০
১৩০৯ বার পঠিত
“কচুরিপানাকে মানুষের খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় কী না”- এ
নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষিতে গরু-সমাজে একটি মিশ্র-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গরু সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, মানুষের প্রচলিত খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এখন গরুর খাবারে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে। এটা অগ্রহণযোগ্য। আবহমান কাল ধরে গরু ঘাস খায়, বিশেষ দিনগুলোতে ইমপ্রুভড ডায়েট হিসেবে কচুরিপানা খায়। এই খাদ্যাভাস আমাদের গরু-সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। কাজেই আমাদের খাদ্য-সংস্কৃতিতে কোনরকমের আগ্রাসন বরদাশত করা হবে না।
গরু সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রতিবেশি দেশে গরু যখন আধার-কার্ড পাচ্ছে; গার্ড অফ অনার পাচ্ছে; তখন আমাদের তেমন কোন সুযোগ সুবিধা তো বাড়ানো হচ্ছেই না; উপরন্তু আমাদের প্রিয় খাদ্য কচুরিপানা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবার ষড়যন্ত্র চলছে।
গরু হিতৈষী জোটের সভাপতি দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, গরু যদি কচুরিপানা খেতে পারে; মানুষও পারবে। কারণ সময়ের পরিক্রমায় গরু এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। মানুষ এখন সংখ্যালঘু। এই সংখ্যালঘুদের কচুরিপানা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। তাছাড়া গবেষণার মাধ্যমে কচুরিপানার পুষ্টিগুণ বাড়ানো গেলে গরু ও মানুষ উভয়েই উপকৃত হবে।
গরু হিতৈষী জোটের সাধারণ সম্পাদক তার এক বিশ্লেষণে জানান, জাপানে ভাতের ওপর শ্যাওলার সবুজ যে প্রলেপ থাকে; তা কচুরিপানার মতোই মহার্ঘ খাদ্য। অধিকাংশ মানুষই অযথা প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কৌতুক করে। গো-খাদ্য বলে কচুরিপানা খাওয়া যাবে না; এ বড্ড বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব। গরুকে সমগোত্রীয় ভাবতে চেষ্টা করুন।
গরু সমাজের এক চিন্তাকামান টকশোতে খাদ্য হিসেবে কচুরিপানার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন, অনেকদিন ধরেই গরু এবং মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক সাযুজ্য রচিত হয়েছে। গরুরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা যে কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্ষম। সৌভাগ্যক্রমে গরুদের প্রতিনিধিত্ব জোরদার হবার পর মানুষের গরুর প্রতি উন্নাসিকতার অবসান ঘটতে চলেছে। সবাই মিলে কচুরিপানা খেয়ে আমরা দীর্ঘদিনের মানসিক বৈষম্য নিরসন করতে পারি। আর আমি যখন জাপানে ছিলাম, তখন প্রতিদিনই কচুরিপানা জাতীয় সামুদ্রিক শ্যাওলা খেয়েছি। জাপানিদের আইকিউ কেন এতো বেশি তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। কচুরিপানা গোত্রের খাদ্যই জাতির মেধাকে শাণিত করে।
গরু-সমাজের একজন মোটিভেশনাল স্পিকার এক ভিডিও ব্লগে বলতে থাকেন, বি পজিটিভ, কে কী বললো সে শোনা কথায় কান দেবেন না। কচুরিপানা দিয়ে তৈরি নানারকম খাদ্যের স্টার্ট-আপ দিয়ে আপনিও হতে পারেন উদ্যোক্তা। আর চাকরি করবেন কেন! আপনি চাকরি দেবেন। আমাদের সমাজের সমস্যা হলো আউট অফ বক্স কোন কথা শুনলেই তাদের মাথা গরম হয়ে যায়। ভেবে দেখুন কচুরিপানাকে পুষ্টিগুণে ভরপুর করলে আর কোন খাদ্যেরই দরকার পড়বে না। আর কাঁঠালকে গবেষণার মাধ্যমে আকারে ছোট করা গেলে দেশের চাহিদা-পূরণ করে ক্যানাডা-মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে রপ্তানি করা যাবে। গবেষণা শব্দটি এসেছে গো এষণা থেকে। গরুসমাজের তাই গবেষণা বিমুখ হওয়া অন্যায়।
গরু সংগ্রাম পরিষদের এক চিন্তাকামান কচুরিপানার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সমালোচনা করে বলেছেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগে সব-খাদ্যেই বিষ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন নির্বিষ কচুরিপানার দিকে নজর পড়েছে খাদকদের। বিরিয়ানি-বার্গার খেয়ে ওজন বাড়িয়ে যারা জিম আর ডায়েট করে এখন ওজন কমাতে চায়; তাদের প্রধান-খাদ্য হয়ে দাঁড়াবে কচুরিপানা। আর আমরা কী না খেয়ে থাকবো! যে ভাবেই হোক এই অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন