ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পশ্চাতে ছিল আলীর খলিফা হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উমাইয়াদের প্রতি অবিশ্বাস, সন্দেহ ও বিরূপ মনোভাব তো কমেইনি বরং বৃদ্ধি পেয়েছিল। উমাইয়াদের প্রতি অবিশ্বাস এবং হাসিম বংশীয় লোকদের প্রতি অসীম আনুগত্য প্রর্দশনই তখন হয়ে উঠেছিল যেন একজন সাচ্চা মুসলমানের মাপকাঠি। ওসমানের খেলাফতকালে উমাইয়াদের বঞ্চনার অবসান কিছুটা কমিয়ে প্রশাসনে তাদের খানিকটা গুরুত্ব প্রদানের কারণে সেই বিরূপ মনোভাব অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং প্রায় প্রাক ইসলাম যুগের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পেছনে এটা একটা বড় কারণ ছিল যে ওসমান ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক।
ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দ্বিতীয় প্রধান কারণটি হলো তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এবং সময়োপযোগী সংস্কার। ইসলামের নীতি বিধর্মীদের প্রতি ভীষণ সংকীর্ণ, বিদ্বেষপরায়ণ এবং প্রতিশোধপরায়ণ। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি এই মনোভাব আরও কড়া ও উগ্র। ওঁদের সম্পর্কে ইসলাম ঠিক কী বলেছে সে কথা বলার আগে ওসমান ইসলামের এই নীতির বাইরে গিয়ে যে সংস্কারটি করেছিলেন সে কথাটি আগে বলে নেওয়া যাক।
ইসলামি সাম্রাজ্য তখন অনেক প্রসার লাভ করেছে। স্বভাবতই অমুসলিম নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধিলাভ করছে, ফলে তাঁদের প্রতি ক্ষুদ্র ইসলামি রাষ্ট্রে যেভাবে কঠিন, বৈষম্যমূলক ও অমানবিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারী আচরণ করা সম্ভব ছিল তা এখন আর সম্ভব নয়। পরিস্থিতির বাস্তবসম্মত মুল্যায়ন করে খলিফা বিধর্মীদের প্রতি উদার মনোভাব নিলেন এবং তিনিই প্রথম খলিফা যিনি কিছুটা হলেও ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করলেন। সেই নীতির ভিত্তিতে একজন ইহুদি কবি আবদুল্লাহকে বাইতুল মাল (সরকারি কোষাগার) থেকে ঋণ মঞ্জুর করলেন। ইহুদিদের প্রতি এই উদার মনোভাব হাসিম বংশীয় সাহাবিগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের কারণ হয়েছিল।
এবার দেখা যাক ইহুদিদের সম্পর্কে ইসলাম কী বলে। কোরানে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্পর্কে অনেক আয়াত বা নির্দেশ আছে। তারই কয়েকটি হলো এই রকম-
“ইহুদি, খ্রিস্টান ও কাফেরদের কখনো বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা।“
(৫/৫৭)
“… ইহুদিরা অভিশপ্ত… কিয়ামত পর্যন্ত তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করেছি।…তাহারা কিয়ামত পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়াবে।“
(৫/৬৪)
“ওরাই অভিশপ্ত এবং ওদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই ধরবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করবে।“
(৩৩/৬১)
এ প্রসঙ্গে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ কথা উল্লেখ করতে চাই। ওসমানের পরে আরও কয়েকজন উমাইয়া বংশের প্রতিনিধির খলিফা হওয়ার সুযোগ হয়েছিল, তাঁরা সবাই ওসমান যে ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সূচনা করে একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী সংস্কার করেছিলেন সেই কাজটির আরও উন্নতি ও বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। ওই বংশেরই একজন খলিফা, পঞ্চম খলিফা আমির মাবিয়া, যাঁকে সর্বাধিক আক্রমণ ও কালিমালিপ্ত করেছেন মুসলিম ঐতিহসিকগণ, সেই নীতির আরও বিকাশ ঘটিয়ে এক আবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যা এই যুগেও উদাহরণ হয়ে রয়েছে। এবং তারপরেও আব্বাস বংশ তথা হাসমি বংশ তথা মুহাম্মদের বংশধর আরও কয়েকজন খলিফাও সেই নীতিকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যাঁরা রাষ্ট্রের নীতি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন মুত্তাজিলা নীতি। এই নীতির মূল কথা হলো- আল্লাহ বা কোরান নয়, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালিত হবে যুক্তি, বিজ্ঞান ও দর্শন ওপর ভিত্তি করে।
বিশ্ব মানব সভ্যতার পক্ষে খুবই দুঃখজনক ঘটনা হলো মুহাম্মদের অন্যান্য বংশধরগণ পরে খলিফা হয়ে এসে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও যুগান্তকারী সেই নীতি বাতিল করে দিয়ে ইসলামি সাম্রাজ্য ও বিশ্বের মুসলিম সমাজকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই মুহাম্মদীয় মধ্যযুগে। আবার রাষ্ট্রের নীতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল- কোরানই হবে রাষ্ট্রের মূল পরিচালিকা শক্তি, কোরানের ওপর কোনো কথা, কারও কথা চলবে না। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় যে জাতি (আরব জাতি) ও সাম্রাজ্যটি অগ্রগতি, উন্নতি ও বিকাশ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করছিল এবং বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিচ্ছিল, হঠাৎই তার ছন্দপতন হলো মুহাম্মদের গোঁড়া বংশধরদের হাতে। আলো থেকে আবারও অন্ধকারের দিকে, সামনে থেকে আবার পেছনদিকে পশ্চাদযাত্রা শুরু করলো ইসলামি সাম্রাজ্য। বলা বাহুল্য যে, সেই পশ্চাদযাত্রা বিশ্বময় মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে আজও অব্যাহত রয়েছে।
বিদ্রোহের তৃতীয় কারণটি হলো খলিফা তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবির বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা হলেন আবুযার গিফারি, আম্মার ইবনে ইয়াসার ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ। এঁরা তিনজনই মুহাম্মদের স্নেহভাজন ও বিশ্বস্ত অনুগামী ছিলেন। এঁদের কোরান ও ইসলামের ওপর এত পাণ্ডিত্য ছিল যে, এঁদেরকে মহান বিপ্লবী বলা হয়। এঁদের প্রথমজনকে খলিফা নির্বাসনদণ্ড দিয়েছিলেন, দ্বিতীয়জনকে রাজপ্রাসাদে সকলের সম্মুখে প্রহার করেছিলেন এবং তৃতীয়জনকে করেছিলেন গৃহবন্দী। এর প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছিল মদিনার মানুষদের মধ্যে। খলিফা ওসমান এমনিতেই ছিলেন অত্যন্ত নরম প্রকৃতির মানুষ, তবুও তিনি অনিচ্ছাসত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বরং বলা উচিত যে, এই সাহাবিগণ তাঁকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করেছিলেন। এঁরা প্রথম থেকেই নানান প্রশ্নে খলিফার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনায় মুখর হতেন। তথাপি তাঁদের অতীতের অবদানের কথা ভেবে এবং নিজে যেহেতু অতি নরম প্রকৃতির মানুষ তাই তিনি তাঁদের এই প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচারণকে উপেক্ষা করতেন।
খলিফার এই উদারতা ও মহানুভবতাকে তাঁরা তাঁর দূর্বলতা ও অক্ষমতা মনে করে নিজেদের কখনই সংযত করার কথা ভাবেন নি। তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা মদিনার বাইরে গিয়ে বিভিন্ন প্রদেশে খলিফার বিরুদ্ধে প্রচার ও জনমত গঠন করার কাজ শুরু করেছিলেন। এই অবস্থায় খলিফার আর কঠোর না হয়ে উপায় ছিলনা, তাঁকে ইসলামি সাম্রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই তাঁর নিজেরই সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল।
বিদ্রোহের পেছনের চতুর্থ কারণটি হলো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত আকাঙ্খার অপূর্ণ থাকা। তাঁরা হলেন মুহাম্মদ বিন আবু বকর, মুহাম্মদ বিন আবু হুজাইফা এবং আবদুল্লাহ বিন সাবা। এই তিন জন ব্যক্তির বংশগত ঐতিহ্য ও ইসলামের কঠিন সংগ্রামের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্যাপক পরিচিতি ও মুসলিম সমাজের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ছিল। প্রথমজন হলেন মুহাম্মদের নিকটতম বন্ধু ও দ্বিতীয় খলিফা আবু বকরের কনিষ্ঠ পুত্র, দ্বিতীয়জন মুহাম্মদের অন্যতম প্রধান শত্রু উমাইয়া বংশের প্রভাবশালী নেতা আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দার বংশধর। হুজাইফা ওসমানের মতোই ব্যতিক্রমীদের একজন যিনি উমাইয়া বংশের লোক, প্রথম দিকেই মুহাম্মদের শিষ্য হয়েছিলেন এবং যে দলটি প্রথম মক্কা থেকে আবিসিনিয়া হিযরত করেছিল সেই দলে ছিলেন। আর তৃতীয়জন ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসে মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
আবু বকরের পূত্র মহম্মদের আরও একটি পরিচয় আছে। আবু বকরের মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ বিধবা পত্নীকে বিয়ে করেছিলেন আলী। মহম্মদ তখন নাবালক সন্তান, তিনি আলীর কাছেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন। তিনি তাই আশা করেছিলেন যে ওসমানের প্রশাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ও মর্যাদা পাবেন। সে আশা তাঁর পূরণ হয়নি। অন্যদিকে হুজাইফার ইসলামের ইতিহাসে যে অবদান আছে তা অবিস্মরণীয়। তিনি শুধু মুহাম্মদের প্রিয় সাহাবিই ছিলেন না, তিনি আবু বকরের খেলাফতকালে একটা যুদ্ধে (জিহাদে) মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তখন তাঁর (হুজাইফা) পুত্র মহম্মদের (এই নামটি স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ রেখেছিলেন) শিশু বয়স। ওসমান গণি তখন সেই অনাথ মহম্মদকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করেছিলেন। তিনিও আশা করেছিলেন একটা বড় ও ক্ষমতাপূর্ণ পদ পাবেন। কিন্তু তাঁর সে আশাও পূর্ণ হয় নি। তৃতীয়জন অর্থাৎ সাবার পুত্র আবদুল্লাহ ছিলেন আলীর অন্ধ অনুরাগী। তিনি আলীকেও মুহাম্মদের মতই আল্লাহর প্রেরিতপুরুষ তথা রসুল মনে করতেন।
আলী খলিফা হতে না পারায় প্রথমথেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। ওসমানের খেলাফতকালে ব্যাপক খলিফা বিরোধী মানুষ পেয়ে অতি সোৎসাহে নেমে পড়েছিলেন খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠিত করার কাজে। উক্ত তিন জন নিজেদের স্বার্থ ও অভিলাষ পূরণ হয় নি বলে মিশর গিয়ে ঘুরে ঘুরে বিদ্রোহের পক্ষে জনমত সংগঠিত করেছিলেন। এই তিন জন বিশিষ্ট ব্যক্তি খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নের্তৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁরা যে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার আশায় ওসমানকে খলিফা পদ থেকে অপসারিত করতেই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিলেন সে কথা অনেক মুসলিম ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন। ড.ওসমান গণি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-
“আবু বকরের কনিষ্ঠ পূত্র মুহম্মদ ও বিখ্যাত সাহাবী আবু হুজাইফার পূত্র মুহম্মদ আপন আপন ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির জন্য, রাষ্ট্রীয় শক্তিকে কুক্ষিগত করার জন্য,যুদ্ধের মাল ও উপসত্বকে ভোগ করার জন্য, উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য, সমগ্র মিশরবাসীকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে আরম্ভ করলেন, বিদ্রোহ দানা বাঁধল। যা পরে একদিন মহিরুহতে পরিণত হয়েছিল।
(দ্রঃ প্রাগুক্ত, পৃ-৭২)
পঞ্চম ও প্রধান কারণ ছিল আলী ও আরও দুজন বিশিষ্ট সাহাবির (জুবায়ের ও তালহা) খলিফা হওয়ার তীব্র খায়েস। তাঁরা তিনজনেই বিদ্রোহকে মদত দিয়েছিলেন এই আশায় যে, খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলেই তাঁদের সামনে খলিফা হওয়ার রুদ্ধ পথটি খুলে যাবে। চারদিকে যখন বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে, বিশেষ করে খলিফা যখন চল্লিশ দিন ধরে অবরুদ্ধ, বিদ্রোহিরা রাজ প্রাসাদে খাবার জল পর্যন্ত প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা, তখন তাঁরা খলিফাকে রক্ষা করার যাবতীয় নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে খলিফার সিংহাসনটা কীভাবে হস্তগত করা যায় সে চিন্তাতেই বিভোর হয়েছিলেন। কারণ তাঁরা জানেন যে বিদ্রোহিরা তাঁদেরই লোক। বিদ্রোহীদের মধ্যে তিনটি দল ছিল এবং তারা উক্ত তিনজন সাহাবির অনুগামী ছিলেন। একদল চেয়েছিল খলিফা পদে আলীকে, একদল চেয়েছিল যুবায়েরকে এবং একদল চেয়েছিল তালহাকে। আলীর অনুগামীরা ছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই ওদের মধ্যে খলিফা নির্বাচনকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব খুব প্রকট হয় নি। ওসমানকে হত্যা করে মদিনাবাসী সবাই একমত হয়ে জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা আলীকেই খলিফা পদে দেখতে চায়। বলা বাহুল্য, সেসময় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কথা বলার কোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল না। আলী তাই অতি সহজেই এবং বিনা বাধায় খলিফার সিংহাসনে আরোহণ করেন। এইভাবে বিদ্রোহের রক্তপিচ্ছিল পথ বেয়ে ও বিদ্রোহীদের রক্তমাখা হাত ধরে বহু আকাঙ্খিত খলিফা পদটি হস্তগত করতে সক্ষম হন তিনি।
মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এই ঐতিহাসিকভাবে সত্য ঘটনাকে সম্পূর্ণ আড়াল করে গেছেন, উল্টো তাঁরা দাবী করেছেন যে, ওসমান গণিকে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিদ্রোহের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে; কিন্তু ওসমানের ভুলের জন্যেই তাঁকে তাঁরা রক্ষা করতে পারেন নি। কিন্তু বিদ্রোহের পেছনে আলীর যে মদত ছিল তার বহু প্রমাণ আছে তা আজও দেখতে পাওয়া যায়।
এখানে পরিসর কম বিধায় মাত্র দু’টি প্রমাণ তুলে ধরতে চাই। বিদ্রোহীরা খলিফাকে ৪০দিন অবরুদ্ধ রাখার পর তাঁকে হত্যা করে। হত্যা করার পর পরবর্তী খলিফা নির্বাচন না করা পর্যন্ত তিন দিন খলিফার মৃতদেহ রাজ প্রাসাদে আটকে রেখেছিল। মদিনার বিশিষ্ট সকল মানুষ একে একে গিয়ে অনুনয় বিনয় করে বলেছিল আগে খলিফার দাফন-কাফন (অন্তিম সৎকার) করতে দাও, তারপর যাকে তোমরা বলবে তাঁর হাতেই আমরা বয়াত নেব। কিন্তু কারও কথা তারা শোনে নি। সবাই তখন আলীকে গিয়ে অনুরোধ করলো, আপনি একবার গিয়ে অনুরোধ করুন, হয়তো আপনাকে ওরা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আলী তখন বিদ্রোহীদের কাছে গিয়ে মৃত খলিফার লাশ চাইলেন। বিদ্রোহীরা তাঁর হাতে ওসমানের লাশ তুলে দিল। বলা বাহুল্য যে, এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়- বিদ্রোহীদের ওপর আলীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং বিদ্রোহীরাও ছিল আলির অনুগত। এই বিদ্রোহীরা আলীর সম্মতি কিংবা ইশারা ব্যতিত দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও অমিত ক্ষমতাধর খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কথা কল্পনাতেও আনবেনা তা অবুঝ শিশুও বোঝে।
বিদ্রোহের পেছনে আলীর প্রচ্ছন্ন হাত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় খলিফার মৃত্যুর পরবর্তীকালের ঘটনাপঞ্জী থেকে। এই বিষয়ে পরে একটু বিস্তারিত আলোচনা হবে, এখন প্রসঙ্গহেতু একটি ঘটনার উল্লেখ করা হলো। খলিফার দাফন-কাফন (অন্তিম সৎকার) শেষ হলে বিদ্রোহীরা মদিনার মানুষকে ডেকে বললো, এবার আপনাদের চতুর্থ খলিফা নির্বাচন করতে হবে। চতুর্থ খলিফার হাতে সাম্রাজ্যের ভার তুলে দিয়ে আমরা মদিনা ত্যাগ করতে চাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিদ্রোহীরা মদিনার বাইরে থেকে, মূলতঃ মিশর, কুফা ও বসরা প্রদেশ থেকে এসেছিল। বিদ্রোহীরা নিজেরাই চতুর্থ খলিফার নাম প্রস্তাব করলো। তারা বললো,
“আমরা প্রিয় শেষ নবীর জামাতা ও বংশধর হযরত হায়দার আলির নাম প্রস্তাব করছি, বলুন আপনাদের মতামত কী?”
যারা খলিফাকে নির্দয়ভাবে হত্যা করার দুঃসাহস রাখে, তাদের মতের বাইরে গেলে তার পরিণাম কী হতে পারে তা পাগলেও বোঝে। স্বভাবতই কোনো বিকল্প নাম প্রস্তাবিত হয় নি এবং চতুর্থ খলিফা পদে বিদ্রোহীদের প্রস্তাবে (হুকুমে) আলী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোন। আলী চতুর্থ খলিফা হিসাবে দায়িত্বভার নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিদ্রোহীরা খলিফার কাছে আত্মসমর্পণ করে। তৃতীয় খলিফা ওসমানের নিহত হওয়ার পর চতুর্থ খলিফা হিসাবে আলীর নামপ্রস্তাব এবং বিনাবাধায় তা গৃহীত হওয়ার ঘটনাটি যে একটা সাজানো ব্যাপার বা পূর্বপরিকল্পিত তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
মুসলিম ঐতিহাসিকগণ কিন্তু অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় দাবী করেছেন যে, আলী ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি এমন জঘন্য কাজ করতেই পারেন না, কারণ তিনি ছিলেন শিশুর মতো নিষ্পাপ। সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ থেকে যেখানে অসংখ্য স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, বিদ্রোহের সঙ্গে আলীর যোগ ছিল, সেখানে আলীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে রায় দেয়া এক জঘন্য মিথ্যাচার বৈ কিছু নয়। কঠিন ও নির্মম সত্যকে এক জঘন্য মিথ্যা দিয়ে ঢাকার এমন কুৎসিত অপপ্রয়াস ইতিহাসে বিরল। সচেতনভাবে এই মিথ্যাচার করা হয়েছে। এবং তা করতে গিয়ে তাঁদের অনেক অসংলগ্ন ও পরষ্পরবিরোধী কথা বলতে হয়েছে বা মন্তব্য করতে হয়েছে।
তাঁরা বলেছেন আলি নির্দোষ এবং মারওয়ান ও মাবিয়ার দ্বারা ওসমান ভুলপথে পরিচালিত হয়েছিলেন তাই বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়েছে, আবার তাঁরাই অন্য জায়গায় আক্ষেপের সুরে স্বগতোক্তির মতো বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়া ও বিদ্রোহে খলিফার মৃত্যুর জন্যে দায়ী করেছেন আলী, যুবায়ের ও আবু তালহার মতো জগদ্বিখ্যাত সাহাবিদের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাকেই। ড.ওসমান গণি তাঁর লেখা উপরে উল্লেখিত গ্রন্থের ১৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
“…তাঁরা আজ সংখ্যাতে অনেক, সম্পদেও অনেক ধনশালী হয়েও, মাত্র কয়েক হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষরূপী বানরের নিকট হীনতা ও বশ্যতা স্বীকার করলো। মদীনাবাসীগণ। নিশ্চয় সেদিন কাপুরুষের কাপড় পরে নারী অপেক্ষাও অধম হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে তালহা ও যুবায়ের কী করছিলেন। তাঁরা কী আপন আপন ধনভাণ্ডার গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। আরো দুঃখ ‘শেরে খোদা’, হযরত আলীকে যখন তারা বাধা দিলেন। এবং তিনি বাধা মেনে নিলেন। তাহলে তখন কী তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে তিনিই ইসলামের ‘শেরে খোদা’। এরপরও যখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘটনা ঘটলো নবী পত্নীকে নিয়ে তখনও তিনি কোন কারণে, কিসের ভয়ে খায়বারের সেই ঐতিহাসিক তলোয়ারটি বার করলেন না। বিচক্ষণ আলী, মহাজ্ঞানী আলী, মহাবীর আলী, সেই অবস্থার পূর্ণ মোকাবিলা তিনি যা কিছুই করতেন, তাতে তাঁর বীরত্ব ও মহত্ব কমে যেতো না, বরং বেড়ে যেত। তাঁদের সেদিনের সেই মনোভাবকে ইসলামের ইতিহাস কোন পথে কোন সূত্রে ক্ষমা করবে।“
ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল এক গভীর ষড়যন্ত্রের ভয়ঙ্কর পরণতি এবং সেই বিদ্রোহে তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু ছিল সেই ষড়যন্ত্রেরই এক অতি বেদনাদায়ক ও বিয়োগান্তক কালো অধ্যায়। ইতিহাসের এই মর্মান্তিক ও কলঙ্কজনক ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল। এই ঘটনাটিই একেবারে অনিবার্য করে তুলেছিল কারবালার যুদ্ধের বিয়োগান্ত অধ্যায়কে এবং কারবালা যুদ্ধের পেছনে অন্যান্য যেসব কারণগুলি আছে তাদের মধ্যে প্রধান কারণ হলো এই ঘটনাটাই। খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তজ্জনিত কারণে তাঁর মৃত্যু মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা ছিলনা। তিনজন সাহাবির ক্ষমতালাভের আকাঙ্খা, বিশেষ করে আলীর তীব্র আকাঙ্ক্ষা খলিফার বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসন্তোষগুলিকে বিদ্রোহের পরিণতি দিয়েছিল। তাঁরা যদি অন্যান্য কম প্রভাবশালী সাহাবিদের এবং সাধারণ মুসলিম জনতার মনে নানা কারণে তৈরি হওয়া অসন্তোষকে মদত ও প্রশ্রয় না দিতেন তবে বিদ্রোহ কখনোই দানা বাঁধতে পারতোনা। অপরদিকে খলিফা ওসমান যদি আলী, যুবায়ের ও তালহার মতো ক্ষমতার প্রতি তীব্র মোহগ্রস্ত হতেন তাহলেও বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যেতো। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন এক যুগ, কিন্তু তবুও ক্ষমতা তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি, তাই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি তাঁর ক্ষমতা (একজন খলিফার ক্ষমতা) প্রয়োগ করেন নি। তিনি অদ্ভুতভাবে তাঁর জীবনের অন্তিম মূহূর্তেও নিজের জীবন ও ক্ষমতার প্রতি নিরাসক্ত, নির্মোহ ও উদাসীন ছিলেন।
আমির মাবিয়া (মুয়াবিয়া) সেই সময় ছিলেন সিরিয়ার গভর্নর। যাঁকে মুসলিম ঐতিহাসিক ও ধর্মগুরুরা কারবালা যুদ্ধের প্রধান হোতা বলে অভিযুক্ত করছেন এবং যাঁর প্রতি জঘন্য জঘন্য কুৎসিত অভিযোগ আরোপ করেছেন; তিনি খলিফার জীবন নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিদ্রোহ যে আসন্ন এবং বিদ্রোহের পেছনে কারা আছেন সে কথা তিনি অনুধাবন করতে পেরে খলিফাকে বাঁচানোর জন্য একটা মরিয়া প্রয়াস চালিয়েছিলেন। খলিফাকে তিনি দু’টি প্রস্তাব দেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি রাজধানী মদিনা থেকে দামেস্কে (সিরিয়ার রাজধানী) স্থানান্তরিত করার জন্য অনুরোধ করেন। দ্বিতীয় ও বিকল্প প্রস্তাবে অনুরোধ করেন সেনাবাহিনী থেকে তাঁর জন্য নিরাপত্তা কর্মীবাহিনী রাখতে। তিনি চেয়েছিলেন সিরিয়া থেকে কিছু বিশ্বস্ত ও দক্ষ সেনা পাঠিয়ে খলিফার প্রাণ রক্ষা করতে। খলিফা দু’টো প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেন।
প্রথম প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন,
“আমার প্রিয় নবী এই মদিনা শহরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এবং তিনিই এই মদিনাকে রাজধানীর মর্যাদা প্রদান করেছেন। আমার প্রিয় নবীর পদস্পর্শে ধন্য এবং অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত এই শহরকে আমার তুচ্ছপ্রাণের জন্য আর ততোধিক তুচ্ছ খেলাফত রক্ষার জন্য আমি কখনোই মদিনাকে ত্যাগ করতে পারবো না। নিরাপত্তা রক্ষীর প্রশ্নে বলেন, আল্লাহ ছাড়া আমি কারও প্রতি ভরসা রাখতে চাইনা, আল্লাহই আমাকে রক্ষা করবেন। সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে মদিনার সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে, আমি আমার নিজ প্রাণের কথা ভেবে জনসাধারণের অসুবিধা করতে পারি না।“
তিনি চাইলেই বিদ্রোহ দমন করতে পারতেন, পারতেন অতি সহজেই তাঁর প্রাণ ও খেলাফত রক্ষা করতে। তা যদি করতেন তাহলে হয়তো কারবালা যুদ্ধের ঘটনাও ঘটতো না। আর এই পথে ইতিহাস এগিয়ে যেতে থাকলে মুসলিম সমাজ শিয়া ও সুন্নি এই দুটি পরষ্পর শত্রুতামূলক দুটি গোষ্ঠীতেও হয়তো বিভক্ত হতো না। এক ভয়ংকর অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও অস্থিরতার মধ্যে চতুর্থ খলিফার দায়িত্বভার নিজ স্কন্ধে তুলে নিলেন আলী।
খলিফা ওসমানের বিরুদ্ধে মদিনার মানুষের কিছু অসন্তোষ ছিল ঠিকই, কিন্তু তাঁরা কখনও কল্পনাও করেন নি যে, তাঁদের খলিফাকে এভাবে হত্যা করা হবে এবং তারপর এক দঙ্গল খুনির রক্তমাখা হাত ধরে আলী খলিফার সিংহাসন দখল করবেন। তাই মদিনা ও সমগ্র মুসলিম জগতে পরিস্থিতি দ্রত পাল্টাতে শুরু করলো। একসময় ওসমানের বিরুদ্ধে কিছু পরিমাণে যে অসন্তোষ ছিল তা খুব শীঘ্রই সহানুভূতি ও আবেগে পরিণত হলো এবং অপরদিকে আলীর প্রতি যে শ্রদ্ধা ও নবীর বংশধর বলে যে আবেগ ছিল তা ক্রমশঃ হ্রাস পেতে শুরু করলো।
গোটা মুসলিম জাহানে আওয়াজ উঠল ওসমানের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কঠোর সাজা দিতে হবে। আওয়াজ তুলেছিলেন যুবায়ের, তালহার মতো বিশিষ্ট সাহাবিগণও। অবশ্য সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন সিরিয়ার গভর্নর আমির মাবিয়া। তিনি খলিফা আলীর হাতে বয়াতই (আনুগত্যের শপথ) নেন নি। বলেছিলেন, ওসমানের হত্যাকারীদের শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত বয়াত নেবেন না। এদিকে সবার প্রত্যাশা ছিল যে, খলিফা আলী নিশ্চয় ওসমানের হত্যাকারীদের কঠোর সাজা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিবেন। কিন্তু আলী সবাইকে ভীষণভাবে হতাশ করলেন। তিনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়ার বদলে তাদেরকে প্রশাসনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে উল্টো পুরষ্কৃত করলেন। আলীর এই ভূমিকায় মদিনাবাসীসহ গোটা মুসলিম জগৎ যেমন বিস্মিত হয়েছিল, ঠিক তেমনই আলীর প্রতি ক্ষুব্ধও হয়েছিল।
এদিকে যারা ওসমানকে হত্যা করেছিল সেই বিদ্রোহীরা মহা উল্লাসে নৃত্য শুরু করলো এবং মদিনার বুকে শুরু করলো দাপাদাপি ও তাণ্ডব। মদিনা ভদ্রলোক ও শান্তিপ্রিয় লোকদের পক্ষে কার্যত বসবাসের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়লো। নিজেদের মান-সম্মান রক্ষার্থে যুবায়ের, তালহা প্রমুখ সাহাবিগণ মদিনা ত্যাগ করে মক্কায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। অন্যদিকে মাবিয়াসহ কয়েকটি প্রদেশের গভর্নর আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করলেন, তাঁরা আলীকে সাফ জানিয়ে দিলেন যে, যতোদিন না ওসমানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি না দেওয়া হবে; ততোদিন আলীকে ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা হিসাবে মানবেন না। আলী কারও কথায় কান দিলেন না। উল্টো যেসব গভর্নর ওসমানের হত্যাকারীদের শাস্তির ন্যায়সঙ্গত দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন তাঁদেরকে গভর্নর পদ থেকে অপসারিত করলেন। ফলে সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে মুহাম্মদের সবচেয়ে প্রিয় পত্নী আয়েশাও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি আলির বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধে নের্তৃত্বও দিয়েছিলেন। যে যুদ্ধটি ইতিহাসে জামালের যুদ্ধ নামে অভিহিত। তবে আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্রধান ভুমিকা নিয়েছিলেন মাবিয়া। আলী ও মাবিয়ার মধ্যে বহু ও ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছিল। এইসব যুদ্ধে হাজার হাজার মুসলমান প্রাণ হারিয়েছিলেন। আলীর খেলাফতকাল মাত্র চার বছরের, তিনিও ওমরের মতো গুপ্তঘাতকের হাতে ছুরিকাহত হয়ে মারা যান। আলি ও মাবিয়ার মধ্যে চার বছর ধরে যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে কেউ জয়ী বা পরাজিত হয় নি।