০
১১৪০ বার পঠিত
কম বেশি প্রত্যেক ধর্মের মূলেই আছে অনেক অযৌক্তিক বিশ্বাস। সময়ের বিবর্তনে অনেক ধর্মের সংস্করণ হয়েছে। এককালে হিন্দু ধর্মে ছিল সতীদাহ প্রথা যা এখন আর নেই। খ্রিস্টান ও ইহুদিদের ধর্মীয় গ্রন্থেও আছে অনেক সহিংসতা ও অ-সহিষ্ণুতা। অথচ আজকে অধিকাংশ খ্রিস্টান ও ইহুদী তাদের গ্রন্থের সহিংস ও অ-সহিষ্ণু অংশকে মোটেও বিশ্বাস করে না। তারা সেগুলোকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার হয়েছে ধরে নিয়ে সেগুলোর শান্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা করে নিয়েছে। কারণ তাদের ধর্ম এক দীর্ঘ অর্থপূর্ণ সংস্করণ এর মধ্য দিয়ে গেছে। তাদের ধর্মে ও কিছু মানুষ আছে যারা তাদের গ্রন্থের সহিংস অংশগুলো আক্ষরিক-ভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু তাদের সংখ্যা একেবারেই কম। দুঃখজনক ভাবে ইসলামের ক্ষেত্রে তা নয়। বরং ইসলামের শান্তিপূর্ণ সংস্করণ চায় এমন মুসলিমের সংখ্যা একেবারে কম।
ইসলামের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে যা এর সংস্করণের পথে বিশাল অন্তরায় হয়ে আছে। এর মধ্যে অন্যতম হল বিদআত এর ধারণা। বিদআত একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ নতুনত্ব, নতুনভাবে উদ্ভাবন, নতুন আবিষ্কার। ইসলামের পরিভাষায়, ধর্মীয় বিষয়ে নতুন প্রথা উদ্ভাবনকে বিদআত বলে। নবী মুহাম্মদ বিদআত কে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এই বিদআত নিষিদ্ধের ব্যাপারে অনেক হাদিস আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
“তোমরা নতুন উদ্ভাবন পরিহার কর কারণ প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবন হল বিদআত আর প্রত্যেক বিদআত হল ত্রুটি।” (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল সুন্নাহ)
“প্রত্যেক বিদআত বা নব আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহি আর প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ।” (সহি ইবনে খুযাইমা)
“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে— যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যান যোগ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
“আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে জন্তু জবেহ করে। আর যে জমির সীমা চুরি করে। আর যে মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয়। আর যে বিদআতিকে আশ্রয় দেয়।” (মুসলিম)
“আল্লাহ তায়ালা বিদআতির তওবা গ্রহণ করেন না যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণরূপে তওবা করে।” (তবরানী, সনদ হাসান)
ইসলাম ধর্মানুসারে কিয়ামতের দিন বিদআতি হাওযে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে। সাহাল ইবনে সাআদ বলেন, মুহাম্মদ বলেছেন, আমি হাওযে কাওছারে তোমাদের অপেক্ষায় থাকব। যে ব্যক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার পানি পান করবে তার কখনো তৃষ্ণা থাকবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদেরকে আমি চিনব। তারাও আমাকে চিনবে। আমি মনে করব তারা আমার উম্মত তার পরও তাদেরকে আমার নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে হবে না। আমি বলব এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনি জানেন না আপনি দুনিয়া থেকে চলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তার পর আমি বলব, ‘দূর হোক, দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমদের জন্য কুরআন ও হাদিসের বাণী বিশ্বাস করা অপরিহার্য। বারবার বিদআত নিষিদ্ধের কথা বলে হাদিস ইসলাম সংস্করণের পথে পাহাড়সম বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে।
ইসলাম দাবি করে যে মোহাম্মদ যে শুধু শেষ নবী, তাই ই নয়, তিনি হলেন মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ। অন্য কোন ধর্মের প্রবর্তক এমন দাম্ভিক দাবি করেননি। কোরআন দাবি করে যে কুরআন হলো সরাসরি আল্লাহর বাণী এবং এতে কোন ভুল নেই। এর বিপরীতে চিরকালের জন্য ভুল বিহীন ধর্মগ্রন্থের ধারণা খ্রিস্টান ধর্মে নেই। (বাইবেলকে বিবেচনা করা হয় অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ কর্তৃক লেখা।) ইসলাম সংস্কারের পথে এগুলোও খুব অন্তরায়। আমার সন্দেহ হয়, অন্য ধর্মগুলোর মত ইসলামের শান্তিপূর্ণ সংস্করণ কখনও সম্ভব হবে কিনা।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন