১০১৮ বার পঠিত
ভারতীয় ইতিহাসবিদ বিমলানন্দ শাসমলের উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের দেশের কিছু ‘গর্দভ’ বলা শুরু করেছে যে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেবার কৃতিত্ব ভারতীয় বা ইন্দিরা গান্ধিরও না, বরং মহম্মদ আলী জিন্নার।
লক্ষ্য করে দেখুন, প্রথমত বিমলানন্দ শাসমলের উদ্ধৃতিটি একেবারে কন্টেক্সের বাইরে এনে এমনভাবে বলা যে জিন্না হলো বাংলাদেশের জন্মদাতা। আগস্ট মাসে এইসব কথাবার্তার উদ্দেশ্য একটাই, বাঙালি জাতি সেইসঙ্গে শেখ মুজিবকে ছোট করে দেখানো। এই কথাবার্তার পেছনে যুক্তিটা কী? জিন্না যদি ভারতবর্ষ থেকে পাকিস্তান আলাদা না করতো তাহলে পূর্ব পাকিস্তান হতো না, পূর্ব পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হতো না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্ম, এটা জিন্নার কৃতিত্ব।
এইসব গর্দভদের যুক্তির ফ্যালাসি শেখানো আমার কম্ম নয়। তবে বলি, এই যুক্তিতে র্যাডক্লিফ যদি ভারতবর্ষ ভাগের সময় বাংলাদেশের অংশকে পাকিস্তানে না ফেলত তাহলে পূর্ব পাকিস্তান হতো না, আর বাংলাদেশের জন্ম হতো না; তাহলে কৃতিত্ব ব্যাটা র্যাডক্লিফের।
আরে না না, লর্ড মাউন্টব্যাটন যদি এই জিন্না আর নেহেরুর রেষারেষি কে কাজে না লাগাত তাহলে ভারতভঙ্গের কোন ব্যাপারই ঘটতো না; সুতরাং ভারতভঙ্গ না হলে পূর্ব পাকিস্তান হতো না, সুতরাং বাংলাদেশের জন্মও হতো না। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেয়ার কৃতিত্ব লর্ড মাউন্টব্যাটনের।
আরে না না, আদম আর হাওয়া যদি গন্ধম খেয়ে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত না হতো তাহলে তাঁরা পৃথিবীর বুকে মানুষ তৈরি করতে পারতো না; ভারতবর্ষ হতো না, পাকিস্তান হতো না, পূর্ব পাকিস্তানও হতো না, আর বাংলাদেশের জন্মও হতো না। তাহলে কৃতিত্ব আদম-হাওয়ার।
আরে না না, সকল মানুষের উদ্ভব আফ্রিকায় (বিজ্ঞান তাই বলে)। আফ্রিকার গুহা মানবেরা যদি ইউরোপ বা এশিয়ায় ছড়িয়ে না পড়তো তাহলে আর্য, দ্রাবিড়, বাঙ্গাল কারো জন্মই হতো না; তাহলে ভারতবর্ষ-বাংলাদেশ কোথাও কিছু থাকতো না। বাংলাদেশের জন্মও হতো না; সুতরাং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কৃতিত্ব সেই আফ্রিকার গুহা মানবের।
আর কিছু বলার দরকার আছে? এইসব গর্দভদের যারা পড়েন এবং লাইক দেন সেইসব গর্দভদের জন্যে বাংলাদেশ না। বাংলাদেশ অনেক রক্ত-ঝরা হাজার বছরের সংগ্রাম, অনেক আত্নত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করে আজকের বাংলাদেশ। ভারত মিত্র দেশ হিসাবে সাহায্য করেছে; কিন্তু ভারত চাইলেই কোন দেশ কে স্বাধীন করে দিতে পারে না; তাহলে কাশ্মীরও স্বাধীন হতো, চীনের তিব্বতও স্বাধীন হতো; বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম আর সেই সময়ের নেতৃত্বকে যারা খাট করতে চায় তাদের প্রতিহত করুন, শুধু ঘৃণা দিয়ে নয়; সম্ভব হলে অন্য শক্তি দিয়ে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন