ইসলাম ও আধুনিক সভ্যতা (৩য় পর্ব)

1 মতামত পাওয়া গেছে

আমি অত্যন্ত সহজ একটি কথা বুঝি, বাংলা ও বাঙালির কাছে মধ্য প্রাচ্যের খ্রিস্টধর্মই হোক আর ইসলাম ধর্মই হোক, সম্পূর্ণ বিদেশি দুটি ধর্ম ও বৈদেশিক দুটি সংস্কৃতি। ধর্মের বিধিবিধান আচার বিচার ইত্যাদি মিলেই একটি আঞ্চলিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে এক একটি ধর্মকে কেন্দ্র করে। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালেই বোঝা যায়, এই দুটি বৈদেশিক ধর্মই ঊনিশ বিশ সাম্রাজ্যবাদী ধর্ম। আর সেই কারণেই বিশেষত ইসলামের ক্ষেত্রে মধ্য প্রাচ্যের সংস্কৃতির একটি ধারাই ইসলামি সংস্কৃতি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং বিশ্বের নানান প্রান্তে ধর্মীয় সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতায়। ইতিহাসই সে কথা জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের। এখন বাংলার নিজস্ব যে সংস্কৃতি, তার সাথে এই বিদেশি ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি দ্বন্দ্ব চিরকালই প্রচ্ছন্নভাবে বিদ্যমান। বাঙালির আচার বিচার পোশাক-পরিচ্ছদ মন মানসিকতার সাথে কোনভাবেই ইসলামি ও খ্রিস্ট্রিয় সংস্কৃতির মিল নাই। কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবেই অধিকাংশ বাঙালি যে কোন কারণেই হোক ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ায়, আজকের বাংলায় এই বৈদেশিক ইসলামি সংস্কৃতি হাজার বছরব্যাপি সময় সীমায় স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছে। ঠিক যমন ব্রিটিশের কাছে পরাধীনতার ফলে ইংরেজি ভাষা ও ইউরোপিয়ান সংস্কৃতিও বাংলা ও বাঙালির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। আমার কাছে এই দুই বিদেশি ধর্ম ও ভাষার প্রভাবে আমাদের বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব মৌলিকতার অবক্ষয়টিই সবচেয়ে বড়ো দুঃখের। আমার কাছে অধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় কোন ধর্মেরই কোন প্রাসঙ্গিকতা নাই। তাই কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ আর কোন ধর্ম নিকৃষ্ট সেই তর্কের মধ্যে সময় নষ্ট নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সে আমার একান্ত ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যাক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি কোন কিছুরই মাপকাঠি হতে পারে না। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত যে সত্য, অর্থাৎ ইসলাম একটি বিদেশি ধর্ম, ঠিক যেমন ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা: সেই সত্যটি আমরা স্মরণে রাখবো না কেন? বাংলা ভাষার জন্যে যদি বিদেশি ভাষার দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন করা গিয়ে থাকে, তবে বাঙালিয়ানার জন্যে বৈদেশিক ইসলামি সংস্কৃতির আধিপত্য থেকে মুক্তির সংগ্রাম শুরু করা যাবে না কেন? আমি এই বিষয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই উত্তর ভারতের হিন্দু ধর্মের আধিপত্য থেকেও বঙ্গসংস্কৃতির মুক্তির সংগ্রামের আশু প্রয়োজনীয়তার কথাও বলবে একই যুক্তিতে। আমাদের ভাবা দরকার বাংলা বঙালিত্ব ও বাঙালিয়ানার প্রেক্ষাপটে। যা কিছু বৈদেশিক তা ভালোই হোক আর মন্দই হোক বাঙালির পক্ষে বৈদেশিক সংস্কৃতির নিরঙ্কুশ আধিপত্য মেনে নেওয়া আত্মহত্যার সামিল। আর আমরা শত শত বছর ধরে ক্রমাগত এই আত্মহত্যারই শরিক করে চলেছি নিজেদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।