আওয়ামী লীগ সরকারের খুনিবাহিনী DGFI এবং RAB এর অস্ত্রধারী খুনিরা ঠাণ্ডা মাথায় একরামুলকে খুন করার অডিও ক্লিপস ফাঁস হবার পরে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মিডিয়ার সামনে কিছু কথা বলেছেন।
জনাব কাদেরের বলা কথাগুলো কোট করলে স্পষ্টীকরণ হয় – আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী মানুষ হত্যার যে মিশনে নেমেছে তার নকশা ও প্ল্যান পূর্ব পরিকল্পিত ও অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত।
অন্যান্য নিউজ মিডিয়ার সব কথা কোট করার মতো সময় নাই। এখানে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত ছোট্ট একটি প্রতিবেদনের ওপরে একটু নজর দিই। চুলায় সেদ্ধ হওয়া ভাত পরীক্ষার জন্য যেমন পুরো পাতিল ভাত টিপে দেখার দরকার পড়ে না, তেমনি আওয়ামী লীগের চরিত্র বুঝতে লোক ধরে ধরে গুণবিচারেরও দরকার পড়ে না। আওয়ামী লীগ নের্তৃবৃন্দ ও সরকারের পলিসি ও উদ্দেশ্য বুঝতে বেশি তাই প্রতিবেদন ঘাটার প্রয়োজন পড়বে না, দু’য়েকটা বক্তব্যেই সবকিছু পরিস্কার বোঝা সম্ভব।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন –
১.
র্যাবের হাতে টেকনাফের যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক খুন হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২.
একরামুল হক যদি নিরপরাধ হন, তাহলে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
৩.
এ ধরনের (মানুষ হত্যা) অভিযানে দুই-একটি ভুল হতেই পারে।
৪.
যদি কোনো নিরীহ ব্যক্তি হামলার (হত্যা) শিকার হয়, সরকার কোনো প্রকারের ছাড় দেবে না। অন্যায় হলে তার (র্যাবের) বিচার হবে।
৫.
এ ধরনের একটা বড় কাজ (মানুষ হত্যা), যা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে, এখন একটি মতলবি মহল এর বিরোধিতা করছে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে। রাজনৈতিক বিরোধিতার খাতিরেই বিরোধিতা হচ্ছে। সরকারের প্রতিপক্ষরাই বিরোধিতা করছে। কিন্তু যাদের জন্য (আওয়ামী লীগের) অভিযান, তারা খুবই খুশি।
[নোট:বন্ধনীর ভিতরের শব্দগুলো সেন্স অব হিউমার থেকে বসানো]
পোস্টমর্টেম:
১) আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে একরামুল খুন হবার পরও ‘খতিয়ে দেখা‘ বলতে ওবায়দুল কাদের কী বুঝাতে চেয়েছেন আন্দাজ করতে পারেন? খতিয়ে দেখার পর্ব শেষ হলে যথারীতি তারা ঘোষণা দিবেন এটা জামাত-বিএনপির চক্রান্তে সংঘটিত হয়েছে।
২) ‘একরামুল হক যদি নিরপরাধ হন‘, ‘যদি‘ এবং ‘নিরপরাধ‘ শব্দ দুটি খেয়াল করবেন। এর ভিতরে স্পষ্ট একটা বার্তা আছে, তা হলো – অপরাধী হলে খুন করা বৈধ। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকার এখনো মনে করে তাদের হাতে খুন হওয়া একরামুল ‘অপরাধী’। তাই তাকে হত্যা করা মোটেই অন্যায় হয় নি।
এজন্যই ওবায়দুল কাদের সহাস্যে বলতে পারেন, একরামুল হক যদি নিরপরাধ হন তাহলে ‘দোষীদের‘ আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। সরকারের নির্দেশে খুনিবাহিনী খুন করে তারা দোষী হবে কীভাবে? আর কোন আইনের আওতায় সেনা সদস্যদের বিচার করা হবে? মানুষজনকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে ক্রসফায়ারের নামে চালিয়ে দেয়া হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়েছে এরকম দুয়েকটা নজির দেখাতে পারবেন কেউ?
৩) আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীর কাছ থেকে যখন শোনা যায় – এ ধরনের (মানুষ হত্যা) অভিযানে দুই-একটি ভুল হতেই পারে, তখন প্রশ্ন জাগে একরাম হত্যায় সরকার কী কী ভুল করেছে?
ক. মোবাইল অন থাকার কারণে অপরপক্ষের মোবাইলে কল রেকর্ড হওয়া?
খ. নাকী বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করা?
এটা স্পষ্ট যে, মোবাইলে রেকর্ড হয়ে যাওয়া এবং অডিও ক্লিপসটি ফাঁস হওয়ার বিষয়টা সরকারের জন্য মহাভুল। জনাব কাদেরের এই বক্তব্যে আভাস পাওয়া যায় আগামীতে মানুষ হত্যার সময় র্যাব সতর্ক থাকবে যাতে কোনোভাবেই কল রেকর্ড বা হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাবলিকলি না বের হয়।
৪) চার নম্বর পয়েন্টে আওয়ামী লীগ সরকার স্পষ্ট জানান দিচ্ছে যে, সরকারের গুডবুকে থাকা লোকজন নিরীহ। গুডবুকে না থাকা লোকজন দুস্কর, অর্থাৎ তাদের ওপরে হামলা বা খুন হওয়াটা কোনো অপরাধ নয়।
৫) সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত করলেও আওয়ামী লীগের পেটোয়া দালাল ইন্টেলেকচ্যুয়াল, সাংবাদিক, ব্লগার, অনলাইন একটিভিস্টদের দিয়ে বলাতে পারছে যে বিনাবিচারে এইসব মানুষ হত্যা খুব ভালো কাজ। এজন্যই জনাব কাদের গলা ফুলিয়ে বলতে পারেন, মানুষ হত্যা দেশের সর্বস্তরে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
খ. পরের অংশে আওয়ামী লীগের স্বভাবসুলভ চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। এজন্যই জনাব কাদের বলেছেন – ‘একটি মতলবি মহল এর বিরোধিতা করছে স্রেফ রাজনৈতিক কারণে, সরকারের প্রতিপক্ষরাই বিরোধিতা করছে।’ অর্থাৎ আওয়ামী লীগের হাতে বিনাবিচারে এইসব গণহত্যার বিরুদ্ধে যারাই সোচ্চার হবেন, প্রতিবাদ জানাবেন, লেখালিখি করবেন সকলেই সরকারের প্রতিপক্ষ। আর সরকারের প্রতিপক্ষ মানে সরাসরি ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি‘।
গ. বটম লাইনটাই হলো আওয়ামী লীগ কর্তৃক এইসব হত্যাকাণ্ডের সারাৎসার। অর্থাৎ এইসব মানুষ হত্যায় আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা বেজায় খুশি।