০
৭৭১ বার পঠিত
ছাপাখানার আবিষ্কার জার্মানিতে ১৫’শ শতাব্দীতে হওয়ায়, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বইমেলা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। এবারেও ১১ থেকে ১৫ অক্টোবর আগের নিয়মের মত করে চলবে। ফ্রাংকফুট বইমেলা, বইকে কেন্দ্র করে সকল ব্যবহারিক মিডিয়া এবং প্রকাশনী প্রযুক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিশ্বের কেন্দ্র এবং একটি বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অক্টোবরে পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের প্রকাশনা সংক্রন্ত খবর এবং মিডিয়া শিল্পের বৈচিত্র্যময়, উদ্ভাবনী ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সামগ্রীর বাণিজ্য মেলা।
প্রতিবছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা একটি অতিথিদেশকে হাইলাইট করে, এবার অতিথিদেশ ফ্রান্স; তাই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা উদ্বোধন করেন।
GER Chancellor Angela #Merkel on the importance of access to books in dictatorships and her fight for the right to read: #fbm17 @Book_Fair pic.twitter.com/P5n7odoL6C
— DW Politics (@dw_politics) October 11, 2017
Frankfurt Book Fair: Angela Merkel, Emmanuel Macron appeal to cultural diversity https://t.co/l3nRnUVPnl #FrankfurtBookFair pic.twitter.com/561gcTawRV
— DW News (@dwnews) October 11, 2017
বাংলাদেশের একুশে গ্রন্থমেলার সাথে এটিকে কোনোভাবেই মিলানো যাবে না কারণ একুশের বইমেলা একুশের চেতনাকে ধারণ করে বাঙালির প্রাণের উৎসব, আর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা সারাবিশ্বের প্রকাশনী উৎসব। তাই পাঁচ দিনেই এই মেলার স্থায়িত্ব এর মধ্যেই বিলিয়ন ডলারের বৈব্যবসার সেরে ফেলেন প্রকাশকরা, আর দশ হাজারেরও বেশি সাংবাদিক লেখক, আলোচকরা পুস্তক আলচনায় সারা বিশ্বকে অনুপ্রেরণা দেয় নতুন বইয়ের প্রতি পাঠককে আকৃষ্ট করে।
যেহেতু ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার ও ছাপাখানার আবিষ্কারক জার্মান উদ্ভাবক জোহানেস গুটেনবার্গ এর ছাপাখানাকে কেন্দ্র করে বিশাল এই আয়োজন, তাই ইউরোপিয় রেনেসাঁ বা নবজাগরণ নিয়ে একটু আলোচনা না করলে এই বই মেলার গুরুত্ব অনুধাবন করা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
‘মানবতাবাদ’ বা হিউমানিজম শব্দটি ল্যাটিন শব্দ মানবতা থেকে আসে। মানবতাবাদ ইউরোপের সমস্ত পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ শতকের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাচীনকালের মানবতার ধারণায় পণ্ডিতদের দর্শনের পরিবর্তনন ঘটায়। ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ফরাসি থেকে আগত এবং একে নবজাগরণ বলা হয়। এটি প্রাচীন সংস্কৃতির নতুন আবিষ্কারের সাথে একটি ইউরোপিয় সংস্কার আন্দোলন ছিল। সংস্কারের ফলে খ্রিস্ট্রিয় ধর্মযাজক মার্টিন লুথার কিং কর্তৃক ক্যাথলিক চার্চের সংস্কারকরণের প্রতিনিধিত্ব করে।
ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য কনস্টান্টিনোপল আবার তুর্কিদের কাছে ফিরে যায় এবং অনেক বাইজেন্টাইন পণ্ডিতদেরকে ইতালিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। জোহানেস গুটেনবার্গ (জন্ম ১৩৯৮) সেই কাহিনী ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে ছাপার অক্ষর দিয়ে চিত্রায়িত করেন (এর আগে হাতে লিখে ইতিহাস সংরক্ষিত হতো) এবং এর ফলে বই ছাপানোর প্রচলন দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়। ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে ক্রিস্টোফার কলম্বাস কর্তৃক আমেরিকা পূনরায় আবিষ্কৃত হয়। কোপের্নিকাস এর মাধ্যমে সূর্যাস্তিক পৃথিবীর ও গ্রহপুঞ্জ ধারণা প্রবল হতে থাকে এবং জোহানেসন কেপলার গ্রহপুঞ্জের কক্ষপথ আবিষ্কার করেন।
