কুরান কী আল্লার বাণী?
সহিহ ইসলামের সহিহ বান্দারা বরাবরই বলে আসছেন যে, আল্লাহ মেহেরবাণী করে মানুষকে অর্থাৎ কিনা মুসলমানদের একখানা দারুণ কেতাব উপহার দিয়েছেন। যার পাতায় পাতায় আল্লাহর নিজের বাণী লিপিবদ্ধ রয়েছে। কোরান যে আল্লার নিজের বাণী এই দাবি কোরানেই করা হয়েছে এবং সেই দাবির স্বপক্ষে কিছু যুক্তিও দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সেই যুক্তিগুলি দেখব।
কোরানের সুরা আন নিসার আয়াত ৮২তে বলা হয়েছে-
…Had it been from other Than Allah, they would surely have found therein Much discrepancy.
অর্থ: …পক্ষান্তরে এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও পক্ষ থেকে হত, তবে এতো অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেত।
অর্থাৎ কোরানের বক্তব্য অনুসারে যে কেতাবের মধ্যে স্ববিরোধিতা পাওয়া যাবে তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও লেখা বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
এবার কোরানের অন্যান্য আয়াতের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক।
Shall I seek for judge other than Allah. – when He it is Who hath sent unto you the Book, explained in detail.
তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন?
Or have ye a book through which ye learn?
অথবা তোমাদের কাছে কি আর কোনো কিতাব আছে যা থেকে তোমরা শিখবে?
Then what Message, after that, will they believe in?
এখন কোন কথায় তারা এরপর বিশ্বাস স্থাপন করবে?
এসব বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে সহিহ মুসলমানদের জন্য কোরানে সবকিছুই বিস্তারিত বোঝানো হয়েছে। কোরানের সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় এবং কোরান ছাড়া অন্য গ্রন্থ অনুসরণের প্রয়োজন নেই। কারণ কোরান নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ।
এবার আমরা দেখবো কোরানে সত্যিই সকল বিষয়ে সম্পূর্ণ এবং বিস্তারিত উল্লেখ করা রয়েছে কীনা।
১) প্রতিদিন প্রার্থনা:
সালাত বা প্রার্থনা (যাকে আমরা নমাজ বলি) ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ এবং সহিহ মুসলিম জীবনের আবশ্যিক অঙ্গ। অতএব নিশ্চিতভাবেই এমন একটি বিষয় নিয়ে কোরানে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকা উচিত। অথচ পুরো কোরানে কোথাও-ই বলা নেই পাঁচবার নমাজের কথা। কীভাবে নামাজ পড়তে হবে কোরানে তার বিস্তারিত বর্ণনা তো একেবারেই নেই। কোরানের মধ্যে তিনটি নমাজের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়, তা হল ফজর, ইসা ও ওয়ুস্তা নামাজ।
এখন কোনো মুসলিম যদি মনে করে অন্যের দেখাদেখি নামাজ না পড়ে নিজেই কোরান খুলে দেখে নামাজ পড়বে, তাহলে তার আর নমাজ পড়াই হবে না। দিনে কতোবার প্রার্থনা করতে হবে, কোন কোন সময়ে করতে হবে, প্রার্থনার পদ্ধতি কী হবে, ইসলামের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কোরান একেবারেই নীরব, অথচ কোরানেই বলা হয়েছে সেখানে সবকিছু বিস্তারিত জানানো আছে।
সম্ভবত কোরান লেখার সময় বিধর্মীদের গালাগালি দিতে আল্লাহ এতোটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, এমন একটা প্রয়োজনীয় বিষয় একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন। তাই পরে মুহাম্মদকে উড়ন্ত ঘোড়ায় চড়ে আল্লার কাছে যেতে হয়েছিল দিনে কতোবার নমাজ পড়তে হবে সেটা জানতে। তারপরেও আল্লার সেইসব কথাগুলি কেন কোরানের মধ্যে নেই সেটাও এক জটিল প্রশ্ন। আল্লাহর কিছু বাণী বাদ দিয়ে কোরান কীভাবে সম্পূর্ণ পুস্তক হয়ে গেল? কেনই বা আল্লাহ এমন পুস্তক বাজারজাত করতে দিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর কোনদিনই কেউ দিল না। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো- মুমিন বান্দারা তবে নমাজ পড়া শিখল কোথায়?
২) রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ইদ:
বেশিরভাগ মুসলিম জানেই না রমজানের শেষে ইদের কথা কোরানে কোথাও বলা হয় নি। রোজা পালনের সময় যাকাত এবং সালাত আদায়ের কথা কোরানে পরিষ্কার জানানো হয়েছে। কিন্তু রোজার শেষে উৎসব পালনের কোনো কথাই সেখানে নেই।
পুরো কোরানে ইদ শব্দটি একবারমাত্র ব্যবহার হয়েছে সেটিও কোনো ইসলামি উৎসবের ব্যাপারে নয় বরং খ্রিস্টানদের আচার সম্পর্কে।
কোরানের বক্তব্য অনুসারে প্রভু যিশুর এক শিষ্যের কথায় যিশু তাঁর গড এর কাছে খাদ্যের আবেদন করেন। গড সেই আবেদনমতো স্বর্গ থেকে একটি খাদ্যভর্তি টেবিল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। (৫:১১৪)
In Chapter 5 verse 114 “Said Jesus the son of Mary: “O God our Lord! Send us from heaven a table spread, that there may be for us a festival (Arabic: Eid(an)) for the first and the last of us and a sign from You; and provide for our sustenance, for You are the best Sustainer (of our needs).
কিন্তু রমজানের শেষে অথবা উপবাসের শেষে ইদ পালন করার কথা কোরানের কোথাও বলা হয় নি। অথচ কোরানেই লেখা আছে যে, এই পুস্তকে সবকিছু সহজভাবে বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছে। অন্য কোথাও থেকে কিছু শেখার প্রয়োজন নেই। তাহলে মুমিন বান্দারা ইদ পালন করতে শিখল কীভাবে?
৩) পটল তোলার পরে:
লাশ কবর দেওয়া ইসলামের আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেবল ইসলামেই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্মেই লাশ নিয়ে কী করতে হবে তার কড়া নিয়ম-কানুন নির্দেশ করা আছে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে সঠিকভাবে কবর দেওয়া না হলে মৃত ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।
ফলে লাশ নিয়ে কী কী করতে হবে সেটা তারা খুবই কঠোরভাবে নিয়ম মেনে পালন করে।
মজার বিষয় হলো- লাশ কীভাবে কবর দিতে হবে সে কথা কোরানের কোথাও-ই বলা নেই। এমনকী লাশের জন্য গোসল করানোর কথাও উল্লেখ নেই।
কবর দেয়ার আগে লাশ নিয়ে কী কী করতে হবে সে সম্পর্কে কোরান একেবারেই নীরব। তাই কেউ যদি লাশের ঠ্যাং ধরে ঝুলাতে ঝুলাতে নিয়ে যায় আর গর্তে ফেলে দিয়ে মাটিচাপা দিয়ে দেয় তাতেও ধর্মের কোন জাত যাবে না। আইসিস বা বোকোহারাম হামেশাই এরকমটা করে থাকে এবং কোরান অনুসারে তাতে কোনো পাপ হয় না।
প্রশ্ন জাগতেই পারে, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে কোরানে কিছুই বলা হয় নি কেন? যেখানে কোরানে জীবিত বিধর্মীদের হাত-পা-গর্দান কীভাবে কাটতে হবে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। এমনকী পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের কীভাবে পিটাবেন সেটাও সহজ ও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা আছে।
৪) খতনা:
মুসলমানেরা এ নিয়ে কোনোদিন কোনো প্রশ্ন তোলে না যে, এই নিয়ম কোরানের কোথায় লেখা আছে। তারা কেবল অন্ধভাবে ‘নিয়ম’ মেনে চলতেই ব্যস্ত। কিন্তু এ নিয়ম কোরানের কোথাও-ই নেই। বরং কোরানের আয়াত উল্টো কথাই বলে। মানুষ নাকী আল্লাহর নিখুঁত নির্মাণ।
দেখুন এখানে-
We have indeed created man in the best of moulds,
আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
এই অনুবাদে খেয়াল করে দেখুন, আরবি ‘আমরা‘ বহুবচন শব্দটি বাংলায় একবচন ‘আমি‘ হয়ে গেছে!
প্রশ্ন উঠবেই, কারণ মানুষ যদি আল্লাহর নিঁখুত নির্মাণ হয়ে থাকে তবে তার ওপর আবার কাটাকুটি করার প্রয়োজন হবে কেন? আল্লাহ তার কোরানে এসব করতে নিষেধ করলেন না কেন?
খতনার সমর্থনে কোরানে কিছু না থাকলেও সুন্নাহ এটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সুন্নাহ বলতে নবি আব্রাহামের সময় থেকে চলে আসা নিয়মকানুন, যা নবিরা মেনে চলতেন। কিন্তু কোরানের কোথাওই উল্লেখ নেই আব্রাহাম বা অন্য কোনও নবি খতনা করতেন। অন্যদিকে আবার আল্লাহ আদেশ করছেন অন্য সব কেতাব ছেড়ে শুধুই কোরান অনুসরণ করতে, যেখানে সবকিছু সহজ ও বিস্তারিত দেওয়া আছে। অথচ মুসলিমদের এমন একটি আবশ্যক কর্ম নিয়ে কিছুই নেই আল্লাহর লেখা এই ‘পবিত্র গ্রন্থে’।
মুসলিমরা এইসব ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় রীতির সমর্থনে বাইবেল থেকে প্রমাণ দেখায়, যেটা কীনা আবার তারাই বিকৃত হয়ে গেছে বলে দাবি করে। সে হোক বা না হোক, ইহুদি বা খ্রিস্টানরা খতনা করার সমর্থনে তাদের বাইবেল থেকে প্রমাণ দেখাতে পারে, কিন্তু কোরান এ ব্যাপারে নীরব।
হাইলাইট:
কোরান নিজেই নিজেকে সমস্ত স্ববিরোধিতা থেকে মুক্ত বলে দাবি করে (৪:৮২)
কোরান দাবী করে এই কেতাবে সবকিছু সহজ ও বিস্তারিত জানানো আছে (৬:১১৪)
মুসলিমদের অন্য কোনো কেতাবের প্রয়োজন নেই। (৬৮:৩৭)
কারণ কোরান একটি সম্পূর্ণ ধর্মপুস্তক।
এতোক্ষণ আমরা দেখলাম ইসলামের সবচেয়ে সুপরিচিত নিয়মগুলি যেমন নমাজ, ইদ, কবর এবং খতনা সম্পর্কে কোরানে কিছুই বলা হয় নি। সেক্ষেত্রে কীভাবে দাবী করা যায় যে এই গ্রন্থে সবকিছু বিস্তারিত দেওয়া আছে?
প্রকৃতপক্ষে সকল মুসলিমরাই জানে যে, আল্লাহ তার লেখা কোরান গ্রন্থে অনেক কিছুই নেই। সেইসব অসম্পূর্ণতা সামলাতেই তারা হাদিস বই অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পড়তে গেলে দেখা যায় হাদিসের মধ্যেও অজস্র অসঙ্গতি এবং স্ববিরোধিতা আছে। সুন্নিরা শিয়াদের হাদিস মানে না, শিয়ারা সুন্নিদের হাদিস মানতে চায় না। আহলে-কোরান সম্প্রদায় আবার কোনো হাদিসই মানে না। কেবল কোরান দিয়েই কাজ চালাতে চায়। হাদিস মানুক আর না মানুক, কোরান যে অসম্পূর্ণ এবং স্ববিরোধী গ্রন্থ এ কথা বহু আগেই প্রমাণিত। অতএব কোনভাবেই এই কোরান নামক গ্রন্থ ‘সর্বজ্ঞানী’ ঈশ্বরের বাণী হতে পারে না।
[পোস্টটির কলেবর বৃদ্ধি না করার জন্য এখানে কেবলমাত্র চারটি অতিপ্রচলিত ইসলামি নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরকম আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা ইসলামে নিয়মিত পালন করা হয় অথচ কোরান খুঁজলে তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। সে সম্পর্কে ভবিষ্যতে লেখার ইচ্ছে রইল।]