উম হানীর ঘরে নবীর রাত্রি যাপন এবং মেরাজ
আগেই লিখা হয়েছে যে নবীর ঈস্রা এবং মেরাজ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। বিগত দেড় হাজার বছর ধরে এই বিতর্ক চলছে এবং ভবিষ্যতেও যে চলবে তাতে সন্দেহ নাই। কয়েকটি ব্যাপারে অনেক মতবিরোধ দেখা যায়। সেগুলি হল:
এই রাত্রি ভ্রমণ (ঈসরা এবং মেরাজ) কখন হয়েছিল?
এই রাত্রি ভ্রমণ কোথা হতে হয়েছিল?
উম হানীর সাথে নবীর এই রাত্রি সফরের কি সম্পর্ক?
প্রথম প্রশ্নের আংশিক উত্তর আগে দেওয়া হয়েছে। এখন একটু বিশেষ আলোচনার প্রয়োজন।
মুহাম্মদের এই রাত্রি ভ্রমণ যে মদিনায় হিজরতের আগেই হয়েছে তাতে কোন বিতর্ক নাই। অনেক নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে বুঝা যায় যে এই আশ্চর্যজনক ঘটনা খুব সম্ভবত: ৬১৯-৬২০ সালে হয়েছিল। আগেই জানানো হয়েছে যে এই ঘটনার আগে নবী সওদাকে বিবাহ করেন। কিন্তু মুহাম্মদের জীবনী থেকে এটা পরিষ্কার হয়না যে সওদাকে মুহাম্মদ কোথায় রাখতেন? সওদাকে যে তিনি কাবা ঘরে কিম্বা তার কাছাকাছি কোথাও রাখতেননা তা বুঝা যায়। খুব সম্ভবত: সওদা থাকতেন খদিজার গৃহে, কারণ সেখানেই ছিল মুহাম্মদের কন্যারা। সওদা তাদের দেখাশোনা করতেন এবং সাংসারিক অন্য কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আর মুহাম্মদ বেশীরভাগ সময়ই কাটাতেন কাবা প্রাঙ্গণে—জিকির, নামায আর কোরান আবৃত্তি করে। কাবা প্রাঙ্গণেই মুহাম্মদ অনেক রাত্রি কাটাতেন। আমরা আগেই দেখেছি কাবার যেখানে মুহাম্মদ কোরান পড়তেন সে স্থান উম হানীর ঘরের খুব সন্নিকটে ছিল—একেবারে পাশের বাড়ির মত। উম হানীর সাথে রাত্রে মিলিত হবার এর চাইতে ভাল অবস্থা আর কি হতে পারে? তাই বিশ্বাস করা যায় যে মুহাম্মদ অনেক সময়েই কাবা থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতেন। অনেকেই এ নিয়ে হয়ত প্রশ্ন করত। তিনি হয়ত সদুত্তর দিতে পারতেন না। এই ভাবেই একবার তিনি সহসা রাত্রিকালে কাবা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। লোকে তাঁর খোঁজ করতে তাকে। নিখোঁজের কারণ হিসাবে নবী ঈস্রা এবং মেরাজের উল্লেখ করেন। এর সমর্থনে কিছু হাদিস এবং ঘটনার বিবরণ দেওয়া হবে। পাঠকদের মনে রাখা দরকার যে কাবার যে অংশে মুহাম্মদ কোরান পড়তেন এবং শুয়ে রাত্রি কাটাতেন সেই স্থানকে হিজর বলা হত। কাবার এই স্থানে কোরায়েশরা ব্যবস্থা করেছিল গরীব এবং পথিকদের বিশ্রাম অথবা নিদ্রার।
মার্টিন লিঙ্গস্-এর মতে এই ঘটনা হয়েছিল উম হানীর এবং আবু তালেবের অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের ইসলাম গ্রহণের পর—অর্থাৎ মুহাম্মদের মদিনায় হিজরত করার আগে। লক্ষ্য রাখতে হবে যে উম হানীর স্বামী হুবায়রা কক্ষনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তাই এক পৌত্তলিক স্বামী নিয়ে কি ভাবে উম হানী একই গৃহে বাস করেন তাও চিন্তার বিষয়। উম হানী তা করে থাকলে উনি নিশ্চয় ইসলামি আইন লঙ্ঘন করেছিলেন। যতটুকু ধারণা করা যায় উম হানীর স্বামী হুবায়রা গৃহে থাকতেন না। আমরা আগেই দেখেছি উম হানীর ইসলাম গ্রহণের সংবাদে হুবায়রা মনের দুঃখে কবিতা রচনা করেছিলেন এবং নির্বাসনে চলে যান।
দেখা যাক মার্টিন লিঙ্গস্ কি লিখেছেন ঈসরা এবং মেরাজ সম্পর্কে:
একবার উনারা সবাই নবীর পিছনে নামাজ পড়লেন। এর পর উম হানী নবীকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁদের সাথে রাত্রি যাপনের। মুহাম্মদ সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ ঘুমের পরই উঠলেন এবং মসজিদে চলে গেলেন। কেননা কাবায় রাত্রি কাটাতে নবী অতিশয় পছন্দ করতেন। সেখানে যাবার পর নবীর ঘুম আসতে থাকল; তিনি হিজরে ঘুমিয়ে পড়লেন।
তিনি বললেন, “আমি যখন যখন হিজরে ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তখন জিব্রাঈল আমার কাছে আসলেন এবং তাঁর পা দিয়ে লাথি মারলেন। আমি সোজা হয়ে বসলাম। কিন্তু কিছুই দেখলাম না। তাই আবার শুয়ে পড়লাম। দ্বিতীয়বার জিব্রাঈল আসলেন। তারপর তৃতীয়বার। এইবার তিনি আমার হাত ধরলেন। আমি উঠলাম এবং জিব্রাঈলের পাশে দাঁড়ালাম। জিব্রাঈল আমাকে নিয়ে মসজিদের দরজার বাইরে এলেন। বাইরে একটা সাদা জানোয়ার দেখলাম। দেখতে গাধা এবং খচ্চরের মাঝামাঝি। জানোয়ারটির দুই পাশে ডানা ছিল। তার দ্বারা সে তার পা নাড়াচাড়া করছিল। তার প্রত্যেক পদক্ষেপ ছিল দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত। (লিঙ্গস্, পৃঃ ১০১)
এরপর মার্টিন লিঙ্গস্ বর্ণনা দিয়েছেন নবীর আকাশ ভ্রমণ, যার বিস্তারিত বিবরণ আমরা পরে দেখব। মজার ব্যাপার হল রাত্রি শেষ হবার আগেই নবী আবার চলে যান উম হানীর গৃহে। এবং তাঁকে বর্ণনা করেন রাত্রি ভ্রমণের কথা। এই থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে হিজর এবং উম হানীর গৃহ ছিল খুবই নিকটবর্তী যা আগেই বলা হয়েছে। তা না হলে মুহাম্মদের পক্ষে হুট করে, রাত থাকতে থাকতে আবার উম হানীর গৃহে যাওয়া সম্ভব হত না।
দেখা যাক মার্টিন লিঙ্গস্ কি লিখেছেন:
যখন নবী এবং জিব্রাঈল জেরুজালেমের মসজিদে অবতরণ করলেন তখন মক্কায় ফিরে গেলেন যে পথ ধরে এসেছিলেন সেই পথ ধরে। ফিরার পথে অনেক দক্ষিণ-গামী কাফেলাকে অতিক্রম করলেন। যখন কাবায় ফিরে আসলেন তখনও গভীর রাত ছিল। কাবা থেকে নবী আবার গেলেন তাঁর চাচাত বোনের গৃহে। উম হানী নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন এই ভাবে: “ভোর হবার অল্পক্ষণ পূর্বেই নবী আমাদেরকে ঘুম হতে উঠালেন। এরপর আমরা ভোরের (ফজরের) নামায শেষ করলাম। তিনি বললেন: ‘ওগো উম হানী! তুমি ত জানই, আমি তোমার সাথে এই উপত্যকাতেই গতকালের সন্ধ্যা নামায পড়েছিলাম। এর পর আমি জেরুজালেমে যাই। সেখানেও নামায পড়লাম। এখন ত তুমি দেখছ, আমি তোমার সাথে ভোরের নামায পড়লাম।‘ নবী উঠলেন চলে যাবার জন্য। আমি তাঁর পরনের ধুতি ধরে এত জোরে টানাটানি করলাম যাতে ধুতি আলগা হয়ে পড়ে গেল। এর ফলে আমি তাঁর পেট দেখে ফেললাম। তাঁর পেট মনে হচ্ছিল যেন তুলা দিয়ে ঢাকা। আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর নবী। এই কথা লোকজনকে জানাবেন না। কেননা তারা আপনাকে মিথ্যুক বলবে আর অপমান করবে।‘ নবী বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তাদেরকে বলব।‘(লিঙ্গস্, পৃঃ ১০৩)
এখন ইবনে সা’দের লেখা আল তাবাকাত আল কবির থেকে কিছু জানা যাক।
ইবনে সা’দ লিখেছেন ঈস্রা এবং মেরাজ উম হানীর গৃহ থেকেই হয়েছিল।
রাত্রে শোবার আগে উনি উম হানীর সাথে এশার (সন্ধ্যা) নামায পড়েন। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন: ঐ রাত্রে নবী (স.) নিখোঁজ হয়ে যান। তাই আবদুল মুত্তালিবের পরিবারের সদস্যরা নবীর খোঁজে বাহির হন। আল আব্বাস জু তুয়াসে গিয়ে চিৎকার করলেন: ওহে মুহাম্মদ! ওহে মুহাম্মদ! আল্লাহর রসূল (স.) জবাব দিলেন: আমি যে এখানে। আল আব্বাস বললেন: হে আমার ভায়ের পুত্র! রাত্রির শুরুর থেকেই আপনি আমাদেরকে উদবিঘ্ন করে তুলেছেন। আপনি কোথায় ছিলেন? নবী উত্তর দিলেন: আমি বায়তুল মোকাদ্দিস থেকে আসছি। আল আব্বাস বললেন: এক রাত্রিতেই? নবী উত্তর দিলেন: হাঁ, তাই। আল আব্বাস জিজ্ঞাসা করলেন: ‘আপনি কি ভাল ছাড়া খারাপ কিছু অভিজ্ঞতা পেয়েছেন?’ নবী উত্তর দিলেন: আমার সব অভিজ্ঞতাই ভাল। উম হানী বললেন: নবীর রাত্রি ভ্রমণ আমার গৃহ থেকেই হয়েছে। ঐ রাতে নবী আমাদের গৃহে ঘুমান। এশার নামায শেষ করে উনি ঘুমাতে যান। অতি প্রত্যুষে আমরা উনাকে ভোরের নামাযের (ফজরের) জন্য জাগালাম। তিনি বললেন: ওহে উম হানী! তুমি ত সাক্ষী, আমি তোমার সাথে এশার নামায পড়েছি। এর পর আমি বায়তুল মোকাদ্দিস গেলাম এবং সেখানে নামায পড়লাম। এরপর আমি ফজরের নামায পড়লাম তোমার সামনেই। এরপর নবী চলে যাবার উদ্যোগ করলেন। আমি বললাম: এই ঘটনা কাউকে বলবেন না। কারণ তারা আপনাকে মিথ্যুক বলবে এবং আপনার ক্ষতি করবে। তিনি বললেন; আল্লাহর কসম, আমি এই ঘটনা সবাইকে জানাব। লোকেরা যখন জানল তখন বলল: আমরা কস্মিনকালেও এই ধরণের কাহিনী শুনি নাই। আল্লার রসূল (স.) জিব্রাঈলকে বললেন: ওহে জিব্রাঈল! ওহে জিব্রাঈল! ওহে জিব্রাঈল! আমার লোকজন বিশ্বাস করবে না। আবু বকরই এর সত্যতা স্বীকার করবে। কারণ আবু বকর হচ্ছেন আল সিদ্দিক। বর্ণনাকারী জানালেন: অনেক ব্যক্তিই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং নামায পড়েছিল—তারা ইসলাম ছেড়ে দিল। নবী বলতে লাগলেন: আমি হিজরে দাঁড়িয়েছিলাম। বায়তুল মোকাদ্দিস আমি চাক্ষুষ দেখছিলাম এবং এর বর্ণনা দিচ্ছিলাম। কেউ কেউ জিজ্ঞাস করল: ঐ মসজিদের কয়টা দরজা? আমি ত তা গণনা করি নাই। তাই কল্পনায় আমি মসজিদের প্রতি লক্ষ্য করলাম এবং এক এক করে দরজার সংখ্যা গণনা করলাম। তারপর এই তথ্য জানালাম। আমি যে সব কাফেলা দেখছিলাম সেগুলোরও বিবরণ জানালাম। লোকেরা দেখল ঐ কাফেলা হুবহু আমি যা বলেছি সেই রকম। এর পরেই আল্লাহ-পাক পাঠিয়ে দিলেন তাঁর বাণী: আমরা আপনাকে সেই দৃষ্টি দিলাম যেই দৃষ্টি দ্বারা আমরা আপনাকে দেখিয়েছি মানব জাতির অগ্নিপরীক্ষা। উনি (ইবনে সা’দ) বললেন এর মানে হল: নবী যা চাক্ষুষ দেখেছেন তারই বর্ণনা। (ইবনে সা’দ, খণ্ড ১, পৃঃ ২৪৮)
এখন আমরা ইবনে ইসহাকের বর্ণনা দেখব:
উম হানী বিন্ত আবু তালেব, যাঁর আসল নাম হচ্ছে হিন্দ, তাঁর থেকে রসূলের রাত্রি ভ্রমণ সম্পর্কে আমি এই বর্ণনা শুনেছি:
তিনি (উম হানী) বললেন: আল্লাহর রসূলের রাত্রি ভ্রমণ আমার গৃহ ছাড়া অন্য কোথা হতে হয় নাই। ঐ রাত্রে উনি আমার গৃহে ঘুমান। রাতের সর্বশেষ নামাজ শেষ করে উনি ঘুমাতে যান; সেই সাথে আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরের কিছু আগেই উনি আমাদেরকে জাগিয়ে তুললেন। আমরা ফজরের নামাজ পড়লাম। তারপর উনি বললেন: “তুমি ত জানই তোমার সাথে এই স্থানেই (উপত্যকায়) আমি সান্ধ্য নামায পড়েছিলাম। তারপর আমি জেরুজালেমে যাই এবং সেখানেও নামায পড়ি। তারপরই তুমি ত দেখলে আমি তোমার সাথে এই ফজরের নামায পড়লাম।“ এই বলে নবী চলে যেতে চাইলেন। আমি উনার আলখাল্লা ধরে টান দিলে তা খুলে পড়ে গেল। আমি নবীর উলঙ্গ পেট দেখতে পেলাম। তাঁর সেই পেট দেখতে ছিল ভাঁজ করা মিশরীয় তুলার তৈরি পোশাক। আমি বললাম: “হে আল্লাহর নবী, আপনি এই সংবাদ কাউকে জানাবেন না। কারণ এই সংবাদ জানলে তারা আপনাকে মিথ্যুক বলবে এবং অপমান করবে।“ তিনি বললেন: “আল্লাহর কসম, আমি তাদেরকে জানাবই।“ আমার নিগ্রো ক্রীতদাসীকে নির্দেশ দিলাম: “তুমি নবীকে অনুসরণ কর আর শ্রবণ কর উনি কি বলেন, আর তারা কি বলে।“ সত্যি-সত্যি নবী উপস্থিত লোকদের ঘটনার বিবরণ দিলেন। এই শুনে তারা আশ্চর্য্যাম্বিত হয়ে গেল। তারা তাঁর দাবীর প্রমাণ চাইল। নবী বললেন তিনি অমুক অমুক কাফেলা দেখেছেন অমুক অমুক স্থানে। এই কাফেলাগুলো তাঁর বাহন দেখে ভীত হয়ে গেল। এমনকি একটা উট দৌড়ে পালিয়ে গেল। আমি তাদেরকে জানালাম কোথায় এই ঘটনা ঘটল। আমি বললাম যে ঐ সময় আমি সিরিয়ার পথে ছিলাম। এর পর আমি দাজানান পর্যন্ত গেলাম। সেখানে আমি অমুক গোত্রের কাফেলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম লোকজন নিদ্রিত। তাদের সাথে বয়মে ভরা পানি ছিল। বয়মের মুখ কিছু ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা ছিল। আমি ঢাকনা খুলে পানি পান করলাম। তারপর ঢাকনা লাগিয়া দিলাম। এর প্রমাণ এই যে এই মুহূর্তে ঐ কাফেলাটি তানিমের গিরিপথ দিয়ে বায়দা থেকে আসছে। কাফেলাটির অগ্রে রয়েছে কালচে রঙ্গের এক উট যার পিঠে রয়েছে দুটি বস্তা—একটি কালো আরেকটি নানাবর্ণের।“ লোকজন হুড়হুড় করে গিরিপথের মুখে চলে গেল ঐ কাফেলার আগমন দেখতে। প্রথম যে উটটি তারা দেখল তা হুবহু আমি যে রূপ বলেছিলাম সেই রূপ ছিল। তারা কাফেলার লোকদেরকে ঐ বয়েমের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল। তারা উত্তর দিল যে বয়েমটা তারা পানি ভর্তি করে তার মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। তারা ঘুম থেকে উঠে লক্ষ্য করল যে বয়েমের মুখ বন্ধই ছিল কিন্তু বয়েমের ভিতর ছিল শূন্য। মক্কার অন্যান্য লোকেরাও তাদের সাথে সায় দিল। এ জেনে কাফেলার লোকেরা ভীত হয়ে পড়ল এবং সে সাথে তাদের এক উটও পালিয়ে গেল। এরপর তাদের একজন উটকে ডাকতে থাকল। পরে সে উটটি ফিরে পেল। (ইবনে ইসহাক, পৃঃ ১৮৪)
আশ শিফা গ্রন্থে মেরাজ ঘটনা এই ভাবে লিখিত হয়েছে:
উম হানি বর্ণনা করলেন: “যে রাতে আল্লাহর রসূল রাত্রি ভ্রমণে যান সেই রাত্রে উনি আমার গৃহে ছিলেন। উনি আমাদের সাথে রাত্রির শেষ নামায পড়লেন এবং আমাদের সাথে ঘুমিয়ে গেলেন। ফজরের নামাযের সময় উনি আমাদেরকে জাগিয়ে দিলেন। তারপর আমাদের সাথে ফজরের নামায পড়লেন। উনি বললেন: ‘উম হানী, আমি গতরাত্রের শেষ নামায তোমার সাথে পড়েছিলাম, যা তুমি জান। তারপর আমি জেরুজালেমে গিয়ে নামায পড়েছি। আর এখন তুমি দেখছ আমি তোমার সাথে ভোরের নামায পড়েছি।‘ (আশ শিফা, পৃঃ ৯৮)
মুহাম্মদের মিশরীয় জীবনীকার হুসায়েন হাইকল লিখেছেন:
ঈস্রার রাত্রে মুহাম্মদ তাঁর চাচাত বোন হিন্দ বিন্ত আবু তালেবের গৃহে ছিলেন। হিন্দকে উম হানী বলেও ডাকা হত। হিন্দ বর্ণনা করলেন: ‘’আল্লাহর রসূল আমার ঘরে রাত্রি কাটালেন। রাত্রের নামায শেষ করে উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ভোরের অল্পকিছু পূর্বে উনি আমাদেরকে জাগিয়ে দিলেন এবং আমরা সবাই একত্রে ভোরের নামায পড়লাম। নামায শেষ হলে নবী বললেন: ‘উম হানী আমি এই স্থানে তোমার সাথে রাত্রির নামায পড়েছি। তারপর আমি জেরুজালেমে গেলাম এবং সেখানে নামায পড়লাম। আর এখন ত দেখলেই আমি তোমার সাথে ভোরের নামায পড়লাম।‘ আমি উত্তর দিলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল, আপনি কাউকে এই সংবাদ দিবেন না, কেননা তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনার ক্ষতি করবে।‘ উনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমি সবাইকে জানাব।‘’’
স্যার উইলিয়াম মুরের মতে মুহাম্মদের রাত্রি ভ্রমণ হয়েছিল খুব সম্ভবত ৬২১-৬২২ সালের কোন এক সময়। অর্থাৎ মদিনায় হিজরতের বছর খানেক আগে। এবং এই সফর হয়েছিল আবু তালেবের গৃহ হতে। এখানে আবু তালেবের গৃহ বলতে কি বুঝান হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। খুব সম্ভবত: উম হানীর গৃহ এবং আবু তালেবের গৃহ একই ছিল—কাবার একেবারেই কাছাকাছি।
পরের দিন ভোর বেলায় আবু তালেবের গৃহে যখন উনি (মুহাম্মদ) ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন তখনও উনার তন্দ্রায় সে রাতের স্বপ্নের রেশ লেগে ছিল বেশ পরিষ্কার ভাবে—যেন বাস্তবের মত। তিনি চিৎকার করে আবু তালেবের কন্যাকে বলে উঠলেন যে রাত্রি বেলায় তিনি জেরুজালেমের মসজিদে প্রার্থনা করেছেন। তারপর বললেন যে এই ঘটনা তিনি সবাইকে জানাবেন। সে সময় আবু তালেবের কন্যা উনার পোশাক ধরে মিনতি করলেন এই ব্যাপার কাউকে না জানানোর জন্য। কিন্তু নবী নিজের কথায় অটল থাকলেন। (উইলিয়াম মুর, পৃঃ ১২১)
নীচে খাসায়েসুল কুবরা থেকে মেরাজ এবং উম হানী সংক্রান্ত কিছু হাদিস দেওয়া হল:
হযরত উম্মে হানীর (রাঃ) হাদিস
ইবনে ইসহাক ও ইবনে জরীর আবূ ছালেহ এর বরাত দিয়ে রেওয়ায়েত করেছেন যে, উম্মে হানী বিনতে আবূ তালেব (রাঃ) বর্ণনা করেন, শবে মে’রাজে নবী করীম (সাঃ) আমার গৃহে নিদ্রিত ছিলেন। এর আগে তিনি এশার নামায পড়েন। এরপর তিনিও ঘুমিয়ে পড়েন এবং আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরের আগে তিনি আমাদেরকে জাগ্রত করলেন। তাঁর সাথে আমরাও যখন ভোরের নামায পড়ে নিলাম, তখন তিনি বললেন: উম্মেহানী! আমি তোমাদের সাথে এখানে এশার নামায পড়েছিলাম, যা তুমি নিজে দেখেছ এরপর আমি বায়তূল মোকাদ্দাসে চলে যাই। আমি সেখানে নামায পড়েছি। এখন আবার তোমাদের সাথে ফজরের নামায পড়লাম, যা তুমি নিজেই দেখতে পাচ্ছ।
তিবরানী, ইবনে মরদুওয়াইহি হযরত উম্মে হানী (রাঃ) থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, শবে মে’রাজে নবী করীম (সাঃ) আমার গৃহে নিদ্রিত ছিলেন। আমি রাতে তাঁকে পেলাম না। ফলে এ আশংকায় সারারাত আমার ঘুম হল না যে, কোথাও কোরায়শরা তাঁকে অপহরণ করেনি তো?
এরপর হুযুর (সাঃ) বললেন: জিবরাঈল আমার কাছে এলেন এবং আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলেন। আমি দরজার বাইরে একটি চতুষ্পদ জন্তু দেখলাম, যা খচ্চর অপেক্ষা নিচু ও গাধা অপেক্ষা উঁচু ছিল। জিবরাঈল আমাকে তাঁর উপর সওয়ার করিয়ে বায়তুল মকাদ্দাস নিয়ে গেলেন। আমাকে হযরত ইবরাহীম (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করালেন। তাঁর দৈহিক গড়ন আমার গড়নের অনুরূপ ছিল। জিবরাঈল মূসা (আঃ) এর সাথে দেখা করালেন। তিনি গোধুম বর্ণের, লম্বা গড়নের এবং সোজা চুলওয়ালা ছিলেন। শানওয়া গোত্রের পুরুষদের সাথে তার বহুলাংশে মিল ছিল। হযরত ঈসা (আঃ) এর সাথেও সাক্ষাৎ হয়। তিনি মাঝারি গড়নের সাদা চুলওয়ালা ছিলেন। তাঁর রঙে লালিমার ঝলক ছিল। ওরওয়া ইবনে মসউদ ছকফীর সাথে তাঁর মিল ছিল। আমাকে দাজ্জালও দেখানো হয়। তার ডান চক্ষু নিশ্চিহ্ন ছিল। সে কুতুন ইবনে আবদুল ওযযার অনুরূপ ছিল।
উম্মে হানী বর্ণনা করেন—অতঃপর হুযুর (সাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন: আমি মে’রাজের ঘটনা বলার জন্যে কোরায়শদের কাছে যেতে চাই। উম্মে হানী বলেন; আমি হুযুর (সাঃ) এর কাপড় ধরে ফেললাম এবং বললাম; আল্লাহর কসম, যারা আপনাকে মিথ্যারোপ করে এবং আপনার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করে, আপনি তাদের কাছে যাবেন না। তারা আপনার বাড়াবাড়ি করবে। কিন্তু তিনি আমার কথায় কর্ণপাত করলেন না এবং আমার হাত থেকে কাপড় ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলেন। কয়েকজন কোরায়েশ নেতা এক জায়গায় সমবেত ছিল। হুযুর (সাঃ) সেখানে যেয়ে মে’রাজের ঘটনা বর্ণনা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মুতয়িম ইবনে আদী দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল: মোহাম্মদ! যদি তুমি সুস্থ চিন্তা ভাবনার অধিকারী হতে, তবে এমন আজগুবী কথা বলতে না। এরপর উপস্থিত লোকদের একজন বলল: মোহাম্মদ! আপনি অমুক অমুক জায়গায় আমাদের উটদের কাছে গিয়েছিলেন?
আবূ ইয়ালা ও ইবনে আসাকির রেওয়ায়েতে হযরত উম্মে হানী (রাঃ) বলেন: নবী করীম (সাঃ) ভোর বেলায় আমার কাছে আগমন করলেন। আমি তখন শয্যায় ছিলাম। তিনি বললেন: তুমি তো জান আমি আজ রাতে মসজিদে হারামে নিদ্রিত ছিলাম। জিবরাইল আমার কাছে এসে আমাকে মসজিদের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আমি একটা সাদা চতুষ্পদ জন্তু দেখলাম, যা গাধার চেয়ে উঁচু এবং খচ্চরের চেয়ে নীচু ছিল।
তার উভয় কান স্থির ছিল না—কেবলি আন্দোলিত হচ্ছিল। আমি তাতে সওয়ার হলাম। জিবরাঈল আমার সঙ্গে ছিলেন। জন্তুটি আপন পা দৃষ্টির শেষ সীমায় রেখে রেখে চলতে লাগল। যখন সে নিম্নভূমিতে চলত, তখন তার হাত লম্বা এবং পা খাটো হয়ে যেত, আর যখন উঁচু জায়গায় আরোহণ করত, তখন পা লম্বা ও হাত খাটো হয়ে যেত।
আমরা বায়তুল মোকাদ্দাসে পৌঁছলাম। আমি জন্তুটি সেই বৃত্তের সাথে বেঁধে দিলাম, যেখানে পয়গাম্বারগণ আপন আপন সওয়ারী বাঁধতেন। পয়গাম্বারগণকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। তাঁদের মধ্যে হযরত ইবরাহীম, মূসা, ও ঈসা (আঃ) ছিলেন। আমি তাঁদেরকে নামায পড়ালাম এবং তাঁদের সাথে কথাবার্তা বললাম। এরপর আমার সামনে লাল ও সাদা দুটি পাত্র আনা হল। আমি সাদা পাত্রটি পান করলাম। জিবরাঈল বললেন: আপনি দুধ পান করেছেন এবং শরাব প্রত্যাখান করেছেন। শরাব পান করলে আপনার উম্মত মুরতাদ হয়ে যেত। এরপর আমি সওয়ারীতে সওয়ার হয়ে মসজিদে হারামে এলে ফজরের নামায পড়েছি।
উম্মে হানী বর্ণনা করেন—একথা শুনে আমি হুযুর (সাঃ) এর চাদর ধরে ফেললাম এবং বললাম: ভাই। আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, যদি আপনি কোরায়শদের সামনে একথা প্রকাশ করেন, তবে যারা এখন ঈমানদার, তারাও বেঈমান হয়ে যাবে। হুযুর (সাঃ) চাদরের উপর হাত মেরে সেটি আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। চাদর তার পেট থেকে সরে গেল। আমি তার লুঙ্গির উপর পেটের ভাজকে জড়ানো কাগজের ন্যায় দেখতে পেলাম। আমি আরও দেখলাম, তাঁর হৃদপিণ্ডের জায়গা থেকে নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছিল এবং আমার দৃষ্টি ছিনিয়ে নেয়ার উপক্রম হচ্ছিল। আমি অভিভূত হয়ে সিজদায় পড়ে গেলাম। যখন মাথা তুললাম তখন দেখি হুযুর (সাঃ) চলে গেছেন। আমি কাল বিলম্ব না করে বাঁদীকে বললাম: জলদি তাঁর পিছনে পিছনে যা। তিনি কি বলেন এবং শ্রোতারা কি জওয়াব দেয়, তা শুনে তাড়াতাড়ি আমার কাছে আয়। (খাসায়েসুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃঃ ৩৩৪ ৩৩৮)
মক্কা বিজয়ের পর নবী কোথায় গেলেন?
নবী মুহাম্মদ বাহুবলে মক্কা দখল করলেন। কয়েকজন ছাড়া সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করলেন। মক্কার লোকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সবাই আশা করছিল মুহাম্মদ পৈত্রিক ভিটেমাটিতে অবস্থান করবেন, যথা তাঁর চাচা আবু তালেবের গৃহে। কিন্তু নবী তা না করে কাবার সন্নিকটে নিজের থাকার জন্য একটা তাঁবু গাড়লেন। সেখানে তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা ও অন্যান্য নিকট আত্মীয়। তাঁবুটি যে উম হানী বা আবু তালেবের গৃহের খুব কাছেই ছিল তাতে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আমরা উপরে একটা হাদিসে দেখেছিলাম যে উম হানী যখন নবীর তাঁবুতে গেলেন উনার গৃহে আশ্রিত দুই দেবরের প্রাণ ভিক্ষা করতে যাদেরকে হযরত আলী হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তখন নবী গোসল সারলেন এবং ভোরের নামায পড়লেন। আমরা ধরে নিতে পারি এটা ফজরের নামাযের সময় ছিল—যা সূর্য উঠার আগেই হয়। এই ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে নবীর তাঁবু ছিল উম হানীর গৃহের কাছেই। তখন উম হানীর গৃহে যে তাঁর স্বামী হুবায়রা ছিল না তা একেবারে পরিষ্কার। নবী ফজরের নামায শেষ করলেন। তারপর উম হানীর সাথে কথাবার্তা বললেন এবং তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে উনি (উম হানী) যাকে আশ্রয় দিবেন তারা তাঁর নিরাপত্তা পাবে। এখন ব্যাপার হচ্ছে—এত ভোরে মুহাম্মদ উম হানীকে তাঁর তাবুতে আপ্যায়ন করার পর কি করলেন? মুহাম্মদ কি উম হানীর গৃহে তাঁর পদধূলি দিলেন?
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা অনেক ইসলামী পণ্ডিতেরা কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান। কারণ যদি দেখান হয় যে নবী উম হানীর গৃহে তশরীফ নিয়েছিলেন তবে উম হানী এবং মুহাম্মদের মাঝে যে পরকীয়া প্রেম তখনও জীবিত ছিল তার প্রমাণ দেওয়া যায়। আর এই কর্ম যদি নবী করে থাকেন তবে উনি নিজের আইন নিজেই ভঙ্গ করেছেন প্রমাণিত হয়। এই ঘটনা আরও প্রমাণিত করে যে উম হানীর স্বামী তাঁর স্ত্রীর সাথে থাকতেন না। এর কারণ আগে দেওয়া হয়েছে। পরে আরও জোরালো প্রমাণ দেখান হবে।
এই প্রসঙ্গেএখন দেখা যাক কিছু হাদিস এবং ঐতিহাসিক দলিল।
প্রথমেই দেখা যাক কয়েকটি তিরমিজি হাদিস।
আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা বর্ণনা করলেন: “উম হানী ছাড়া আর কেউ-ই আল্লাহর রসূলকে জুহার (দুহা) নামায পড়তে দেখেনি। উনি (উম হানী) বললেন: ‘মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল তাঁর গৃহে (উম হানীর গৃহে) ঢুকলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং ঐচ্ছিক আট রাকাত নামায পড়লেন। তিনি নবীকে এত লঘুভাবে আর কোন দিন নামায পড়তে দেখেন নাই। কিন্তু তিনি রুকু (মাথা নত করা) ও সিজদা (স্যাষ্ঠাঙ্গ করা) ঠিক মতই করলেন। (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ১, হাদিস নম্বর ৪৭৪, পৃঃ ৪৭৬-৪৭৭; অনুবাদ লেখকের)
উম হানী বললেন: মক্কা বিজয়ের সময় আমি আল্লাহর রসূলের কাছে গেলাম। আমি দেখলাম উনি গোসল করছেন। আর ফাতেমা তাঁকে একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে অন্তরাল করে রেখেছেন। আমি তাঁকে সালাম জানালাম। উনি বললেন: “এ কে?” আমি বললাম, আমি উম হানী।” তিনি বললেন: “স্বাগতম উম হানী।” (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ২৭৩৪, পৃঃ ১১৭; অনুবাদ লেখকের)
এখন বুখারী শরীফ থেকে কিছু হাদীস:
আবদুল্লাহ ইব্ন মুসলিম (র)…উম্মে হানী বিনত আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসল-রত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রা) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানী। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.২৭৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
ইসমা’ঈল ইবন্ আবু উওয়ায়স (রঃ)…উম্মে হানী বিন্ত আবু তালিব (রাঃ) বলেন: আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছে। তিনি বলেন: আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ কে? আমি উত্তর দিলাম: আমি উম্মে হানী বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন: মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পর তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত আদায় করলেন। সালাত আদায় শেষ করলে তাঁকে আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ। আমার সহদর ভাই [আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন: হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন: তখন ছিল চাশতের সময়। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.৩৫০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
হাফ্স ইব্ন উমর (র.)……ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানী (রা.) ব্যতীত অন্য কেউ নবী করীম (স.) কে সালাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্ন এর সালাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি (উম্মে হানী) (রা.) বলেন নবী (স.) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকা’আত সালাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ’ ও সিজদা পুর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। লায়স (র.) আমির (ইব্ন রাবীআ’) (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.)কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১০৪০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
আদম (র.)……আবদুর রহমান ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উম্মে হানী (র.) (নবী করীম (স.)-এর চাচাত বোন) ব্যতিত অন্য কেউ নবী করীম কে চাশ্তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মে হানী (র.) অবশ্য বলেছেন, নবী করীম (স.) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখিনি। তবে কিরআত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু’ ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১১০৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
এই ধরণের আরও কিছু হাদিস রয়েছে বুখারী শরীফে।
দেখা যাক মুসলিম শরীফের কিছু হাদিস:
উম হানী বিন্ত আবু তালিব বর্ণনা করলেন: সেই দিনটি ছিল মক্কা বিজয়ের দিন। উনি (উম হানী) আল্লাহর রসূলের (সঃ) নিকট গেলেন। তখন তিনি (রসূল) নগরের এক উঁচু অংশে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহর রসূল গোসল করতে উঠলেন। ফাতেমা একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে ঘিরে রাখলেন। তারপর তিনি নিজের কাপড় নিলেন এবং নিজেকে আবৃত করে ফেললেন। এরপর নবী আট রাকাতের পূর্বাহ্ণের নামায পড়লেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ০৬৬৪; অনুবাদ লেখকের)
আবু তালিব তনয়া উম হানীর মুক্ত ক্রীতদাস আবু মুরা বলেছেন। উম হানী বললেন: যেদিন মক্কা দখল হয় সেদিন আমি আল্লাহর রসূলের (সঃ) কাছে গেলাম। আমি দেখলাম উনি গোসল করছেন আর ফাতেমা উনাকে এক কাপড়ের সাহায্যে পর্দা দিচ্ছেন। আমি সালাম জানালাম। উনি বললেন: এ কে? আমি জবাব দিলাম: আমি উম হানী, আবু তালিবের কন্যা। গোসল শেষ হলে উনি নিজেকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে নিলেন এবং আট রাকাত নামায আদায় করলেন। নামায শেষ হলে উনি পেছনে তাকালেন। আমি বললাম: আল্লাহর রসূল, আমার মায়ের পুত্র আলী বিন আবু তালিব ফুলান বিন হুবায়রাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এদিকে আমি ফুলানকে আশ্রয় দিয়েছি। এই কথা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন: ও উম হানী, আমরাও তাকে রক্ষা করব যাকে তুমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। উম হানী বললেন তখন ছিল পূর্বাহ্ণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৫; অনুবাদ লেখকের)
এই সব হাদিসগুলো খুবই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। মুহাম্মদ সেদিন কয়বার ভোরের নামায পড়লেন? মনে হবে একবারই। কিন্তু এখানে দেখতে হবে যে ফজরের পরের নামায হচ্ছে যুহা বা দুহার নামায যা সধারণতঃ দুপুরের নামায। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফজর এবং যুহার নামাযের মাঝে অন্য নামায বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু মুহাম্মদ তার ব্যতিক্রম করলেন। তিনি সূর্য উঠার আগে নিজের তাঁবুতে ফজরের নামায পড়লেন। উম হানীর সাথে আশ্বাসের কিছু কথাবার্তা করলেন। তারপর সূর্য উঠে গেলে উম হানীর গৃহে গেলেন পরিস্থিতি অবলোকনের জন্য। এই সময়টাকে চাশতের সময় বলা হয়। এই সময়ের নামাজকে চাশতের বা পূর্বাহ্ণের নামায বলা হয়। চাশত কয়টার সময় তার সদুত্তর আমি পাইনি। অনুমান করা যেতে পারে সময়টা মধ্যাহ্নের আগে—খুব সম্ভবত: সকাল আট থেকে দশটা হবে। ধরা যাক সকাল নয়টা। এই সময় নবী উম হানীর গৃহে আসলেন। আবার গোসল করলেন এবং আবার আট রাকাত নামায পড়লেন—কিন্তু খুব দ্রুত ভাবে। এই ব্যাপারটা খোলাসা হয় এই হাদিসে।
আবদুল্লাহ বিন হারিস বিন নৌফল বর্ণনা করলেন: আমি এক ব্যাপারে অনেককেই জিজ্ঞাসা করছি। আল্লাহর রসূল কি পূর্বাহ্ণের নামায আদায় করেছেন? কিন্তু আবু তালিবের কন্যা উম হানী ছাড়া কেউই এ ব্যাপারে জানাতে পারে নাই। উম হানী বললেন: মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল (স.) আমাদের গৃহে আসলেন। তখন সূর্য যথেষ্ট উঠে গেছে। এক টুকরা কাপড় দিয়ে উনার নিভৃতে গোসল করার ব্যবস্থা করা হল। উনি গোসল করলেন এবং নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হলেন। আট রাকাত নামায পড়লেন। আমি ঠিক বলতে পারিনা উনার রুকু এবং সিজদা কি একই সময়ের ছিল কি না। উম হানী আরও বললেন: এর আগে আমি উনাকে আর কখনো এই নফল (ঐচ্ছিক) নামায পড়তে দেখি নাই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৪; অনুবাদ লেখকের)
উপরের হাদীসে বুঝা গেল নবী একবারই চাশতের নামায পড়েছিলেন এবং তা করেছিলেন উম হানীর গৃহে। একমাত্র উম হানীর জন্যই মুহাম্মদ তাঁর নামাযের ব্যতিক্রম করলেন; একমাত্র উম হানীর জন্যই নবী মুহাম্মদ প্রাত্যুষে দুইবার গোসল করলেন। উম হানিই করলেন নবীর গোসলের ব্যবস্থা।
আমরা আগেই দেখেছি উম হানী মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। তাঁর স্বামীও উম হানীর সাথে থাকতেন না। তবে উম হানী তাঁর দুই দেবর বা ঐ ধরণের দুই আত্মীয়কে আশ্রয় দিচ্ছিলেন। অনুমান করা যায় যখন নবী উম হানীর গৃহে আসলেন তখন উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন।
সব শেষে আল ওয়াকেদীর কিতাব আল মাঘহাযি বই থেকে:
মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানীর দুই দেবর তাঁর গৃহে আশ্রয় নেন। সেই সময় উম হানীর স্বামী গৃহে ছিলেন না।
তারা বলল: উম হানী বিন আবু তালিব বিবাহ করেন হুবায়রা বিন আবি ওহব আল মাখযুমিকে। মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানীর দুই দেবর আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিইয়া আল মাখযুমি এবং আল হারিস বিন হিশাম উম হানীর কাছে এসে নিরাপত্তা চাইল। তারা বলল: “আমরা কি আপনার কাছে নিরাপদ থাকব?” উম হানী উত্তর দিলেন; “হাঁ, আপনারা আমার নিকট নিরাপদেই থাকবেন।” উম হানী আরও বললেন: “তারা দুজন আমার কাছেই ছিল, এমন সময় আমি দেখলাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত আলী ধীরে ঘোড়ায় চড়ে আমার গৃহে ঢুকলেন। বর্মে ঢাকা থাকার জন্য আমি আলীকে চিনতে পারি নাই। আমি বললাম; “আমি হচ্ছি নবীর চাচার কন্যা।” তারপর আলী তাঁর মুখ দেখালেন। আমি তখন তাঁকে দেখে বলে উঠলাম: “এ যে আলী, আমার ভাই!” আমি আলীকে অভ্যর্থনা জানালাম এবং আলিঙ্গন করলাম। কিন্তু আলী ঐ দুই ব্যক্তির দিকে তাকালেন আর তরবারি উঁচিয়ে নিলেন। আমি বলে উঠলাম: “এরা আমার নিজের লোক। তুমি এদের প্রতি নির্দয় হবে না।” তারপর আমি ঐ দু’জনের দিকে একটা জামা ছুড়ে দিলাম। তখন আলী বললেন: “তুমি কি অবিশ্বাসীদের আশ্রয় দিয়েছ?” এর পর আমি আলী ও তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম: “আল্লাহর কসম, তুমি যদি এদেরকে হত্যা করতে চাও তবে আমাকে দিয়ে শুরু কর।” উম হানী বললেন: “তখন আলী বাইরে চলে গেলেন, আর আমি তৎক্ষণাৎ গৃহে তালা লাগিয়ে দিলাম আর ওদেরকে বললাম: “তোমরা ভীত হবে না।”’ (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪০৮-৪০৯)
জীবন বাঁচাবার জন্য উম হানীর স্বামী হুবায়রা পালিয়ে গেলেন নাজরানে এবং সেখানেই থেকে গেলেন। উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন। মক্কা বিজয়ের পর হুবায়রা যখন এই সংবাদ জানলেন তখন বললেন: (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪১৭) [এখানে আল ওয়াকেদী হুবায়রার লেখা এক দীর্ঘ কবিতা দিয়েছেন—যা ইবনে ইসহাক এবং তাবারির উদ্ধৃত কবিতার মতই।]
আল ওয়াকেদী লিখেছেন হুবায়রার সাথে তাঁর এক সঙ্গীও নাজরানে চলে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই সে মক্কায় ফিরে আসে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। হুবায়রা অনেক কাকুতি মিনতি করেছিলেন ঐ সঙ্গীকে মক্কায় না ফিরে যাবার জন্য এবং পৈতৃক ধর্ম পরিত্যাগ না করার জন্য। কিন্তু হুবায়রার সঙ্গী তাঁর সাথে প্রতারণা করে।
অনুমান করা যায় মনের দুঃখে হুবায়রা উম হানীর স্মৃতিচারণ করে বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছিলেন। এর পর কিছু সময়ের ব্যবধানে, নিতান্ত একাকীত্বের মাঝে হুবায়রা মারা যান। উম হানী হয়ে যান বিধবা।
মনে রাখা দরকার, হুবায়রার স্বামী কোনদিনই তাঁর স্ত্রী উম হানীকে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ দেন নাই।
নবী বিজয়ী হলেন, সমগ্র আরব জাতীকে ইসলামের পদানত করলেন। উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন, নবীর বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু নবী পারলেননা উম হানীকে উনার স্ত্রী বানিয়ে হারেমে তুলে নিতে।
উপসংহার
এই রচনা পড়ে আমরা নিম্নের কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিতে পারি।
১) নবী মুহাম্মদ উনার চাচাত বোন উম হানীকে বাল্য এবং কৈশোর থেকেই ভালবাসতেন। নবী তাঁর এই প্রথম প্রেম কোনদিনই ভুলেন নাই।
২) আবু তালেব যখন যুবক মুহাম্মদ কর্তৃক উম হানীকে বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তখন মুহাম্মদ অতিশয় নিরাশ এবং অপমানিত বোধ করেন। এই অপমানের জ্বালা মুহাম্মদ কখনই ভুলেন নাই। হয়ত প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবণতাও তাঁর মধ্যে ছিল। মুহাম্মদ নবূয়ত লাভের পর এই প্রতিশোধ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হয়ে উঠে। অনুমান করা যায় নবীর আগ্রাসন এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার অন্যতম কারণ উম হানীর সাথে নবীর ব্যর্থ প্রেমেই নিহিত আছে। এটা বলা অতিশয় হবেনা যে আবু তালেব উম হানীকে (হিন্দকে) ভেড়ার পালের রাখাল, নিরক্ষর, বেকার মুহাম্মদের হাতে তুলে দিলে ইসলামের জন্ম হত না।
৩) খদেজাকে বিবাহের পরেও নবী উম হানীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন, যদিও অনুমান করা যায় যে ধনকুবের খদিজার বিবাহের অন্যতম শর্ত ছিল যে তাঁর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ অন্য স্ত্রী নিতে পারবেন না। খদেজা হয়ত মুহাম্মদের পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না। নবী অতি কৌশলে তাঁর পরকীয়া প্রেম খদেজার কাছ থেকে গোপণ রেখেছিলেন।
৪) মুহাম্মদ উম হানীর স্বামী হুবায়রাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন, এবং চিরজীবন তাকে পথের কাঁটা হিসাবে ভেবেছেন।
৫) উম হানীর স্বামী হুবায়রা কোন দিনই মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার করেন নাই, ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। নির্বাসন, একাকীত্ব বেছে নিয়েছেন—কিন্তু মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন নাই।
৬) উম হানীর স্বামী সর্বদায় ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলেন। বিভিন্ন যুদ্ধে যোগদান করেছেন, মুসলিম সৈন্য হত্যা করেছেন এবং নিজেও আহত হয়েছেন।
৭) উম হানী এবং মুহাম্মদের সাক্ষাত ছিল খুবই ঘন ঘন—বিশেষত্ব হুবায়রার অবর্তমানে। এর কারণ এই হতে পারে যে কাবার যেখানে মুহাম্মদ নামায পড়তেন অথবা কোরান আবৃত্তি করতেন তা ছিল উম হানীর গৃহের অতি নিকটে—শ্রুতির দূরত্বের মাঝে।
৮) মুহাম্মদ শত চেষ্টা করে—এমনকি আল্লাহর কাছ থকে বার্তা আনিয়েও পারেন নাই উম হানীকে মদিনায় নিয়ে গিয়ে উনার হেরেমে ঢুকাতে। উম হানী তাঁর স্বামী থেকে দূরে থাকলেও কখনই তাঁর স্বামী হুবায়রাকে ছাড়েন নাই।
৯) হুবায়রার পরিবার পরিজনের প্রতি উম হানীর যথেষ্ট দরদ ছিল। তার প্রমাণ দেখা যায় যখন উম হানী আশ্রয় দিলেন তাঁর দুই দেবরকে। আলী চেয়েছিলেন এই দুই দেবরকে হত্যা করতে।
১০) নবীর জীবনে যদি কোন ব্যর্থতা থেকে থাকে তা হবে উম হানীকে উনি তাঁর অগুনতি স্ত্রীর মধ্যে একজন বানাতে পারেন নাই। উম হানী কখনও চান নাই অন্য সতীনদের সাথে মুহাম্মদের সংসারে ঢুকতে।
সমাপ্ত।
সূত্র:
- Ali, Abdullah, Yusuf, The Holy Qur’an: Translation and Commentary. Amana Corp., Brentwood, Maryland, 1983.
- Al Waqidi, Muhammad b. Umar. Al Waqidis’s Kitab al Maghazi. The Life of Muhammad. Translated by Rizwi faizer, Amal Islmail and AbdulKader Tayeb. Edited by Rizwi Faizer. Published by Routledge. 2 Park Square, Milton Park, Abingdon, Oxon , OX14 4RN. 2011. ISBN 978-0-415-57434-1 (bbk).
- al-Hilali, Muhammad Taqi-ud-Din (Dr) and Dr Muhammad Muhsin Khan. The Noble Qur’an Transliteration in Roman Script And English Translation of the Meanings. Darussalam Publishers, Riyadh, Saudi Arabia, 1996. [The internet version of the English translation by these two modern translators can be read at: [ http://www.witness-pioneer.org/vil/ ]
- al-Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir, The Victory of Islam, vol. viii. Translated by Michael Fishbein. State University of New York Press, Albany, 1997. ISBN 0 7914 3150-9
- al-Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir. The Last Years of the Prophet, vol. ix. Translated by Ismail K. Poonwala. State University of New York Press, Albany, 1990. ISBN 0-88706-692-5.
- Ibn Ishaq, Muhammad b. Yasr. Sirat Rasul Allah. Translated in English by A. Guillaume. First published by Oxford University Press, London in 1955. Fifteenth reprint by Oxford University Press, Karachi, Pakistan, 2001.
- Ibn Sa’d, Abu Abd Allah Muhammad. Kitab al-Tabaqat, vol i. Translated in English by S. Moinul Haq, Kitab Bhavan, 1784, Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi, India, 1972.
- Imam Hafiz Abu ‘Eisa Mohammad Ibn ‘Eisa At Tirmidhi, Jami’ At Tirmidhi (vol. 1-6), Tr. Abu Khaliyl, Final review by Islamic Research Section Darussalam, Darussalam, P.O. Box 22743, Riyadh 11416, Saudi Arabia, First Ed. November 2007
- Ibn Musa al-Yahsubi, Qadi ‘Iyad. Ash-Shifa. Tr. Aisha Abdarrahman Bewley. Medina Press, P.O. Box 5531, Inverness IV5 7YA, Scotland, UK, fifth print 2004.
- Haykal, Muhammad Husayn. Life of Muhammad (PBUH). Translated by Isma’il Razi A. al-Faruqi. http://www.witness-pioneer.org/vil/Books/MH_LM/default.htm
- Lings, Martin. Muhammad his life based on the earliest sources. Inner Traditions International, One Park Street, Rochester, Vermont 05767, USA, 1983.
- Muir, William, with an Introduction to the reprint. The Life of Mahomet From Original Sources. Voice of India, New Delhi 110 002, Second Indian reprint: 2002. ISBN: 81 85990 76 X.
- Muslim, Abu al-Hussain b. al-Hajjaj al-Qushairi. Sahi Muslim. Translated in English by Abdul Hamid Siddiqui: [http://www.usc.edu/dept/MSA/fundamentals/hadithsunnah/muslim/ ]
- Rodinson, Maxine. Muhammad., Translated from French by Anne Carter. First published in 1971; The New York Press publication, 2002.
- Shafii, Mufti Muhammad. Qura’nul Karim Tafsir Maariful Quran. Translated in Bengali by Muhiuddin Khan. Medina Publications, 38/2 Banglabazar, Dhaka, Bangladesh. Volumes I and II. 2004. ISBN: 084-8367-60-2. http://www.banglakitab.com/
- Walker, Benjamin. 2004. Foundations of Islam. Rupa & Co. New Delhi. First published in Great Britain by Peter Owen Publishers, 1998.
- Watt, Montgomery W. Muhammad At Mecca, published by: Ameena Saiyid. Oxford University Press, Plot No. 38, Sector, 15, Korangi Industrial Area, PO Box 8214, Karachi 74900, Pakistan. Sixth Impression 2006. ISBN 10: 0 19 577278 4.
- Watt, Montgomery W. Muhammad At Medina, published by: Ameena Saiyid. Oxford University Press, Plot No. 38, Sector, 15, Korangi Industrial Area, PO Box 8214, Karachi 74900, Pakistan. Sixth Impression 2004. ISBN : 0 19 577307 1.
- তাফসীর ইবনে কাসীর; ড: মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান অনুদিত। http://islamiboi.wordpress.com/tafsir-ibn-kathir-in-bangla/
- বুখারী শরীফ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনুদিত ও প্রকাশিত। http://islamiboi.wordpress.com/sahih-bukhari-in-bangla/
- বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা; মাওলানা আজিজুল হক সাহেব; মহাদ্দেছ জামিয়া কোরআনিয়া, লালবাগ ঢাকা কর্তৃক অনুদিত; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; ৬৫, চক সারকুলার রোড, ঢাকা-১১। http://www.banglakitab.com/
- আল্লামা জালালুদ্দিন আবদুর রহমান সিয়ুতী (রাহঃ);খাসায়েসুল কুবরা; অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দিন খান; মদীনা পাবলিকেশান্স; ৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০; ফেব্রুয়ারি: ১৯৯৯। http://www.banglakitab.com/