১০৮১ বার পঠিত
১০৮১ বার পঠিত
‘ঈশ্বর’ কেবল একটি শব্দ নয়, মানব জাতির মনের প্রাকৃতিক এক শক্ত বিশ্বাস, যা মানুষের মনে সৃষ্ট হয়েছিলো প্রকৃতিজাত নানা রহস্যের ধুম্রজাল থেকে। এটি মানুষেরই মানসিক চিন্তার একটি সিদ্ধান্ত যা মানব সমাজের আদিপর্বেই ঘটে গিয়েছিলো জন্ম মৃত্যু, সূর্যের ত্যাজ, সাগরের বিশালতা, পর্বতের উচ্চতা, চন্দ্রের স্নিগ্ধতা, বৃক্ষের নিরবতা, পশুর উগ্রতা, মানব-যৌবনের বিচিত্রতা, দিন-রাত্রির ব্যবধান, পাখির উড্ডয়ন ইত্যাদি দেখে!
বিশাল বিশ্ব, আকাশ, গ্রহ-তারা ইত্যাদি মানুষের মনে এই সকল কিছু কেউ একজন অথবা কয়েকজন সৃষ্টি করেছেন, রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, আবার ধংসও করে দেবেন- এমন ভাবনায় নানাবিধ সন্দেহ এবং সংশয়ে সেই স্রষ্টাদের তারা বসিয়েছেন সন্দিগ্ধ মনের কন্দরে! সেই ধারায় আকাশ, সূর্য, চন্দ্র, শনি, বুধ, বৃহস্পতি, মংগল, পৃথিবী, গংগা, হিমালয়, মরু, বন, বৃক্ষ, অগ্নি, পাথর ইত্যাদি সকল কিছুকেই তারা কল্পনা করেছিলো দেবতার রূপে। সকল দেবতার স্রষ্টাকে ভেবেছে ঈশ্বরের নামে।
অর্থাৎ দৃশ্যমান দেবতাদের অদৃশ্য স্রষ্টাই ঈশ্বর! এদের সকলের পুজা করলেই সেই ঈশ্বর তুষ্ট হবেন। তবেই মারি মহামারি, বন্যা, ঝড় তুফান, ভুমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত, তুষারপাত, দাবদাহ, অভাব অনটন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে! এভাবে পুজা, অর্চনা, বলি, ভোগ, জজ্ঞ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানব জাতির মানব সমাজে! বাতাসের দেবতা, বৃষ্টির দেবতা, পাহাড়ের দেবতা, ঝড়ের দেবতা, রোগের দেবতা, মৃত্যুর দেবতা, পাপ পূন্যের দেবতা, অন্নের দেবতা, বনের দেবতা, সাগরের দেবতা, পাতালের দেবতা ইত্যাদি অসংখ্য দেবতা সৃষ্টি হয়ে গেলো মানুষের মনের জটিল কুঠুরীতে! এদের অবতার হিসেবে কিংবা স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার হিসেবে কালে কালে মানুষ মানুষকেই (নারী-পুরুষ) বসাতে লাগলো প্রতিভু হিসেবে! হৃষি, মুনি, নবী, সেন্ট, পীর, দরবেশ, সন্ন্যাসী ইত্যাদি নানা নামে এরাও পুজিত হতে থাকলেন কালের মহাস্রোতে! কাল্পনিক ঈশ্বরকে কখনোই আসতে হলোনা প্রকাশ্যে! আর আসতে হবেওনা! মানুষের সমাজে ঈশ্বর আর অবতারদের উন্মাদ পুজারী হয়েছে বেশুমার! ঈশ্বর কী সত্যি কেউ আছে- এমন প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস যদি কেউ করেও, তবে তার দেহ থেকে মস্তক ছিন্ন হতে মুহুর্ত সময় লাগেনা এখন আর!
ঈশ্বর- চিন্তা মানুষের মনোজগতে এক সংক্রমিত বোধ যা ধ্রুব সত্য। কিন্তু যে চেতনা থেকে এর ব্যপ্তি তা অন্তঃসারশুন্য! কিন্তু যেহেতু আপামর মানুষ এই চিন্তাটিকে ধারন করে আছে সেহেতু একে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ভেবে উড়িয়ে দেয়া উচিত নয়। বিশ্বের কেউ একজন কিংবা বহুজন স্রষ্টা থেকে থাকবে- এমন ভাবনা মানুষের স্বাধীন চিন্তার বিষয় হতেই পারে! ঠিক সেভাবেই বিপরীতে ভাবার স্বাধীনতাও মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার। ঈশ্বরই সকল ভাবনা সৃষ্টিকারী কিংবা ঈশ্বরের ইচ্ছা ভিন্ন গাছের পাতাটিও নড়েনা- এমন বিশ্বাসের মোড়কেও ‘ঈশ্বর বলে কিছু নেই’ (অনস্তিত্ববাদ) ভাবনার অস্তিত্ব থাকতেই পারে! সকল মানুষেরই উচিত উভয় চিন্তাকেই শ্রদ্ধার সাথে সয়ে নেয়া। এই যে সহনশীলতা এটাই মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ।
মানবজাতির শৈশব থেকেই লালিত ঈশ্বরবোধ প্রতিষ্ঠিত সত্য। যে বোধ থেকে মানব সমাজে প্রচলিত, পালিত, উদযাপিত হয়ে আসছে নানাবিধ ধর্মীয় আচার, প্রথা, অনুষ্ঠান, আচরণ ইত্যাদি সেগুলোকে মূর্খতা, কুপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার বলে ঘৃণার সাথে বর্জন কিংবা বিরোধীতা না করে উত্তম ও কল্যাণকর বিষয়গুলো নিয়ে মানবকল্যাণে কাজ করাই বরং শ্রেয় বলে মনে করি। পাশাপাশি অকল্যাণকর অমানবিক বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করে সেগুলোর হানিকর রূপ বিশ্লেষণও একান্ত জরুরী। রাতারাতি বৃক্ষের শেকড় উপড়ানো মানেই পুরো বৃক্ষটিকে ধ্বংস করা, যা অপ্রাকৃত।
বর্তমানে ধর্মবাদ যেভাবে হিংসাত্মক পর্যায়ে ধাবমান তাতে মানবসমাজ প্রচণ্ড হুমকীর সম্মুখীন। ঈশ্বর-চিন্তা থেকেই এর হানিকর রক্তাক্ত বিকাশ! অথচ মানবমনের গভীর কন্দরে সমূলে প্রোথিত ঈশ্বরবোধের যাবতীয় শেকড় একসাথেই বিচ্ছিন্ন করার কোনোই অবকাশ নেই!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
কোনো আচরণ কল্যানকর হলেও যদি তার পিছনে যুক্তিবোধ না থাকে তবে তা শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই করে। না বুঝে কাজ করে হয়ত সাময়িক লাভ হয়, কিন্তু তাতে মানুষের সবচেয়ে বড় গুণটাই নষ্ট হয়ে যায়।