ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা (১ম পর্ব)

2 মতামত পাওয়া গেছে

“বর্বরদের হাতে রোমান সভ্যতার চূড়ান্ত পতন হয় ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে। এরপর থেকে একেবারে প্রায় চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত যে কাল চলে সেটাকে বলা হয় অন্ধকার যুগ, যখন ধর্মের বিধিনিষেধের কারাগারে মানুষের যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেচনা বন্দী হয়ে পড়ে। মানুষের চিন্তার নিয়ামক হিসাবে দেখা দেয় অন্ধ বিশ্বাস নির্ভর ধর্ম। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পথও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।”

ইওরোপে যখন অন্ধকার যুগ তখন আরবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ। ইতিহাসকে শুধু তাই ইওরোপিয়ান বয়ান দিয়ে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক আছে। যখন যেখানে ক্ষমতা থাকে সেখানেই নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্ম হয়। পুরো মধ্যযুগে ক্ষমতার কেন্দ্র বাগদাদ এবং স্পেনে মুসলিম বিজ্ঞানি এবং দার্শনিকেরা রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যাপক উন্নয়ন করে। রেনেসাঁর সময় ইওরোপ সেটা আত্তীকরণ করে নেয়, আর যথারীতি মুসলিম মনীষীদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের নাম ও কাজ খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত করে। যেসব ক্ষেত্রে মুসলমানদের সরাসরি অবদান ছিল না, সেখানেও তার মূল গ্রিক এবং ল্যাটিন টেক্সট অনুবাদ করে যার কারণে রেনেসাঁর সময়ে ইওরোপ তাদের প্রাচীন জ্ঞান (গ্রিক, রোমান) প্রথম আরবদের কাছ থেকে পায়। ইতিহাসে যার যেটুকু প্রাপ্য তাকে সেটা দিতে হবে।

    মুসলমানদের গ্রীক-লাতিন কিংবা নিজস্ব জ্ঞানচর্চার তাৎপর্য নিয়ে তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লেখ করেছি। মনে হয় সবটা না হলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর সেখানে আছে। তবে সেটা (তৃতীয় অধ্যায়) এখনও অপ্রকাশিত রয়েছে। অবশ্য এই রচনায় আমি আধুনিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় ইউরোপ তথা খ্রীষ্টীয় সমাজের সাফল্যের কারণ এবং সেই সঙ্গে ইসলাম ও আরব তথা মুসলিম সমাজের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করতে চেয়েছি। এটাই আমার অনুসন্ধানের মূল জায়গা। এই সঙ্গে উঠে এসেছে বৌদ্ধ অথবা বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাবিত সমাজগুলির তুলনামূলক সাফল্যের বিষয়টিও। আমার ব্যাখ্যা অথবা বক্তব্যের সঙ্গে সকলে সহমত হবেন এই আশা আমি করি না। তবে মুসলিম সমাজের একজন হিসাবে আমার আত্মজিজ্ঞাসার ফসল এই লেখাটি।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।