প্রথমে লেখাটি শুরু করতে চাই সমাজের সাধারণ মানুষের আলোচনাকে কেন্দ্র করে। জুম্ম সমাজে বর্তমানে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আজ মানুষের মধ্যে সুবিধাবাদী, ব্যক্তিস্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। ক্ষুদ্র পরিসরে পুঁজির বিকাশ ঘটেছে। আমাদের সমাজে পেটি বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যে নিম্নস্তর-মধ্যস
্তর-উচ্চস্তর বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে উচ্চস্তরের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে পরিচিহ্নিত করার মাপকাঠি মূলতঃ সমাজের অর্থনীতির বিকাশের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীতে পুঁজিবাদী সমাজ আজ চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবী রুপে আর্বিভূত হয়েছে। বিশ্বের বুকে একের পর এক মানব সমাজের নতুন নতুন স্তর এসেছিল এবং আসতেই থাকবে। একটা প্রাচীন সমাজের গর্ভে একটা নতুন সমাজের জন্ম হবে। এই নিয়মের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের বুকে দন্ডায়মান পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা আজ চরম প্রতিক্রিয়াশীল হলেও অধিকাংশ মানুষের কাছে ঘৃণিত নয় বরং প্রশংসিত। মানুষ এখন পুঁজিবাদের গোলকধাঁধায় পড়ে আছে। উদ্দেশ্যে পুঁজিপতি হওয়া, সমাজের কাছে নিজেকে প্রতিপত্তি হিসেবে প্রভাবশালী এক জনৈক এর মতন ক্ষমতা অপব্যহারের মাধ্যমে সব সময় নিজেকে জাহির করা। তাহলে কি হবে এই পৃথিবী নামক গ্রহের? যদি বলি এশিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান ব্যবসা এখন পর্যটন শিল্প। তাহলে এই শিল্পের উদ্দেশ্যে কি মনোরঞ্জক করা, নারীদের নিয়ে পতিতা ব্যবসা করা। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের বিকাশ মানেই জুম্মদের স্বভূমি হতে উচ্ছেদ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়া। বড় বড় ফাইভ স্টার হোটেল, কমপ্লেক্স ও নামীদামী রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি লোভনীয় প্রতিষ্ঠানের দিকে মানুষের ঝোঁকে পড়ার অর্থ এই তাঁর মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চুড়ান্ত অধঃপতনের দিকে চলে যাওয়া। এগুলো সাধারণত মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের গতিকে রুদ্ধশ্বাস করে রাখে এবং সেই সাথে একটা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের উপর প্রবলভাবে আঘাত হানে। এটা আমাদের জুম্ম জাতির জন্য হুমকি এবং অশনিসংকেত। এরই বিরুদ্ধে যুবশক্তির লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
দেখবেন গোটা দেশে মাদক আর মাদক, ভিডিও দোকানে অশ্লীল ছবি টাঙানো, মোবাইল ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকেও অশ্লীল ছবি আপলোড করা হয় প্রতিনিয়ত। শাসকগোষ্ঠী নির্বিকার কেন? আমাদের আন্দোলনের প্রাণশক্তি যুব-তরুণ সমাজকে রঙ্গ, তামাশায় মত্ত রাখার সমস্ত আয়োজন পাকাপোক্ত করে রেখেছে শাসকশ্রেণি। জুম্ম সমাজের কিছু নীতিহীন, আদর্শহীন যুবকের মাধ্যমে এই সমাজবিরোধী মাদক ধরিয়ে দিয়ে জুম্মজাতির মা ও মাতৃভূমির স্বপ্নকে চূর্ণবিচূর্ণ করার ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা বাস্তবায়নে অনেক এগিয়ে গেছে শাসকশ্রেণি। পার্বত্য চট্টগ্রামের চারিদিকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। চারিদিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা আজ বিশৃঙ্খলার চরম সীমায় অবস্থান করছে। পাহাড়ের বুকে আজ হাহাকার নৈরাজ্য ও অরাজকতা। সামাজিক অধ:পতনের দিকে জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মানবিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করছে শাসকশ্রেণি। বেদনাকর নিষ্ঠুর ও অমানুষিক শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে শাসকশ্রেণি জুম্ম জাতির ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে কলংকিত করছে। সেজন্য গর্জে উঠেছিল মহাননেতার ইস্পাত-দৃঢ় কঠিন সংগ্রাম যাহা যুব সমাজই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
নৈতিক অবক্ষয় রোধকল্পে একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী চিন্তাধারার মানুষ আবার ধর্ম চর্চায় মহাব্যস্ত। ধর্ম চর্চার মাধ্যমে কি এগুলো রোধ করা সম্ভব? পার্বত্য চট্টগ্রামে মসজিদ বেড়েছে ব্যাপক হারে, ইসলামী সম্প্রসারণ ও বহিরাগত আগ্রাসনের শিকার গোটা জুম্মজাতি এবং সেই সাথে বাড়ছে বহিরাগতদের অপরাধ ও অনৈতিক কার্যকলাপ। তথাকথিত ধর্মীয় গুরুরাও নৈতিক অবক্ষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া অনেক অনৈতিক কার্যকলাপের ঘটনা ভরিভরি প্রমাণ মেলেছে। একজন চাকমা যুবককে দিয়ে স্বর্ণ বৌদ্ধ মূর্তি চুরি করায় যে ধর্মীয় গুরু এফ দীপংকর ভান্তে তাঁর মধ্যে কিভাবেই প্রত্যাশা করেন গোতম বৌদ্ধের অহিংসা নীতি। ধর্মের নাম দিয়ে কোটি কোটি অসহায় জুম্মদের ঘামে ভেজা টাকা লুটেপুটে নিয়ে যায় যে ধর্মীয় গুরু তার নৈতিকতা তো জেরো তলানীতে হবেই কিন্তু একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী মানুষ তাকে এখনও হিরো মনে করে। সাবধান থাকুন এবং দূরে থাকুন এসব ধর্ম ব্যবসায়ী দালাল ও ধান্ধাবাজ ধর্মীয় গুরুর কাছ থেকে। নিজের ঘামে ভেজা ও কষ্টের টাকা নিজেরাই যথাযথভাবে কাজে লাগান, সৎ পথে ব্যয় করুন। এবার ফিরে আসি সমগ্র দেশে সম্প্রতি কি চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে যৌন নিপীড়ন বা ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। যা সভ্য সমাজের জন্য খুবই লজ্জাকর এবং অশনিসংকেত ছাড়া কিছুই নয়।
বর্তমান জুম্ম সমাজের মধ্যে কিছু সুযোগ সন্ধানী, চতুর, ধান্ধাবাজ লোকেরা জাতীয় রাজনীতিতে তথা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নামধারী সন্ত্রাসী রাজাকার ও জাতিদ্রোহী সংস্কারপন্থীর রাজনীতিতে এক সাথে জোটবেঁধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। জুম্ম জাতির ঐক্যবদ্ধ শক্তির বিপরীতে শাসকগোষ্ঠীর অঙ্গুলী হেলনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্মূলীকরণের নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছে। যার কারণে তরুণ সমাজের সোনালী অতীত থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতামোহে অন্ধ হয়ে সুবিধাবাদের প্রকৃষ্ট মুখোশ পড়ে জুম্ম জাতির সাথে ছিনিমিনি খেলা করে চলেছে। সেই সুযোগে শাসকগোষ্ঠী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন ঘটানোর সব আয়োজন করে রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি হল প্রয়াতনেতা ও বর্তমান নেতার হাত ধরে গড়ে উঠা আদর্শবান মানুষ তৈরির একটা রাজনৈতিক সংগঠন। যেখানে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও সন্তু লারমার মত নেতাদের স্পর্শে পরশ পাথর ও সোনায় পরিনত হয়। তাঁদের ছোঁয়ায় গ্রাম্য নির্বোধ যুবক একদিন সাহসী হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রবলবেগে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই প্রয়াতনেতা এম এন লারমার আদর্শের সংস্পর্শে গেলে ভীরুরাও হয় সাহসী, চরিত্রহীন মানুষ চরিত্রবান হয়ে যায়, অশিক্ষিতরা শিক্ষিত হয়ে উঠে। সেকারণে পার্বত্যাঞ্চলের মৃত্যুর মিছিল প্রতিরোধ করতে হলে দরকার প্রগতিশীল আদর্শের রাজনীতি সম্পূর্ণ একদল সংঘবদ্ধ মানুষ। যার ফলে এম এন লারমার আদর্শই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে জুম্মজাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে।
৮০ দশকে ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই যুব সমাজকে আন্দোলন বিমূখ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে চাকরী দেয় স্বৈরাচারী এরশাদ। উদ্দেশ্যে যাতে শিক্ষিত যুবকেরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করে। শহরে ক্লাবে ক্লাবে মদ-জুয়ার আসর জমজমাট। হিরোইন ও ইয়াবার মরণব্যাধি থেকেও আজ ছোট্ট শিশুদেরও রক্ষা নেই। একদিকে শাসকশ্রেণির দমন-পীড়ন, নির্যাতন, নিপীড়ন অন্যদিকে নৈতিক অবক্ষয় ঘটানোর সমস্ত আয়োজন সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে খুবই সুকৌশলে। হাজার, হাজার যুব সমাজ আন্দোলনে যুক্ত হলে, শাসকশ্রেণির অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে শাসকেরা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালানোর পথ খোঁজে। যাহা ইতিহাসের আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে আমরা দেখতে পেয়েছি। প্রকৃত অর্থে পুঁজিবাদ কি মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে? তাহলে চলি আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে। যে ইউরোপ একসময় শেকসপীয়রকে জন্ম দিয়েছিল, গোর্কিকে জন্ম দিয়েছিল, নিউটনকে জন্ম দিয়েছিল, আইনস্টাইনকে জন্ম দিয়েছিল, আরো অনেক বৈজ্ঞানিককে জন্ম দিয়েছিল, যে ইউরোপ রুশো-ভলতেয়ারকে জন্ম দিয়েছিল, যে আমেরিকা আব্রাহাম লিংকন-জেফারসনকে জন্ম দিয়েছিল, সে ইউরোপ আজ কোথায়? সে ইউরোপের আজকে ক্লেদাক্ত রূপ, সে ইউরোপকে আজ ধ্বংস করেছে পুঁজিবাদ। সেখানে মনুষ্যত্ব বলে কিছু নাই। মানবতাবাদ-মানবিক মূল্যবোধ বলে কিছু নাই, তাকে ধ্বংস করছে। সমস্ত জায়গায় সে নোংরা সংস্কৃতির চর্চা করছে। চূড়ান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা-স্বার্থপরতা, শুধু লোভ আর লোভ, ব্যক্তিগতভাবে লুণ্ঠন করা, লোভ করা, অপরকে ঠকানো, আর ভোগবাদী মানসিকতা। ওখানে ট্যাবলেট না খেলে যুবকদের ঘুম হয় না। নোংরা মানসিকতা চরিতার্থ না করলে তাদের আনন্দ হয় না। ইউরোপে স্লোগান উঠেছে বিবাহিত জীবন বন্ধন চাই না, কিছুক্ষণের জন্য লিভ টুগেদার। ইউরোপের মেয়েরা মা হতে চায় না, মা হওয়া বোঝা। যে সন্তান ইউরোপে জন্ম নিচ্ছে তারা মাতৃত্বের-পিতৃত্বের স্নেহ থেকে বঞ্চিত। আমরা বাচ্চা বয়সে পেন্সিল নিয়ে মারামারি করতাম স্কুলে ক্লাসে, আর শিশু বয়সী আমেরিকার ছেলেমেয়েরা স্কুল লাইফে পিস্তল নিয়ে মারামারি করে, খুন করে। ইউরোপে আমেরিকাতে আজ এই অবস্থা, সভ্যতাকে কোথায় নিয়ে গেছে এই ইউরোপ।
আর তার ঢেউ আমাদের দেশে এসে গেছে। আপনাদের চেহারা আপনারা জানেন, আপনারাই বলবেন। আমি অবিভক্ত ভারতবর্ষের কথাই বলছি যে রামমোহন বিদ্যাসাগরকে জন্ম দিয়েছিল, রবীন্দ্রনাথকে জন্ম দিয়েছিল, নজরুল-শরৎচন্দ্রকে জন্ম দিয়েছিল। কত বৈজ্ঞানিক, কত দেশাত্মবোধের এই দেশবন্ধু, সুভাষ বোস, ভগৎ সিং, সূর্যসেন, প্রীতিলতা আপনাদের এখানকার সেই দেশ আজ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই দেশের স্মৃতি অবলুপ্ত। এদের নামও উচ্চারণ করার লোক কোথাও নেই। নোংরা ফিল্ম স্টারদের জীবনী, ক্রিকেট প্লেয়ারদের জীবনী এই হচ্ছে চর্চার বিষয়, আলোচ্য বিষয়। মেয়েরা শহরগুলোতে সন্ধ্যাবেলা রাস্তায় বেরুতে পারে না। কাকে কখন কে তুলে নিয়ে যাবে। ইউনিভার্সিটির ছেলে, কলেজের ছেলে, তথাকথিত শিক্ষিত ছেলেরাই এগুলো করছে! ধর্ষণ-গণধর্ষণ প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অসংখ্য ঘটে যাচ্ছে এবং এই নিয়ে কোথাও এতটুকু বিবেক দংশন নাই! ৬’বছরের শিশু তাকে পর্যন্ত ধর্ষণ করছে! পিতা অভিযুক্ত কন্যা অভিযোগ করছে ধর্ষণের দায়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশে গত কয়েক মাসের ভেতরে ধর্ষণের মাত্রা আরও অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ সংবাদপত্র খুললে এইসব জিনিসগুলো দেখতে পাবেন। তার জন্যে বাংলার জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল? শহীদরা প্রাণ দিয়ে গিয়েছিল? এই নিয়ে নজরুলের কাব্য রবীন্দ্রনাথের কবিতা, শরৎচন্দ্রের সাহিত্য এসব জিনিস তারা দেখে যাননি। মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই। চূড়ান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা-স্বার্থপরতা, বিবেকবর্জিত মানুষ এরকম একটা অবস্থা। স্নেহ-মায়া-মমতা-প্রেম-প্রীতি ভালবাসা মানুষের যেগুলি হৃদয়বৃত্তি, যেখানে মানুষ আর জন্তুতে পার্থক্য। যৌন সম্পর্ক তো প্রকৃতির নিয়ম, প্রাণী জগতেও আছে। মানুষের যৌন সম্পর্ক কি তাই? এই রবীন্দ্রনাথ নজরুলের কত কাব্য-গান, শরৎবাবুর সাহিত্যে কত মাধুর্য্য, ধর্ম-অধর্ম, ন্যায়-অন্যায়, কত সৌন্দর্য্য এর সব কিছু ধুলিসাৎ হতে চলেছে। ছেলে রোজগার করে বৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব নেবে না, রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে না হলে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই বৃদ্ধাশ্রম আধুনিক পুঁজিবাদী সভ্যতার সৃষ্টি। বৃদ্ধাশ্রম মানে বৃদ্ধদের কারাগার, সেখানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরকম একটা রুঢ় বাস্তবতা আজ সকলের সামনে।
এই হচ্ছে পুঁজিবাদী সভ্যতার সংস্কৃতি। ফলে পুঁজিবাদ মনুষ্যদেহী মনুষ্যত্ব বর্জিত একদল ‘আধুনিক’ মানুষ বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি করছে। জনগণ-একটা দেশ-একটা জাতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে, লড়তে পারে, যদি তার মনুষ্যত্ব থাকে, নৈতিক বল থাকে। তার সামনে আদর্শ থাকে। গোটা দুনিয়ায় পুঁজিবাদ সেই নৈতিক বলকে ধ্বংস করছে, ছিন্নমূল করে দিচ্ছে, অতীতের যে সংগ্রামী ঐতিহ্য, মানবিক মূল্যবোধের ঐতিহ্য তার মূল থেকে ছিন্ন করে দিচ্ছে। এই হচ্ছে আরেকটা সমাজ। একটুবাদেই অন্ধকার নামবে, শহরের গঞ্জে গঞ্জে স্টেশনে স্টেশনে পাওয়া যাবে অসংখ্য নারীমূর্তি, আমাদেরই মা-বোন, আমাদেরই কন্যা। স্বামী বেকার, অভুক্ত সন্তান, দেহ বিক্রির জন্য লক্ষ লক্ষ নারী বাজারে দাঁড়িয়ে আছে। সংবাদমাধ্যমে এই খবর পাবেন। ফুটপাতে লক্ষ লক্ষ শিশু জন্ম নেয়, সে জানে না তার বাবা কে, মা কে, কোন গ্রামে তার ঠিকানা। হাইরে রাষ্ট্রযন্ত্র!
পুরনো সমাজকে পাল্টে দিয়ে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুব সমাজকে সংগ্রামে সামিল করা একটি মহান কর্তব্য। কিন্তু এ কর্তব্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। এজন্য প্রয়োজন হয় জটিল, দীর্ঘকালীন ও নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের। শক্তি-সমর্থ মানুষেরাই মাত্র কাঁধে বোঝা নিয়ে দীর্ঘ দূরন্তকে পাড়ি দিতে সক্ষম। একজন সংগ্রামীকে অবশ্যই নৈতিকতার ওপর আস্থা রাখতে হবে এবং তা থেকেই শক্তি সংগ্রহ করতে হবে। কেবলমাত্র তখনই সে তার গৌরবোজ্জ্বল জাতীয় কর্তব্য পূরণে সক্ষম হবে। আমাদের নিজেদের অবশ্যই বদলাতে হবে। পুরনো সমাজের মধ্যেই আমরা বেড়ে উঠেছি। উত্তরাধিকার সূত্রে পুরনো সমাজ থেকে আমরা যা পেয়েছি তার ভেতর সবচাইতে বিরূপ ও বিপজ্জনক হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ। নৈতিক-মূল্যবোধের নিরিখে ব্যক্তিস্বাতন্তবাদ হলো অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি প্রবণতা। এই ‘বাদ’ যদি চলতেই থাকে, এমনকি যদি খুব সামান্য পরিমাণেও চলতে থাকে, তবে তা সামান্যতম খোঁচানি পেলেই বেড়ে উঠতে পারে, নৈতিক গুণাবলিকে দমিয়ে দিতে পারে এবং সংগ্রামের জন্য পরিপূর্ণভাবে আত্ম-নিয়োগের প্রয়াস থেকে সংগ্রামী সহযোদ্ধাদের বিরত রাখতে পারে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ নিজেই বেশ অনিষ্টকারী এবং তা কপটতাকেও প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। অতীতের জের সমূলে উৎপাটিত করতে হলে এবং প্রকৃত নৈতিক গুণাবলি আত্মস্থ করতে হলে প্রয়োজন অনুশীলনের, নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তোলার ও নিজেদেরকে বদলে ফেলার, যা আমাদের অক্লান্তভাবে এগিয়ে চলতে যোগ্য করে তুলবে। কেউ যদি অগ্রসর হতে না চায় তবে সে অনিবার্যভাবেই পিছিয়ে পড়বে। ছাত্র ও যুব সমাজকে ঠিক সেভাবে এগিয়ে এসে সমাজে যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন রোধ করতে হবে।
রাজনৈতিক অধিকার ছাড়া কোন জাতি পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতে পারেনি। জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আজ পদদলিত। কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখী ছাত্র ও যুব সমাজ তথা সমগ্র জুম্ম জনগন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে চারিদিকে মদ, গাজা, হেরোইন, জুয়া ও ইয়াবার আসর জমজমাট। ছাত্র ও যুব সমাজ আসক্ত হয়ে উঠেছে মরণ নেশায়। শহরের ক্লাবগুলোতে চলছে অবাধে মদ, জুয়ার আসর। শাসকশ্রেণি কৌশলে সেই মরণ নেশার আসর আয়োজন করে রেখেছে। আমাদের জুম্ম তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজকে যদি নেশায় মত্ত করে রাখা যায় তাহলে শাসকগোষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য স্বার্থক। সেজন্য জুম্ম যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতন রোধকল্পে জুম্ম সমাজের আভ্যন্তরীন কাঠামোর শক্ত ভিত প্রগতিশীল আদর্শের ভিত্তিতে মজবুত করতে এগিয়ে আসুন, নিজেকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। জুম্মজাতির ক্রান্তিলগ্নে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে যুব সমাজকে আরও সক্রিয়ভাবে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে। জুম্ম যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করুন এবং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।