৩
২৫১০ বার পঠিত
জিহাদ যদিও ইসলামে প্রতিরক্ষা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, জিহাদের বৃহত্তর লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের লোভ-লালসা, প্রলোভন ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত লড়াই। আত্মার পরিশুদ্ধির নিমিত্তে অশুভ রিপুর বিরুদ্ধে ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের নামই জিহাদ। অথচ বিগত ২-৩ দশকে বিশ্বব্যাপী এক শ্রেণির আতংকবাদী জঙ্গি মুসলিমের উদ্ভব ঘটেছে, যাদের কাছে জিহাদ হচ্ছে কাফের বা কাফের-পন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই। এবং ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ হওয়া সত্বেও, কাফেরদেরকে হত্যার লক্ষে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে মহাপাপ-তূল্য আত্মহুতি দেওয়াও তাদের কাছে পূণ্যের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষ যখন কোন ভাল জিনিশকে খারাপ কাজে ব্যবহার করে, তার প্রতিফল কখনোই শুভ হয় না, সে মানুষের জন্য। তথাকথিত আল-কায়েদাপন্থী বা সমমনা জিহাদিদের দ্বারা ইসলামের জিহাদ তত্ত্বের ভুল ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই ঘটছে। তা ‘বুমেরাং‘ হয়ে উঠছে, অর্থাৎ তীর তার লক্ষে না গিয়ে উল্টো চালনাকারীর বুকেই এসে বিঁধছে।
যেমন ধরুন পাকিস্তানের কথা, যে দেশটি সহিংস আগ্রাসী জিহাদের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের ডেইলি টাইমস পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে জি নিউজ ওয়েবসাইট লিখেছে, পাকিস্তানভিত্তিক উগ্র ইসলামপন্থী দলগুলো কর্তৃক জিহাদের নামে পরিচালিত সন্ত্রাসী আক্রমণে এ বছরের (২০১২) প্রথম ৭ মাসে কমপক্ষে ৩৮৯৮ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে ১৭০৫ জন সাধারণ মানুষ, ৪৮৫ জন সামরিক/প্রতিরক্ষা কর্মী ও ১৭০৮ জন সন্ত্রাসী।
হতাহত সবচেয়ে বেশী হয়েছে জুন ও জুলাই মাসে, যথাক্রমে ৩৬৭ জন সাধারণ মানুষ ও ৩৬৩ জন সামরিক/প্রতিরক্ষা কর্মী। সে দু’মাসে ৪৯৬ জন সন্ত্রাসীও প্রাণ হারিয়েছে। অপরদিকে, এ বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে মারা যায় ১১৭ জন সামরিক/প্রতিরক্ষা কর্মী। তার মানে জিহাদের নামে সন্ত্রাসের তৎপরতা ও তাতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের পুরো বছরের মোট ৬৩০৩ জন মানুষ অনুরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রাণ হারায় পাকিস্তানে, এবং ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত মৃত সন্ত্রাসীসহ সর্বমোট ৪২,৮২৪ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
এটাও উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে, পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তানে প্রায় দু’টো পুরো ব্রিগেডের সমান সৈন্য হতাহত হয়েছেন জিহাদি কর্মকাণ্ডে। এর মধ্যে ৩০৯৭ জন মৃত ও ৭২১ জন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু। মৃতদের মাঝে রয়েছেন একজন তিনতারকা ও দু’জন দুইতারকাধারী সেনাধ্যক্ষ।
এটা সুস্পষ্ট যে, পাকিস্তানে তথাকথিত জিহাদিদের কাফের-হত্যাকারী বা কাফের-পন্থা বিরোধী সন্ত্রাসী অভিযানে মৃতদের প্রায় সবাই শতকরা ৯৯ ভাগ হবেন মুসলিম। এবং এটাও লক্ষণীয় যে, যেসব জিহাদিরা এসব সহিংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ভ্রান্ত জিহাদের নামে, তাদের সংখ্যাই মৃতদের মাঝে সর্বাধিক। দুঃখজনক হলেও ‘বুমেরাং‘-এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে,
‘Live by the sword, die by the sword’
অর্থাৎ তলোয়ার যাদের জীবিকা-বৃত্তির উপায়, তলোয়ারেই তাদের মৃত্যুর উপায়।
ইসলামের শান্তির বার্তার পরিবর্তে যারা সহিংসতার চর্চা করে, তাদের ভাগ্যে আর কীইবা জুটবে!
পাকিস্তানে জিহাদি তৎপরতার দুঃখজনক ফলাফল শুধু হতাহতের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশটি ২০০১ সালে থেকে এ পর্যন্ত তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’তে প্রায় ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার গচ্চা দিয়েছে। সে এক বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি! সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ২০০১-০২ অর্থ-বছরের খরচ ২.৭ বিলিয়ন থেকে বেড়ে বর্তমান অর্থ-বছরে তা ১৭.৮৩ বিলিয়নে এসে ঠেকেছে।
সভ্য সমাজের সবচেয়ে মৌলিক লক্ষণ হচ্ছে তার জনগণের শান্তিপ্রিয়তা। অহিংসতা, শান্তিমূলক পন্থাই কোন জাতির সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথকে প্রসারিত করে। সহিংসতা মানবজাতিকে ধাবিত করে উল্টোপথে। ইতিহাস তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ১৩, ২০১২; ৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
শুধুই ইসলামের জন্য।
জিহাদ আধ্যাত্ব সাধনা কি তলোয়ার সাধনা, তা নিয়ে আর ক্যাচাল করতে মন চায় না। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, ইসলাম না এলে জিহাদের উৎপত্তি হতোনা, আর জিহাদের উৎপত্তি না হলে এমন বিরাট খেসারত দিতে হতো না মানবতাকে।
খুবই দুঃখজনক, হৃদয়-বিদারক।
আগস্ট ১৩, ২০১২; ৪:০০ পূর্বাহ্ন
ইসলামর যুদ্ধগুলো প্রতিরক্ষা মুলক নয়,সবই আগ্রাসী-ইসলামের ইতিহাসও তাই বলে ।
আগস্ট ১৩, ২০১২; ৭:৪১ পূর্বাহ্ন
ইসলাম যতদিন থাকবে জিহাদ ততদিন থাকবে। আর জিহাদ যতদিন থাকবে আনেক প্রাণ অকালে ঝড়তে থাকবে। ১৪০০ বছরের ইতিহাস কিন্তু তাই সাক্ষ্য দিচ্ছে।