এই সংস্কারসমুহ মার্টিন লুথার তাঁর এর থিসিস দ্বারা প্রমাণিত ও গ্রহণ করেছিলেন, তাই ১৫২১ সালে মার্টিন লুথারকে ক্যাথলিক চার্চ ও রাষ্ট্রিক আইনসভার অইন দিয়ে তাকে চার্চ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বাইবেল অনুবাদ শুরু করেন ও তাঁর উচ্চ জার্মান ভাষাজ্ঞান প্রয়োগের ফলে তিনি ধর্মসংস্কারে নতুন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন এবং নতুন বাইবেল গুটেনবার্গের আবিষ্কৃত ছাপাখানায় ছাপানো ও বাঁধানো শুরু করেন। ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে মার্টিন লুথার ধর্মীয় শান্তি আন্দলন ‘রিফরমেসন’ শুরু করেন, কিন্তু এই বিপ্লব আর থামাতে পারে না ক্যাথোলিক চার্চ।
মানবতাবাদ ইতালি থেকে শুরু হলেও পরে তা ‘রেনেসাঁ’ নামে সারা ইউরোপ ছড়িয়ে পড়ে। ইতালিয় দার্শনিক দান্তে আলিগরি এবং গিওভ্যানি বোকাসিয়োর মত লেখকরা নিজেদের জন্য মানবতাবাদ নামে একটি নতুন আন্দোলন শুরু করেন। এটি বাইজেন্টাইন পণ্ডিতদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল যারা তুর্কিদের দ্বারা কনস্টান্টিনোপলকে পরাজিত হওয়ার পর ইতালিতে চলে আসেন। চার্চের পাদ্রিবর্গরাও উচ্চপদস্থ শাস্ত্রীয় কাজের অনুবাদ ও সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
বই মুদ্রণ আবিষ্কার এই সংস্কারের কাজ প্রক্রিয়াকরণ ত্বরান্বিত করে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও মানবিকতাবাদ বা হিউম্যানিজম ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে এটি কেবল শিল্প ও সাহিত্যের সাথেই শুধু ইতালিতে নয়, ফরাসি, জার্মান পণ্ডিতরা একটি মানবতামূলক শিক্ষা এবং ধর্মতত্ত্ব ছড়িয়ে দেবার জন্য বিশাল প্রোগ্রাম তৈরি করেন। তারা সংস্কারের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
জার্মান মানবতার শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন ইরাসমোস ভন রটারডাম, উলরিখ ভন হুতেন এবং জোহানেস রয়েসলাইন। তাঁরা সকলেই আধুনিক ছাপাখানার কল্যাণে পত্রিকাপ্রকাশ শুরু করেছিলেন, যা দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের দারুণ সমালোচনা শুরু করে একদিকে ‘রিফরমেশন’ অন্যদিকে সংস্কৃতি, শিল্পকলা ও সংগীত এর নতুন রেনেসাঁ বা নবজাগরণকে এগিয়ে নিয়ে যান।
বাংলাদেশের বর্ত্তমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থানটি ১৫’শ শতাব্দীর ইউরোপের রেনেসাঁ পূর্ববর্তী অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই একটি নবজাগরণ বা বাংলার রেনেসাঁর সময় হয়তো অচিরেই। লেখক, প্রকাশক আর শিক্ষক হত্যার বিচার সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি, বেশিরভাগ তরুণ ব্লগাররা এখন দেশের বাইরে, এই ইউরোপই তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার মানুষ মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েছে, শংকা ও আতঙ্কে তারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে, বাংলার শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের নবজাগরণ কী ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা হবে?
Macron urges Merkel to fight for EU revival https://t.co/x7IHBxUUBO pic.twitter.com/UgwUxnjL4A
— FRANCE 24 English (@France24_en) October 11, 2017
আরও পড়ুন:
১. At Frankfurt book fair, Macron urges Merkel to fight for EU revival
২. Frankfurt Book Fair: Angela Merkel, Emmanuel Macron appeal to cultural diversity
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন