০
১৬২৫ বার পঠিত
জার্মান কথাসাহিত্যিক হাইনরিখ ব্যোল এর জন্ম শতবার্ষিকী আজ
“আমি একজন ক্লাউন, মুহূর্তের স্মৃতিকথা সংগ্রাহক”
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান কথাসাহিত্যিক হাইনরিখ ব্যোল তাঁর ‘ক্লাউন’ বইটির এই উদ্ধৃতি দিয়েই শুরু করছি। বেঁচে থাকলে তাঁর আজ ১০০ বছর বয়স হতো।
তাঁর কলম যেমন ধর্মীয় চার্চের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তেমনি নারী মুক্তির প্রবক্তা হিসেবে যুদ্ধোত্তর ইউরোপের অসাধারণ ছাপ রেখেছে, যার প্রমাণ তিনি তাঁর বই ‘ক্যাথারিনা ব্লুম এর সম্মান’ রচনায় তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস, ‘ট্রেন টি সময় মত এসেছিল’ ১৯৪২ সনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালিন সময় প্রথম প্রকাশ হয়। অন্যান্য উপন্যাস, ছোট গল্প, রেডিও নাটক এবং প্রবন্ধের সংগ্রহগুলি অনেক, যুদ্ধপরবরত্তি অসংখ্য উপন্যাস লেখেন তিনি তাঁর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে। ১৯৭২ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, তার লেখার জন্য যা তার সময়ের একটি বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে এবং বর্ণনার একটি সংবেদনশীল দক্ষতার জন্যে জার্মান সাহিত্য পুনর্নবীকরণে অবদান রাখে। ১৯৪৬ সনের হারমান হেসে’র পরে তিনিই প্রথম জার্মান লেখক যিনি আবার নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন।
ধ্বংসস্তুপের মাঝ থেকে ও যে সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় হাইনরিখ ব্যোল তার জ্বলন্ত উদাহরণ। হাইনরিখ ব্যোল ২১ ডিসেম্বর ১৯১৭ কোলন শহরে জন্ম ও ১৮ বছর বয়েসে বাধ্যতামূলক ভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন, যুদ্ধের ধ্বংসলীলার পান্ডুলিপি তিনি তখনি গোপরে লিপিবদ্ধ করেন।
হাইনরিখ ব্যোল যুদ্ধোত্তর জার্মানির ভোগবিলাসী সমাজের বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন তাঁর সামাজিক সমালোচনার প্রধানত দুটি এলাকাই ছিল ক্যাথলিক গির্জা এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে। ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনা যেমন আত্মসমালোচনা এক ধরনের ছিল, ক্যাথলিক চার্চ এর সুবিধাবাদ ইঙ্গিত তিনি নৈতিক ধর্মতত্ত্ব ক্যাথলিক চার্চের সংকীর্ণ দৃশ্য সমালোচনা করেন, তা ছাড়া ও যুদ্ধের ধংশাত্মক দিকগুলোও তাঁর সাহিত্যে ফুটে উঠেছে।
জীবন-যাপনের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য খুঁজে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় লিখেছেন হাইনরিখ ব্যোল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয় তাঁকে। রাশিয়া আর ফ্রান্সের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন, আহত হন, মার্কিন যুদ্ধবন্দী শিবিরে তাঁকে কয়েদি জীবন যাপন করতে হয়।
যুদ্ধত্তোর জার্মানির শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক দের মধ্যে হাইনরিখ ব্যোল ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ তিনি নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ১৯৬৭ সনে জার্মান সাহিত্য পুরস্কার গেয়র্গ বুশনার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪৫ এ যুদ্ধোত্তর জার্মানিতে ফিরে এসে যে কলম ধরেছেন তা তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থামেনি, দুই শতাধিকের ও বেশি ছোটোগল ও শতাধিক উপন্যাস, নাটক ও চলচিত্র পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন।
১৯৭১ সনে বাঙালিরা যখন মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত তখন তিনি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “লেডির সঙ্গে গ্রুপ ছবি” প্রকাশ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন, এবং এই উপন্যাসটির জন্যই তাঁকে ১৯৭২ সনে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়।হাইনরিখ ব্যোল ১৬ ই জুলাই ১৯৮৬ সনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি বেঁচে থাকলে আজ তাঁর ১০০ বছর বয়স হতো।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন