কোথাও কেউ নেই

14 মতামত পাওয়া গেছে

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে @রুশদী,

হুমায়ুন আহমেদ এর অনেক উল্যেখযোগ্য বই আছে। যা লিখে শেষ করা যাবে না।

হলো টার্গেটেড পাঠক গোষ্ঠি কর্তৃক তার লেখার সমাদর পাওয়ার মাঝে।

হুমায়ুন আহমেদ নিঃসন্দেহে একজন অত্যন্ত সফল লেখক। তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি পাঠক সমাজের এক বৃহত্তর অংশকে ব্যাপক বিনোদনও দিয়েছেন। 

    এমন এক সময় ছিল, সত্যি বলতে কি আমরা বা আমাদের সমসাময়িক যারা, তখন বেশীর ভাগ ভারতীয় সাহিত্য, বা ভারতীয় লেখকের বই খুঁজতাম এবং তা পড়তাম। আমার মনে পড়েনা এমন লেখক কম আছে যার বই আমি পড়িনি।

    সে নীহাররঞ্জন হোক, রবীন্দনাথ ঠাকুর হোক, বিমল মিত্রের কড়ি দিয়ে কিনলাম হোক, যাযাবর, শরৎ  বিভূতি ভূষণ,

    হালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার,ইত্যাদি। আরো লিখলে তালিকা দীর্ঘ হবে।

    কিন্তু, বাংলাদেশে তরুণ সমাজ’কে অন্তত পাঠ মূখি বই হাতে ধরাতে সক্ষম হয়েছেন  প্রয়াত নন্দিত লেখক হুমায়ুন

    আহমেদ। অত্যন্ত সহজ ভাষায় কি করে পাঠক’কে হাতে ধরে ঘটনার মূলে নিয়ে যেতে পারেন, সেই কথার যাদুকর সেই লেখার যাদুকর হুমায়ুন আহমেদ।

    ভারতীয় বই যে কেবল ভালো আমাদের দেশে লেখক নেই, এই  অসত্য তথ্য থেকে তিনি বাংলাদেশ’কে বাঁচিয়ে ছিলেন।

    আমি বলছিনা তার সব লেখা মান সম্মত। কিন্তু, পাঠক তার বই হাতে পেলে শেষ না করে উঠতনা। এমনই যাদুকরি

    ক্ষমতা ছিল।

    এর পরে আসি চলচিত্রের কথায়-

    মানুষ সিনেমা হল ভুলে যেতে বসেছিল। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, এবং শিক্ষিত সম্প্রদায়-তিনি সম্ভবত”আগুনের পরশমনি” দিয়ে তার  চলচিত্রের যাত্রা শুরু করেন। এর পরে একে একে  কতো ছবি নির্মান করলেন,

    আর সেই সাথে ছিল টেলিভিশনের পর্দার ছোট নাটক।  আমি তার নিজের এক আত্ম-কথনে পড়েছি,

    তার নিজের কোনো টেলিভিশন ছিলনা, তখন তাঁর কন্যারা পাশের বাড়ি গিয়ে টেলিভিশন দেখত। একদিন ম্লান

    মুখে মেয়েরা ফিরে আসায় জানা  গেল- ঐ বাসায় মেহমান  এসেছে তাই তারা চলে এসেছে। কী করুন কথা।

    এর পরে তিনি স্থির করলেন এই নাটকের টাকা দিয়ে তিনি টেলিভিশন কিনবেন।এক পরিচালক  তাঁকে জিজ্ঞেশ করায়  তিনি অম্লান বদনে তাই বলাতে পরিচালক ক্ষেপে  গিয়েছিলেন। সেই পরিচালকই পরে দুঃখ করে বলেছিলেন “ঘটনাটা আমি জানতাম না”।

    নাটক’এমন জনপ্রিয় হয়েছিল যে এক বাকের ভাই বলে এক চরিত্র ছিল। তো তার বিচারে ফাঁসি হবে। সারা দেশে মিছিল বের হয়ে গেল’ বাকের ভাইয়ের ফাসি হতে দেয়া যাবে না”

    আর এক নাটকে তিনিই সর্ব প্রথম টিয়া পাখির মুখ দিয়ে বের করেন” তুই রাজাকার”। যখন রাজাকার শব্দ কেউ উচ্চারণ করতে সাহস পেতনা।

    এই থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?

    পাঠক আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

     

      বাংলাদেশে তরুণ সমাজ’কে অন্তত পাঠ মূখি বই হাতে ধরাতে সক্ষম হয়েছেন  প্রয়াত নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদ।

      এক্কেবারে মনে কথা খান কইছেন দিদি। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবর ফেইসবুকে পড়ার পর এইটিই ছিল আমার প্রথম মন্তব্য।

      বাংলাদেশী মুসলমানদের বই পড়ার বিষয়টি সামনে আসলেই সৈয়দ মুজতবা আলীর “বই পড়া” রচনাটির কথা মনে পড়ে। শ্রদ্ধেয় মুজতবা আলী নিঃসন্দেহে হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে গর্ব করতেন।

অনেকদিন বিদেশে থাকার কারণে হুমায়ূন আহমেদ সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানিনা। রূপালী ঘুড়ির এই লেখাটা পড়ে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো পড়তে আগ্রহী হ’লাম।

হুমায়ুন আহমেদকে আমি যখন চিনতাম না, তার আগেই তার সৃষ্টি দেখে ফেলেছিলাম। ১৯৯০ এর আশেপাশে বিটিভিতে হতো “অয়োময়”। আমাআমাআবব আমাদের বাড়িতে টিভি ছিলো না. পাশের বাড়ি প্রতি শুক্রবার মা এর সাথে যেতাম দেখতে। পাখি মামা, মির্জার নাম দুটি এখনো মনে আছে। আমি হুমায়ুনের নাম জানতাম না, কিন্তু সেই নিস্তরঙ্গ গ্রাম্য জীবনেও কিন্তু হুমায়ুনের নাটক সাড়া ফেলেছিল। এতোটাই যে আমার বাবা তার বন্ধু কলেজের বাংলার অধ্যাপকের কাছে ছুটে গেছিলেন “অয়োময়” কথার মানে জানতে। আমার এখনো ব্যাপরটা মনে আছে, যদিও অয়োময়ের অর্থটা আর মনে নেই। তবে বাংলা ডিকশনারী ঘেটে সেই অধ্যাপক কি যে বলেছিলেন জানার ইচ্ছেটা আবার নতুন করে হলো।

খুব সম্ভবত হিন্দু ধর্মীয় কোনো চরিত্রের নাম জড়িত ছিলো অয়োময় এর সাথে। আমার যদিও মনে নেই ঠিক। তারপরে হুমায়ুন পড়লাম, তার বই দুইবার পড়েছি খুবই কম। স্কুল জীবনেই ছায়াসঙ্গী বলে ভূতের গল্পের একটা বই ছিলো আমার কাছে, যেটার কিছু গল্প পড়ে আমি সত্যি রাতে ঘুমাতে পারিনি কিছুদিন। শেষের দিকে এসে তার লেখা আর পড়তে ইচ্ছা করতো না, তবে একবার শুরু করলে শেষ না করে থামা যেত না। কিছু জিনিস তার লেখায় কমন ছিল, যেমন অসম্ভব রূপবতী নারী, পাগল চরিত্র, সৎ স্কুল শিক্ষক… এরকম অনেক কিছু। তার অনন্ত নক্ষত্রবীথি পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম।

 

বাণিজ্যিক ভাবে লেখা কিছু বই পড়তে ইচ্ছা করেনি, তাছাড়া তার লেখা ছাড়া যায়নি। তিনি রাজাকার বিষয়ে সরব হয়েও অদ্ভুতভাবে বিতর্ক এড়িয়েছেন, জামায়াতের নাম কোথাও নেননি। আবার কোথাও ইসলামী বিশ্বাসের বাইরে গিয়েও কথা বলেছেন তার চরিত্রের মুখ দিয়ে, কিন্তু মেষের দিকে আবার ধর্মের পক্ষেও অনেক কিছু বলেছেন। সবমিলিয়ে হুমায়ুন আহমেদ মনে রাখার মতোই চরিত্র। তার পারিবারিক জীবন শান্তির হলো না, এটাই মনে হয় ট্রাজেডি।

লেখায় yes আর হুমায়ুনের জন্য heart

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বলছি। জনাব আলমগীর হুসেন’কে দেয়া  আমার লেখাটা পড়লে কিছুটা আরো জানতে পারবেন।

    দেখলাম। খুব ভাল লাগলো।
    বাঙালিদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাসের যে অভাব তা আর বলতে! আর একটা বিষয় হচ্ছে বাঙলিরা অন্য ভাষায় বই পড়তে মোটেই আগ্রহী নয়। তাই বিশ্ব-জ্ঞানে তারা অনেক পিছিয়া আছে।
    আমি সিডনিতে ট্রেনে যাতায়াত করি। প্রতিদিন যাতায়াতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় কেটে যায়। একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করি এখানকার বসিন্দারা (মানে পশ্চিমা) প্রায়ই একটা কিছু পাঠ করে এই সময়টা কাটায়। আর লক্ষ্য করেছি ভারতীয়রা (বাঙালি, পাকিস্তানি, নেপালি অন্তর্গত) সময় কাটায় মোবাইল ফোনে অথবা উচ্চৈস্বরে গল্পগুজব করে। কোন ভারতীয়র হাতে বই দেখা অতিশয় বিরল।
    গত কয়েক বছর যাবৎ আমি এই দুই ঘণ্টা সময় বই পড়ি। আশ্চর্য হলাম, বছরে আমি নূন্যতম চারটি মাঝারি সাইজের বই শেষ করতে পারি।

 

বাঙ্গালিদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস কম এই কথাটা সঠিক কিনা বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি। অবশ্যই তারা বই পড়ে। আমি বলেছি নতূন প্রজন্মের কথা। ছাপা বই পড়তে আগ্রহী কম তারা। সেই ব্যাপারে বাঙালি হোক, আর পশ্চিমা হোক। নতূন প্রযুক্তির কারনেই বোধ করি এমনটি ঘটেছে। আর নতূন প্রযুক্তি  আমাদের ছেলেমেয়েদের কারা ধরিয়েছে? এই পশ্চিমারা। কাদের নিজের সংস্কৃতি ভুলিয়ে নতূন প্রযুক্তি ধরিয়ে ব্যাবসা সফল হয়েছে? এই পশ্চিমারা।

আমরা বাঙ্গালিরা অনেক মহান বলেই আত্ম সমালোচনা করছি। কিন্তু ওরা করবে না।

আজ মোবাইলের ব্যাবসা রম-রমা, ইন্টারনেট এর কারনে ছেলে মেয়েরা কেউ বই ধরতে চায়না। সবই পশ্চিমাদের ব্যাবসার কারনে।

আমি এটা বলছিনা যে সবই খারাপ। কিন্তু, সব কিছুর সুফল-কু-ফল দুইটাই আছে। আমাদের মাঝে যে কতো জ্ঞানী, গুনীদের পশ্চিমারা কিনে নিয়ে সেই মাথাগুলো তারা খাটাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।

দুঃখিত। এই সবই আমরা আলোচনার খাতিরে আলোচনা করছি। বাঙ্গালিদের কেউ এমন গণ-ভাবে বললে নিজে বাঙালি গায়ে লাগে বৈকি!

আর হা,

আড্ডা, আলোচনা, এইসবের দরকার আছে। এতে শরীর স্বাস্থ ভালো থাকে। এক্কেবারেই মুখে কুলুপ এটে থাকা স্বাস্থে্র জন্য হানিকর। আমি তো দিব্বি আড্ডা মারতাম আগে। বিবাহের পরে আমার উপরে বিধি নিষেধ আরোপ হবার কারনে আড্ডা নেই। আমার শরীর ও তেমন নেই। সেই যে গানটা মনে পড়ে গেলো মান্না দের

-কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই

আজ আর নেই”

সবই কথার কথা। আলোচনা। @ আবুল কাশেম  ভুল কিছু বললে মাফি–

    রূপালী ঘুড়ির সাথে আমি মোটামুটি একমত।
    তবে সবার কাছ থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি সেই হিসেবেই লিখেছিলাম।
    পশ্চিমাদের অনেক অভ্যাসই আমার ভাল লাগে না। তবে এদের অনেক গুণেরও আমি প্রশংসা করি। এদের সবচাইতে বড় গুণ হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীলতা।

      @আবুল কাশেম
      পশ্চিমাদের আইনের প্রতি ও অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আসলে ঠিক। আমাদের মাঝে এই সহনশীলতা কেন নেই, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি মাঝে মাঝেই চিন্তিত হই। এক এক মানুষের মত একেক হতে পারে। যেমন হাতের পাঁচটি আঙ্গুল সমান নয়। অথচ আমরা জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দিতে তৎপর হয়। এটা আমাদের স্বভাবের বিরাট ব্যর্থতা।
      আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার অদূর ভবিষ্যতে আশা দেখিনা। কেননা যেখানে আইন প্রয়োগকারীরাই কী করে আইন ভংগ করা যায় সেই পথ দেখিয়ে দেয়, সেখানে আইনের প্রতি কী করে শ্রদ্ধাশীল হবে জনগণ?

এটা একটা বাস্তবতা। তবে বাংগালীর নয়, সমস্ত মুসলিম বিশ্বেরই এটা সমস্যা। কোরান-হাদিসের বাইরে যাদের কিছুই দরকার নেই — সেটাই যাদের মূলমন্ত্র তাদের মাঝে বই পড়ার ঝোক থাকবে কোথা থেকে। তবে হ্যা, বাঙ্গালী মুসলমানরা আরব মুসলমানদের তুলনায় বইয়ের প্রতি বেশী আসক্ত হতে পারে।

১৮ কোটি মানুষের দেশে একটা সারা জাগানো বইয়ের কাটতির পরিসংখ্যাণ নিলেই আচ করা যায় বাংগালীরা কতটা বই পড়ে। আমেরিকার প্রত্যেক কোণায় কোণায় বিশাল বিশাল পাবলিক লাইব্রেরী। অথচ ৩০ কোটি মানুষের সে দেশে অথচ একটু সারা জাগালেই সে বই মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যায়। বিশেষ সারা জাগানো বইতো (যেমন ড্যান ব্রাউনের) বের হওয়ার আগে কয়েক মিলিয়ন কপি অর্ডার হয়ে বসে থাকে।

@আলমগীর হুসেন

হা হা, তা কেনো হবে? আপনি আমি বা আমরা সবাই বই পড়ছিনা? এমন অনেকেই আছেন বই পড়েন। নাহলে ছাপানো বই তো অবিক্রীত হয়ে পড়ে থাকতো।
ড্যান ব্রাউন হচ্ছেন মহাসাগর, সেই তুলনায় আমাদের হুমায়ুন আহমেদের বই পঞ্চাশ হাজার ছাপানোর সাথে সাথে নিমিষে বিক্রি হয়ে যেতো। প্রকাশক পাঠকের হাতে বই তুলে দিতে হিম-সিম খেয়ে যেতেন। এইটাই বা কম কী এই দরিদ্র দেশে?

    আমি সম্পূর্ণ আশাহত নই।
    আজকাল প্রতি বছর ‘বইমেলা’ হয়। এই অনুষ্ঠানে লোকের আগ্রহ ও জমায়েত দেখে মনে হয় বাঙলাদেশে বই পাঠকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং বাড়ছে। এট খুবই আশার কথা।
    চল্লিশ বছর পূর্বে যখন দেশে ছিলাম–তখন বইমেলা নামে কোন অনুষ্ঠানের কথাও শুনি নাই। অবশ্য তখন আমরা ছিলাম পরাধীন–পাকিস্তানের গোলাম।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।