০
৯৫৬ বার পঠিত
একটা জানা ‘জোক’ দিয়ে শুরু করি। সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠিন শাসনকালে একজন রেড স্কোয়ারে পোস্টার লাগাচ্ছিলেন। কোন লেখা ছাড়া সাদা পোস্টার। কঠিন শাসনে সবসময়ই পোস্টার লাগানোটা অপরাধ। যদি তা গুনকীর্তন ছাড়া হয়। সে অনুযায়ী যে পোস্টার লাগাচ্ছিলেন তাকে আটক করে কেজিবি আধিকারিকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। সেই আধিকারিক বেচারা প্রশ্ন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে উঠলেন, তবু কোনো উত্তর পেলেন না। শেষ পর্যন্ত বললেন, শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দাও, তোমার পোস্টার সাদা কেনো, কিছু লেখা নেই কেনো? উত্তরে যিনি পোস্টার লাগাচ্ছিলেন তিনি বললেন, সবাইতো সব কিছু জানেই, এতসব ধরবেও না এই পোস্টারে, তাই লিখিনি।
একজন বললেন, ভাই মশা মারতে কামানদাগা হচ্ছে। পুকুরখনন শিখতে যাওয়া হচ্ছে নেদারল্যান্ড। পানি নিষ্কাশন বিষয়ে জানতে যেতে হচ্ছে উগান্ডা। উগান্ডা কি আমাদের থেকে এগিয়ে? ক্যামেরা বিষয়ে আলোচনা করতে যেতে হয় জার্মানি। আরো কত কী। ভাই লিখেন না কেনো?
আরেকজন বললেন, ভাই বালিশ কিনতে সাত হাজার, বইয়ে লাগে হাজার আশি, পর্দা কিনতে সাইত্রিশ লাখ। শনৈ শনৈ বাড়ে মেগা প্রজেক্টের টাকার অংক। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খরচে রাস্তা বানাই, অথচ টিকে সবচেয়ে কম। এক দায়িত্বশীল বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে রাস্তা নষ্ট হলে দায়িত্ব ঠিকাদারের। ঠিকাদাররা চেপেচুপে বলেন, ভাগ বাটোয়ারা বাদ দেন রাস্তা ঠিকই টিকবে। রেললাইন তৈরির খরচ দেখে চক্ষু হয় চড়কগাছ। ফ্লাইওভারের বাজেটে মাথার চুল সব ফ্লাই করে। এসব নিয়ে লিখেন না কেনো?
ভারতের চন্দ্রযান-২ এর জন্য খরচ হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার মতন। আমাদের বিটিভি’র উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ঊনিশ’শ কোটির কাছাকাছি। ভাই বলেন তো, চাঁদ বড় না আমাদের বিটিভি? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চুপতায় প্রশ্নকর্তা রাগত স্বরে বলেন, লিখেন না কেনো?
যে দেশে বড়লোক শিল্পীরাও দুঃস্থ হয়ে যান। চেক গ্রহণের ছবির পোজ দেন কাগজের জন্য। বিপরীতের নব্বই বছরেও ভাতা না পাওয়া বৃদ্ধা, স্বামীহীন, সন্তান কর্তৃক পরিত্যাক্তার ছবিও প্রকাশ করে মাধ্যমগুলো। এই যে চরম বৈপরিত্য, এসব বিষয়ে লিখেন না কেনো?
একদিকে বস্তিতে বিপন্ন জীবন, অন্যদিকে ‘স্কাই স্ক্র্যাপার’। একদিকে আগুনে পোড়ে গরিবের ঘর, অন্যদিকে পাঁচতারায় আগুনরঙ্গা গ্লাসে ঠোকাঠুকি। ‘গাল্লি বয়’ রানা গানে বলে, ‘শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে, আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে।’ রাস্তা থেকে উঠে আসা দরিদ্র একটি ছেলে বুক ফুলিয়ে গাইতে পারে, আপনারা লিখেন না কেনো?
এতসব ‘রোষিত’ প্রশ্নের উত্তরে কী বলবো। বলবো কি, অনেকে লিখেন না, প্রাপ্তির ‘খুশিতে’। অনেকে যান ‘ঘোরতে’। অনেকে লিখেন না, ‘ঠেলায়’। অনেকে বাধ্য হয়েই নিচের ‘জোক’টা উৎসর্গ করেন যারা জিজ্ঞাসা করেন তাদের উদ্দেশ্যে। নাকি আত্মরক্ষার্থে আওড়ান, ‘সাদা পোস্টার কিন্তু অনেক কিছুই বলে যায়, নিরবতাও অনেক সময় হিরণ্ময় হয়।’
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন