আমাদের দেশের শতকরা আশি ভাগ নারী তার নিজ গৃহে তারই অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। আমরা নির্যাতন বলতে মূলত শারীরিক নির্যাতনকেই বুঝি। কিন্তু শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক নির্যাতন অনেক অনেক বেশী ক্ষতিকর এবং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। এতে ক্ষতির পরিমাণও সুদূরপ্রসারী। দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর কোন কোন আচরণগুলো মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা পরিস্কার নয়। আসুন জানি।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানসিক নির্যাতনমূলক আচরণগুলোকে প্রধান তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন –
১. মৌখিক আক্রমণ ( যেমন – এমন কিছু বলা যা অন্যকে কষ্ট দেয় বা বিরক্ত করে),
২. প্রভুত্বব্যঞ্জক আচরণ (যেমন – কোন কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা),
৩. ঈর্ষামূলক আচরণ ( যেমন – অন্যর ক্ষমতা, যোগ্যতা, ইচ্ছা, ভাললাগা, সামর্থ.. ইত্যাদি মেনে নিতে না পারা)।
উক্ত শ্রেণীর আলোকে আসুন দেখি, কোন কোন আচরণগুলো মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে?
১. বিচ্ছিন্নকরণ:
বিয়ের পর আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, এমন কি সোশাল মিডিয়া থেকে স্ত্রীকে দূরে থাকতে বলাটা (স্ত্রীরা সাধারণত স্বামীকে তা বলেনা) মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। এতে বউরা তার কষ্ট বা আনন্দ কারো সাথে শেয়ার করতে পারেনা। বিয়ের পর একা একা সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে বউরা কষ্ট পায়। তাছাড়া বাক স্বাধীনতা ও চিন্তার স্বাধীনতা যেকোন মানুষের মৌলিক অধিকার। দু’একজন বাদে প্রায় সব স্বামীই স্ত্রীর সোশাল মিডিয়া (যেমন – ফেসবুক) ব্যবহার করা মোটেই পছন্দ করেনা, ব্যবহার করতে দেয়না, দিতে চায়না। আমি অনেক মহিলাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি। সবার মতামতই এক। প্রায় সব স্বামী বউয়ের সাথে তার পুরনো বন্ধুদের কথা বলা, চ্যাট করা সহ্য করতে পারেনা। অথচ স্বামী নিজে সবই করে।
২. গালিগালাজ করা:
স্বামী বা স্ত্রী যদি একে অন্যকে এমন ভাবে উত্যক্ত করে, যাতে অন্যজন উঁচু স্বরে কথা বলতে বাধ্য হন বা স্বামী রেগে যাবে- সবসময় স্ত্রী এই চিন্তা করেন, তাহলে বুঝতে হবে স্ত্রী মানসিক নির্যাতনের শিকার। অন্য মানুষ বা বাচ্চাদের সামনে গালি দিলে সেটা ভয়াবহ।
৩. মিথ্যা কথা বলা আর মিথ্যা অপবাদ দেয়া:
দূর্ব্যবহার করে পরমুহূর্তে তা অস্বীকার করাও মানসিক নির্যাতন। “আমি রাগ করার মত কিছু বলিনি, কি এমন বলেছি? খারাপ কি বললাম? আমি তো আপত্তিকর কিছুই বলিনা” – এরকম মিথ্যা বলা এবং “তুমি ভাল মা না, তুমি সারাদিন কিছুই করনা,… ” এ ধরণের অপবাদ বউয়ের জন্য চরম হতাশা ও মানসিক কষ্টের কারণ।
৪. সন্দেহ প্রবণতা:
এটি মানসিক রোগ এবং নির্যাতন। অতি চালাক পুরুষরা, “আমিতো তোমাকে খুব ভালবাসি, তাই কারো সাথে তোমাকে হেসে কথা বলতে দেখলে সহ্য করতে পারিনা” – এমন ফালতু যুক্তি দেয়। সমাজে এমন লোকও থাকবে যারা বলবে, “এই মেয়েকে স্বামী কেন সন্দেহ করছে? তার নিশ্চয়ই কোন দোষ আছে।” এক্ষেত্রে মেয়েরা অনেক সময় এই বিষয় গুলোকে victim shaming এর ভয়ে চেপে রাখে।
৫. বিয়ের পর লেখাপড়া বা চাকরী ( কোন কাজ বা শখ পূরণ) করতে না দেয়া বা এ ব্যাপারে সহায়তা না করা:
এটিও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের পর অনেক মেয়েকে লেখাপড়া ও চাকরী করতে দেয়া হয়না। পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া হয়, চাকরীর চেষ্টা করতে দেয়া হয়না। চাকরী করলেও বিয়ের পর চাকরী ছাড়তে বাধ্য করা হয়। চাকরী করতে দিলেও চাকরীর প্রয়োজনে ট্যুরে যেতে না দেয়া, পুরুষ সহকর্মীদের নিয়ে বউকে সন্দেহ করা, অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলে কৈফিয়ত চাওয়া,.. এসবও নির্যাতন। চাকরী একটি মেয়ের আত্মসম্মান ও বাড়তি আয়ের উৎস। একটি মেয়েরও ভাল ক্যারিয়ার পাবার অধিকার আছে। বাড়ীতে বসে থাকা মায়ের সাথে তুলনা করে তাকে হেয় করাও মানসিক নির্যাতন।
৬. সন্তানের সব সিদ্ধান্ত একা একা নেয়া:
এটিও মানসিক নির্যাতন। অধিকাংশ পরিবারে সন্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বাবার সিদ্ধান্তই শেষকথা। সন্তান কি করবে, কি পড়বে, কি চাকরী করবে, কোথায় বিয়ে হবে,… এসব বিষয়ে স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এমনকি সন্তানের কোন কোন বিষয়ে মায়ের মতকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
৭. টাকা পয়সা সম্পূর্ণ একা নিয়ন্ত্রণ:
টাকা এককভাবে স্বামীর নিয়ন্ত্রণ করাও মানসিক নির্যাতন। এতে স্ত্রীর চাহিদা ও অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়। স্ত্রী আয় বা সঞ্চয় করলে সে টাকাও স্ত্রীকে স্বাধীনভাবে খরচ করতে দেয়া হয়না। স্ত্রীর বাবার দেয়া সম্পদও স্বামীরা নিজের আয়ত্তে রাখে। অনেক স্বামী বউকে টাকা দেন বটে। তবে প্রতিটা টাকার হিসাব চান। এটি অনুচিত। কারণ সব মানুষের কিছু ব্যক্তিগত প্রয়োজন থাকে, যার কথা বলা অস্বস্তিকর। স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য বা পিতার সম্পত্তির ভাগ নেবার জন্য চাপ দেয়া বা বাধ্য করাও মানসিক নির্যাতন।
৮. বাহ্যিক সৌন্দর্য আর পোশাক নিয়ে মন্তব্য:
বাহ্যিক রূপ, সৌন্দর্য নিয়ে কটাক্ষ করাও মানসিক নির্যাতন। এ পোষাকে তোমাকে মানাচ্ছে না, এটা পরতে পারবে না, হিজাব বা সংক্ষিপ্ত পোষাক পরতে হবে- এগুলো সবই মানসিক নির্যাতন।
৯. প্রতি মুহুর্তের হিসেব চাওয়া:
বাসায় কি করছ, অফিসে কি করছ, এত দেরী হল কেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে- এরকম প্রতি মুহূর্তের হিসাব চাওয়া মানসিক নির্যাতন। হিসাব দেয়া বিরক্তিকর ও অপমানজনকও বটে। কোন বউ কি স্বামীকে এমন প্রশ্ন করে? করলেও কি স্বামীরা জবাব দেয়?
১০. অন্য মানুষের সামনে বিব্রত করা:
নিজের শখ, কাজ বা কোনকিছু নিয়ে অন্য মানুষের সামনে হেয় বা বিব্রত করা অন্যায়। এটিও মানসিক নির্যাতন। এতে মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে।
১১. আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা:
তুমি এটা পারবে না, তোমাকে দিয়ে হবেনা, তুমি কিছুই পারনা – সবসময় এমন নেতিবাচক ও অপমানজনক কথা বললে নিজের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। এটিও মানসিক নির্যাতন। এসব বলে বলে স্ত্রীকে অনেককিছু করা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। ফলে বউরা উদ্যোগী হয়ে কিছু করার মনোবল পায়না।
১২. সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট:
স্ত্রীর সাথে কথা না বলা, অসুখী চেহারা করে থাকা, উপেক্ষা করা, মুখ কালো করে থাকা, স্পষ্ট করে স্ত্রীর দোষ কি তা না বলা – এগুলো সবই স্ত্রীর প্রতি মানসিক নির্যাতন। এসব করলে সবসময় স্ত্রী ভয়ে ভয়ে থাকে, নিজেকেই দোষী ভাবে। একসময় মনে করে যে, সে নিশ্চয় এমন কিছু করেছে, যারজন্য এমন ব্যবহার পাচ্ছে।
১৩. চলাফেরায় স্বাধীনতা না দেয়া:
এটিও মানসিক নির্যাতন। বরের অনুমতি ছাড়া মেয়েরা কোথাও যেতে পারেনা (মায়ের বাড়ীও না)। এটি তার মানবাধিকারের পরিপন্থী। স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার যেকোন মানুষের মৌলিক অধিকার।
১৪. স্বামীর অনুমতি ছাড়া কিছু করতে না দেয়া:
এটিও মানসিক নির্যাতন। এজন্য স্ত্রীর সৃজনশীলতা থাকলেও স্বামীর অনুমতি না পাওয়ার কারণে তা প্রকাশ পায়না। ধীরে ধীরে সে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেনা, সারাজীবন পরনির্ভরশীল থেকে যায়।
সব মানুষের কিছু ভাললাগার জায়গা থাকে। সেটি করার অধিকার ও সুযোগ না পাওয়া মানসিক নির্যাতন। কেউ লিখতে চায়, কেউ গান শুনতে ভালবাসে, কেউ নাচতে, পারে, কেউ কবিতা আবৃত্তি করতে পছন্দ করে। প্রতিটা মানুষকে তার পছন্দের কাজটি করার সুযোগ দিতে হবে।
১৫. স্ত্রীর সাংসারিক কাজকে অবজ্ঞা করা:
এটিও মানসিক নির্যাতন। “সারাদিন ঘরে বসে তুমি কি কর? সংসারের বা সন্তানের ভালর জন্য তুমি কি করেছ?..” এ ধরণের প্রশ্ন করা স্ত্রীর পরিশ্রমকে খাটো করা ও স্ত্রীর মনোকষ্টের কারণ। স্বামীর এমন আচরণ দেখে শিশুরা মায়ের কাজ বা পরিশ্রমকে ‘ফালতু’ ভাবতে শেখে। মায়ের ভূমিকাকে গুরুত্বহীন মনে করে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা হারায়। এতে মা সন্তানের সামনে চরমভাবে অপমানিত হন।
১৬. স্বামীর বহুবিবাহ:
সব ধর্মে বহুবিবাহ জায়েজ। কোন কারণ না দেখিয়েও স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া যায়, না দিয়েও একাধিক বিয়ে করা যায়। তাই বহু স্বামী বউ ছেড়ে গিয়ে আবার বিয়ে করে, করতে পারে। তাতে স্বামীর কোন শাস্তি হয়না। এমনকি, স্বামীর একাধিক স্ত্রীর সাথে একসাথে সংসার করতে বাধ্য করাও স্ত্রীদের প্রতি চরম মানসিক নির্যাতন।
১৭. দোষারোপ করা:
পরিবারে সব খারাপ বা নেতিবাচক ঘটনার জন্য স্ত্রীকে দায়ী করা হয় যা তার প্রতি মানসিক নির্যাতন। যেমন- সন্তান ফেল করলে, বখে গেলে, দোষ করলে, ভুল করলে, প্রেম করলে, চুরি করলে… তার দায় মায়ের।
১৮. কোনকিছু চাপিয়ে দেয়া:
হিন্দু মেয়েরা বিধবা হলে গহনা-শাঁখা-সিঁদুর খুলে নেয়া হয়, চুল কেটে দিয়ে কুশ্রী করা হয় যাতে কেউ তাকে পছন্দ না করে, বিয়ে করতে না চায়। যৌন চাহিদা অবদমনের জন্য ধর্মের দোহায় দিয়ে বিধবাদের নিরামিশ খাওয়ানো হয়। রঙ্গীন পোষাক, রূপচর্চা সব নিষিদ্ধ ছিল বিধবাদের জন্য। এখনও মুসলিমদের মধ্যেও বিধবাদের গহনা পরা, রঙীন পোষাক পরা, বিয়ে বা উৎসবে যাওয়া.. ভাল চোখে দেখা হয়না। এসব করার কারণ হলো, স্বামী ছাড়া সমাজে মেয়েদের অবস্থান দূর্বল ও নীচু করে দেয়া, তার সব চাওয়া-পাওয়া, ভাললাগা-মন্দলাগাকে অস্বীকার করা। এগুলো সবই ধর্ম ও সমাজের দোহায় দিয়ে মেয়েদের প্রতি মানসিক নির্যাতন।
১৯. কথা শোনানো:
স্ত্রীর বাবার বাড়ীর লোকজন ও নানা বিষয় নিয়ে কথায় কথায় খোঁটা দেয়া, অপমানসূচক কথা বলা, গালি দেয়া,…. এসবও মানসিক নির্যাতন।
২০. মেয়েদের ইচ্ছাকে অসম্মান করা:
মেয়েরাও মানুষ, তাদেরও ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভাললাগা-মন্দলাগা আছে, তারও বিনোদন দরকার,…. এগুলোকে আমাদের সমাজ স্বীকৃতি দেয়না। ঘরের সব কাজ মেয়েদের ঘাড়ে চাপিয়ে বাসায় বসিয়ে রাখার মানসিকতা আমাদের সমাজের মজ্জাগত।
২১. সিদ্ধান্ত নিতে না দেয়া:
মেয়েদের জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (যেমন – বিয়ে, চাকরী, পড়া ইত্যাদি) মেয়েদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে না দেয়াও মানসিক নির্যাতন। বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলে, অর্থাৎ কোন না কোন পুরুষ মেয়েদের পরিচালিত করে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামত কিছু করতে পারেনা। সে কি করবে, কি করবেনা, সেটা সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা, নিতে দেওয়া হয়না। তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ। দাম্পত্য জীবনে চরম অসুখী হলেও স্ত্রীকে বাধ্য করা হয় শত নির্যাতন সহ্য করে হলেও স্বামীর সংসার করতে।
২২. পুরুষের দোষ মেয়েদের ওপর চাপানো:
পুরুষ দোষ করলেও সমাজ মেয়েদেরকেই দায়ী করে। যেমন ডিভোর্স হয়েছে শুনেই বলা হয় নিশ্চয় মেয়ের দোষ, রেপ হয়েছে শুনেই বলা হয়, নিশ্চয় খোলামেলা পোষাক পরেছিল, স্বামী মেরেছে শুনেই বলে, মারতেই পারে। সে তো স্বামী। দোষ না করলে এমনি মারে? সন্তান বা ছেলে সন্তান না হলে বলা হয়, মেয়ের দোষ, বখাটে উত্যক্ত করেছে শুনেই বলা হয়, মেয়েটা নিশ্চয় কিছু করেছে, নাহলে এমন কেন করবে? আর কাউকেতো করছে না…। মেয়েরাও মেনে নেয় যে তার প্রতি নির্যাতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেটাই ন্যায্য। প্রতি পদে পদে পরিবার ও সমাজের এরকম দোষারোপ করাও মানসিক নির্যাতন।
২৩. অন্যায়ের প্রতিকার না করা:
মেয়েদের প্রতি নানা অবিচারের প্রতিকার হয়না। সেগুলোগোপন করতে বাধ্য করা হয়। এটিও মানসিক নির্যাতন। আমাদের দেশে যেকোন অপরাধ ঘটার পর তার প্রতিবাদ না করে আমরা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করি, এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি বা অন্যায় হজম করে বিকল্প পথ খুঁজি। যেমন – স্বামী বা শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ না করে তাদের অন্যায় আবদার (যেমন-যৌতুক) মেনে নেই, মানুষরূপী জানোয়ারকে পিটিয়ে তক্তা না বানিয়ে আমরা ধর্ষণের খবর বা শিশুদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ধামাচাপা দেই, বখাটেদের নির্যাতনের প্রতিকার করতে না পেরে মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই,… এগুলো সবই মানসিক নির্যাতন।
২৪.বৈষম্য করা:
মেয়েদেরকে পুরুষের অধীনস্ত ও পুরুষের তুলনায় তাদের মর্যাদা কম মনে করা হয়। তারা পুরুষের সমকক্ষ নয়। খাওয়া, পরা, কাজ করা, নানা সুযোগ, মতপ্রকাশ সহ নানা সুবিধা ইত্যাদি সবক্ষেত্রে বৈষম্য করাটাও মানসিক নির্যাতন।
২৫. বাধ্য করা:
স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে শারীরীক সম্পর্ক করা বা সন্তান নিতে বাধ্য করাও মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। পুত্র সন্তানের জন্য বার বার স্ত্রীকে গর্ভধারণ করতে বাধ্য করা, গর্ভস্থ শিশু কন্যা হলে গর্ভপাত করতে বাধ্য করা – এগুলো সবই নির্যাতন।
২৬. স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত না থাকা:
স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়ায় জড়ানো তার সঙ্গীর জন্য মানসিক নির্যাতন। এটি অনৈতিক ও বটে। এটি উভয়ের জন্যই অনুচিত কাজ। এটি সন্তানদের মানসিক নির্যাতনেরও কারণ।
২৭. নির্যাতন গোপন করতে বাধ্য করা:
স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন গোপন করতে বাধ্য করাও মানসিক নির্যাতন। অনেক স্বামী তার নির্যাতনের কথা কাউকে বলতে না পারে, সেজন্য স্ত্রীকে কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে দেন না। এটিও নির্যাতন।
২৮. বাচ্চাদের সব দায় মায়ের ওপর চাপানো:
প্রায় সব পরিবারে বাচ্চাদের দেখাশোনা, পড়ানোর সব দায় একা মাকে সামলাতে বাধ্য করা হয়। এটিও মানসিক নির্যাতন। সবাই মনে করে, বাবা আয় করে, তাই বাকী আর কিছু সে করবেনা। তার কাছে কেউ কিছু আশাও করেনা। সন্তান লালন-পালন, পড়াশোনা, সব দায় একা মায়ের। ফলে মা রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য হন। ইত্যাদি।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রভাব ও এর প্রতিকার নিয়ে আবার লিখব। আপনারা মিলিয়ে দেখুন, আপনারা নিজেরা উক্ত নির্যাতনগুলোর মধ্যে কোনগুলো এবং কতগুলো নির্যাতন করেন বা নির্যাতন সহ্য করেন।
ডিসেম্বর ৩, ২০১৭; ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
নবযুগ ব্লগে আপনার লেখাগুলো মনোযোগসহকারে পড়লাম। এতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে আপনার ভাবনাগুলো অনেক গভীর। বাংলাদেশের প্রতিটি নারী-পুরুষ যদি এভাবে ভাবতো তাহলে একটা স্বাস্থ্যবান সমাজ বিনির্মাণ করা তেমন কোন কঠিন কাজ হবে বলে আমি মনে করি না।
ব্লগপাড়ায় মন্দ্যা-খড়ার কারণে অনেকদিন আসা হয়ে উঠেনি। এই মন্দ্যাভাবটা কাটার লক্ষণ বুঝতে পারছি। এই প্রজন্মে অনেক ভালো ভালো ব্লগ লেখক দেখতে পাচ্ছি, যা সমাজ বদলে আশার আলো দেখাবে। গঠনমূলক লেখা নিয়মিত পড়ার সুযোগ পাবো আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
জানুয়ারি ১৪, ২০১৮; ৭:০৬ অপরাহ্ন
অনেক ধন্যবাদ। জ্বি,ঠিক বলেছেন। একটু সদিচ্ছা হলেই পরিবর্তন সম্ভব। জ্বি, চেষ্টা করব লেখার। ভাল থাকুন।