৬১৩ বার পঠিত
আমাদের অনেক মুসলমান ভাই-বোনই দাবী করেন যে ইসলাম শান্তির কথা, ভ্রাতৃত্বের কথা, সম্প্রীতির কথা, ভালোবাসার কথা বলে। এই দাবী অমূলক নয়। কোরআন, হাদিস ধরেই তারা তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি দিতে পারেন এবং দেনও। আবার বিপরীতে যে মুসলমানরা ধর্মযুদ্ধের কথা, প্রতিশোধের কথা, ঘৃণার কথা বলেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। এরাও কিন্তু কোরআন, হাদিস ধরেই তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি দিতে পারেন এবং দেনও।
এই দ্বিমুখী অবস্থানের কারণও আছে। আমার মনে হয় সিংহভাগ মুসলমানই তাদের নিজেদের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরআন ভালোভাবে বুঝে পড়েননি বা পড়েন না। আবার যারা কোরআন নিজের ভাষায় কভার-টু-কভার পড়েন তাদের ক্ষেত্রে তিন ধরনের ফলাফল বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
প্রথম প্রতিক্রিয়া: কভার-টু-কভার কোরআন পড়ে পাক্কা মুসলমানরাও নাস্তিক হয়ে যান।
দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়া: কভার-টু-কভার কোরআন পড়ে আপাত কোমল মুসলমানরাও ভয়াবহ ঘৃণায়, ভয়াবহ শোভিনিজমে আক্রান্ত হোন।
তৃতীয় প্রতিক্রিয়া: কভার-টু-কভার কোরআন পড়ে আপাত শোভিনিস্ট মুসলমানরাও অনেক কোমল, হৃদয়বান, স্পিরিচ্যুয়াল হয়ে যান।
এই যে একই বইয়ের তিন ধরনের বিপরীতমুখী প্রভাব এটাও কিন্তু একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ধর্ম জিনিশটাইতো দাঁড়িয়ে থাকে ধার্মিকের ইন্টারপ্রিটেশনের ওপর। সহিহ ধর্ম বলেতো আসলে কিছু নেই, আছে একই ধর্মের অসংখ্য ইন্টারপ্রিটেশন। এর সবগুলোই সহিহ, আবার সবগুলোই ভুল।
আইসিসের জিহাদিদের যারা মুসলমান বলে মানতে চান না, তারা একটা হাস্যকর ফেলাসিতে লিপ্ত হোন – তারাও কিন্তু আইসিসের মতোই তাকফির করেন।
কোরআন, হাদিস থেকে নির্দেশনা নিয়ে জিহাদ করছে যারা; দাসপ্রথা ফিরিয়ে এনেছে যারা; মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে মানুষের শিরোচ্ছেদ করছে যারা; নারীদের ঘরে বন্দী করছে যারা, সমকামীদের উঁচু দালানের ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করছে যারা; ইহুদি, খ্রিস্টান আর অন্য ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার চাষ করছে যারা, তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে দেওয়ার অধিকার কার আছে?
শ্রীলংকায় হামলার পর থেকেই দেখছি কিছু মুসলমানের প্রতিক্রিয়া। আইসিস নাকি ইহুদিদের সৃষ্টি, শ্রীলংকার হামলা নাকি হিন্দুদের ষড়যন্ত্র! মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে এতো ঘৃণা, এতো বিদ্বেষ, এতো জাত্যাভিমান থাকতে আইসিসের মতো গ্রুপ তৈরির জন্য ইহুদিদের মোসাদ বা হিন্দুদের র বা খ্রিস্টানদের সিআইএ কেন লাগবে? আপনি যদি মুসলমান হোন, তাহলে এই প্রশ্নটা আগে নিজেকেই করুন।
মুসলমান হিসেবে আপনার কি জাত্যাভিমান আছে?
আপনার কি নাস্তিক-মুরতাদদের কল্লা ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়, বা নাস্তিক-মুরতাদদের ফেলে দেওয়া কল্লা দেখলে উল্লাসবোধ হয়?
আপনি কি নারীবিদ্বেষী – নারীদের কাপড়ে মুড়ে ঘরে বন্দী করে রেখে দিতে চান?
আপনি কি সমকামী, সমপ্রেমীদের ঘৃণা করেন?
আপনি কি ইহুদি-বিদ্বেষী – হিন্দুদের ‘মালাউন‘ বা ‘মূত্রখেকো‘ ডেকে আনন্দ পান?
প্রশ্ন করেই দেখুন যে, আপনার মনের মধ্যেই কোন আবু বকর আল বাগদাদী ঘুমিয়ে আছে কীনা। আইসিসের ইসলাম যদি আপনার ইসলাম না হয় তাহলে কোনটা আপনার ইসলাম সেটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। সন্ত্রাসী হামলার পরে নিত্যনতুন কন্সপিরেসি থিওরি না খুঁজে বরং সেটাই করুন। আর সময়-সুযোগ মতো কোরআন পড়ে নিন, কভার-টু-কভার।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
মে ৮, ২০১৯; ৮:৪১ পূর্বাহ্ন
বিশ্লেষণ টা অসাধারন লাগল