২১৯৭ বার পঠিত
ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রগতিশীলরা শাহ আব্দুল করিমরে লইয়া পড়ছে, হ্যাইডা আগেই কইছি, লেখছি। অহন আমাগো দেশে এক নতুন মামদোবাজী শুরু হইছে। আর হ্যাইডা হইলো ‘কলঙ্কিনী রাধা’ যে শাহ আব্দুল করিমের বান্ধা গান না, আর হ্যাই গানও তিনি গান নাই, অ্যাইডা প্রমানে উইঠা পইড়া লাগছেন আমাগো দেশেরই কিছু পাবলিক। ‘আমি চুরি করি নাই’ এই কথাডা হইলো ‘চুরি’ যে হইছে তার বড় প্রমান। অর্থাৎ আমাগো দেশের সংস্কৃতির পাইক-বরকন্দাজরা কইতে চাইতেছেন, দেব-দেবীরে গাইলানো হইছে ঠিক আছে, তবে সেইডা আমরা গাইলাই নাই। আমাগো দেশের ‘সংস্কৃতির রূপবান’গুলান সক্কলখানে এই কামডাই করে। না, বুইঝা, নয় মাল বা ফালের ধান্ধায় অন্যের কথারে জাস্টিফাইয়ের দায়িত্ব নিয়া ফালায়।
শাহ আব্দুল করিমের পরিবাররে দিয়া তারা অখন বয়ান দিওনের কাম নিছে। হ্যাগো মুখ দিয়া স্বীকার করাইছে, ‘গালিগালাজ’ করন হইছে তয় সেইডা আমাগো শাহ আব্দুল করিম করে নাই। আমরা অমুন কাম করতেই পারি না। এমুনটা কইতে হইবো কেন? জিগাই, কওনের কারণটা কী? শাহ আব্দুল করিম না কন, কেউতো কইছে, গানডা তো আর উইড়া আহে নাই! আর গান বান্ধলে বা গাইলেই দোষের কী হইছে!
আমাগো দেশের ‘সংস্কৃতির রূপবান’রা শুধু কওনের চেষ্টা করতাছেন, গানডা শাহ আব্দুল করিম বান্ধেন নাই কিংবা গান নাই। মূল কথাটা কওনের হিম্মত নাই। থাকলে এইডা যে রাধা রমণ দত্তের গান হ্যাইডা কন না কেন? যারা ‘গালিগালাজ’ এর প্রশ্ন উঠাইলো, হ্যাগো জিগান রাধা রমণ দত্ত কি নিজেগো দেব-দেবীগো গাইলাইতে পারেন কিনা। হ্যাইডা না কইয়া, চুরির কথা স্বীকার কইরা, নিজেগো সাধু সাজনের চেষ্টা কেন!
যাউক গা, কথা সেইটা না। কথা হইলো আমাগো সংস্কৃতির রূপবানগো জিগাই, পদাবলী পড়ছেননি? পড়লে বুঝতেন পিরিতির বর্ণনা কাহারে কয়। হ্যাগোর দোষ না হইলে রাধা রমণ বা শাহ আব্দুল করিমের দোষডা কী!
কৃষ্ণের মনজ্বালা একটু কই শোনেন…
‘যব গোধূলি সময় বেলি, ধনি মন্দির বাহির ভেলি ।
নব জলধর বিজুরি রেহা নন্দ পসারিয় গেলি ।।
ধনি অলপবয়সি বালা, জনু গাথনি পহুপ মালা ।
থোরি দরশনে, আস না পুরল, বাঢ়ল মদনজ্বালা ।।’
রাধার কথা কই একটু…
‘আধক আধ আধ দিঠি অঞ্চলে
যব ধরি পেখলুঁ কান ।
কত শত কোটী কুসুমশরে জরজর
রহত কি শত পরাণ ।।’
জ্ঞানদাসের এক লাইনতো সক্কলেই জানেন। ওই যে, ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।।’ এই অংশের পুরা বর্ণনাটা জানেন নিকি? যারা জানেন না, তাগো লাইগা দিলাম পইড়া দেখেন…
রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।।
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কাঁদে।
পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বাঁধে।।
সই কি আর বলিব।
যে পুনি কর্যাছি মনে সেই সে করিব।।ধ্রু।।
দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা।
দরশপরশ লাগি আউলাইছে গা।।
হাসিতে খসিয়া পড়ে কত মধুধার।
লহুলহু হাসে পহু পিরীতির সার।।
গুরুগরবিত-মাঝে রহি সখীরঙ্গে।
পুলকে পুরয়ে তনু শ্যাম-পরসঙ্গে।।
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার।
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার।।
ঘরের যতেক সভে করে কানাকানি।
জ্ঞান কহে লাজঘরে ভেজাইলুঁ আগুনি।।
এখন দেখেন দ্বিজ চন্ডীদাস কি কয়, আর কতখানি না কয়।
নাম-পরতাপে যার
ঐছন করিল গো
অঙ্গের পরশে কি বা হয় |
যেখানে বসতি তার
নয়নে দেখিল গো
যুবতী-ধরম কৈছে রয় ||
শেষমেশ চন্ডীদাসের ভাষায় রাধার সোয়ামী ‘আয়ান ঘোষে’র দুঃখ বয়ান করি…
সই! কেমনে ধরিব হিয়া?
আমার বঁধুয়া, আন বাড়ি যায়,
আমার আঙিনা দিয়া!
মাইনষে মাইনে সমাজ যে ‘অপযশ’ সোজা কথায় বদনাম করে হ্যাইডাও কইছে চন্ডীদাস। শোনেন তয় কি কইছেন তিনি…
যাহার লাগিয়া, সব তেয়াগিনু,
লোকে অপযশ কয়।
সেই গুণ নিধি, ছাড়িয়া পিরীতি,
আর জানি কার হয়?
অহন যদি রাধা রমণ দত্ত বা শাহ আব্দুল করিম সমাজের সেই কথারেই তাগো গানে বান্ধেন তয় দোষের কী! এই জিনিস হিন্দুত্ববাদী প্রগতিশীলগো বুঝাইবো কেডায়?
অখন কন, এইসকল কওনের পর, আর কি কিছু থাকে? থাকে না। না, বর্ণনা এইখানেই শেষ হ্যাইডা কই নাই। আরও মেলা বর্ণনা আছে। সবগুলি কওনের হিম্মত আমারও নাই। সব কথা কওনও যায় না। কওনের হিম্মত আছিল রাধা রমণগো, হ্যারা হইলো ‘রূপার পাত্র’ তাগো কুনো দোষ নাই। তারা বৈষ্ণব হইছেন যে। আর শাহ আব্দুল করিম বাউল হইলেও ধরা খাইছেন, ফাঁসছেন হুদা-হুদাই।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন