০
৮৬২ বার পঠিত
আমার এক পরিচিত আছেন, যাকে সবাই বলেন ছাগল আনিস। না, আনিস নামের অন্যরা দুঃখ পাবেন না। হুমায়ূন আহমেদও জগলু নামের আগে ‘আঙুল কাটা’ বসিয়েছিলেন। সেই বইয়ের নাম ছিলো ‘আঙুল কাটা জগলু’। বিলাই স্বপন, কানা হাসান, কোপা সামছু, কত নামই তো আছে।
আমার সেই পরিচিতের নামকরণের কারণটা হলো তিনি ছাগল পালন করেন। তার ছাগলের একটি মিনি খামার আছে। উনি ব্ল্যাক বেঙ্গল পালেন। না, আবার ভাববেন না, আনিস বিএনপি সমর্থক। খালেদা জিয়া’র ব্ল্যাক বেঙ্গল প্রকল্প সফল করতে কাজ করছেন। বলা তো যায় না, এ কারণেও তিনি মামলা খেয়ে যেতে পারেন।
ছাগল আনিস খুবই সহজ-সরল একজন মানুষ। তার চিন্তাও খুব সোজা ধাঁচের। এই যেমন মামুনুল হক বিষয়ে তার সোজা প্রশ্ন, ‘যে হালারা পাঁচতারা হোটেলে এক রাইতে দুই লাখ টাকা মদের বিল দেয়। কোটি টাকা জুয়ায় হারে। বান্ধবীগো শতকোটি টাকার উপহার দেয়। হ্যাগো নিয়া মাথাব্যথা নাই, মামুনুলের বউ লইয়া এত মাথা ঘামানি কেন?’
আগেই বলেছি, সহজ সরল মানুষ প্যাঁচ-ঘোঁচ বোঝেন না। বোকার মতন প্রশ্ন করে ফেলেন। সে তো বোঝেন না, মামুনুলের ফাঁস হওয়া আলাপে তার কথিত বউ একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, ‘এত ঝামেলার মধ্যে এত রস আসে কোত্থেকে?’ এই প্রশ্নটাই এখন সার্বজনিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেমন, এই যে করোনার মৃত্যুকাল চলছে, তার মধ্যে মামুনুলের বউ নিয়ে এত আলাপ আসে কোত্থেকে? সারাদেশে আইসিইউসহ না-না চিকিৎসা সামগ্রীর যে পরিসংখ্যান দিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আঠেরো কোটি মানুষের দেশে তা কতটা নগন্য, তা নিয়ে আলাপ না করে মামুনুলের বউ নিয়ে আলাপ করার রস আসে কোত্থেকে? ডাক্তার-নার্সকেও রোগীর চিকিৎসা দিতে রাস্তায় বেরুলে ফাইন ভরতে হয়, এমন নিদানকালের অবস্থা না দেখে, না বলে ঘুরেফিরে একই আলাপের রস আসে কোত্থেকে? ইত্যাদি সব প্রশ্নই এখন মামুনুলের বউয়ের প্রশ্নের সম্পূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকই তো, এতসব ঝামেলার মধ্যে এত রস আসে কোত্থেকে!
যারা নিদানকালের এসব প্রশ্ন করেন না। যাদের প্রশ্নের টেপ মামুনুলের বউয়েই আটকে থাকে। তাদের মূলত মৃত্যু-শোক-জরা নিয়ে চিন্তা নেই। তাদের চিন্তা শুধু মামুনুলের বউ। বলতে গেলে তাদের সম্পর্কে মামুনুলের সেই কথিত বউয়ের ভাষাই প্রযোজ্য, ‘ফুর্তিতে আছেন মনে হইতাছে?’ সত্যিই তো, ফুর্তিতে না থাকলে এমন নিদানকালে ফুর্তি বিষয়ে এত আলোচনা কেন!
এই যে ফুর্তির আলোচক যারা, তারা আসলে নির্বাণ লাভ করেছেন। মোক্ষলাভের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। নাহলে মানুষের এত আহাজারি তাদের কানে পৌঁছায়না। তাদের কানে আর্তের চিৎকার পৌঁছায় না, কামনার শিৎকার পৌঁছায়। তাদের চোখ চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর হতাশ দৃশ্য দেখে না। তাদের বন্ধ চোখ রিসোর্টের বন্ধ রুমের ‘ম্যাজিক রিয়েলিটি’ দেখার চেষ্টা করে। তাদের মন সেই মৃত মানুষের স্বজনের কষ্টে জাগে না। জাগে ‘মেনকা’র নাচে।
ছাগল আনিস এদের কথা ভেবেই বিস্মিত হন। সোজা সরল মানুষ যারা নিদানকালের যে কোন ক্রুরতাতেই তারা বিস্মিত হন, দুঃখিত হন। তাদের মূলত চালাক আনিসদের মতন নির্বাণ লাভের কোনো উপায় জানা নেই।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন