০
২২২২ বার পঠিত
করোনার বিষণ্ণ সাঁঝ। সামাজিক দূরত্বে সাদা চক দিয়ে আঁকা গোলচিহ্নের মধ্যে কলসি-জেরিক্যান রেখে এক জায়গায় বসে উকুন তোলা ও সাপলুডু খেলার আসর জমিয়েছে পুরবাসিনী। খোশগল্পের মধ্যে জরিনা বলে, হুনছোস নি জরিমন যারে বিয়া করছে সেই লোকের নাম; তার নাম বিশাল। হাহা হাহা বিশাল কোন নাম হইলোনি।
জরিমন কী বলেছে; তা না শুনেই উকুন তোলার ভবসখি আর সাপলুডু খেলার ভবসখারা অবজ্ঞার হাসিতে আটখানা হলে; কলতলায় ছ্যা ছ্যা পড়ে যায়, বিশাল কোন নাম হইলোনি।
“বিশাল কোন নাম হইলোনি” এই বাক্যটি বৃন্দ কবিতার মতো আবৃত্তি করে একজন একজন করে।
হঠাত কলের পানি বন্ধ হয়ে গেলে; কলতলায় প্যানিক ও ম্যানিক এটাক হয়।
জরিমন চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তোলে, হালায় মেম্বর ব্যাটারে আমি খাইছি; ডেইলি ডেইলি একই কাম করতেছে বলদাডা।
জরিনা খেঁকিয়ে ওঠে, অ ভবসখা, তুমি মেম্বররে কিছু কওনা কা?
জীর্ণ শরীরে সস্তা সিগেরেট খেতে খেতে ভবসখার হাড়গিলে শরীরে কাশির দমক জাগে; কাশির উচ্চাঙ্গ সংগীত শেষ হলে, ভবসখা চোখ বুঁজে জ্যোতিষীর মতো আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে তিন চারটি পরস্পরস্পর্শী টান দিয়ে; কিয়তক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে বলে, গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাই। এ সবি করোনার সপক্ষের শক্তির চাল। ফোরাত নদী সৃষ্টি কইরা রঙ্গিন বিষাদ সিন্ধু লেখতাছে করোনা; আর তারে প্রাণশক্তি জুগাইতেছে “গুন্ডি-দেশ”। হুন্ডি দেশের টেকাটুকা বাড়াতে গুন্ডি দেশের হিংসা হইছে তো। তাই হুন্ডিদেশে অনুপ্রবেশ করাইছে চর। তারাই পানির কল বন্ধ কইরা দেয়।
গুন্ডিদেশের নাম শুনে সকিমন জিভ কেটে বলে, ছি ঘিন্না ঘিন্না; ইতরগুলি ককুনো মানুষ হবে না।
ভবসখা আবার চক্ষু মুদিয়া ধ্যানে বসে। সবাই আকুল হয়ে অপেক্ষা করে ফকিরটির ঘুম ভাঙ্গার।
হঠাত সে আর্কিমিডিসের মত উঠে কলতলা প্রদক্ষিণ করে। তারপর উপস্থিত কলতলা সোসাইটির উদ্দেশ্যে বলে, হুন্ডি দেশের বিরুদ্ধে গুন্ডি দেশের এই ষড়যন্ত্র একমাত্র রুখে দিতে পারে ভূষণ্ডি দেশ। করোনা ভাইগা গ্যালে পরে তুমরা সবাই সেইখানে একবার তীর্থে যাবা। তারপর দেখবা কলের পানি আর বন্ধ হইবো না।
নসিমন গম্ভীরভাবে বলে, আমার সন্দ হয়, করোনা পাঠাইছে গুন্ডি দেশ; করোনারে ঘুরাইয়া চটকানা দিতে ইচ্ছা করতেছে।
এক বৈজ্ঞানিক প্রকৃতির কলতলী বলে, করোনা কিন্তুক মাইয়াগো সামনে দুর্বল। নিজেই যাঁইচা যাঁইচা নারীর লগে গল্প করে; তার কল থাইকা পানি ভইরা নিয়া যাওয়ার মহিমারে তেল দেয়।
জিভ কেটে আলুথালু হয়ে বসে থাকা চৈতা পাগল বলে, বুজছি তো করোনার পুরুষত্ব নাই; নিশ্চয়ই সে গুন্ডিদেশে ঘর মুইছা খাইতো; হুন্ডিদেশে আইসা মুশাম নিতেছে। ভাদাইম্মা কুনহানকার।
জরিমন চোখ টিপে, জরিনা জিভ কাটে আর ভবসখা পৌরুষের গর্বে শুকনো শরীরে আবার কাশির দমক তুলে।
সকিমন চৈতা-পাগলকে জিজ্ঞেস করে, কীরে আজ গলায় এতো পাউডর দিয়া আসছস ক্যান?
–পাপিয়া ভাইরাস ধরা খাওনের পর আর সাইজা-গুইজা যামু কই! বালিশ আর কাছিম ভাইয়েরাও তো আর ফোন ধরেনা; কালায় আর বাজায় না মোহন বাঁশী; কতদিন হয় জুড়িগাড়ি চড়িনারে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন