৬৯৫ বার পঠিত
ছেলে পরীক্ষায় খারাপ ফল করেছে। রিপোর্ট কার্ড দেখে ছুঁড়ে মেরেছেন বাবা। ছেলে মায়ের কাছে গিয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদে।
মা আর্তনাদ করে বলে, সব দোষ মাস্টারদের তারা নাম্বার দেয় নাই। এমনকী যে মাস্টার বাসায় আইসা ইংরেজি পড়াইয়া গেলো; সে-ও নাম্বার কম দিছে। এইসব হইতেছে ষড়যন্ত্র। ইংরেজি মাস্টার ধোঁকা দিয়েছে আমাদের।
মা ফোন করে খালাদের ডাকে। তারা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে একে একে আসতে থাকে রাগে গজগজ করতে করতে।
ছোট খালা কাঁদতে কাঁদতে বলে, দুলাভাই আপনি কী জানেন, আমাদের আওমি সোনাটাকে পড়াশোনা করতে দেয়নি ওর ক্লাসের ফার্স্ট বয় বন্ধু সুশীল। সুশীলরে ধইরা আনেন; সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মেজ খালা আর্তনাদ করে, আর আওমির বন্ধু কওমিটারেও ডাক। পোলাডারে ধইরা নামাজ পড়তে নিয়া গিয়া অনেক সময় নষ্ট করছে তার।
সুশীল ও কওমি এসে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বাড়ির পরিবেশ থমথমে। আওমির পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তারা।
আওমির মা ওর পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে মনোপলি বের করে ছুঁড়ে মারে। রাগে গজ গজ করে বলে, নিশ্চয়ই এই জুয়া খেলা শিখাইছে সুশীল। অ সুশীল কথা কওনা কেন!
সুশীল ও কওমিকে ঝাড়াঝাড়ি শেষে আওমির মা সপরিবারে স্কুলে যান খাতা চ্যালেঞ্জ করতে। হেড মাস্টারের রুমে ফুল ফ্যামিলি রবিনসন ঢুকে অবস্থান নেয়। আওমির মামা মুন্সী বলে, ইংরেজি মাস্টারকে ডাকেন; সে পরীক্ষার খাতা নিয়া আসুক। আমি আমার ভাগ্নের খাতা দেখতে চাই।
ইংরেজি খাতা খুলে দেখা যায় আওমি লাইনে লাইনে বানান ভুল করেছে।
মুন্সী মামা গাল ফুলিয়ে বলে, কম্পিউটারে যেহেতু স্পেল চেকার আছে; তাই পরীক্ষার হলে ইংরেজি বানানের ডিকশনারি থাকলে আজ আমার ভাগ্নেটা এতো কম নম্বর পেতো না। ধোঁকা হয়েছে আওমির সঙ্গে।
অংক খাতায় ভীষণ গড়বড় দেখে ছোট খালা বলে, পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর না দেয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। আমাদের সেজো বোনের ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ে; ওখানে ক্যালকুলেটর এলাউ করে। এইসব গেরাইম্যা স্কুলে আওমিকে পড়ানোটাই ভুল হয়েছে।
ভূগোল খাতায় আওমি ফ্রান্সের রাজধানীর নাম আইফেল টাওয়ার লিখেছে। মেজ খালা বিড় বিড় করে বলে, প্যারিসে আইফেল টাওয়ার ছাড়া আর আছেটা কী; আমাদের আওমি ঠিকই লিখেছে।
বাসায় ফিরে মুন্সী মামা বলে, যা বুঝলাম পুরা স্কুলে আমগো আওমির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলতেছে। ভাগ্নেকে কোলে নিয়ে মামা বলে, তুমি চিন্তা কোরো না ভাগ্নে; এই ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবো আমরা।
ছোট খালা বলে, আওমি শরীর চর্চায় ভালো নম্বর পেয়েছে; কিন্তু সে প্রশংসা স্কুলে কেউ করলো না; হিংসারে ভাই; সবই হিংসা। ভালো কাজের প্রশংসা নাই।
মেজ খালা জিজ্ঞেস করে, ঠিক করে বলো তো আওমি আব্বু, পরীক্ষার হলে কেউ তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো কীনা! আমার তো সন্দেহ হয় বখাটে বিম্পি-টিম্পিরা তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো।
আওমি ভ্যা করে কেঁদে দেয়। ছোট খালা চট করে হরলিকস বানিয়ে আনে।
এমন সময় সুশীলের মা ফোন করে আওমির মাকে সমবেদনা জানাতে, শুনলাম আওমির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে; ছোট ছেলে; খারাপ করতে করতেই ভালো করবে। আপনারা তো ভাবী কম কষ্ট করেন না। ছেলেটার পরীক্ষার সময় ডাব-কেক-কুক নিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে থাকেন স্কুলের গেটে। এই ছেলে বড় হয়ে নিশ্চয়ই তাক লাগিয়ে দেবে।
আওমির মা বলেন, আওমির রেজাল্ট খারাপ হইছে, এই গুজব কে রটাইছে ভাবী। আওমির সাফল্যে ঈর্ষান্বিত মহল গুজব রটিয়েছে। এইরকম ফেইক নিউজ থেকে সাবধান থাকবেন ভাবী।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন