়া আদালত, হালাল মাংস ও অন্যান্য অনেক সুবিধাভোগ করছেন। কিন্তু কোনো মুসলিম দেশই বিধর্মীদের এসব সুবিধা দেয় না। সমালোচনা সেইসব দেশগুলোর হওয়া উচিত ছিল।
১৮) অপরাধ মানুষ করে, ধর্ম নয়:
এক্ষেত্রে দেখা দরকার অপরাধটা ধর্মগ্রন্থে সমর্থন করা হয় কীনা। এই যুক্তিতে ভাল ভাল কাজ মানুষরাই করে, ধর্ম নয়। তাই ধর্ম জিনিশটাই নিষ্প্রয়োজন হয়ে যায়। সিন্নি দেখে এগিয়ে আসতে চাইলে কোঁতকা দেখে পিছিয়ে যাওয়া চলে না।
১৯) জাতিবিদ্বেষ আর অহঙ্কারই মানবজাতির পতনের মূল:
কথাটি শতভাগ সত্য, আর তেমনি এটাও সত্য যে জাতিবিদ্বেষের বিরোধিতা করতে গেলে ইসলামের বিরোধিতা করতেই হবে। ইসলামের মহান ধর্মগ্রন্থ পরিষ্কার জানিয়েছে যে, মুসলিমরাই একমাত্র উন্নতজাতি এবং বিধর্মীরা অতিশয় নিকৃষ্টজীব। এইসব কথার প্রতিবাদ না করে কীভাবে জাতিবিদ্বেষ বা অহঙ্কারের বিরুদ্ধে থাকা যায় সেটা কেবল একমাত্র আল্লাই জানেন!
২০) এভাবে পুরো সম্প্রদায়ের নিন্দা করা হচ্ছে:
সত্যটা এই যে, মুসলিমরা যদি তাদের ধর্মের সবটা বুঝতো তবে তারা নিজেরাই এটাকে ত্যাগ করতো। এ জগতে মুসলমানরাই সবচেয়ে ধর্মপরায়ণ জাতি এবং সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জাতির মধ্যেও তারাই সবচেয়ে শীর্ষে। আফ্রিকার নরখাদক কিম্বা আলাস্কার এস্কিমোদের মধ্যেও যতোটুকু একতা আছে মুসলমানরা তার সিকিভাগও অর্জন করতে পারে নি। মুসলিম সম্প্রদায় বলতে ঠিক কী বোঝায় সেটা নিয়েও তারা চরমভাবে বিভক্ত এবং অবিরাম যুদ্ধরত।
২১) সামান্য কিছু মানুষের কাজের জন্য পুরো সম্প্রদায়ের সমালোচনা করা ঠিক নয়:
বাস্তবিক কী তাই? সমালোচনা তো পুরো সম্প্রদায়ের কখনোই করা হয় না। সমালোচনা করা হয় সেইসব সামান্য কিছু মানুষের অপকর্মের এবং সেই অপকর্মের প্রেরণা দেওয়া ইসলামের। সেইসব অল্পকিছু মানুষ কিন্তু দাবি করে তারা সহিহ ইসলামের নির্দেশেই চলছেন। আর তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে গিয়ে এটাই দেখা যায় যে, তাদের কথা সত্য।
২২) মানুষের নিজস্বতাকে মেনে নেওয়া উচিত:
এসব উচিত কথা আইসিস, বোকোহারাম, আলকায়দার লোকদের শেখালেই বরং ভালো হয়। তাহলে আমাদের মতো নাস্তিকদের চাপটাও কমে, মুসলিমদের অনুভূতিও আহত হয় না। কিন্তু মুহাম্মদের কার্টুন দেখে মুসলিমরা যতোবড় মিছিল বের করেন, আইসিস কিম্বা বোকোহারামের বিরুদ্ধে তো সেরকম দেখা যায় না। অবশ্য তেমন মিছিল করতে হলে সরাসরি ইসলাম আর কোরানের বিরুদ্ধেই করা ভাল। আইসিস বা বোকোহারাম তো কোরানের বাইপ্রোডাক্ট মাত্র।
জুলাই ২৪, ২০১৫; ৭:১০ পূর্বাহ্ন
Ei baler site ta ke chalay? Faltu lekha te vorti.