শেষ পর্বে আলোচ্য বিষয়:
ক) আধুনিক সভ্যতায় ইসলামের ভূমিকা
খ) পঞ্চম অধ্যায়: নূতন বিশ্ববিপ্লবের প্রয়োজন
আধুনিক সভ্যতায় ইসলামের ভূমিকা
বস্তুত এটি বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামী সমাজ মাত্রই রাজনৈতিক সমাজ। ইংরাজী পরিভাষা ব্যবহার করলে একে পলিটি (polity) বলা যায়। কারণ ধর্মটিই রাজনৈতিক। ফলে ইসলামী সমাজে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক ঘোষণা করে কোন লাভ হয় না। যদি করা যায় তবে সেটা যে কাগুজে ঘোষণা মাত্র হয় তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশ, যেখানে ১৯৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রকে লোকবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার ঘোষণা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর মুজিব সরকার বিভিন্ন কৌশলে ইসলামকে পৃষ্ঠপোষকতা দানের যে কর্মনীতি অনুসরণ করে তা ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রত্যাখ্যানের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবেই বাংলাদেশকে পুনরায় একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়। এভাবে ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় যে কপটতা চলছিল তার অবসান ঘটানো হয়। এটা বিস্ময়কর নয় যে কামাল পাশার দেশ তুরস্কেও আজ ইসলামবাদীরা ক্ষমতায় আছে। এবং তারা ক্ষমতায় এসেছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে। আসলে শেষ বিচারে রাষ্ট্র সমাজের অভিব্যক্তি। সুতরাং কিছু সময়ের জন্য সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রের দূরত্ব সৃষ্টি করা গেলেও একটা সময় সমাজ রাষ্ট্রকে অধিকার করে।
বস্তুত, কখনও পাশ্চাত্য আধিপত্যের প্রভাবে উপর তলায় একটা উদার বা অর্ধ ইসলামের আবরণ কিছু কাল রক্ষা করতে পারলেও সমাজতলে অবস্থানকারী এবং প্রাধান্য বিস্তারকারী ইসলামী চেতনা শেষ পর্যন্ত উপরতলা এবং রাষ্ট্রকে যে প্রভাবিত করে শুধু তা-ই নয়, উপরন্তু অধিকারও করে। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক ইসলামী সমাজে অভ্যন্তরীণ সংকট ও বিরোধ যে ক্রমবর্ধমান হবে সেটাই স্বাভাবিক। নূতন চিন্তায় অক্ষম সমাজ সঙ্কট দেখা দিলে সর্বদা সমাধান হিসাবে ইসলামকেই দেখতে পায়। যেটুকু তা এগিয়েছে সেখান থেকেও তা পিছন ফিরে ইসলামের যাত্রা শুরুর সেই আদি অধ্যায়ের সময়টাতে ফিরতে চায় যখন মুহাম্মদ ও তার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের খলীফারা যুদ্ধ ও লুণ্ঠনের পথে নিয়ে দরিদ্র ও বর্বর বেদুইনদেরকে ভোগের জন্য এনে দিয়েছিলেন বিপুল সম্পদ, শ্রমদাস এবং যৌনদাসী হিসাবে অগণিত লুণ্ঠিত নারী। ইসলামের আদি যাত্রা প্রায় অপ্রতিহত বিজয়ের পথ ধরে। ওহোদের যুদ্ধের কথা বাদ দিলে তার আদি যাত্রায় কোনও পরাজয় নাই। সুতরাং ইসলাম মানে বিজয়। আর বিজয় মানেই লুঠ। আর লুঠ মানে দরিদ্র ও বর্বর আরবদের জন্য সব সমস্যার সমাধান। এভাবে ইসলামের বিজয় মুসলমানদের চেতনায় এমন এক স্বর্ণযুগের চিত্র এঁকে দিয়েছে যা হয়ে থাকে বিশ্বাসী মুসলমানের বিপুল প্রেরণার উৎস। যে কোন সমাজ সঙ্কটে তাই সে ইসলামের সেই আদি অধ্যায়ে প্রত্যাবর্তন করতে চায়। অন্যদের কাছে এটা মানবতার অন্ধকার অধ্যায় মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই বিশ্বাসী মুসলমানের কাছে সবচেয়ে আলোকিত অধ্যায়। ফলে উগ্র ও মৌলবাদী ইসলামের প্রত্যাবর্তন বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সময়ের ব্যাপার মাত্র হয়ে দাঁড়ায়। বহুদলীয় নির্বাচনমূলক ব্যবস্থা থাকলে ঘটনাটা তুলনায় শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটতে পারে।
এই বাস্তবতায় ইসলামী সমাজের ভিতর থেকে স্বাধীনভাবে আধুনিক সভ্যতার বিকাশ অসম্ভব ব্যাপার হয়ে থেকেছে। যেটুকু হয়েছে তা পাশ্চাত্য আধিপত্যের চাপে এবং প্রয়োজনে। ইসলামী পৃথিবীর দেশে দেশে বিরাজমান দুর্নীতি, পশ্চাৎপদতা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সহিংসতা, স্বৈরতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র এবং অবণর্নীয় নারী নিগ্রহের মূল উৎস বাহিরে না খুঁজে ইসলামের ভিতরেই খুঁজতে হবে। পাশ্চাত্য আধিপত্যকে কেন্দ্র করে যে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার সবচেয়ে বড় শিকার আজ ইসলামী পৃথিবী। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়েছে ইসলামের কারণে। চীন-ইন্দোচীন অনেক পূর্বেই সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে পিছনে ফেলে স্বাধীনভাবে উন্নত সভ্যতা নির্মাণের পথে এগিয়ে চলেছে। কিউবার পথ অনুসরণ করে জাগ্রত লাতিন আমেরিকার দেশগুলিও একে একে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু ইসলামী বিশ্ব সামান্য ব্যতিক্রম বাদে পুরাপুরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের অধীনস্থ ব্যবস্থাধীনে আবদ্ধ। সিরিয়া, ইরান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্যকে অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সম্ভব হয়েছে অমুসলিম রাশিয়ার কারণে।
ইসলাম যে পৃথিবীতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকারী বা সাম্রাজ্যবাদী পাশ্চাত্যের আধিপত্য রক্ষার এক মহামূল্যবান হাতিয়ার তা বহুকাল যাবৎ পাশ্চাত্য বুঝেছে। যতদিন দেহশক্তি ও ঢাল-তলোয়ারের যুগ ছিল ততদিন ইসলাম তার অগ্রাভিযান অপ্রতিহত রাখতে পেরেছিল। তা সত্ত্বেও ইউরোপ শেষ পর্যন্ত ইসলামকে প্রতিহত করতে পেরেছিল; এবং একটা পর্যায়ে যখন উন্নততর চেতনা, সমাজ সংগঠন এবং প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়ে ইউরোপ পাল্টা আঘাত হেনেছে তখন ইসলাম পরাভূত হয়েছে। এরপর ইসলামী পৃথিবীর প্রায় সবটা ইউরোপীয় বিভিন্ন রাষ্ট্রের পদানত হয়। একটা পর্যায়ে ইউরোপের প্রত্যক্ষ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী দেশগুলি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে দেখা দেয়। কিন্তু ইউরোপের আধিপত্যমূলক যে ব্যবস্থার জালে ইসলামী পৃথিবী বাঁধা পড়েছে তা থেকে তার মুক্তিলাভ আর সম্ভব হয় নাই।
এক অর্থে এই জাল আধুনিক সভ্যতার জাল, যাতে বাঁধা পড়েছে শুধু ইসলামী পৃথিবী নয়, উপরন্তু সমগ্র পৃথিবী এবং মানব জাতিও। তবে এটা মানব জাতির জন্য জাল বা বন্ধন কোনটাই নয়, বরং মুক্তি। কারণ আধুনিক সভ্যতা মানুষকে বিরাট মুক্তি দিয়েছে, তার আরও সামনে যাবার পথকে উন্মোচিত করেছে। অন্যান্য সমাজ ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় পাশ্চাত্য আধিপত্যের জালকে ছিন্ন করে যার যার মত করে আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রায়নের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু ইসলামের জন্য এ কথা আদৌ প্রযোজ্য নয়। কারণ ইসলাম সভ্যতার বিপরীতে বর্বরতা ও বন্যতার ধর্ম, মানবতার পরিবর্তে নৃশংস পশুত্বের ধর্ম। মুহাম্মদের নেতৃত্বে একদল হিংস্র, বর্বর, লুঠেরা ও ধর্ষক বেদুইনের হাত দিয়ে যে ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করেছিল তার মর্মমূলে মানুষের যে চেতনা কাজ করে তাকে ধূর্ত, প্রতারক, হিংস্র, বর্বর ও নারীধর্ষক গুহা-মানব চেতনা বলাই সঙ্গত হবে। এদের আধুনিক সভ্যতা নির্মাণের ক্ষমতা যেমন নাই তেমন নাই তাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও।
ইসলামের প্রভাবে কোন মুসলিম সমাজের পক্ষে যে সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করা এবং পাশ্চাত্যের সমকক্ষ হওয়া সম্ভব নয় সেটা না বুঝবার মত বোকা পাশ্চাত্য নয়। সুতরাং তা ইসলামকে নিজ আধিপত্যাধীনে নিবার পর বহুকাল ধরে তাকে ব্যবহার, রক্ষা ও লালনের কৌশল নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের চরম অমানবিকতা, স্বেচ্ছাচার, নারী অধিকারের প্রতি নির্লজ্জ অবমাননা ও মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণকারী দাসত্ব বা বান্দাগিরির ধারণা এগুলি কোনই সমস্যা সৃষ্টি করে না। সুতরাং প্রতিক্রিয়ার ইসলামী দুর্গ সৌদী রাজতন্ত্র আজ সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত প্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য পোষ্য। সর্বত্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য গলাবাজী করে বেড়ানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপ সর্ব প্রযত্নে সৌদী আরবকে রক্ষা করে চলেছে যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের চিহ্নমাত্র নাই।
ইসলামের লুণ্ঠনজীবী চরিত্রের কারণে পাশ্চাত্যের হাতে পরাজয়ের পর বিশেষ করে ইসলামের পরবর্তী বা নূতন নেতৃত্বের পক্ষে পাশ্চাত্যের পরাক্রান্ত কাফেরদের দাসত্ব করতে বা অধীনতামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে সমস্যা হয় না। নিজেদের আধিপত্য ও শোষণের স্বার্থে পাশ্চাত্যও ইসলামী কর্তৃত্বের সাথে একটা আপোস বা সমঝোতা ক’রে চলতে পারে। পাশ্চাত্য তার পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থা রক্ষার স্বার্থে যেটুকু পরিবর্তন ঘটাবার প্রয়োজন মনে করে সেটুকু ঘটায়। তবে এই পরিবর্তন ঘটে ইসলামের সামাজিক ভিত্তিভূমির উপর দাঁড়িয়ে বা মূল ভিত্তিকে অক্ষত রেখে। ফলে আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রবেশের পর ইসলামী সমাজ সম্মুখীন হয় এক অস্বাভাবিক দ্বন্দ্বের। তার মাথা বা নেতৃত্ব প্রভাবিত হয় আধুনিক সভ্যতার নানান উপকরণ দ্বারা, শিক্ষা ও চেতনা দ্বারা, অথচ তার শরীর তথা নীচ তলার আমজনতা রয়ে যায় ধর্মাচ্ছন্ন তথা ইসলামের পশ্চাৎপদতা, ভাগ্যবাদ, হিংস্রতা, নারী বিদ্বেষ এবং নিরঙ্কুশ একত্ববাদী বা একনায়কী আধিপত্যবাদী চেতনার অধীন। ইসলাম না পারে আধুনিক সভ্যতাকে আত্মস্থ করতে, না পারে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে। ইসলাম পাশ্চাত্যের আঘাতকে প্রতিহত করতে অক্ষম। কিন্তু ভিতর থেকে স্বাধীন, উন্নত ও মানবিক সভ্যতার উত্থানকে আঘাত এবং নস্যাৎ করতে তা সক্ষম। এমন অবস্থায় পাশ্চাত্যের উপনিবেশবাদী, নয়া উপনিবেশবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা রক্ষায় ইসলাম হয়ে দেখা দিয়েছে এক প্রচণ্ড শক্তিশালী হাতিয়ার।
আমরা বঙ্গ এবং ভারতবর্ষে ইসলামকে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের অনুচর ও সহযোগী রূপে ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে (১৭৫৭ খ্রীঃ) বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলার প্রধান সেনাপতি মীর জাফর কর্তৃক ইংরেজ সেনাপতি ক্লাইভের নিকট নবাবী রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর ছিল লুণ্ঠনজীবী ইসলামের এই নবরূপে আত্মপ্রকাশ। সেই সময় চলছিল পাঞ্জাবে শিখ এবং মহারাষ্ট্রে মারাঠা উত্থান। এছাড়া বিভিন্ন গণ-বিদ্রোহে মোগল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ছিল। উপমহাদেশের বিভিন্ন জাতির জনগণের জাগরণের কালে যখন বহিরাগত মুসলিম শাসক শ্রেণী বুঝেছে যে বাংলার এবং ভারতবর্ষের হিন্দু ও অন্যান্য অমুসলিম জনগণের উত্থানকে ঠেকানো যাবে না তখন তাদের প্রধান অংশ মীর জাফরের নেতৃত্বে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা এবং ভারতবর্ষকে নূতন পর্যায়ের পরাধীনতায় নিক্ষেপ করেছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে যে যুদ্ধ হয় তাতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৬৭ হাজার। এর মধ্যে আনুমানিক মাত্র ১৭ হাজার সৈন্য নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। বাকী ৫০ হাজার সৈন্য প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের অধীনে দাঁড়িয়ে থাকল। এটা ছিল কৌশলে ইংরেজদের প্রতি সমর্থন। অর্থাৎ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় ইসলামী যে রাষ্ট্র ছিল তার চার ভাগের তিন ভাগ ছিল ব্রিটিশদের নিকট রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী। এই কারণে মীর জাফর নিজে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করলেন না। সেনাবাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সৈন্য তার পক্ষে থাকায় সেটা তিনি চাইলে করতে পারতেন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ক্ষমতা দখল ছিল না, বরং মূল রাষ্ট্র ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে হস্তান্তর করে ক্ষমতার গৌণ অংশীদার হিসাবে টিকে থাকা। সুতরাং পলাশীর রণক্ষেত্রে যুদ্ধের নাটক করা হল। এভাবে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ যার মর্মমূলে আছে আরব সাম্রাজ্যবাদ তার জায়গা নিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ।
মীর জাফর পরবর্তী মুসলিম নেতৃত্বের ভূমিকাকে তার ভূমিকা থেকে ভিন্নভাবে দেখার উপায় নাই। যদিও ১৮৫৭-তে মুসলিম নেতৃত্বের একাংশ হিন্দুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটা বিদ্রোহ করেছিল তা ছিল পুরাতন নেতৃত্বের শেষ প্রয়াস। বস্তুত ভারতবর্ষে ইসলামের ভূমিকা প্রধানত বিদেশী ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক। হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব, বর্ণজাতিভেদের কারণে হিন্দু সমাজের শতধা বিভক্তি ও কাপুরুষতা, হিন্দু সমাজের নেতৃত্বেরও অযোগ্যতা ইত্যাদি কারণ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনকে প্রায় দুইশত বৎসর স্থায়ী রাখায় সাহায্য করে। ওয়াহাবী আন্দোলনের মত কিছু ধর্মান্ধ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হলেও এসব কাফের বিরোধী আন্দোলনের শেষ পরিণতি হল হিন্দু বিরোধী পাকিস্তান আন্দোলন, যা বাংলা এবং ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে। আর বঙ্গের বিভক্তির মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রকৃত ভূমিকা আর একবার প্রকাশ পেল।
ভারতবর্ষে মুসলমান সংখ্যালঘু হওয়ায় সেখানে তার স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র চাওয়ার ব্যাপারটা বোধগম্য হতে পারে। কিন্তু বঙ্গে সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও কেন ইসলামী নেতৃত্ব মুসলমানের আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান চাইবে? অর্থাৎ মুসলমান নেতৃত্ব বাঙ্গালী হিসাবে তার রাষ্ট্র পেতে চায় নাই, বরং মুসলমান হিসাবে তার রাষ্ট্র পেতে চেয়েছিল, যে রাষ্ট্র হাতে পেয়ে তার লুণ্ঠনজীবিতার ঐতিহ্যকে রক্ষা করবে। সেটা তারা ’৪৭ থেকে আজ অবধি রক্ষা করেছে। ’৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাস-চিত্র দেখলেও এটা বুঝতে কষ্ট হয় না। এই লুণ্ঠনজীবীরা লুণ্ঠনের জন্য যে কোন কৌশল নিতে অভ্যস্থ। সুতরাং সেকিউলারিজম, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির বুলি আওড়াতেও তাদের অসুবিধা হয় না। ’৭১-এ পাকিস্তানের কাঠামো ভেঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ও ইসলামের এই লুণ্ঠনবৃত্তি ও হিংস্র গুহামানব সুলভ কর্মধারার অবসান ঘটাতে পারে নাই। কারণ বাংলাদেশ ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জন্ম নিলেও ইসলামের অধীনতা থেকে মুক্তির বিপ্লবে রূপ নিতে পারে নাই।
আর পাকিস্তান? পাকিস্তান রাষ্ট্রটির দিকে তাকালে বুঝা যায় এটা সেখানকার এবং উপমহাদেশের জনগণকে কী দিয়েছে। ব্রিটিশ চলে যাবার পর এটা হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থা রক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ। এটা হয়েছে একদিকে পাকিস্তানের জনগণের উপর দাসত্বের ব্যবস্থা রক্ষার এক পাহারাদার রাষ্ট্র, অপরদিকে উপমহাদেশের অন-ইসলামী জনগণের উত্থানের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের এক দুর্গ। গণতন্ত্রের বুলি আওড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরই ভাষায় পৃথিবীর ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে যত রকমভাবে সম্ভব ব্যবহার করেছে।
আফগানিস্তানের বাদশাহ্ আমানুল্লাহ তার দেশের আধুনিকায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন ইসলামবাদী শক্তিগুলিকে ব্যবহার ক’রে তাকে কীভাবে তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার নস্যাৎ করেছিল তা আমরা জানি। একইভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের উত্তরাধিকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরাও কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের আধুনিকায়নের উদ্যোগকে পাকিস্তানের সাহায্যে এবং আফগানিস্তানে জঙ্গী জিহাদীদের উত্থান ঘটিয়ে নস্যাৎ করে। এই হচ্ছে ইসলামী পৃথিবীতে বর্বর ও ধর্ষক গুহামানবদের রক্ষায় পাশ্চাত্যের উদার গণতন্ত্রীদের কিছু কর্মকাণ্ডের নমুনা।
কিন্তু ইসলামের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তার লাগবে শত্রু, যার বিরুদ্ধে তা জিহাদ বা ইসলামী যুদ্ধ করবে। এই জিহাদে জয়ী হলে তার লাভ হবে শত্রুর সম্পদ, ভূমি, সম্পত্তি এবং নারী। যুদ্ধে মৃত্যু হলে তার হবে অনন্ত বেহেশ্ত্, যেখানে তা পাবে অনন্ত জীবন, অফুরন্ত মদের নদী, ফল-মূল, সুস্বাদু খাদ্য, বহু সংখ্যক অনন্ত যৌবনা নারী এবং অগণন বালক। ইসলামের আদর্শের প্রকৃত ও সাহসী অনুসারীরা সেই যুদ্ধ বা জিহাদ এখন নূতন উদ্যমে পরিচালনা করতে শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য ইসলামী দেশ থেকে ইউরোপ এমনকি খোদ আমেরিকা পর্যন্ত পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। তারা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ যেমন বিজয়ী হয়েছিলেন তেমন মুহাম্মদের পথ অনুসরণ করে তারাও বিজয়ী হবে ।
কিন্তু এই যুদ্ধে ইসলামের শক্তি যে বিজয়ী হতে পারবে না সেটা পাশ্চাত্য খুব ভালভাবে জানে। তবে এটা পরমাণু প্রযুক্তির যুগ। সব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয় না। কোন প্রযুক্তিই মানুষ চিরকাল নিজের একচেটিয়া বা গোপন করে রাখতে পারে না। সেটা ক্রয় করে হোক, চুরি করে হোক কিংবা অন্যভাবে হোক আগে বা পরে সংগ্রহ করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান পরমাণু বোমার অধিকারী হয়েছে। পরমাণু প্রযুক্তি যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের হাত থেকে প্রকৃত জিহাদী শক্তির হাতে যাবে না এমন নিশ্চয়তা কোথায়?
তবে এখন পর্যন্ত ইসলামের লালন ও পৃষ্ঠপোষকতাতেই পাশ্চাত্যের লাভ। জিহাদী না হলে আমাদের মত দেশগুলির জন্য ইসলাম তার খুব পছন্দের। কারণ ইসলাম ইসলামী পৃথিবীকে পাশ্চাত্যের অধীনস্থ ও দয়ার ভিখারী করে রাখছে। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক যুগে বিশ্ব বাজার ব্যবস্থার বাইরে যাবার উপায় কোন দেশ বা সমাজেরই নাই। এমন কি সেই ক্ষমতা জিহাদী মুসলামানদেরও নাই। সভ্যতার প্রতি বৈরী আফগান তালেবানরাও আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি নিয়েই সভ্যতাকে আঘাত করতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা হচ্ছে ইসলামের এক ট্র্যাজিডি। সভ্যতা নির্মাণে অক্ষম এবং সভ্যতার প্রতি বৈরী ইসলাম আধুনিক ও উন্নত পৃথিবীর দয়ার উপর নির্ভর করেই এবং এখন পর্যন্ত বিশেষত পাশ্চাত্যের প্রয়োজনেই বেঁচে আছে এবং যতদিন তাকে পাশ্চাত্যের প্রয়োজন হবে ততদিন পাশ্চাত্য তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তবে বেশী বাড়াবাড়ি ক’রে পাশ্চাত্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলে তাকে শায়েস্তা করবে। এ ক্ষেত্রে লাদেনের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। আমেরিকার সৃষ্টি লাদেন বধ আমেরিকাই করেছে। এখন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ে ইরাক-সিরিয়ায়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একই নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। আমেরিকার নীতি পরিষ্কার – ‘সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো।’ আমাদের মত দেশগুলোয় ইসলাম ও ইসলামী চেতনা লালন ও রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সবই তা করবে। আবার ইসলাম যদি তার চরিত্র অনুযায়ী ভিতর বাদ দিয়ে বাহিরেও গিয়ে তাকে আঘাত করার দুঃসাহস করে তবে তাকে শাস্তি দিয়ে বুঝাবে যে বেশী বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। উদ্দেশ্য একটাই, ইসলামী পৃথিবীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীনে রেখে দেওয়া।
ফলে শেষ বিচারে আধুনিক সভ্যতায় ইসলাম মুসলমানদেরকে দিয়েছে এমন এক কারাগার যেখানে তারা পাশ্চাত্যের দাস হয়ে থাকতে বাধ্য হবে। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় পুঁজিবাদ, গণতন্ত্র ইত্যাদি যা-ই করা যাক সভ্যতা ইসলামের জন্য এমন এক বন্দীশালা তৈরী করেছে যেখানে মুসলমানরা বন্দী হয়ে থেকে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণে বাধ্য হবে। সভ্যতা নির্মাণে পাশ্চাত্যের সেই আদি উদ্যম ও প্রেরণার যুগ শেষ হয়েছে। এখন পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা তাদের পূর্বপুরুষদের মত আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও নির্মাণের জন্য জীবনপাতের পরিবর্তে ভোগ ও আনন্দ-ফূর্তিতে গা ভাসাতেই অনেক বেশী আগ্রহী। সুতরাং কষ্টসাধ্য শ্রম করার জন্য তাদের দরকার প্রাচ্যের সস্তা শ্রমশক্তি। এ ছাড়া আরও অনেক বেশী প্রয়োজন মেধার, যা আজকের মেধাভিত্তিক সভ্যতার মূল বুনিয়াদ। সস্তা দেহশ্রমের পাশাপাশি এই মেধার অফুরন্ত সরবরাহ ভাণ্ডার হয়ে আছে ইসলামী পৃথিবী। এখান থেকে মেধাবীরা গিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতার চাকা সচল রাখার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখছে। মেধাশক্তিই পৃথিবীকে বদলায়। সুতরাং ইসলামী পৃথিবীতে তাদের অভাবে অন্ধকার দীর্ঘতর হচ্ছে মাত্র।
মেধাবী ও উন্নত চিন্তার মানুষদের জন্য এই সমাজে দমবন্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তির প্রভাবে যে উন্নত মেধা তৈরী হচ্ছে তার বিরাট অংশ হিংস্র ও বর্বর বান্দাদের আধিপত্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সহিংসতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বৈরাচার, ইত্যাদির চাপে এখানে টিকতে না পেরে পাশ্চাত্যে চলে যেতে চায়। এখানে তার পরেও মেধার বিকাশ সম্ভাবনা নিয়ে যারা থাকে ইট চাপা ঘাসের মত তারাও এক সময় লালনের অভাবে এবং বান্দা সমাজের চাপে শুকিয়ে মরে যায়। এভাবে ইসলামী সমাজগুলি যেটা হারায় সেটা হচ্ছে মেধাশক্তির বিকাশ সম্ভাবনা, যা আজকের সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ ও রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয়। এভাবে ইসলামী পৃথিবী হয়েছে পাশ্চাত্যের জন্য শ্রমশক্তি এবং ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ মেধাশক্তি সরবরাহের জন্য এক অফুরন্ত সরবরাহ ভাণ্ডার। এই ভাণ্ডার রক্ষার জন্যও আজ পাশ্চাত্যের আধিপত্যবাদী শক্তিগুলি প্রাচ্যে ইসলাম রক্ষায় এত তৎপর।
এভাবে ইসলাম এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ একসূত্রে গাঁথা। সুতরাং আজ আমাদের মত দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই এবং ইসলাম বিরোধী লড়াই এক এবং অভিন্ন এক লড়াই।
নূতন বিশ্ববিপ্লবের প্রয়োজন
এক সময় ভিতর থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা সম্ভব ছিল না। কারণ শান্তির ধর্ম ইসলাম ও তার নবীর যে কোন ধরনের সমালোচনা হিংস্র গুহামানবদের হাতে মৃত্যু ঘটাতে পারত। ইসলাম সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে তারা হয়ত জানেন যে, সমালোচক কিংবা নিন্দাকারীরা ইসলাম পরিত্যাগকারী তথা মুরতাদ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং নবীর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের জন্য একমাত্র শাস্তি মৃত্যু। ইসলাম ও তার নবীর সামান্য সমালোচনা যেখানে মৃত্যুর কারণ হতে পারে সেখানে ইসলাম ধর্মের সত্য নির্ভর ও নিরপেক্ষ আলোচনা-সমালোচনা হবে কী করে? বস্তুত গোটা ধর্মটাই সন্ত্রাসের ধর্ম।
কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশ ইসলামকে অসহায় করে ফেলছে। বিশেষত ইন্টারনেট প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এখন বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও তার নবীর চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সমালোচনার পথ খুলে দিয়েছে। ইন্টারনেটকে গুহামানবরা আক্রমণ কিংবা হত্যা করবে কীভাবে? বরং ইসলামবাদীরা নিজেদের গুহামানবীয় ধর্মকে বাঁচাবার চেষ্টায় মরীয়া হয়ে এখন ইন্টারনেটেরও আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এতকালের অবরুদ্ধ সত্যের বাঁধভাঙ্গা বন্যার আঘাতে ইসলামের ব্যূহ তছনছ হয়ে যেতে আর বেশী দেরী নাই। ইন্টারনেটের বাইরেও মুদ্রণ ও প্রকাশ্য আলোচনা ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইসলাম ও তার নবীর স্বরূপ প্রকাশ শুরু হয়েছে। এ মহাপ্লাবনকে রোধ করবে এমন সাধ্য কার?
বস্তুত প্রশ্নটা শুধু মানবিকতার নয়, প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকতে পারব কিনা তারও। আজকের যুগে দেহশক্তি, পাশবিক আদর্শ এবং ধূর্ত ও হিংস্র গুহামানবীয় বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়, মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকার তো প্রশ্নই উঠে না। ইসলামের কারণে পাশ্চাত্যের যে দাসত্ব আমরা করে চলেছি সেটা মেনে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করব নাকি সভ্যতা ও উন্নয়নে তাদের সমকক্ষ হয়ে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াব সেই সিদ্ধান্ত আজ আমাদেরকে নিতে হবে।
মানুষ আজ পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে নাক্ষত্রিক সভ্যতার যুগে প্রবেশ করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি আজ আকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর কিছুকালের মধ্যে মানুষ গ্রহ-গ্রহান্তরে বাস করবে। আর আমরা কি সেসব শুধু চেয়েই দেখব? নাকি আমরাও সেই আকাশ জয়ের প্রতিযোগিতায় নামব? যদি সেই প্রতিযোগিতায় আমরা নামতে চাই তবে আমাদের সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে ইসলামকে চিনতে হবে। অর্থাৎ ইসলাম শুধু মানবতার শত্রু নয়, উপরন্তু ইসলামী পৃথিবীর উন্নয়নেরও সবচেয়ে বড় শত্রু। শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশাল ইসলামী পৃথিবীরও যে অপার সম্ভাবনা চাপা পড়ে আছে তাকে মুক্ত করা ইসলামী পৃথিবীর মানুষ হিসাবে আমাদের করণীয়। এটি দাবী করে এক বিরাট আদর্শিক এবং সেই সঙ্গে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব। শুধু বাংলাদেশ নয়, উপরন্তু সমগ্র ইসলাম অধিকৃত পৃথিবী তার মুক্তির প্রয়োজনে এই বিপ্লবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ আজ আমরা বিশ্ববিপ্লবের এক নবতর অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
আগের পর্বসমূহ পড়তে শিরোনামের ওপরে ক্লিক করুন:
ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা (১ম পর্ব)
ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা (২য় পর্ব)
ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা (৩য় পর্ব)
এ সম্পর্কিত আমার এই লেখাটাও পড়তে পারেন:
ইন্টারনেট ও আসন্ন বিশ্ববিপ্লব
নবযুগ ব্লগে আমার সকল লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন…
নভেম্বর ২৪, ২০১৭; ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
বস্তুত এটি বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামী সমাজ মাত্রই রাজনৈতিক সমাজ। ইংরাজী পরিভাষা ব্যবহার করলে একে পলিটি (polity) বলা যায়।
এ পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু
‘কারণ ধর্মটিই রাজনৈতিক। ফলে ইসলামী সমাজে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক ঘোষণা করে কোন লাভ হয় না।‘
এটি ‘রাষ্ট্র’ যখন ফরাসী বিপ্লব পরবর্তী কাল থেকে বিবেচনা করা হয়, তখন ঠিক আছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে রাষ্ট্র(ইউরোপিয়) এখন সাম্রাজ্য, বিশ্বযুদ্ধ পেরিয়ে এসেছে…
আর বাংলাদেশ তথা ভারতে ‘হিন্দু’ নামক একটি প্রাচীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধর্ম রুপে বিরাজমান…