৯৯৫ বার পঠিত
বড়দিন বলতেই যে ছবিগুলো চোখে ভাসে অর্থাৎ আমার যেখানে জন্ম সেখানকার চিত্রটাই চলে আসে। পঁচিশে ডিসেম্বর। কমলালেবু কেক পিকনিক কিম্বা ব্যান্ডেল চার্চ।
তারও অনেক পরে পার্কস্ট্রিট। আলোর সজ্জা দেখার পর ভুরিভোজ।
আমাদের দ্বাদশ মন্দির স্কুলের কয়েকটি সহপাঠী বড়দিনে ওদের বাড়িতে খাবার নিমন্ত্রণ দিত।
ঠাকুরপুকুর অঞ্চলের রাস্তায় ঠিক পুজোর মতই আলো দিয়ে সাজানো হতো। মাইকে গান আর কিছু কিছু মোড়ের মাথায় ছোট্ট প্যান্ডেলের মত করে যিশু খ্রিস্টের মূর্তি সাজানো থাকত ধূপ আর ফুলে।
বড়দিনে ঠাকুরপুকুর অঞ্চল এইভাবে সেজে উঠত। ছোটদের নতুন জামা কাপড় পরে হাঁটাহাঁটি । উৎসবের একই গন্ধ।
এদেশে এসে অবাক হয়েছিলাম। নিয়ম কানুন তো আলাদাই, এরা পালন করে চব্বিশ তারিখ থেকেই। অর্থাৎ চব্বিশের দুপুরবেলা থেকেই দোকানপাট বন্ধ, রাস্তাঘাট ফাঁকা শুনশান। এক অদ্ভূত নিবিড় নিস্তব্ধতা চারিদিকে। সারাবছরের ব্যস্ততা চব্বিশের সন্ধ্যায় এসে একদণ্ড জিরিয়ে নেয়। অথবা বলা যেতে পারে, নতুন বছরের ছোটার জন্য আবার এক ট্যাঙ্ক এনার্জি ভরে নেয়।
পঁচিশ আর ছাব্বিশ সরকারি ছুটি। স্কুলের ছুটি আগেই পড়ে যায়।
চব্বিশের সন্ধ্যাবেলা পরিবারের সদস্যরা একত্রে বসে খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব করে। একে অপরের জন্য উপহার কিনে ক্রিসমাস ট্রির নীচে সাজিয়ে রাখে। সবচেয়ে দামী পানীয় আর খাবারে ভরে থাকে ঘর। এককথায় পারিবারিক মিলনায়তন।
এই বাজার করা শুরু হয় ঠিক আমাদের পার্বনেরই মত মাস দুয়েক আগে থেকেই।
উৎসবের দিনগুলোয় যাদের সাথে দেখা হবার সুযোগ নেই অনেকেই তাদের আত্মীয় বন্ধুদেরকে উপহার ডাকযোগে পাঠায়।
এবছর জর্মানিতে রেকর্ড প্যাকেট উপচে পড়েছে, ডাকব্যবস্থাকে প্রায় মুখ থুবড়ে ফেলে দিয়েছে। অনলাইনে উপহার কেনার হিড়িক সারা পৃথিবীতেই এখন মারাত্মক ট্রেন্ড।
যাইহোক, ছেলে মেয়েরা মা বাবার কাছে আসে দু’দিনের জন্য। বসে কথা বলে। রাগ অভিমানও বয়ে নিয়ে যায় ফিরতি পথে। এ নিয়েও অনেক গল্প উপন্যাস আছে। কেমন কাটল এ দুটো দিন।
কারণও আছে, আমাদের যেমন বারো মাসে তেরো পার্বন, এদের তো তেমনটি নেই। সবেধন নীলমণি এই একটিই। ইস্টারেও ছুটি থাকে, তবে এই উৎসব মেজাজটা তেমন থাকে না।
অনেকের সারাবছরে এই একবারই হয়তো পরিবারের কাচে আসা হয়। কথা হয় কালেভদ্রে। ব্যতিক্রম যে নেই, সেটা একেবারেই নয়।
সবকিছু সাজিয়ে মা বাবা সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে।
আমি যে শহরে থাকি, এখানের জনসংখ্যা ৩.৪ মিলিয়ন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বার্লিন শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ কাগজ কলমে কোন ধর্মীয় খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করেনি।
বাকিদের মধ্যে ২১.৫ শতাংশ প্রোটেস্ট্যান্ট বা EKD (Evangelische Kirche in Deutschland), ৯.৩ শতাংশ ক্যাথলিক, ৬.৫ শতাংশ মুসলিম আর ০.৬ শতাংশ অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের।
রবিবারে বার্লিনে কেউ চার্চে যায় না, এই বড়দিনেও উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
কিন্তু উৎসব করে সব্বাই ভালোবেসে। নিজের ঘরে। চার্চের থেকে অনেকেই নাম কাটিয়ে দেয়। তাই তাদের মাইনে থেকে চার্চের জন্য ট্যাক্স নেওয়া হয় না আর।
আমরাও এখানে উৎসব করি। এমনটিই তো হওয়া উচিত। ধর্ম কেউ মানুক বা না মানুক, উৎসবে ভাসুক মন সবার।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন