কোরানের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো
এটা মুসলমানদের খুবই পছন্দের শ্লোগান। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে ঘরে ঘরে কোরানের আলো জ্বললে পৃথিবীর সব অন্ধকার দূর হয়ে যাবে এবং সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে অভাব-অনটন, দারিদ্র, বেকারী, হিংসা-অশান্তি, রোগ-বালাই-মহামারি, বন্যা-খরা-ভূমিকম্প-সুনামি-তুফান, ইত্যাদি সকল প্রকার সমস্যার প্রতিকার করার উপায় রয়েছে কোরানে। লোভ-লালসা, ঈর্ষা-ক্রোধ-ঘৃণা ইত্যাদি মানবীয় সকল রোগ ও বিকারগুলো থেকে মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে একমাত্র কোরান। কোরান সম্পর্কে এমন বিশ্বাস সকল মুমিন ভাইদের সকলের। কিন্তু সমস্যা হলো এই ভাইয়েরা প্রায় সকলেই কিছুই জানেন না কোরানে কী লেখা আছে। তাঁদের অধিকাংশই কোরান পড়তেও জানেন না। এমনকী যাঁরা আরবের মানুষ, যাদের মাতৃভাষা আরবি, যে ভাষায় কোরান লেখা আছে, তাঁরাও জানে না কোরানে কী আছে। কারণ, তাঁরাও কোরান পড়ে নি। মানুষের অতো ধৈর্য ও সময় কোথায় যে তারা কোরান পড়বে যেটা না পড়লে প্রত্যহিক জীবনে কিছু যায় আসে না। যারা অনারব এবং উচ্চশিক্ষিত তারা ইচ্ছে করলেই নিজেদের মাতৃভাষায় কোরানের তর্জমা পড়তে পারেন। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রেও ওই একই কথা প্রযোজ্য – কোরান পড়ার অতো ধৈর্য ও সময় কোথায়? তাছাড়া, প্রয়োজনটাই বা কী গ্রন্থটি পড়ার? মুসলমানরা তাই স্বভাবতই অধিকাংশই কোরান সম্পর্কে অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা সত্ত্বেও তাঁরা বিশ্বাস করেন কোরানের আলো ঘরে ঘরে জ্বালালে পৃথিবী সুন্দর হয়ে উঠবে।
আমিও তাই বিশ্বাস করতাম একসময়। তাই মন-প্রাণ ঢেলে দিয়ে এক সময় কোরান পড়তাম। আরবি পড়তে পারি, কিন্তু মানে বুঝতে পারি না। তবু গভীর আগ্রহ নিয়ে ও মনযোগসহকারে কোরান পড়তাম, সুর করে পড়তাম আর সবাই যেমন পড়ে। পড়ে খুব আনন্দ পেতাম। পড়া শেষে মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠতো। মনে হতো একটা বিরাট বড়ো কাজ করলাম। এতো ভাল লাগতো, এতো আনন্দ পেতাম যা বলে বোঝানো যাবে না। এতো আনন্দ পেতাম কারণ বিশ্বাস করতাম যে কোরান হলো আল্লাহর গ্রন্থ যার সঙ্গে তুলনীয় গ্রন্থ আর নেই এবং কোরানের মধ্যেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী জ্ঞানের আলো।
কোরানে কী লেখা আছে তা জানার আগ্রহ কোনোদিনই তেমন ছিলো না বিশেষ। কারণ অন্ধ বিশ্বাসটা এতোই দৃঢ় ছিলো যে কোরান সম্পর্কে যা শুনতাম তা যাচাই করার প্রয়োজন উপলব্ধি করি নি। একসময় ধীরে ধীরে বাম রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ি, এবং মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হই। ফলে ঈশ্বর সম্পর্কে মোহ কাটতে থাকে। ক্রমশঃ সংশয়বাদী হয়ে উঠি, সংশয়বাদী থেকে নাস্তিকতায় উত্তরণ ঘটে। তবুও ইসলাম ও কোরান সম্পর্কে কিছুটা দূর্বলতা থেকেই যায়। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকে মার্কস ধর্মকে আফিমের সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে যখন প্রথম শুনি, তখন মনে হয়েছিলো যে, কার্ল মার্কস ইসলাম সম্পর্কে বিশেষ জানেন না এবং কোরান নিশ্চয় পড়েন নি। পরে ধীরে ধীরে আমার মোহভঙ্গ হয়। মার্কসবাদী সাহিত্য, পুস্তক-পুস্তিকা পড়ে বস্তুবাদ এবং সমাজ ব্যবস্থার ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে যত বেশি জ্ঞানলাভ করি ততই ঈশ্বরের প্রতি মোহ কাটতে থাকে। এমনি করেই একদা তরুণ বয়সেই পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে যাই। নাস্তিক হবার পরেও কোরান সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধা কিছুটা ছিল। কারণ মুহাম্মদ সম্পর্কে যথেষ্ট ভালো ধারণা তখনো পোষণ করতাম। মনে করতাম যে, মুহাম্মদ একজন অসাধারণ জ্ঞানী, সৎ, দয়ালু, শান্তিপ্রিয় ও মহানুভব মানুষ ছিলেন এবং তাঁর সৃষ্টি ধর্মগ্রন্থ কোরান নিশ্চয় পৃথিবীর উৎকৃষ্ট গ্রন্থগুলির মধ্যে একটি হবে। মার্কসবাদী দর্শন ও অর্থনীতির পাঠ নিয়ে এটা নিশ্চিতভাবেই বুঝেছিলাম যে কোরান দারিদ্রমুক্ত মানব সমাজব্যবস্থা দিতে পারবে না, তবে এ বিশ্বাসটুকু ছিলো যে কোরানে নিশ্চয় মানুষের পক্ষে কল্যাণকর কথা লেখা আছে। এই বিশ্বাস আমি বহন করে বেরিয়েছি আমার জীবনের দীর্ঘসময় ধরে। বিশ্বাস করতাম যে, মুসলিম সমাজের ধর্মীয়গুরুগণ নানা বিষয়ে যে সব অগণতান্ত্রিক, কুৎসিত এবং অমানবিক ফতোয়া দেয় তা ইসলাম ও কোরান সম্মত নয়। মনে করতাম যে ফতোয়াগুলি উলামার (মোল্লা-মুফতিদের) মস্তিষ্কপ্রসূত, তাঁরা নিজেদের কায়েমি স্বার্থরক্ষায় মনগড়া সব ফতোয়া দেন।
জীবনের পঞ্চাশটি বসন্ত পার করে লেখালেখি শুরু করি। কলম ধরি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখব বলে। উদ্দেশ্য ধর্মীয়গুরুদের কবল থেকে মুসলিম সমাজকে মুক্ত করা এবং একটি আধুনিক মুসলিম সমাজ নির্মাণ করা। এককথায় মুসলিম সমাজের সংস্কার করা। তার জন্যে মোল্লা-মুফতিরা মুসলিম সমাজকে কীভাবে বিপদগামী করছে তা তুলে ধরা আবশ্যক। তা করতে হলে ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান চাই। তাই কোরানের বাংলা অনুবাদ কিনলাম। যাতে ভুল ও বিকৃত বা পক্ষপাতদুষ্ট অনুবাদের শিকার হয়ে না পড়ি। তাই চারজন লেখকের চারটে বাংলা কোরান কিনলাম। নেট থেকেও একটা বাংলা ও তিনটি ইংরাজি কোরান ডাউনলোড করি। বাংলা কোরান পড়ে বুঝলাম যে শুধু কোরান পড়ে কোরানকে সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। পড়তে হবে হাদিস ও কোরানের তফসিরও। চারটি মোটা-মোটা হাদিস কিনে ফেললাম। নেট থেকে আরো কয়েকটা ইংরাজি ও বাংলা হাদিস এবং তফসির ডাউনলোড করলাম। ইসলামকে সঠিকভাবে জানতে ও বুঝতে হলে এও বুঝলাম যে মুহাম্মদ ও তাঁর খলিফাদের জীবনীগুলিও পড়া ভীষণ জরুরী। কিনে ফেললাম তাঁদের বেশ কয়েকটা জীবনীগ্রন্থ। ইসলাম ও কোরানকে নিখুঁতভাবে জানবার জন্যে কোরান ও ইসলাম নিয়ে লেখা বিশ্লেষণধর্মী অনেকগুলি বইও কিনতে হলো। বই কেনার নেশা ছিলই, ইসলামকে জানতে সে নেশা আরো তীব্র হয়ে উঠলো, সে নেশা আজও সমানে তাড়া করে, এবং ইসলামের ওপর বই দেখলেই কিনে ফেলি। একের পর এক বই কিনছি, আগেই বলেছি, ইসলামকে যথাযথভাবে জানার জন্যে, ইসলামের দোষ-ত্রুটি সন্ধান করার জন্যে নয়। কিন্তু একী! যতো পড়ি ততো অবাক হই! মনের গভীরে তিলে তিলে একদা ইসলাম, কোরান এবং মুহাম্মদ সম্পর্কে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভরসার একটি বিশাল সৌধটি গড়ে উঠেছিল। সেই সৌধটি থেকে বিশ্বাস, ভরসা ও শ্রদ্ধার ইট-পাথর-রড-সিমেন্টগুলি একটু একটু করে খসতে শুরু করে। সেই সৌধটির সামান্য চিহ্নও আজ আর আমার মধ্যে নেই। জীবনে সেই প্রথম উপলব্ধি করি যে অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কীভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করতে পারে এবং ঠকাতে পারে।
কোরান, ইসলাম ও মুহাম্মদ সম্পর্কে যেসব উঁচু ধারণা ও বিশ্বাসগুলি ছিল সেগুলি একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিমের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন বলে একদা মনে হয়েছিলো যে, কোরান পড়লে মার্কস এমন কথা বলতেন না। সেই কোরানই আমার চোখ খুলে দিল, কোরানের প্রতি আমার মিথ্যে মোহ কাটে কোরান পড়েই। কেনো এ কথা বলছি তা সবিস্তারে জানাতে হলে কোরানের মতই বা তারচেয়েও বড় একটা গ্রন্থ লিখতে হয়। কিন্তু এটা তো সোশাল নেটওয়ার্কিং এর একটা পেজ মাত্র, এখানে সে অবকাশ নেই। এখানে তাই অতি সংক্ষেপেই বিষয়টা উপস্থাপন করতে চাই।
সর্বদাই শুনতাম, এখনো শুনি যে ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ক্ষমা, সহিষ্ণুতা, উদারতার ধর্ম। শুনে শুনে এরূপ বিশ্বাস করতাম যে ইসলাম সত্যিই একটা মহান ধর্ম যা নিঃসন্দেহে অন্য ধর্মগুলির চেয়ে সবদিক থেকেই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ইসলাম হলো বাস্তবে ঠিক তার বিপরীত ধর্ম। ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরান পড়লে তা সহজেই বোধগম্য হবে। যে ধর্মগ্রন্থ মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব রচনা করার স্থলে শত্রুতা করতে বলে সে ধর্ম মহান হতে পারে না। হ্যাঁ, কোরান বিধর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রচনা করতে বলে নি, বলেনি কোথাও তাদের ভালবেসে কাছে টানতে। বরং বলেছে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে না। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি যে, কোরান বলেছে বিধর্মীরা মুসলমানদের শত্রু। কোরানের সেই বাণীটি হলো-
“হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে ওঠে। আর যা কিছু তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে আছে তা আরও অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্য নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেওয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সামর্থ হও।”
(৩:১১৮)
দেখতে পাই যে কোরানের পরতে পরতে অমুসলিমদের সম্পর্কে ঘৃণা ছড়ানো রয়েছে। সে রকম কয়েকটি আয়াত হলো এ রকম-
“আল্লাহর নিকট অবিশ্বাসকারীরাই নিকৃষ্ট জীব, যেহেতু তারা অবিশ্বাস করে।”
(৮:৫৫)
“নিশ্চয় অবিশ্বাসীরা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”
(৪:১০১)
কোরান মুসলিমদের অমুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের কথা বলে নি, বলেছে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, তাদের প্রতি কঠোর আচরণ করতে। যেমন-
“আমি কাফেরদের মনে ভীতি সঞ্চার করে দেবো। কাজেই তাদের গর্দানের ওপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাটো জোড়ায় জোড়ায়।”
(৮:১২)
“এটি এই জন্য যে তারা আল্লাহ ও রসুলের বিরোধিতা করেছিল, এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা করে, তবে আল্লাহ নিশ্চয় কঠোর শাস্তিদাতা।”
(৮:১৩)
কোরান শান্তির কথা বলে নি, বরং অমুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আদেশ প্রদান করেছে পুনঃ পুনঃ। কোরান অমুসলিমদের নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করতেই বলেছে। কোরান বলছে–
“হে মুমিনগণ! নিকটতম কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধ করো, যেন তোমাদের কঠোরতা অনুভব করে। জানিয়া লও, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সঙ্গে আছেন।”
(৯:১২৩)
যারা আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি উৎপাদন করে, নিশ্চয় তাদের শাস্তি এই যে-
“তাদের হত্যা করো, কিংবা তাদের শূল-বিদ্ধ করো, অথবা তাদের হাত ও তাদের পা বিপরীত দিক হতে কর্তন করো, কিংবা তাদের দেশ হতে বহিষ্কার কর। এটাই তাদের পার্থিব প্রতিফল এবং পরকালে তাদের জন্য ভীষণ শাস্তি আছে।”
(৫:৩৩)
মুহাম্মদ সম্পর্কে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতাম একদা। কোরান সেটা নষ্ট করে দিয়েছে। কোরান থেকে জানতে পারি মুহাম্মদ স্বয়ং বিনা প্ররোচনায় অমুসলিমদের ওপর অতর্কিতে সশস্ত্র হানা চালিয়ে তাদের লুঠ ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। মুহাম্মদ অতর্কিতে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে ইহুদিদের বানু কুরাইজা গোষ্ঠীকে নির্মূল করেন। সেই অভিযানে মুহাম্মদ ঠাণ্ডা মাথায় ৮০০/৯০০ ইহুদি পুরুষের মুণ্ডুচ্ছেদ করে তাদের পুঁতে দেন এবং তাদের কয়েকহাজার নারী ও শিশুদের ক্রীতদাস করেন যে কাজ এখন আইএস জঙ্গিরা ইরাক ও সিরিয়ায় করছে। কোরান ইহুদিদের এই নৃশংস গণহত্যাকাণ্ডকে অনুমোদন করেছে। কোরান বলছে-
“কেতাবীদের মধ্যে যারা ওদের সাহায্য করেছিল, তাদের তিনি তাদের দূর্গ হতে অবতরণে বাধ্য করলেন, এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন, এখন তোমরা ওদের কতককে হত্যা করছ, এবং কতককে বন্দি করেছো।”
[৩৩:২৬]
এই একটিই নয়, বিধর্মীদের ওপর সহসা আক্রমণ চালিয়ে তাদের লুট করা, হত্যা করার আরো অনেক নিদর্শন রেখে গেছেন মুহাম্মদ। এপথেই তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এসব সশস্ত্র হানা, লুটপাট, হত্যাকাণ্ড ও মানুষকে ক্রীতদাস বানানোর বর্বর কার্যকলাপকে কোরান আল্লাহর নামে বৈধতা দিয়েছে। এই হচ্ছে কোরানের আসল রূপ যার সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলমান বলতে গেলে প্রায় কিছুই জানে না।
কোরান নারীদের স্বাধীনতা ও মুক্তি দিয়েছে বলে বিশ্বাস করতাম, বিশ্বাস করতাম একদা যে, মুহাম্মদই বিশ্বের বুকে নারীর সবচেয়ে বড়ো ত্রাণকর্তা। পুরুষের বহুবিবাহ নারীর পক্ষে খুবই অবমাননাকর যা নারীকে পুরুষের যৌনদাসীর স্তরে নামিয়ে দেয়। ইসলাম বহুবিবাহ বাতিল করতে না পারলেও তাকে নিরুৎসাহিত করেছে বলে জানতাম ও বিশ্বাস করতাম। এটাই জানতাম যে, প্রথম স্ত্রী রুগ্ন হলে কিংবা সন্তান ধারণে অক্ষম হলে তার অনুমতি নিয়ে স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে। আর বিশ্বাস করতাম যে কোরান বলেছে বহুবিবাহ সেই করতে পারবে যে সকল স্ত্রীকে সমানভাবে ভালবাসতে পারবে। কিন্তু একী! যা জানতাম তা তো ডাহা মিথ্যা। কোরান ও হাদিসে এসব কথা কোথাও লেখা নেই। মডারেট মুসলিমরা এসব বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন। বহুবিবাহ প্রসঙ্গে কোরান যা বলেছে তা হলো-
“এবং যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, অনাথদিগের প্রতি ন্যায় ব্যবহার করিতে পারিবে না, তবে তোমাদের যেরূপ অভিরুচি তদনুসারে দুই, তিন ও চার নারীর পাণি গ্রহণ করিতে পার, পরন্তু যদি আশঙ্কা কর যে ন্যায় ব্যবহার করিতে পারিবে না তবে এক নারীকে [বিবাহ করিবে] অথবা তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাহার ওপর অধিকার লাভ করিয়াছে, তাহাকে [পত্নী স্থলে গ্রহণ করিবে] ইহা অন্যায় না করার নিকটবর্তী।”
(৪:৩)
না, এখানে সকল স্ত্রীদের প্রতি ন্যায় ও সমান বিচারের কথা বলা হয় নি, বলা হয়েছে এতিমদের (অনাথদের) প্রতি ন্যায় বিচারের কথা। বলা হয় নি যে, স্ত্রী চিররুগ্ন হলে বা সন্তানধারণে অক্ষম হলে তবেই স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে, নচেৎ নয়। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মুসলিম মডারেটরা যা বলেন তা যে বানানো তার প্রমাণ করছে এই আয়াতটি। এই আয়াতে বিয়ের ঊর্ধসীমারও উল্লেখ নেই। বলেছে ২, ৩ ও ৪ (চারটি) বিয়ে করতে পারো, বলে নি যে চারের অধিক বিয়ে করা যাবে না।
তাছাড়া মুহাম্মদতো নিজেই অসংখ্য বিয়ে করেছিলেন। কোরান তাঁকে অসংখ্য বিয়ে করার অনুমতিও দিয়েছে। কোরান বলছে–
“হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের তুমি দেনমহর দান করেছো, এবং বৈধ করেছি- তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে যাদের আমি দান করেছি…। এবং কোনো বিশ্বাসী নারী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে- সেও বৈধ, এটা বিশেষ করে তোমার জন্যে।”
(৩৩:৫০)
মুহাম্মদ প্রায় দু’ডজন বিয়ে করে নিজেই বহুবিবাহে ব্যাপক উৎসাহ দিয়ে গেছেন, তাহলে কীভাবে এটা মানা যায় যে ইসলাম ও কোরান বহুবিবাহে নিরুৎসাহ দিয়েছে?
কোরান যে মুসলমানদের বহুবিবাহে উৎসাহ দিয়েছে তার আরো প্রমাণ আছে। যেমন-
“আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর জায়গায় অন্য স্ত্রী নেওয়া ঠিক করো আর তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাকো তবুও তার থেকে কিছুই নেবে না।”
(নিসা, ৪:২০)
বাল্যবিবাহ আধুনিক বিশ্বে বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য এবং ঘৃণ্যতম কাজ। ইসলাম ও কোরান সেই বাল্যবিবাহকেই উৎসাহ দেয় প্রবলভাবে। মুহাম্মদ নিজে ছ’বছরের শিশুকন্যা আয়েশাকে বিয়ে করেছিলেন এবং মাত্র ন’বছরের আয়েশার সঙ্গে যৌনকর্ম করেছিলেন। এই ঘটনা প্রবলভাবে আপত্তিকর, ঘৃণ্য ও অমানবিক। এ যুগে এহেন কর্ম কেউ করলে গোটা সমাজ তার বিরুদ্ধে নিন্দায় মুখর হবে এবং ক্ষোভে ফেটে পড়বে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এহেন জঘন্য অপরাধের জন্যে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। মুহাম্মদ তাঁর (পালিত) পুত্রবধু জয়নবকেও বিয়ে করেছিলেন যা মুসলমানদের আজও বিব্রত করে। তিনি যখন জয়নবকে বিয়ে করেন তখন তাঁর পালিতপুত্র জায়েদ জীবিত ছিলেন। একজন ধর্ম প্রবর্তক যিনি নিজেকে একজন আল্লাহর দূত বলে দাবি করছেন তিনি এমন কাজ করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। এই বিয়ে দু’টির মতো নিন্দনীয় কাজ খুব কমই আছে।
কোরান তবুও এই বিয়ে দুটিকে সঠিককাজ বলেই বৈধতা দিয়েছে। এই হচ্ছে কোরান যা নিয়ে মুসলমানদের গর্বের শেষ নেই। কোরান নারীকে আরো নানাভাবে হেয় ও অপদস্থ করেছে। যেমন কোরান বলেছে-
“নারী শস্যক্ষেত্র, নারীতে যখন খুশী গমন করো।”
(২:২২৩)
ইসলাম ‘মুতা বিবাহ’কে অনুমোদন দিয়েছে। মুতা বিবাহ মানে একজন নারীকে স্বল্প সময়ের জন্যে (তিন দিনের বেশী নয়) বিয়ে করা বৈধ। এতো কিছু অর্থের বিনিময়ে নারীকে পুরুষের যৌনদাসী করার লাইসেন্স (অনুমতি প্রদান) বৈ নয়। মুতা বিয়ে তো এক প্রকার বেশ্যাবৃত্তিই, অথচ ইসলাম বেশ্যাবৃত্তিকে নিষিদ্ধ করেছে। কী দ্বিচারিতা আইন!
কোরান বলছে-
“অবাধ্যতার আশঙ্কা করলে স্ত্রীকে প্রহার করবে।”
(৪:৩৪)
কোরান আরো বলছে যে-
“নারী সর্বদা ঘরের মধ্যেই অবস্থান করবে। তারা ঘরের বাইরে যাবে না। বাইরে যাওয়া একান্ত জরুরী হলে একজন পুরুষ অভিভাবককে সাথে নিয়ে হিজাবে গোটা শরীর ঢেকে যাবে।”
(৩৩:৩৩, ৫৯)
হাদিসও নারীকে যারপরনাই অপমান করেছে। হাদিস মানে মুহাম্মদ যা বলেছেন ও করেছেন। সে রকম কয়েকটি হাদিস হলো–
ক. যদি কোনো ব্যক্তি সঙ্গম করার ইচ্ছায় স্ত্রীকে আহ্বান করে তবে সে যেন তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় যদিও সে উনুনের ওপর থাকে।
খ. যে জাতি নারীর হাতে নেতৃত্ব দেবে সে জাতি ধ্বংস হবে।
গ. পুরুষের পক্ষে তিনটি জিনিশ হলো সবচেয়ে ক্ষতিকর– নারী, বাড়ি ও ঘোড়া ।
ঘ. স্ত্রীকে গোপন কথা বললে কার্যসিদ্ধি হবে না।
ঙ. আমি যদি কাউকে সিজদা করতে বলতাম তবে স্ত্রীদের তাদের স্বামীকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।
নারীবিদ্বেষী এরকম অসংখ্য আয়াত ও বাণী কোরান ও হাদিসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে যার সম্পর্কে মুসলমানদের যৎ সামান্যই জ্ঞান রয়েছে।
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন কোরান হলো একটি মহান বিজ্ঞানগ্রন্থ যেখান থেকে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানিরা বিজ্ঞানের নানা সূত্র সংগ্রহ করেছেন। অথচ সেই কোরানে বিজ্ঞানের নানাবিষয়ে এমনসব কথা বলা আছে যা অতিশয় শিশুসুলভ ও হাস্যকর। সেই কথাগুলি শুনলে বিজ্ঞান সচেতন মানুষদের হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে।
পৃথিবী হলো গোলাকার এবং সূর্যের চারিদিকে ঘোরে– এটা বিজ্ঞানের কথা যা সর্বজনবিদিত। কিন্তু কোরান বলছে তার উল্টো। বলছে, পৃথিবী হলো ফ্লাট এবং স্থির যার চারিদিকে সূর্য ঘোরে। পৃথিবী স্থির– এ কথা লেখা আছে কোরানের ৩১:১০, ৩০:২৫, ৩৫:৪১, ২:২২, ১৬:১৫ প্রভৃতি আয়াতে। সূর্য ঘুরছে এ কথা লেখা আছে ৩১:২৯, ৩৬:৩৮, ৩৯:৫, ১৩:২, ২১:৩৩, ১৮:৮৬, ২০:১৩০ প্রভৃতি আয়াতে।
বিজ্ঞান বলে পৃথিবী ও চন্দ্রের ঘূর্ণনের কারণে যখন সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্র এক সরলরেখায় চলে আসে তখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয়। কোরান বলছে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় আল্লাহর হুকুমে হয়, এগুলো প্রাকৃতিক কোনো ঘটনা নয়।
এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ কী বলেছেন শোনা যাক। তিনি বলেছেন–
“সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তা’আলার অসীম কুদরতের দুটি নিদর্শন। তা কারো মৃত্যুর প্রভাবে গ্রহণযুক্ত হয় না; বরং আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শনের জন্যে দেখিয়ে থাকেন।”
(বোখারী শরীফ)
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের ঘটনা কেনো ঘটে? বিজ্ঞান উত্তর দিয়েছে যে পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্যে এরূপ ঘটে। আর কোরান বলছে সূর্য একটা কর্দমাক্ত পুকুরে অস্ত যায় এবং সারারাত আল্লাহর পায়ের তলায় বসে কান্নাকাটি করে ভোরের আকাশে পূনরায় ওঠার জন্যে। এবং ভোরবেলা প্রতিদিন আল্লাহ অনুমতি দিলে তারপর উদয় (সূর্যোদয়) হয়। এ কথাগুলি লেখা আছে কোরানের ১৮:৮৬ ও ১৮:৯০ নং আয়াতে।
পৃথিবীর বুকে পাহাড়-পর্বত কেনো? কোরান বলছে, পৃথিবী যাতে কাত হয়ে উল্টে পড়ে না যায় তাই আল্লাহ পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় স্থাপন করেছে। এ হাস্যকর কথা লেখা আছে কোরানের ৩১:১০ নং আয়াতে। আমরা জানি, আকাশ মানে মহাশূন্য। কিন্তু কোরান বলছে আমাদের মাথার ওপর একটা নয়, সাত সাতটা আকাশ আছে এবং তার ওপর আল্লাহর সিংহাসন পাতা আছে যেখানে বসে সেসব কিছু পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণ করছে। কীভাবে আমাদের মাথার ওপর আকাশগুলি আছে? কোরান আমাদের জানাচ্ছে যে আল্লাহ তার অলৌকিক ক্ষমতার সাহায্যে বিনা স্তম্ভেই আকাশ সাতটি আমাদের মাথার ওপরে স্থাপন করেছে। কোরানের ছত্রে ছত্রে বিজ্ঞানের (!)এরকম অসংখ্য মণি-মাণিক্য ও হীরা-জহরত ছড়িয়ে রয়েছে।
এই হলো কোরান যেখানে জ্ঞানের আলো বলতে কিছুই নেই। যা আছে তা হলো মধ্যযুগের চাপ-চাপ অন্ধকার। এসব অন্ধকারকেই আলো ভেবে মুসলমানরা ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে চায়।
ডিসেম্বর ৩, ২০১৭; ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
আপনার লেখা অসম্ভবরকম গোছানো ও শক্তিশালী, কোন মন্তব্য দেয়ার নাই, যা লিখেছেন তা খণ্ডন করা অসম্ভব। ধন্যবাদ গিয়াসুদ্দিন সাহেব।