পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে নাগরিকদের বেশিরভাগ কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার ফলে ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসছে। দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পরে আবারো পুরোদমে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। তবে কোভিড উত্তর বিশ্বে যে পরিমাণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হবার কথা মুদ্রাস্ফীতি, শ্রমিক সংকট এবং গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন বিপর্যয়ের কারণে তাতে ভাটা পড়েছে। চলমান এই সংকট কাটতে আরো বছর দুয়েক লেগে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতিঃ
কোভিডের সময় বিশ্বের সরকারগুলো টাকা ছাপিয়ে বেকার নাগরিকদের হাতে তুলে দিয়েছিল। যার ফলে মুদ্রা অর্থনীতি বর্তমানে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির কবলে। বাজারে এখন যে পরিমাণে ডলার আছে তার শতকরা ৬০ ভাগ গত দুই বছরে ছাপানো হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে বর্তমানে শতকরা ৫ ভাগ মুদ্রাস্ফীতি চলছে, অর্থাৎ গত বছর আপনার কাছে ১০০ ডলার থাকলে এখন সেটা ৯৫ ডলার হয়ে গেছে। বেসরকারি হিসেবে মুদ্রাস্ফীতির হার আরো বেশি। আমেরিকান সরকারের বর্তমান ‘বিল্ড-ব্যাক-বেটার’ প্রোগ্রাম চালু হলে আরো অনেক ডলার শুন্য থেকে ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হবে। এতে মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে বলে ফাইন্যান্সিয়ালি কনজারভ্যাটিভ রিপাব্লিকান দলের কর্ণধারেরা মনে করেন। এদিকে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ডেমোক্র্যাটরা এর কোন বিকল্প দেখছেন না। সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকারকে এসব ব্যবস্থা নিতেই হবে। ফলে ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ আরো বাড়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়া যাচ্ছে না।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে মানুষ বিনিয়োগের নতুন এলাকা খুঁজছে, এজন্য সোনা, জমি-জমা, বাড়ি এসব সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ে। তবে টাকা-পয়সার নিরাপত্তা এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধে বিটকয়েন/ অল্টকয়েন মানুষকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতে পেরেছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে বিটকয়েন বা ডিজিটাল কারেন্সি সোনার মত, তারা একে নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল গোল্ড’। বর্তমানে বিটকয়েন এবং অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সাধারণ ফিয়াট কারেন্সির প্রতি মানুষের অনাস্থা। বিশ্বের বড় বড় ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্মগুলোও নানা ডিজিটাল কয়েন এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে নিচ্ছে। উপরে উপরে তারা এর বিরোধীতা করলেও ঠিকই নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সুরক্ষিত করতে তারা ডিজিটাল কারেন্সি এবং প্রযুক্তির সুরক্ষা নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছেন।
মহামারীর কারণে ব্যাংক সূদের হার বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। একই কারণে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করাটাও এখন মোটেও লাভজনক নয়। ২০২০ এর মার্চ মাস থেকে শেয়ার বাজার উর্ধ্বমূখী, বিশেষজ্ঞরা যেকোন সময় বাজারে একটা কারেকশান হতে পারে বলে আসছেন। এদিকে হাউজিং মার্কেটও রমরমা। বাজারে নতুন হাউজের লিস্টিং ২/৩ সপ্তাহের বেশি থাকে না। লিস্টিং এর বাড়িগুলোর শতকরা ৬০ থেকে ৭০ নতুন বাড়ি বা আন্ডার কন্সট্রাকশান। ফলে আরেকটা হাউজিং বাবল বার্স্টের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অনেকে মনে করেন কিছুই হবে না কারণ শেয়ার বাজারে প্রচুর ডাম্ব-মানি আছে (নেভার আন্ডার এস্টিমেইট দ্য পাওয়ার অফ ডাম্ব মানি 😛 ), অনভিজ্ঞ মিলেনিয়াল, জেন-যি ইনভেস্টররা না বুঝে মিম স্টকে বিনিয়োগ করতেছে, করে ধরা খাচ্ছে। একইসাথে সরকার টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়তেছে ফলে শেয়ার মার্কেটে বড় ধরণের কিছু হবে না, বড়জোর সর্বোচ্চ ২০ ভাগ কারেকশান হবে, সেটা যেকোন সময় হতে পারে তারজন্য সবারই প্রস্তুত থাকা উচিত।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিঃ
মুদ্রাস্ফীতির একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্যের উপর। একে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে তার উপর জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে মুদ্রাস্ফীতিটা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
করোনার সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাজারে অনেক পণ্যের সরবরাহ কম। গত দু’বছর উৎপাদন না হওয়ায় বা নতুন উৎপাদিত পণ্য বাজারে আসতে সময় লাগছে এসব কারণে বাজারে সাময়িক একটা সংকট চলছে। যার ফলে সাপ্লাই-ডিমান্ড নিয়ম অনুযায়ী বাজারে দ্রব্যমূল্য আগের চেয়ে বেশি।
জ্বালানী তেল, পেট্রোলিয়াম, গ্যাস তথা এনার্জি সেকটর গত দুই প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে। ইওরোপে গ্যাস সংকটের কারণে শীতের সময়ে মানুষের দূর্ভোগ বাড়ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাশিয়াকে এরজন্য দায়ী করছে, সময় বুঝে রাশিয়াও তাদের দাবী-দাওয়া আদায় করে নিচ্ছে। আমেরিকাতে পেট্রোলিয়ামের দাম গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু হবার সুবাদে তেল কোম্পানিগুলো গত দু’বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নিচ্ছে। এদিকে তেলের দাম বাড়ার কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ছে, ফলে বাজারে সব ধরণের পণ্যের দাম উর্ধ্বমূখী।
সহসা এই সংকটের সমাধান হবে না। কোম্পানিগুলো এরজন্য একটা নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে, প্যাকেটজাত পণ্যের দাম না বাড়িয়ে পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছেন। যেমন, ৪ ডলার মূল্যের একটা চিপসের প্যাকেটে আগে যদি ২০ আউন্স চিপস পাওয়া যেত তাহলে সেটাকে ১৬/১৮ আউন্স করে দিয়ে দাম আগেরটাই রাখছেন। একে বলা হচ্ছে শ্রিংকফ্লেশান, অর্থাৎ ইনফ্লেশানের কারণে পণ্যের পরিমানে শ্রিংক হয়েছে ( Shrink + Inflation = Shrinkflation) । তারা জানে দাম বাড়িয়ে দিলে বাজেটের কাস্টোমাররা হয়ত পণ্য একেবারেই না কিনতে পারেন, কিন্তু পরিমাণ সামান্য কমিয়ে দিলে সেটা অনেকের নজরেও পড়বে না, পড়লেও আগের বাজেটের মধ্যে থাকায় ঠিকই কিনবে।
শ্রমিক সংকটঃ
মুদ্রাস্ফীতির সাথে শ্রমিক সংকটের কারণেও অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। গত দু’বছর অনেকে কাজ হারিয়েছেন। সামর্থ্যবান অনেকে কাজ হারিয়ে বা কাজ বন্ধ থাকার এই সুযোগে নিজেকে রিটায়ারমেন্টের জন্য প্রস্তুত করেছেন। গৃহবন্দী থাকার সময়টাতে অনেকে নিজেকে অন্যকাজের জন্য প্রস্তুত করেছেন, অনেকে এই সময়ে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে নিয়েছেন। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময়ে আগের কাজে যোগ দেবার জন্য আগের অনেক কর্মীকে পাওয়া যাচ্ছে না। এটা সবচেয়ে বেশি ঘটছে সার্ভিস সেক্টরে বিশেষ করে ফুড, রিটেইল সার্ভিসে।
একদিকে বাজারে শ্রমিক সংকট অপরদিকে গেল সামারে আমেরিকাতে ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। বহুল প্রচারিত এই ঘটনা #GreatResignation নামে খ্যাতি পেয়েছে। ছোট-খাট জবে কম বেতন, বেনেফিট নাই, সাথে প্রমোশন বা ক্যারিয়ারের উন্নয়নের কোন সুযোগ না থাকায় মানুষ এখন এসবে আকৃষ্ট হচ্ছে না। যার সুযোগ আছে সেই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছে। মালিকেরা বেতন না বাড়িয়ে শ্রমিক সংকটের ধুয়া তুলে আরো বেশি করে অটোমেশান বা শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছেন। এরমধ্যে যারা কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা কিছুদিন কাজ করে রাগ করে ( #রেইজ কুইট) কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। যেই কাজ দুই শিফট করলেও মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় সেটা না করাই ভালো।
সাপ্লাই চেইন বিপর্যয়ঃ
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘সাপ্লাই চেইন বিপর্যয়’। সাপ্লাই চেইন বিষয়টা এরকম, যখন সুন্দরভাবে চলতে থাকে তখন কেউ সেটা লক্ষ্য করে না। কিন্তু ঝামেলা বাঁধলে তখন অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত করা ছাড়া অন্যকিছু করার থাকে না।
বর্তমানে হলিডে সিজন সামনে রেখে আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক পণ্যের চাহিদা। এসব পণ্য সাধারণত ওভারসিজ কন্টেইনার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি দেয়া হয়। বাজারে এখন অনেক পণ্যের শেলফ খালি। বিদেশ থেকে জাহাজে করে আসা এসব পণ্য বিভিন্ন বন্দরে খালাস হবার অপেক্ষায় আটকে আছে। আন্তর্জাতিক নৌবন্দরগুলোতে এখন অনেক লম্বা জট লেগে আছে। ফলে নতুন অর্ডার করা পণ্য কবে আসবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। যেগুলো এসেছে সেগুলো খালাস হতে আরো কয়েক মাস লেগে যাবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বন্দরগুলোকে ২৪ ঘন্টা পণ্য খালাস করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। একদিকে জাহাজ আটকে আছে, অপরদিকে নানান ঘাটে, রেললাইনে আটকে থাকায় বর্তমানে খালি কন্টেইনারের সংকট। ফলে মাল খালাস হওয়া জাহাজ গিয়ে আবার মাল নিয়ে আসবে তাতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
বন্দর থেকে কন্টেইনার খালাস করার জন্য ট্রাক আছে, কিন্তু ট্রাক ড্রাইভারের সংকট। করোনার সময়ে অনেক ট্রাক ড্রাইভার এই কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন। ড্রাইভিং স্কুল খোলা না থাকায় কমার্শিয়াল ড্রাইভিং এর জন্য নতুন ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ বন্ধ ছিল বর্তমানে বাজারে ৮০ হাজার ট্রাক ড্রাইভারের পদ খালি, অনেক ক্ষেত্রে বেশি বেতন, বোনাস অফার করেও ড্রাইভার পাওয়া যাচ্ছে না।
আমেরিকাতে নাইকি এবং কস্টকোর মত প্রতিষ্ঠান কয়েক মাস আগে সাপ্লাই চেইনে সমস্যার কারণে তাদের স্টোরে পণ্য ঘাটতি হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। নাইকির মত ভার্টিক্যাল ইন্টেগ্রেশান করা কোম্পানিও যখন বলে তাদের সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে তখন পরিস্থিতি গুরুতর সেটা বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়। ভিয়েতনামে কোভিডের কারণে লকডাউন দেয়ায় নাইকি’র সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দেয়। তৃতীয় বিশ্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোভিড ভ্যাকসিনেশান না হওয়ায় যে কোন সময়ে সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
ব্রিটেনে ব্রেক্সিটের কারণে এমনিতে পণ্যের সরবরাহ কম, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ, কেমিক্যালস ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য তারা মেইনল্যান্ড ইওরোপের উপর নির্ভরশীল। ব্রেক্সিটের কারণে নতুন করে ইওরোপীয় পণ্যের উপর ট্যারিফ ধার্য্য করায় পণ্য সরবরাহ কম। তার উপরে ট্রাক ড্রাইভারের সংকট সেটাকে আরো ঘনীভূত করেছে। মূলতঃ অভিবাসীরা ট্রাক ড্রাইভিং, বুচার শপ, ইত্যাদি কাজগুলো করে। স্ররকার এখন বিপদ বুঝে নতুন করে অভিবাসনের অনুমোদন দিচ্ছে, সেজন্য সমস্যার সমাধান হতে আরো অনেক সময় লাগবে।
মাইক্রোচিপ সংকটঃ
বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে মাইক্রো চিপ সংকট। আজকের দুনিয়ায় কম্পিউটার, সেলফোন থেকে শুরু করে সবকিছুতে চিপ ব্যবহৃত হয়। চিপ সংকটে সবার আগে ধরা খেয়েছে গাড়ির কোম্পানিগুলো। আধুনিক একটা গাড়িতে গড়ে ৩ হাজার চিপ ব্যবহৃত হয়। চিপ সংকটের কারণে বড় বড় গাড়ি কোম্পানিগুলো তাদের অনেক প্লান্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে সামনের কয়েক মাসে উৎপাদন বন্ধ করে দিবে। বর্তমানে বাজারে নতুন গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। গতবছর এই সময়ে আমেরিকার বাজার ৯০ লাখ নতুন গাড়ি ছিল, সেখানে এখন মাত্র ৮ লাখ নতুন গাড়ি আছে। গাড়ির শো-রুমগুলোর পার্কিং লট খালি পড়ে আছে। সাধারণত এসব লট নতুন গাড়িতে ভরা থাকে। নতুন গাড়ির সংকটের কারণে বাজারে পুরাতন গাড়ির দাম এখন তুঙ্গে। সাধারণত নতুন গাড়ি কিনে লট থেকে বের করে নিলেই সেটার দাম ১০-১৫% কমে যায়। বর্তমানে পুরাতন গাড়ির দাম নতুন গাড়ির মত।
গ্লোবাল চিপ সংকটের কারণে গাড়ি ছাড়াও অন্যান্য সকল যন্ত্রপাতি, খেলনা, মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট সবকিছুতে উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। টেক কোম্পানিগুলোও সামনের দিকে পণ্য সংকটে পড়বে বলে আভাস দিয়েছে। আজকাল যেখানেই কোন ধরণের অন-অফ সুইচ আছে সেখানেই মাইক্রোচিপের ব্যবহার আছে। ফলে এগ্রিকালচার সেক্টর, ডেইরি প্রডাক্ট সবকিছুতে উৎপাদন ব্যাহত হবে, এমনকী পটেটো চিপস বানাতেও মাইক্রোচিপ লাগে।
চিপের এই সংকট সমাধানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ করেছেন। কিন্তু চাইলেই তো রাতারাতি চিপ উৎপাদন করা যায় না, সব জায়গাতে চিপ ফ্যাক্টরি খোলার মত ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশও থাকে না। ইনটেল কোম্পানি এরিজোনার মরূভূমিতে ২০ বিলিয়ন ডলারের চিপ উৎপাদনের কারখানা চালু করতেছে, যেটা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হতে ২০২৩ সাল লেগে যাবে।
বর্তমানে দুনিয়াতে যত চিপ ব্যবহৃত হয় তার শতকরা ৬০ ভাগ উৎপাদন হয় তাইওয়ানে। এবং সেটা করে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিসিএমসি)। ফলে দুনিয়ার সব বড় কোম্পানিগুলো তাদের উপর নির্ভরশীল। টিসিএমসি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি। অন্যান্য কোম্পানির সিইওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন, টিসিএমসি’র সিইও’র সাথে কথা বলার জন্য দুনিয়ার সকল রাষ্ট্রপ্রধানেরা মুখিয়ে থাকেন। ‘চিপ ডিপ্লোম্যাসি’ করে সবাই নিজেদের জন্য বেশি বরাদ্ধ পেতে চান। চিন সরকার নিজেরা চিপ উৎপাদন শুরু করে কিন্তু কোয়ালিটি ভালো না হওয়ায় তারাও তাইওয়ানের চিপ মজুদ করে রাখতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ানের আকাশ সীমায় চিনা যুদ্ধ বিমানের মহড়া তাইওয়ানের উপর চিনের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা আবারো স্মরণ করিয়ে দেয়। এদিকে তাইওয়ানে চিপ উৎপাদন ব্যাহত হোক সেটা কেউই চাইবে না। ফলে আপাততঃ টিসিএমসি’র কারণে তাইওয়ান এক ধরণের নিরাপত্তা পাচ্ছে, যেটাকে অনেক মজা করে বলেন, ‘সিলিকন শিল্ড’।
চিপ সংকটের সমাধান হতে ২০২২ সাল লেগে যাবে। ততোদিনে সাপ্লাই চেইনের সমস্যা আরো বাড়বে। অনেকেই তাই সামনের কয়েক মাসে প্রয়োজন হতে পারে এমন ইলেকট্রনিক পণ্য কিনে রাখছেন। হলিডে শপিংও এবছর আগেই শুরু হয়ে গেছে। বুঝাই যাচ্ছে সবাই তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনতে পারবে না।
কোভিড উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি কবে ঘুরে দাঁড়াবে সেটা কেউই এখন আর নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। চিপ সংকট, সরবরাহ চেইনের সমস্যা, ব্যাহত উৎপাদন ব্যবস্থা, শ্রমিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা মিলে দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গভীর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।