ইমাম হাসান স্বেচ্ছায় খেলাফতের দায়িত্ব মাবিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন
তৃতীয় খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পশ্চাতে আলির যে হাত ছিল, তা কিছুটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যখন বিদ্রোহীরা নিহত খলিফার লাশ একমাত্র আলির হাতেই তুলে দেয়। আর আলির খেলাফত লাভের পর তা স্পষ্ট হয়ে যায় একশোভাগই। যাঁরা কিছুটা সঙ্গত কারণে এবং অনেকটাই ভুল বুঝে, কিছুটা প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ হয়ে ওসমানের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁরা (কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তি ব্যতীত) কেউ স্বপ্নেও ভাবেন নি যে, ওসমানকে হত্যা করে আলিকে খলিফা করার গভীর ষড়যন্ত্র আছে বিদ্রোহের পশ্চাতে।
ফলে তাঁরা ওসমানের হত্যাকাণ্ডে যেমন ভীষণ শোকাহত হোন তেমনই ক্ষুব্ধও হোন। এমনকী ওসমানের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবীতে তাঁরা সোচ্চারও হয়েছিলেন। কিন্তু আলি সেই দাবীকে নস্যাৎ করে দিয়ে উল্টো হত্যাকারীদের সাথে নিয়ে ও তাদের পাশে থেকে খেলাফত পরিচালনা শুরু করেন। অপরদিকে যাঁরা সেই শাস্তির দাবী জানিয়েছিলেন তাঁদেরকে গভর্ণর ও প্রশাসনের উচ্চপদ থেকে বহিষ্কার করার আদেশ দেন। ফলে সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে আলির বিরুদ্ধে শুরু হয় বিদ্রোহ।
সেই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন খোদ নবি মুহাম্মদ তথা নবির প্রিয়তমা পত্নী তথা আলির শাশুড়ী আয়েশা। তিনি খলিফা আলির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে দ্বিধা করেন নি, এবং তিনি স্বয়ং একটি যুদ্ধে নের্তৃত্বও দেন। এই কথাগুলি ওপরের আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও পুনরাবৃত্তি করতে হলো এ কারণেই যে, অমোঘ সত্যটা ৩য় খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেপথ্যে প্রধান কারিগর ছিলেন মুহাম্মদের অত্যাধিক প্রিয় জামাই ক্ষমতালিপ্সু আলি। অজস্র মিথ্যার নীচে চাপা পড়ে যাওয়া, মুসলিম ঐতিহাসিকদের মিথ্যাচারের কারণে তাকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
আলির বিরুদ্ধে যাঁরা বিদ্রোহ করেছিলেন তাঁরা দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলেন। একটি গোষ্ঠীতে ছিলেন আয়েশার নেতৃত্বে যুবায়ের, তালহা, আবুযার গিফারী প্রমুখ স্বনামধন্য ও বিশিষ্ট সাহাবিগণ এবং অপর গোষ্ঠীতে ছিলেন আমির মাবিয়ার নের্তৃত্বে বিভিন্ন প্রদেশের কয়েকজন গভর্ণরসহ ব্যাপক মুসলিম জনগোষ্ঠী। ফলে গোটা সাম্রাজ্যজুড়ে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা হয়েছিল দুটি ফ্রন্টে। এরফলে বিদ্রোহ দমন করার জন্য আলিকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করতে হয়েছিল।
এই যুদ্ধগুলির মধ্যে দুটি যুদ্ধ ছিল সৈন্যসংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে বিশাল ও বিভীষিকাময়। সেই যুদ্ধ দুটির একটি হলো জামালের যুদ্ধ। আলির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে নের্তৃত্ব দেন নবিপত্নী আয়েশা, যে কথাটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। সেই যুদ্ধে শোনা যায় যে দশ হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিল। অন্য যুদ্ধটি সিফফিনের যুদ্ধ নামে ইতিহাসে খ্যাত। যে যুদ্ধে আলির বিরুদ্ধে নের্তৃত্ব দেন আমির মাবিয়া। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেই যুদ্ধে, এবং নব্বই হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিল।
জামালের যুদ্ধে আলি জয়লাভ করলেও সিফফিনের যুদ্ধে কোনো মিমাংসা হয় নি। শেষ পর্যন্ত দুপক্ষই সন্ধি করেছিলো।
গোটা খেলাফত জুড়ে গৃহযুদ্ধ চলার ফলে আলি ক্রমশঃ শক্তিহীন হয়ে পড়ছিলেন। তার প্রধান কারণ ছিল এই যে, সর্বত্রই মুসলমানরা ক্রমশই খলিফা আলির ভুমিকা মেনে নিতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছিলেন। আলির বাসস্থান এবং নবির পদধুলি ধন্য মদিনার অবস্থাও একইরূপ ধারণ করেছিল। তাই মদিনার মুসলমানদের ওপরেও আলি আর বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে পারেন নি। তাই মদিনা থেকে কুফা নগরীতে রাজধানী (অধুনা ইরাকে অবস্থিত) সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
আলির কাছে ক্রমশঃ এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তাঁর পক্ষে বেশীদিন আর যুদ্ধ পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাই তিনি সিফফিনের যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় আর যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যেতে চান নি। মাবিয়ার পক্ষ থেকে সন্ধি প্রস্তাব এলে সঙ্গে সঙ্গে মীমাংসায় বসতে সম্মত হন আলি। মীমাংসার জন্য আলি ও মাবিয়া উভয়েই প্রতিনিধি মনোনীত করেন এবং ওঁরা যা মীমাংসা করবেন তা তাঁরা মেনে নেবেন বলে উভয়েই অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
মীমাংসায় স্থির হয় যে ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা পদ থেকে আলিকে সরে যেতে হবে এবং তাঁর স্থলে পরবর্তী খলিফা হবেন আমির মাবিয়া। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ইসলামি সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বড় প্রদেশের গভর্ণরদের বলা হতো আমির।
এই মীমাংসা পছন্দ না হওয়ায় আলি তা অগ্রাহ্য করেন। তিনি এই অজুহাত দেন যে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে মাবিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ফলে উভয়পক্ষ আবারও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এই মীমাংসা প্রয়াসের কিছুদিনের মধ্যেই আলি আবশ্য গুপ্তঘাতকদের হাতে গুরুতর আহত হন এবং সেই আঘাতের জেরেই মারা যান। এভাবেই আলির পাঁচ বছরের খেলাফতকালের করুণতম পরিসমাপ্তি ঘটে। আলি যখন মাবিয়ার সঙ্গে মীমাংসায় বসতে সম্মত হন তখনই আলির বিরুদ্ধে তাঁর সৈন্যদের একাংশ বিদ্রোহ করেছিলেন, কারণ তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। তাঁরা মাবিয়ার সঙ্গে মীমাংসা করার সমস্ত প্রয়াস বন্ধ করার জন্যে আলির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু আলি তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেন নি। ফলে তাঁরা আলিকে ত্যাগ করে চলে যান। তাঁদের পক্ষের কতিপয় লোকই আলিকে অতর্কিতে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করেছিলেন- এরকম ধারণাই পোষণ করেন অধিকাংশ ঐতিহাসিক।
আলির মৃত্যুর সময় গৃহযুদ্ধের কারণে ইসলামি সাম্রাজ্যের অবস্থা তখন একেবারে সঙ্গীন হয়ে উঠেছে। একে তো ব্যাপক অর্থবল ও জনবলের ক্ষয়ক্ষতির ফলে সাম্রাজ্য অনেকখানিই শক্তিহীন হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে আবার সমগ্র খেলাফত সরাসরি আড়াআড়িভাবে দুভাগে বিভক্ত। একটা অংশের নের্তৃত্ব মাবিয়ার হাতে, আর অপর অংশটি ছিল খলিফা আলির নিয়ন্ত্রণে। আলির মৃত্যুর পর ইসলামি সাম্রাজ্য আক্ষরিক অর্থেই দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ল।
আলির নিয়িন্ত্রিত এলাকার খলিফা হলেন তাঁর বড় পুত্র ইমাম হাসেন (ইমাম হোসাইন), মাবিয়ার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের খলিফা হলেন মাবিয়া স্বয়ং। আলি ছিলেন একজন বিরাট যোদ্ধা এবং বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বিশাল ব্যক্তিত্ব। সেই তিনিই বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হয়ে কার্যত মাবিয়ার কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর আলীর পুত্র হাসেন তো নেহাতই অনভিজ্ঞ ও অপরিণত বয়সের একজন তরুণ মাত্র। কোনোভাবেই আলির সঙ্গে তাঁর তুলনা টানা যায় না। স্বয়ং হাসেন সে কথা আরও ভাল করেই জানতেন। তারপর হাসেন ছিলেন সম্পূর্ণ অন্যধাতে গড়া মানুষ। তিনি ক্ষমতার প্রতি মোটেই আকৃষ্ট ছিলেন না, তিন ঝগড়া বিবাদ পছন্দ করতেন না।
আলির বিরুদ্ধে যখন চারিদিকে বিদ্রোহের আগুন জ্বলতে শুরু করে তখনই তিনি তাঁকে খেলাফত ছেড়ে দিয়ে কেবল দ্বীনের কাজে নিয়োজিত থেকে জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। এহেন হাসেন স্বভাবতই খলিফা হয়ে খুশী হন নি। তিনি বরং উত্তরাধিকারসূত্রে খেলাফতের দায়িত্ব পেয়ে যথেষ্ট বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তিনি খুব জানতেন তাঁর পিতা যখন মাবিয়াকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারেন নি, তখন তাঁর পক্ষে সে কাজ সম্ভব করার প্রশ্নই উঠে না। বরং মাবিয়াকে পরাস্ত করার চেয়ে তাঁকে অনেক বেশী চিন্তিত করেছিল তাঁর নিজের খেলাফত রক্ষা করার বিষয়টি। মাবিয়া যদি তাঁর সাম্রাজ্য আক্রমণ করে তবে তা প্রতিহত করা তাঁর পক্ষে যে সম্ভব নয়, সে কথা ভেবেই বরং তিনি বিচলিত ছিলেন।
হাসেনের চরিত্রে আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। নারীর প্রতি তাঁর তীব্র আসক্তি ছিল। দু’একজনের কথা বাদ দিলে কমবেশি ইসলামের খলিফাদের প্রায় সকলের মধ্যেই এ রোগটা ছিল। তাঁর মাতামহ তথা মুহাম্মদ বিয়ে করেছিলেন কমপক্ষে ১৪টি (মূহাম্মদের ঠিক কতকগুলি বিয়ে হয়েছিল তা নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। বিভিন্ন মতানুযায়ী তাঁর বিয়ের সংখ্যা কমপক্ষে ১৪টি, আর সর্বাধিক ২২ টি)। তারপর মুহাম্মদের উত্তরসূরী খলিফাগণও সবাই বহুবিবাহ করেছিলেন। প্রথম খলিফা, দ্বিতীয় খলিফা, তৃতীয় খলিফা ও চতুর্থ খলিফার বিয়ের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪টি, ৭টি, ৮টি, ও ৯টি।
খলিফাদের বিয়ের সংখ্যাটা নিসন্দেহে অনেক বেশী হতো যদি একসঙ্গে চারটির অধিক পত্নী রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা না থাকতো। তাছাড়া খলিফাদের বিবাহিত পত্নী ছাড়াও ছিল বহু উপপত্নী ও দাসী যাঁদেরকে তাঁরা পত্নিরূপে ভোগ করতেন আল্লার বিধান অনুসারেই। তবে এটা সর্বজনবিদিত যে হাসেনের নারীআসক্তি তাঁর পূর্বপুরষদের থেকে অনেক অনেক বেশি তীব্র ছিল।
তিনি একজন নারীর সঙ্গে বেশীদিন অতিবাহিত করতেন না। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাঁর পত্নীগণ তাঁর নিকট পুরানো হয়ে যেত, এবং তাঁদের প্রতি প্রেম-প্রীতি-আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন। তখন তাঁদের তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করতেন।
হাসেন সর্বদাই নিত্যনতুন নারীর স্পর্শ ও সান্নিধ্য পেতে চাইতেন। আর তা পাওয়ার জন্য তিনি বিয়ে করেছিলেন ১০০টি। তাঁর জীবনে এমনও নজির ছিল, তিনি একই দিনে ৪টি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সেইদিনই আবার ৪টি বিয়ে করেছিলেন। বিয়ে এবং তালাক দেওয়াটা তার কাছে এক প্রকার মজার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই জিনিস দেখে তাঁর পিতা আলিও স্বয়ং বিরক্ত হয়ে মুসলিম সমাজের কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁরা যেন হাসেনের সঙ্গে তাঁদের মেয়েদের বিয়ে না দেয়।
নারীদের এইভাবে ভোগকরে একের পর এক ছূঁড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে একসময় তাঁরই একজন পত্নী তাঁকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেছিলেন। তা না হলে হাসেনের বিয়ের সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে পৌঁছুতো তা বলা বা আন্দাজ করা কঠিন ছিল। হাসেনের এই মাত্রাতিরিক্ত নারী-আসক্তিও তাঁকে ভীষণ চিন্তায় ফেলেছিল; যখন তিনি পিতার মৃত্যুর পর খলিফা হোন। মাবিয়ার মতো প্রবল প্রতিপক্ষ, তথা শত্রু যেখানে রয়েছে; সেখানে খলিফার ক্ষমতাভোগ এবং নারীভোগ দু’টো একসঙ্গে রক্ষা করা যে সম্ভব নয়, তা বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয় নি।
এসব ভেবেই তিনি খেলাফতের দায়িত্বটা ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন এবং ছ’মাস পর মাবিয়ার হাতে তাঁর খেলাফত তুলে দেন।
খেলাফত হস্তান্তরের সময় মাবিয়া ও হাসেনের মধ্যে কিছু বোঝাপাড়া ও চুক্তি হয়েছিল। সেগুলি কী ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ বিষয়ে নানারকম মত রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি বোঝাপরা বা চুক্তি, যাই বলি না কেন; যা শোনা যায় তা এরূপ-
১) হাসেন যতোদিন জীবিত থাকবেন ততোদিন তাঁর নিজের এবং তাঁর পরিবারের ভরণ-পোষণের যাবতীয় খরচ মেটানো হবে বায়তুল মাল তথা সরকারি কোষাগার থেকে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের জীবিত সদস্যদের ভরণ-পোষণের খরচও মেটাতে হবে বায়তুল মাল থেকে।
২) মাবিয়া যতোদিন জীবিত থাকবেন, ততোদিন তিনি খলিফা পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর খলিফা হবেন হোসেন সে ব্যবস্থা তাঁকে (মাবিয়াকে) করে যেতে হবে।
প্রথম চুক্তিটি যে হয়েছিল তা নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই, এবং মাবিয়া সেই চুক্তিটি রূপায়ণে কোনদিনই কার্পণ্য করেন নি। হাসেনের পিতা আলি খলিফা হওয়ার পর মাবিয়াকে সিরিয়ার গভর্ণর পদ থেকে অপসারিত করেছিলেন এবং আলি যতোদিন খলিফা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, ততোদিনই মাবিয়া তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে হাসেন ও অনেকেরই মনে ভয় ছিল যে, হয়তো মাবিয়া হাসেনের ওপর তাঁর পিতার প্রতিশোধ তুলতে পারেন।
কিন্তু মাবিয়া সকলের আশংকা ভুল প্রমাণিত করেছিলেন। তিনি হাসেনের সঙ্গে যে উদারতা, মর্যাদা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছিলেন তা সকলকে অবাক করেছিল। এক্ষেত্রে মাবিয়া মানুষ হিসাবে যে মস্ত বড়ো মহানুভব ছিলেন তার যা স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা ইতিহাসে আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
দ্বিতীয় চুক্তিটি আদৌ হয়েছিল কী না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এমনকী মুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে প্রায় সকলেই এই দাবিটির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন নি।
বস্তুতঃ হাসেন যখন নিজের গরজেই তথা অক্ষমতার জন্যেই খেলাফতের দায়িত্বভার মাবিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর পক্ষে তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা হোসেনকে মাবিয়া পরবর্তী খলিফা করতে হবে এমন কোনও জোরালো দাবি বা শর্ত মাবিয়ার ওপর আরোপ করা সম্ভব ছিল না।
তাছাড়া এ প্রসঙ্গে আরও একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো এই যে, খলিফা পদের প্রতি হাসেনের নিজেরই বিশেষ আকর্ষণ ও আগ্রহ ছিলনা। তিনি তাঁর পিতাকে খলিফাপদ ত্যাগ করে ইসলামি সাম্রাজ্যে শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই তিনি যখন পিতার মৃত্যুতে খলিফাপদে আকষ্মিকভাবেই অধিষ্ঠিত হলেন, তখন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সাম্রাজ্যটি ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে। এরকম দুঃসময়ে যে পদে তাঁর নিজেরই আগ্রহ নেই সেই পদে তিনি তাঁর ভাইকে বসানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
জুন ১৬, ২০১৭; ৯:১৮ অপরাহ্ন
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
জুন ১৬, ২০১৭; ১১:০০ অপরাহ্ন
সমস্যাটা শুরু হয় যখন হোসেন ঘোষণা করে দিলেন যে তিনি কিছুতেই ইয়েজিদ এর অধীনস্থ প্রজা হিসাবে থাকবেন না।