গত দিন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পতন এবং একটা ক্র্যাশের আশঙ্কা নিয়ে।
এইটার পেছনে কিছু ডাঁটা কোট করেছিলাম কিন্ত সুত্র গুলো
গত দিন একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পতন এবং একটা ক্র্যাশের আশঙ্কা নিয়ে।
এইটার পেছনে কিছু ডাঁটা কোট করেছিলাম কিন্ত সুত্র গুলো দেই নাই। যারা অনেক পুরাতন বন্ধু তারা রেফারেন্স গুলো কানেক্ট করতে পারবেন। কারন, এই গুলো নিয়ে নিয়মিত লিখেছি। কিন্ত নতুন নতুন অনেক বন্ধু যোগ হচ্ছেন, তাদের অনেকে ডাটা গুলোর সোর্স নিয়ে বিভ্রান্ত এবং অনেকে ভাবছেন, জিয়া হাসান এই গুলো বানায় বানায় বলছে। তাদের সবার জন্যে আমি আবার ডাটা গুলোর সোর্স দিচ্ছি। এই লেখার পর থেকে, আমার প্রোফাইল বন্ধ থাকবে। কোন প্রভোকোসেনা আগামী কিছু দিনে এই দোকান খুলবেনা কারন, সত্যি অনেক কাজ জমে গ্যাছে।
শেয়ার মার্কেট ক্র্যশ
১। অর্থনীতির একটা পরিস্কার সুত্র হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি যদি ভালো করে তবে ব্যবসায়ীরা ভালো করবে। ব্যবসায়ীরা যদি ভালো করে, তবে শেয়ার মার্কেট ভালো করবে। আমি দুইটা ছবি দিচ্ছি। একটা ছবিতে দেখতে পাবেন কিভাবে, ২০১৯ সালে এসে মার্কেটের ক্যাপিটাল টু জিডিপি রেশিও আবার ২০০০ সালের প্রিক্র্যাশ অবস্থানে ফিরে এসেছে।
জাস্ট রেফারেন্সের খাতিরে এই খানে আমরা ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত স্টক মার্কেট কিভাবে বাবেল হইছে, তার একটা ছবি রেখে যাই।
মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপির রেশিও এত কমার একটাই কারন, মার্কেট ক্র্যাশের কারনে, বিগত ১০ বছরে অনেক গুলো কোম্পানি তার ক্যাপিটাল হারাইছে। নতুন শেয়ার আসে নাই তা না। তারাও ক্যাপিটাল হারাইছে। এই মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি রেশিওকে বলা হয় বাফেট ইন্ডিকেটর, যেইটা দিয়ে মার্কেট অভার ভ্যালুড না আন্ডার ভ্যালুড সেইটা প্রমান করা যায়। বাফেট ইন্ডিকেটর ৫০% এর উপরে গেলে কোন মার্কেট নিয়ে শঙ্কিত হয়। কিন্ত, যেই মার্কেটের বাফেট ইন্ডিকেটর এত ইন্সেন্টিভ এবং ক্যাপিটাল ইনফিউসানের পরেও ৯ বছরে ৩৩.৭৩% থেকে ১৭% এর নিচে নেমে আসে, জিডিপির প্রতি বছর ৬% প্লাস প্রবৃদ্ধির পরে সেই মার্কেটকে ওয়ারেন বাফট কি বলবে আমরা বলতে পারি– স্ক্যাম জিডিপি ডাটা ।
অনেকে বলেন যে , তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতে স্টক মার্কেট গুলো এমনিতেই খারাপ থাকে। স্টক মার্কেট টা অর্থনীতির কোন ইন্ডিকেটর নয়। কিন্ত আমি জাস্ট একটা একজাম্পল দিবো, এই খারাপ অবস্থার মধ্যেই কিন্ত যে কোম্পানি গুলোর মার্কেট ফান্ডামেন্টাল ভালো সেই কোম্পানি গুলোর শেয়ার পরে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। এইখানে গ্রামিন ফোনের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ইন্ডেক্সের চিত্রটা দিলাম।
এই সেম পরিয়ডে পুরো মার্কেটের শেয়ার প্রতি আয়ের একটা চিত্র দিলাম। তাতে ইন্ডেক্স নয়, কোম্পানি গুলোর কেমন আয় করছে তার একটা চিত্র পাওয়া যাবে। নিচের ডটায় আমরা পরস্কার দেখতে পারি, বাংলাদেশের মার্কেটের শেয়ার প্রতি আয়২০১০ সালের পিকের পরে, এখন ২০০৬ সালের লেভেলে নেমে এসেছে।
লেট আস বি ভের ক্লিয়ার যে দেশের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশান জিডিপির ২০% এর কাছাকাছি, সেই দেশে লিস্টেড কোম্পানির আয় যদি এই রকম ভয়াবহ ক্র্যাশের মধ্যে দিয়ে যায় সেই দেশে, ৭% / ৮% গ্রোথ হইতে পারেনা। যেখানে এই সেম মার্কেটে ভাল ফান্ডামেন্টালের কোম্পানি গুলো লাভ করে যাচ্ছে। যদি কোন সরকার সেইটা দেখায় তার মানে সেই সরকার তার গ্রোথ ডাটার ব্যাপক ম্যানিপুলেশান করছে।
২। আসুন আমাদের সেকেন্ড ক্লেইম। প্রতি ইউনিট জিডিপি গ্রোথ তৈরি করতে আমাদের পার কেজি কী পরিমাণ তেল এর মুল্য সম পরিমাণ শক্তি ক্ষয় হচ্ছে।
এই ডাটা টায় দেখবেন। ভারত পাকিস্তান মালেশিয়া এবং ভিয়েতনামের সাথে তুলনা করলে, বাংলাদেশ হিস্টরিকালি প্রতি কেজি তেলে জিডিপির উৎপাদন করতে আমরা অনেক কম তেল খরছ করেছি। যেমন ১৯৯০ সালে, ছয় ডলারের জিডিপি প্রবৃদ্ধি করতে আমরা এক কেজি পরিমান তেল খরছ করেছি। যেইটা একই সময়ে চায়নার ছিল ১ ডলার, ভিয়েতনামের চার ডলার, ভারতের তিন ডলার এবং পাকিস্তানের পাঁচ ডলার।
এখন প্রতি কেজে তেলে বাংলাদেশের জিডিপি উদপাদন ১৪ ডলার, ভারতের ৮ ডলার ও পাকিস্তানের ৯ ডলার।
এইটার একটা কারন হচ্ছে, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক ইকনমি। তাই কৃষির উপরে নির্ভরশীল থাকলে, মোট দেশজ উদপাদনে এনার্জি খরছ কম হবে।
কিন্ত, হ্যাং অন। বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দেশ এইটা ১৯৯১ সালের জন্যে সত্য। কিন্ত ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সালে তো জিডিপিতে কৃষির অনুপাত কমেছে, ম্যানুফেকচারিনের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, প্রতি ইউনিট জিডিপি উদপাদন করতে আমাদের এনার্জি বেশী খরছ হওয়ার কথা যেইটা আমরা নিচের চার্টে দেখতে পাচ্ছি, এগ্রিকালচারের পরিমান ১৯৯১ সালের ৩২.৮% থেকে ২০১২ সালে ১৫% এর নিচে নেমে আসছে এবং ম্যানুফাকচারিনের সাইজ ২০.৭% থেকে ২৭.৯% এ উঠে আসছে– এই সময়ে ত পার ইউনিট অফ জিডিপিতে ফুয়েল খরছ বাড়ার কথা । কিন্ত বাড়ে নাই অস্বাভাবিক ভাবে আমাদের এখন প্রতি ইউনিট তেলে ১৪ ইউনিট প্রডাকশান হয় , যেইটা ৯০ সালে ছিল ৭– ডবল বারছে।
২০১০ সালের শেয়ার মার্কেটের পিক এবং ডিপ যেইটা প্রায় সব ডাটায় দেখা যায় কিন্ত যার কোন রিফ্লেকশান কোন সরকারি ডাটায় নাই–তার একটা ব্যাখ্যা:
এবং আমাদের মুল ডাটাতে ২০১০ সালের দিক একটা ডিপ বা নিচের দিকে ঝুকে পড়া এবং তার পরের একটা খুব স্টিপ উপরের মুখি উল্লম্ফন আমরা দেখি। এই প্যাটারনটা আমি অনেক গুলো ডাটায় দেখি। ২০১০ সাল ছিল, শেয়ার মারকেটের পিক। এই সময়ে শেয়ার মার্কেট বাবলের কারনে, মানুষের কাছে টাকা ছিল। এবং সেই সময়ে বাপক ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সবাই শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটায় নাই। মার্কেটের ফিল গুড ফ্যাক্টরের কারনে, নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে। আভ্যন্তরিন পোশাক শিল্প থেকে টাইলস সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে উদপাদন বেড়েছে এবং তার ফলে, ২০১০ সালে আমরা দেখি, পার ক্যাপিটা জিডিপি উদপাদন করতে তেলের খরছ কম হয়েছে। কিন্ত তার পরেই আমরা দেখি, মার্কেটের পতনের সাথে সাথে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটপুটের পতন। এবং এই সময়ে বিভিন্ন কোম্পানি ক্র্যাশ করে। আমি ইতো পুরবে লিখেছিলাম। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের কিছু বড় কম্পানির ঋণ খেলাপি হওয়া শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশের সাথে সংযুক্ত। কারনে এই কোম্পানি গুলো বড় পরিমান প্রডাক্ট নিয়ে এসে সেই গুলো সেল করতে না পেরে ধরা খায়। পরে তারা সব কিছু বেচে বিদেশে পালিয়ে যায়।
(এই নিয়ে চারটা গ্রুপের এনালিসিস করে আমার একটা লেখা ছিল, কিন্ত ফেসবুকের খুব দূর্বল সার্চ ফিচারের জন্যে খুঁজে পেলাম না। শিট।)
৩ । চতুর্থ একটা জিনিশ হচ্ছে, নাইট লাইট। লাইট লাইট ইন্ডেক্স হচ্ছে, রাত্রিকালীন আলোর ইন্ডেক্স। এইটা এস্টাব্লিশড একটা ফ্যাক্ট হচ্ছে। একটা দেশে যদি ৬% ৮% গ্রোথ হয় তবে, সেইটার কারনে, দেশের মানুষের যে প্রগতি হবে তাতে মানুষের বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে, মিল ফ্যাক্টরিতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে, রাস্তা ঘাটে বিদ্যুতের ব্যবহার পারবে। কিন্ত যে দেশ গুলো জিডিপি ডাটা ম্যানিপুলেট করবে সেই সব দেশে, রাত্রিকালীন আলোর ছটা বাড়বে না। নাসার প্রকাশিত “ব্ল্যাক মারবেল ডাটা” থেকে নেয়া বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কিছু অংশের মহাকাশ থেকে দেখা রাত্রি কালীন আলোর ২০১২ এবং ২০১৬ সালের একটা তুলনা নিচের ছবিতে আছে । এই চার বছরে, ভারতের কলকাতা বা ছত্তিসগড়ে যে পরিমান আলো বেড়েছে বাংলাদেশে তার ধারে কাছে বাড়েনি। যদিও ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে আলো বেড়েছে।
লিঙ্ক এই খানে। সিলেক্টেড কিছু ছবি
৪। মানুষের ক্যালোরিগ্রহণ এবং আয় কমেছে
ফাও এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে এবং ২০১০ ও ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের মানুষের মানুষের পরিবার প্রতি আয় এবং ক্যালোরি গ্রহন কমেছে। এইটা প্রথম দেখিয়েছিলেন, ঢাকা ইউনিভারসিটির ডঃ তসলিম। এরপরে আমরা বেশ কয়েক জন একটিভিস্ট এই ডাটাটাকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করি এবং এখন অধিকাংস অর্থনৈতিক আলোচনায় এই ডাটাটা রেফার করা হচ্ছে।
ডঃ তসলিমের কমপাইল করা ডাটা থেকে তৈরি ডাটায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালে পাঁচ বছরে মানুষের আয় বেড়েছে ১০৪০ টাকা এওবং ক্যালোরি গ্রহন বেড়েছে ৭৯। অন্যদিকে একই সুত্রে মতে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে মানুষের আয় বেড়েছে ২১৮০ টাকা কিন্ত কালোরি গ্রহন কমেছে ১০৮। যেই দেশে দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে, যেই দেশে প্রতি বছর জাতিয় আয় বেড়ে নিম্ন আয় থেকে পাঁচ বছরে মধ্যম আয় গ্যাছে, এইটা খুব ভালো প্রশ্ন দেই দেশের মানুষের খাওয়া কেন কমছে ?
তাদের পরিবার প্রতি আয় কেন কমেছে ? এই কথাটা ২০১৮ সালের ডিসেম্বারে ডক্টর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আব্দুল গফুর মেমোরিয়াল লেকচারের কি নোট স্পিচে বলার চেষ্টা করেন,
তিনি প্রশ্ন রাখেন, খানা জরীপ ২০১৬ এবং ২০১০ যাচাই করলে দেখা যায় – এই সময়ে শুধু মাত্র সব চেয়ে ধনী ৫ পারসেন্ট বাদে,দেশের সকল ইঙ্কাম লেভেলে পরিবার প্রতি আয় কমেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যেখানে ম্যাক্রো ভাবে হিসেব করলে ৬ বছরে দেশের মোট আয় পার ক্যাপিটা GNI ৭৮০ ডলার থেকে ১৩৩০ ডলার হয়েছে, মানে প্রায় ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন কেন মাইক্রো হিসেবে খানা জরিপে পরিবার প্রতি আয়– প্রথম ৫% বাদে সকলের কমে এসেছে কেন?
এবং তিনি আরো বলেন, এইটা বিসদ্রিশ কারন, ২০০৫ সালের যে খানা জরীপ তার সাথে ২০১০ সালের জরিপে কিন্ত ঠিকই আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং সেই আয় বৃদ্ধি – জিডিপির প্রবৃদ্ধির সাথে সমতা রাখে। “
তার ওই স্পিচে এই সময়ে উপস্থীত অনেক অর্থনীতিবিদেরা হই চই করেন যা পরের দিন প্রথম আলোতে ছোট করে প্রকাশিত হয় এবং আমি অন্য অর্থনীতিবিদ এবং সাংবাদিকদের কাছেও এই ক্যাচালের কথা শুনি । দেবপ্রিয় সাহেবের কি নোট একটা কপি আছে এই খানে।
৫। আমি আরো বলেছিলাম, সরকার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন দাবি করছে, সেইটা হচ্ছে শুধু মাত্র উদপাদনের ক্যাপাসিটির উন্নয়ন। কিন্ত ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালে , ১০ বছরে সরকারের দেশের মানুষের বিদ্যুতের খরছ সরকারি ডাটা মতেই, মাত্র দুই গুন বেড়েছে। অথছ এই সময়ে নমিনাল জিডিপি হিসেবে করলে, প্রায় ১৫০% গ্রোথ হয়েছে।
বিবিএসের উৎপাদন শিল্প জরিপে শিল্প কারখানার সংখ্যা কমেছে
বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০১৯ সালের মার্চে প্রকাশিত সারভে অনুসারে জাতিয় ইউনিভারসিটির গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭০%
বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ–২০১৫ অনুসারে দুই বছরে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে মাত্র ৬ লাখ। link
ভুয়া ডাটার আরো পরিস্কার প্রমান
সরকারের ডটা লুকানোর আরো প্রমান। এক্সটারনাল ডেবট নিয়ে ভয়ঙ্কর লুকোচুরি
অলস বিবিএসের ডাটাচুরি পাঁচ বছর ধরে ছাগলের গ্রোথ ২.৩৮%
কেন ক্রাশ ? কিসের ক্রাশ ? কেমন ক্রাশ ?