১৩০৩ বার পঠিত
শব্দ বস্তুটা কী?
শব্দ একটা শক্তি যা সম্পূর্ণ আমাদের দৃষ্টির বাইরে থাকে। আলোক যেমন একটা শক্তি কিন্তু সেটা আমরা শুধুমাত্র দৃষ্টির মাধ্যমে বুঝতে পারি। শব্দ চলতে পদার্থের অণু পরমাণুর মাধ্যম দরকার হয়।
আলোক চলতে কোন মাধ্যম দরকার হয় না।
শব্দ কীভাবে উৎপন্ন হয়?
শব্দ উৎপন্ন হবে যদি কোন পদার্থে (বায়বীয়,শক্ত,অথবা তরল) তরঙ্গ (ঢেউ) উৎপাদন করা যায়। যখন কোন পদার্থে শক্তি প্রয়োগ করে তরঙ্গ উৎপাদন করা হয় তখন সেই তরঙ্গ আমাদের চতুর্পাশের বায়ু মণ্ডলেও তরঙ্গের সৃষ্টি করে এবং সেই তরঙ্গ চতুর্পাশের বায়ু মণ্ডলেও ছড়াতে থাকে। যেমন ধরুন আপনি একটি পকুরে একখণ্ড পাথর ছুঁড়ে মারলেন। তখন দেখতে পাবেন ওই আঘাতের কারণে পানিতে একটি তরঙ্গ উৎপন্ন হয়ে তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
ঠিক একইভাবে আপনি একটি ড্রামের চামড়ায় আঘাত করলে একটি তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে।
ড্রামের চামড়ায় লাঠির আঘাত করলে কীভাবে বায়ুমণ্ডলে শব্দতরঙ্গ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে তা এখানে ক্লিক করে দেখুন।
একটি তরঙ্গের সর্বোচ্চ চূড়া হতে পরবর্তী তরঙ্গের সর্বোচ্চ চুড়ার দূরত্বকে Wave Lengh বলে।
শব্দ তরঙ্গের গতি কত?
শব্দতরঙ্গের গতি, কী ধরনের মাধ্যম, কী রকম তাপ মাত্রা ও মাধ্যমের ঘনত্বের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হয়।
পৃথিবীর সমুদ্র পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শব্দের গতিবেগ ৭৬১.২ মাইল/ঘণ্টা
লক্ষ করুন শব্দতরঙ্গ কীভাবে আমাদের কর্ণকুহরে ঢুকছে।
এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে, শব্দতরঙ্গ কোন পদার্থের (বায়বীয়, শক্ত, অথবা তরল) মাধ্যমের অণু বা পরমাণু ছাড়া কোন তরঙ্গ উৎপাদনও করতে পারবেনা ও চলতেও পারবেনা।
কিন্তু আলোক বা Radiation চলার জন্য কোন পদার্থের মাধ্যম দরকার হয় না।
এ কারণেই আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠের ৩০০ মাইল ওপরে যেখানে কোন বায়ুমণ্ডল নাই সেখানে আমরা পৌছালে আমাদের একজনের মুখের কথা আর একজনকে শুনতে পারি না।
এসব ক্ষেত্রে মহাশুন্য বিজ্ঞানীগণ Radio Headphone ব্যবহার করে মহাশুন্য (Space Station) এর বাইরে পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন ও কাজ-কর্ম করে থাকেন। Space Station এর ভিতরে প্রয়োজনীয় বায়ুর ব্যবস্থা রয়েছে।
উপরের চিত্রে দেখলেন কীভাবে শব্দতরঙ্গ আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে।
আচ্ছা, তাহলে কী আমরা এখনি শব্দটি শুনে ফেললাম? নাহ মোটেই তা নয়।
শব্দকে আমাদের শুনতে ও বুঝতে এই বায়বীয় তরঙ্গকে বিদ্যুৎতরঙ্গে রূপান্তরিত করে Auditory Nerve নামক স্নায়ুর মধ্য দিয়ে মস্তিকের Temporal Lobe এর শ্রুতিকেন্দ্রে (Auditory Center) পৌঁছাতে হবে।
এরপর মস্তিস্কের একটা বিশেষ অংশ এটা বিবেচনা করে রায় দিবে, এই শব্দটার কী তাৎপর্য। এটা কী একটা বাঘের আওয়াজ নাকী এটা একটা সুমধুর গানের আওয়াজ?
এটা কী আপনার শত্রুপক্ষের আওয়াজ নাকী আপনার মিত্রপক্ষের আওয়াজ?
মানুষের কান একটি নির্দিষ্ট মাপের শব্দ তরঙ্গ ধরতে সক্ষম, তার বাইরে সে ধরতে পারেনা। তাই মানুষ সব শব্দ শুনতে সক্ষম নয়। আবার একটি কুকুর যা শুনতে পারে মানুষ তা শুনতে পারে না।
কিন্তু কথা হল, শব্দের এই বায়বীয় তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত করে কে?
নাকী একেবারে ম্যাজিকের মতো বায়ু তরঙ্গ বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রুপান্তরিত হয়ে যায়?
নাহ, এখানে ম্যাজিক বলে মোটেই কিছু নেই।
আমাদের কর্ণই একমাত্র সেই যন্ত্র, যে এই বায়বীয় তরঙ্গকে তার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করিয়ে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরিত করে মস্তিষ্কের শ্রুতি কেন্দ্রে (Auditory Center) এ পাঠিয়ে থাকে।
কর্ণের এই কাজটুকু সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন করার জন্য ৩টি অংশ রয়েছে, যেমন–
১) বহি কর্ণ (EXTERNAL EAR)
২) মধ্য কর্ণ (MIDDLE EAR)
৩) আভ্যন্তরীন কর্ণ (INNER EAR)
এখানে আগে ভাগে একটু বলে রাখা ভাল, আভ্যন্তরীণ কর্ণ দুই ধরনের কাজ করে, যেমন–
১) শ্রুতির কাজ, এখানে বাহির হতে আগত তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরিত করা হয়।
২) এর সংলগ্ন একটা অংশ শরীরের ভার সাম্য রক্ষার কাজ (BODY BALANCE) ও করে।
(২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০)
চলবে…
রেফারেন্স:
2) What Is the Speed of Sound?
3) Ear
4) Auditory & Vestibular Pathways
5) Two Kinds of Hair Cells in the Cochlea
6) Inner Ear
7) Hearing and Vestibular Sensation
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন