০
৫২৫ বার পঠিত
জাকির ভাই, কথা একটাই ‘বাঙ্গাল’ বাইর কইরা ফালান। সিনিয়রগো লইয়া ভাবনের কিছু নাই। হ্যাগো কেউ কেউ যে ব্যঙ্গ করবো হ্যাইডা আপনেও জানেন, আমিও জানি। আমরা সক্কলেই জানি। হ্যাগো মাথায় এখন খালি ‘চোথা’র চিন্তা। ‘চোথা’ পাওন আর খাওনের চিন্তা। তাই আপনেরে জিগাইছে ‘চোথা’ দিতাছে ক্যাঠায়। হ্যাগো কথা বাদ দেন। আপনের কাম আপনে করেন।
আপনের ‘বাঙ্গাল’ নামটা দিলে যায়া গাঁথছে ভাই। কেন গাঁথছে তার আগে কইলকাতার রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’র কথা কই। ‘বাঙ্গাল’ নোবেল যেইডাই অংশ লইছিলো। যিশু হইলো গিয়া উপস্থাপক। বিশাল ‘সংস্কৃতিজীবী’। নোবেল যেই পর্বে জেমসের ‘মা’ গানটা গাইলো হ্যাই পর্বে। শুরুর আগে যিশু আপনের কওয়া সিনিয়রগো লাহান ব্যঙ্গ কইরা ‘বাঙ্গাল’ ভাষা শুনতে চাইলো নোবেলের মুখ থিকা। কইলোও। হ্যারে যে মদনা বানাইছে হ্যাই বোধটাও নোবেলের হয় নাই। যে ভাষার লিগা আমরা জীবন দিছি, সেই ভাষারে ব্যঙ্গ করে কুন এক অঙ্গরাইজ্য। আজিব কারবার। যিশু’গো কাছে ‘বাঙ্গাল’ মানে ঢাকার ভানু। কমেডিয়ান। বোঝেন অবস্থাটা।
‘বাঙ্গাল’গো অবস্থাটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও কয়া গ্যাছে তার ‘একা এবং কয়েকজন’ এর মইধ্যে। সুনীলরেই উদ্ধৃত করি, ‘কলকাতায় তখন বাঙালরা ছিল প্রকৃতপক্ষেই সংখ্যালঘু। নাটক নভেলে হাস্যকর চরিত্র উপস্থাপিত করার জন্য অবধারিত ভাবে ব্যবহার করা হতো বাঙাল ভাষা, বঙ্কিমচন্দ্র থেকে যার শুরু।’ কথা এইটাই। ‘বাঙ্গাল’গো অচ্ছ্যুৎ বানাইছিলো বঙ্কিমচন্দ্র। রেসিস্ট লেখক কইলেও রাগ করনের কিছু নাই। হালের যিশু’রা যার নয়া ‘এপিসোড’।
ভাই আপনে হ্যাই ‘অচ্ছ্যুৎ’ নামটা তুইলা আনছেন স্যালুট আপনেরে। ‘বাঙ্গাল’ শব্দটা হইলো আমাগো কাছে ‘ঘটি’গো বঞ্চনার প্রতিবাদ। রেসিজমের প্রতিবাদ।
গর্ব কইরা কই, আমরা ‘বাঙ্গাল’। বাঙলা আমাগো মাতৃভাষা। আর ‘ঘটি’গো কুনো মাতৃভাষা নাই। জলে ভাসা পদ্ম হ্যারা। ভাইসা বেড়ায় হিন্দি, মারাঠিগো ঘাটে বেঘাটে। বাঙলা টিকা থাকবো এই ‘বাঙ্গাল মুলুকে’। ইতিহাস তাই কয়, ‘বাঙ্গাল’গো ‘বাঙ্গাল মুলুক’। এই বাঙলা আমাগো, এই স্বাধীন ভূখন্ডরে খুব বেশি দিন পরাধীন রাখন যায় নাই। এই ‘বাঙ্গাল মুলুক’ পরাধীন থাকে না।
পুনশ্চ: খ্যাত সাহিত্যিক জাকির তালুকদার বের করছেন সাহিত্য কাগজ ‘বাঙ্গাল’। নামটাই আমার জন্যে যথেষ্ট। আমি সাথে আছি জাকির ভাই। কাগজ কেনার তালিকায় আমার নামটা উঠিয়ে দিয়েন।
দুই
আমার খুব প্রিয় এক বোন আপত্তি জানিয়েছেন নোবেলের ব্যাপারে। বলেছেন, নোবেল শেষ পর্যন্ত তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলেছে ‘সারেগামাপা’য়, ঘটি বলার অপচেষ্টা করেনি। আমি আমার বোনের সাথে সম্পূর্ণ একমত। নোবেল তার গানে বাংলাদেশকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে সে কথাও ভুল নয়। নোবেলের জন্যেই আমার নিজেরও ‘সারেগামাপা’ দেখা। তবে এই লেখাটি মূলত ‘বাঙ্গাল’ নিগ্রহ বিষয়ে। আর সেজন্যেই আমার বোনের কাছে দেয়া ব্যাখ্যাটি লেখার সাথে জুড়ে দেয়াটা সার্বিক ভাবে প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। তাই জুড়ে দেয়া।
ব্যাখ্যাটি ছিলো এ রকম-
লেখাটা মূলত ‘বাঙ্গাল’ নিগ্রহের। নোবেলের ব্যাপারটি শুধু উদাহরণ মাত্র। ‘সারেগামাপা’র মতন অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট আগেই তৈরি হয়, তাৎক্ষণিক কিছু নয়। সেটা যখন হয়েছিলো তখন নোবেল বলতে পারতো। কিন্তু বলেনি। নোবেল অতটা ধরতে পারেনি। সেজন্যে ওকে বোকা বলা যায়, এর বেশি কিছু নয়। যারা স্ক্রিপ্টটা করেছেন তারা জেনে-বুঝেই করেছেন। মিরাক্কেলেও এর কিছু উদাহরণ রয়েছে। বাংলাদেশকে তারা সেই ‘জমিদারি’ চিন্তা থেকেই দেখেন। রায়ত-প্রজা হিসাবেই দেখে-ভেবে কল্পনায় জমিদারির কুৎসিত মজা নেন। এটাকে এক ধরণের ‘স্যাডিজম’ও বলতে পারেন। আর সেজন্যেই বাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে তারা মূল বাংলা হিসাবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তারা বোঝাতে চান প্রমিত বাংলার হকদার তারাই। মূলত সেই জমিদারি চিন্তার বিকৃত প্রয়াসই এমন হাসি-ঠাট্টা। পশ্চিমবঙ্গেও আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। অথচ তাদের কাছে ‘ঢাকার ভানু’ হলো বাংলাদেশের মডেল। আমার প্রতিবাদটা সেখানেই। না, প্রতিবাদ ‘ঢাকার ভানু’কে মডেল বানানো নিয়ে নয়, তাকে হাসি-ঠাট্টার মডেল বানানো নিয়ে। আমি নিজেই এখন ঢাকার আঞ্চলিকতাকে লেখায় ব্যবহার করতে চাই, করি। আমার ভাষা আমার অহঙ্কার, সে আঞ্চলিকই হোক বা প্রমিত-ই হোক। তেমনি আমার দেশ আমার গর্বের জায়গা, তাকে নিয়ে সমালোচনা মেনে নিতে পারি, কিন্তু হাসি-ঠাট্টা নয়। সেজন্যেই নোবেলের ওই পর্বটি শুধু ঘটিদের মনোভাব বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। নোবেলকে ছোট করার জন্য নয়।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন