০
১৪৮৭ বার পঠিত
একদিন এক বটতলায় বসে এক বৃদ্ধ ফকির আক্ষেপ করে, অত্র অঞ্চলে কেবল কৃষকেরাই সুখি। নিজের ভাত নিজে জোগাড় কইরা খায়। ভিক্ষা কইরা খায়না।
এক প্রৌঢ় ফকির বলে, আমরা কৃষিকাজ করিনা ক্যারে!
আরেক প্রৌঢ় ফকির ধমক দেয়, চুপ কর। খবরদার কাম কইরা খাওনের কথা কবিনা।
এক দার্শনিক প্রকৃতির ফকির বলে, কী হবে আর কাজ করে; দু’দিন পর তো যাবোই মরে।
গল্পটির অডিওপাঠ শুনুন এখানে:
https://www.facebook.com/nobojug.org/videos/1307997096042817/
এক অর্থনীতিবিদ প্রকৃতির ফকির হিসাব নিকাশ করে জানায়, ভিক্ষাবৃত্তিতেই মুনাফা বেশি। কৃষক তো শুধু নিজেরটা খায়, আর আমরা সবারটা খাই।
অর্থনীতিবিদের কথায় প্রবল অনুপ্রাণিত হয়ে এক যুবক ফকির বলে, ভিক্ষাটাই সর্বশ্রেষ্ঠ পেশা। আমরা ভিক্ষার অধিকার চাই।
এক রাজনীতিবিদ প্রকৃতির ফকির বলে, চলো মিয়ারা ভিক্ষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করি।
বটতলার একপাশে খুশিজল খেয়ে ঝিমাচ্ছিলো এক ডাকাত। সে আওয়াজ দিয়ে বলে, আমগো সঙ্গে নিও মিয়া। আন্দোলনে গতিবেগ হবে।
পরদিনই রাস্তায় আন্দোলনে নামে ফকিরেরা। তারা স্লোগান দেয়, ভিক্ষার অধিকার চাই; ফইন্নি-বান্ধব অর্থনীতি চাই।
রাস্তা অবরোধ করার পর মাতবর সাহেব ভিক্ষুক নেতাদের তার সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর দেয়।
কিছু ফকির আন্দোলনে গতিবেগ দেবার জন্য অনশন শুরু করে।
কৃষকদের গ্রামে বিষয়টা খুব আলোড়ন তোলে। কেউ কেউ চুক চুক করে বলে, আহারে যদি না খাইয়া মানুষগুলি মইরা যায়! কী হয় তাগো একটু ভিক্ষা দিলে।
ফকিরদের প্রতিনিধিদল মাতবর সাহেবের কাছে তাদের কয়েক দফার দাবি পেশ করে।
–ভিক্ষাবৃত্তিকে মর্যাদা দিতে হবে। এজন্য ফকিরদের মাতবরির সুযোগ দিতে হবে, এলাকা উন্নয়নের জন্য ভিক্ষুকদের মাঝ থেকে প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। এলাকার নিরাপত্তার জন্য ভিক্ষুকদের মাঝ থেকে পুলিশ ও সৈনিক নিয়োগ করতে হবে। সর্বোপরি ফকিরানুভূতির রক্ষাকবচ চাই।
ওদিকে ডাকাত দলের সর্দার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কাগজি লেবুর শরবত খাইয়ে ফকিরদের অনশন ভাঙ্গায়।
এতোসব ঘটনা যখন ঘটছে; তখন কৃষকেরা ব্যস্ত কৃষিকাজে।
এক ঠিকাদার প্রকৃতির ফকির মাতবর সাহেবকে প্রস্তাব দেয়, আপনার জন্য একটা বালিশ প্রয়োজন। সরবরাহের কাজটা আমারে দেন মাতবর।
অর্থনীতিবিদ প্রকৃতির ফকির বলে, খরচাপাতি আমরাই জোগাড় করবো আপনি একদম ভাববেন না।
মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে নবনিযুক্ত প্রশাসক ফকির ও পুলিশ ফকির ঘোষণা করে, জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে বালিশ লাগবে। আপনারা সবাই পাঁচ মন করে ধান দেবেন বালিশ-তহবিলে।
কৃষকদের মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানাতে গেলে ঠিকাদার প্রকৃতির ফকিরেরা ভয় দেখায়, আগে তো পুলিশ ছিলো না; এখন পুলিশ হইয়েছে। যা কইরবেন ভেইবেচিন্তে করবেন।
ফকির নেতা, প্রশাসক, ঠিকাদার, পুলিশ এদের সবাইকে একটি করে বালিশ উপহার দিয়ে খুশি রাখার প্রস্তাব দেয়, ডাকাত ফকির। কন্ঠভোটে এ প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়।
ফকিরানুভূতির মর্যাদা রক্ষায় ফকির প্রকৃতির অর্থনীতিবিদ বলে, অত্র এলাকার উন্নয়নের যে গতি সঞ্চার হয়েছে তা আগের সেই কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ফসল নয়। এ হচ্ছে, “ফইন্নির ঘরের ফইন্নির” অর্থনীতির জাদু।
উন্নয়নের জোয়ারে ফকিরদের ঘরে ঘরে বিজলি বাতি আর টেলিভিশন এসে যায়। টেলিভিশনের আগমনে এলাকার ফকির পরিবারগুলোর পোশাক ও ফ্যাশানে স্মার্টনেস এসে যায়।
বিকশিত হয় খুব স্মার্ট ফইন্নিশীলতা। ফইন্নির পুতেরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে বেড়ায়, স্মার্ট হও, ঠিক কাজটি করো।
কৃষকের ছেলেমেয়ে তাদের কৃষক পিতাকে জানিয়ে দেয়, আর কৃষিকাজ নয়; আমরা ফইন্নি হতে চাই।
দার্শনিক ফকির ঘোষণা করে, এই পৃথিবীটাই সব নয়; এখানে যা করছো তার জবাব দিতে হবে পরকালে।
ফইন্নিসমাজ কৃষককে ঠকিয়ে খাওয়ার অপরাধ বোধ থেকে দলে দলে প্রার্থনায় মিলিত হয়।
ফকির সমাজের স্মার্ট ফইন্নিশীলতা বনাম অস্মার্ট পরকালশীলতার ঝগড়া শুরু হয় পাতকুয়োতলাগুলোতে। তাদের যেহেতু কাজ করে খেতে হয় না; তাই কৃষকের কান্না কানে যায় না। ফইন্নিশীলতা বড় নাকি পরকালশীলতা বড় এই কবির গানে দিন যায় রসেবশে।
পরকালশীলরা ফইন্নিশীলদের ধমক দেয়, অই প্রার্থনায় দেহিনা ক্যান; একদম কল্লা নামায়ে দেবো।
ফইন্নিশীলরা পরকালশীলদের ধমক দেয়, অই টাকনু ওপর প্যান্ট পরছত ক্যান। তুই তো সন্ত্রাসী।
ওদিকে কৃষকের জীবন বিপন্ন। বালিশ কর দিতে দিতে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত।
মধ্যস্বত্বভোগী ফকির বলে, কৃষকেরা ঠিক মতো ধান শুকাতে জানে না। বরং বাইরে থেকে চাল আমদানি করলে; প্রতিদিন এদের এতো ঘ্যানর ঘ্যানর শুনতে হয় না।
কৃষক ‘পাঁচমন ধানের মূল্যে’ একটি বালিশ একটি সুখনিদ্রা প্রকল্পের মধ্যস্বত্বভোগী ফকিরদের বিলাসী জীবন; আর কৃষকের দরিদ্র থেকে হতদরিদ্র হওয়া জীবন দেখে, নিজের পাকা ধানে নিজে মই দেয়, নিজের পাকাধানে নিজে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মধ্যস্বত্বভোগী ফকির চ্যালেঞ্জ করে, ধানক্ষেতে আগুন দেয়া একটা ষড়যন্ত্র।
আরেক মধ্যস্বত্বভোগী ফকির বোঝায়, আরে বাবা উন্নয়ন হয়েছে জন্যই ‘পাঁচমন ধানের মূল্যে’ একটি বালিশ একটি সুখনিদ্রার দিবানিশি এসেছে।
ভাবমূর্তি ফকিরেরা চুক চুক করে বলে, ধান ক্ষেতে আগুন দেয়াটা এলাকার ভাবমূর্তির খুব ক্ষতি করলো।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন