০
৯৩০ বার পঠিত
অনন্ত …অপরিবর্তনীয় …নিখুঁত?
হয়য় …হয়তো নয়।
কোরানে দাবি করা হয়েছে, তা নিখুঁত এবং তা বিকৃত করা অসম্ভব ;তা ঈশ্বরের দান,অনন্তকাল ধরে বেহেস্তে সংরক্ষিত।
সমালোচকদের দাবি, কোরান একজনের উক্তির অবিন্যস্ত সংকলন মাত্র।একেই অদিম সমাজের সহজে ঠকে যায় এমন মানুষদের সামনে ঐশীবানী বলে উপস্থাপন করা হয়েছে।যেমন,তাকে যখন পাগল বলে চিহ্নিত করা হয় তখন মহম্মদ তার তাঁবুতে ঢুকে ফিরে “তুমি পাগল নও”(৬৮:২)এমন “এক আল্লাহর” বানী নিয়ে বেরিয়ে আসতেন।মানুষ তখন এটিকেই তিনি পাগল নন এই প্রমাণ বলে মেনে নিতো।
কোনো কোনো মুসলমান বলেন,কোরান সত্য না হলে আজও এতো মানুষ এর উপর বিশ্বাস রাখতোনা।কিন্ত্ত বিশ্বাস দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়না,বিশেষ করে যখন তা নির্লজ্জভাবে বৈষম্য,আঘাৎ আর খুনের মাধ্যমে মানুষের উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
সত্যি কথা বলতে কী,অধিকাংশ মুসলমান কোনোদিন কোরান পড়ে দেখেননি অথচ এর জন্য তারা খুন করতে,জান কোরবান করতেও প্রস্তুত।তাদের বিশ্বাস জন্মে বিশেষ করে শৈশব থেকে বড় হওয়ার পর্যায়ে অন্য মুসলমানদের কথা শুনে।
বিশ্লেষণমূলক মনের একজন নিরপেক্ষ পাঠক প্রায় নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে আসবেন যে,কোরান ঐশীবাণী নয়,মহম্মদ যে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন তাতে তিনি যে কল্পনা করতেন সেই কল্পনাজাত।
নিচে দশটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
#১০ সুরা ২৭:৯১ বলছে, ”আমার কথা। বলছি, আমাকে বলা হয়েছে নগরীর প্রভূর সেবা করার জন্য”।এটা যদি আল্লাহর কথা হয় তবে এর অর্থ দাঁড়ায় এমন কেউ। একজন তাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যিনি আরেকজন ঈশ্বর এবং। তিনি তার হুকুম তামিল করেন। এই সুরা অর্থপূর্ণ হতে পারে যদি মহম্মদ তার দৃষ্টিকোণ থেকে তা বলে থাকেন।
(“আল্লাহ কেনো কম করে অন্য সাতটি সুরার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শপথ নিলেন, এদিয়ে তাও বোঝা যায়)।
#৯ সহিহ হাদিস বলছে, মহম্মদ বিশ্বাস করতেন প্রতিদিন সূর্য একটি নদীর জলে ডোবে। স্রষ্টা হিসেবে প্রকৃত সত্যটা ঈশ্বরের জানার কথা।
তাহলে কার বয়ান কোরানে জায়গা পেয়েছে? অবশ্যই মহম্মদের। (সুরা১৮:৮৬ দেখুন) আল্লাহ নন, মহম্মদই কোরান রচনা করেছেন।
#৮ নবী হিসেবে মহম্মদের মর্যাদা নিয়ে কোরানে অপ্রয়োজনীয় অনে দাবি রয়েছে, রয়েছে অনেক হুমকিও। তবে এতে কোনো মৌলিক নৈতিক মূল্যবোধের কথা নেই। কোথাও মানুষকে বলা হয়নি যে, নারীকে ধর্ষণ করো না, কন্যাশিশুর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করো না। প্রকৃতপক্ষে কোরান ক্রীতদাসীকে ধর্ষণ করার অনুমতি দিয়েছে, এবং প্রকারান্তরে বলেছে শিশুকন্যার সঙ্গে যৌনসঙ্গম জায়েজ।
#৭ তুলনায় ছোট আয়তনের হলেও কোরানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বারবার একই কথা বলা আছে।মুসার কথা আনা হয়েছে ১৩৬ বার। বাইবেল থেকে ভুলভাবে উদ্ধৃত গল্পের কোনো কোনো অংশে দেখা যায় শব্দ চয়ন প্রায় হুবহু (দৃষ্টান্ত সুরা ২০ ও ২৬)। ঈশ্বর কেনো দুর্বোধ্য কোনো বিষয়ে একই সারবত্তার কথা বারবার বলতে যাবেন? তিনি তো শান্তি, সহনশীলতা (কিংবা শিশুকন্যার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বিরোধী আইন ) সম্পর্কে স্পষ্ট নৈতিক উপদেশ দিবেন।
#৬ কোরানের ১৯ নং সুরায় যীশুমাতা ম্যারীকে আরন (এবং মুসা)-র বোন বলা হয়েছে। বিভ্রান্তিকর।
এর সরলতম এবং স্পষ্টতম ব্যাখ্যা হলো যে, মহম্মদ ভুল করেছেন। এতেই ব্যাখ্যা মিলে কেনো। কোরানে ভুল করে বলা হয়েছে খ্রিস্টানগণ কুমারী মাতা ম্যারীকে ঈশ্বর মেনে পূজা করে (৫:৭৫,৫:১১৬) যদিও খ্রিস্টানগণ তা কখনও করেননা।
#৫ কোরান মুসলমান পুরুষদের বলেছে তারা ক্রীতদাস হিসেবে ধৃত নারীদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করতে পারেন। এর চেয়েও খারাপ এই যে, এই কথাটি চার জায়গায় আরো চারবার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, মুসলমানদের দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে এই নিয়ে একটিও সুরা নেই কোরানে।
#৪ কোরান বলছে এটা ‘পরিষ্কার‘। এই কথার পরই অন্যত্র (৩:৭) বলা হয়েছে কিছু সুরার অর্থ শুধু আল্লাহই বোঝেন (এতে প্রশ্ন ওঠে মানুষ যদি না-ই বোঝে তবে কোরানে তা রাখা হলো কেনো)। বলা হয়েছে ‘সব বিষয়‘ ব্যাখ্যা করা হয়েছে (১৬:৮৯)। এর পরই মুসলমানদের বলা হয়েছে মহম্মদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে (৩৩:২১), বলা হয়নি কোন দৃষ্টান্ত।
বাস্তবে হাদিস এবং সিরা (সাধারণত বড় বড় পাদটীকা)-র মতো বাইরের সূত্র ছাড়া কোরান বোঝা অসম্ভব। এইসব সূত্র আবার অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পরবিরোধী এবং কখনোই প্রায় এসব নিয়ে ঐকমত্য হয়না।
এমনকী কোরানের ধর্মপ্রাণ মুসলমান পণ্ডিতগণও একই সুরার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করেন। উদাহরণ হিসেবে ৩৮:৩৩ নম্বর সুরার ব্যাখ্যার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই সুরার অধিকাংশ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সলোমন তার সব ঘোড়ার পা এবং ঘাড় কেটে দেন। কিন্তু সবচেয়ে সম্মানিত ইউসুফ আলীসহ সমসাময়িক কয়েকজন অনুবাদক বলেছেন, সলোমন বাস্তবে ঘোড়াগুলির গায়ে ভালবাসার হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।
আরো ভয়ঙ্কর (দুর্ভাগ্যবশত আরও প্রতিনিধিস্থানীয়) ৫:৩ সুরার মতো সুরার নির্দেশ ‘যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের ক্রুশবিদ্ধ করতে হবে‘। অবশ্য বলা হয়নি কীভাবে তা করতে হবে।
#৩ ওল্ড টেস্টামেন্টের নবীগণ যা করেননি মহম্মদ তিনি যে নবী তার স্বপক্ষে (এবং এমনকী তার মনের সুস্থতা নিয়ে)তুচ্ছ যুক্তির অবতারণা করেছেন। এগুলি নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়।
উদাহরণস্বরূপ, অন্তত আট জায়গায় (৮৩:১৩, ২৭:৬৮, ৪৬:১৭, ১৬:২৪, ৬:২৫, ২৬:১৩৭, ২৫:৫ এবং ২৩:৮৩) বলা হয়েছে যে, ”আল্লাহর বার্তাবাহক”-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি “পূর্বতনদের বলা কাহিনী” পুনরুক্ত করেছেন। কিন্তু যারা তাকে বিশ্বাস করবে না তাদের দোজখের আগুনে পুড়তে হবে। আল্লাহ এই কথাটি একবার বলে বাকী জায়গায় নীতিশিক্ষামূলক কিছু বললেন না কেনো?
এটা কি ঐশী বাণীর চেয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনকরীর চেষ্টা বলে মনে হয়না?
#২ কোরান বলছে,বাইবেলের লিখিত কপি (তোরাহ এবং গস্পেল) মহম্মদের সমসময়ে ছিল (২৯:৪৬, ৩:৩, ৩:৭৮) এবং বহু সুরা ”নিশ্চিত করছে যে, ওই কপিগুলি সঠিক (যদিও পরে খ্রিস্টান ও ইহুদিরা ”তাদের মাতৃভাষায়” সেগুলির ভুল ব্যাখ্যা করেছে বলে অভিযোগ)। কোরানের বিভিন্ন অংশ স্পষ্টতই সম্পূর্ণতার জন্য বাইবেলের নির্ভর করছে। অনেক সুরা জোর দিয়ে বলছে, ঈশ্বরের বাণী বদলানো কিংবা বিকৃত করা যায়না।
সমস্যাটা এখানে:
নিউ টেস্টামেন্টর শয়ে শয়ে কপি রয়েছে যা মহম্মদের সময়ের আগের। এগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন, বিভিন্ন লোক বিভিন্ন জায়গা থেকে আবিষ্কার করেছেন। তোরাহ রয়েছে আরো কয়েকশো। এগুলির সবই প্রায় যথার্থভাবে বাইবেলের আধুনিক সংস্করনের সঙ্গে মিলে যায়। কোরানের বক্তব্যের সঙ্গে তা মিলছেনা।
একইসঙ্গে কোনো সময়ের তোরাহ কিংবা গস্পেলের কোনো কপি বা তার অংশবিশেষ কোনোভাবে কোরানের সঙ্গে মিলছে না।
মহম্মদই তা বিকৃত করেছেন এবং পরে নিজের ভুল ঢাকার জন্য খ্রিস্টান ও ইহুদিদের উপর দোষ চাপিয়েছেন, এমন সম্ভাবনাই বেশী বলে মনে হয়না কি?
#১ আগেই বলা হয়েছে যে, স্বল্পায়তন হলেও মনে করা হয় কোরান ঈশ্বরের বানী যা চিরন্তন, অপরিবর্তনীয়। কিন্তু ঈশ্বর কেনো একজন ব্যক্তি, বিশেষ করে যিনি ঈশ্বরের বাণী তুলে ধরেছেন, তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে এত কথা বললেন কেনো?
দেখা যাক ৩৩:৫৩ নম্বর সুরায় কী বলা হয়েছে:
হে ঈমানদার! নবীর বাড়িতে খাওয়ার ডাক না পেলে ঢোকোনা। আর এতো তাড়াতাড়ি ঢোকোনা যে খাবার তৈরীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ঢূকবে দাওয়াত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বেরিয়ে যাবে খাওয়া হয়ে যাওয়া মাত্র, গল্প করার জন্য বসবে না, এতে সত্যি নবী বিরক্ত হন। তিনি তোমাকে চলে যেতে বলতে লজ্জা পান কিন্তু আল্লাহ সত্যটা বলতে লজ্জা পাননা।
এটাই কি লেখা থাকবে বেহেস্তের ফলকে।
কোরানের একটা বড় অংশ জুড়ে (বিশেষ করে ৩৩ ও ৬৬ নম্বর সুরা) ব্যক্তি কেন্দ্রিক এবং তা যৌনজীবন, টাকাপয়সা কিংবা মহম্মদ তার বিবিদের কাছ থেকে যে সম্মান পাওয়ার অধিকারী সেটা নিয়েই লিখিত। উপরন্ত, এই বিষয়টি ফিরে ফিরে এসেছে।
মহম্মদ অসংখ্য নারীর সঙ্গে সহবাস করতে পারেন, আমাদের এই কথা অনেকবার বলার চেয়ে আল্লাহ কি মানব জাতির জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ের কথা ভাবতে পারেননি?
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন